মাদার (১৯১০-এর চলচ্চিত্র)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মাদার
ছবির একটি দুর্লভ চিত্র
প্রযোজকথানহাউসার কোম্পানি
পরিবেশকমোশন পিকচার ডিস্ট্রিবিউটিং এন্ড সেলস কোম্পানি
মুক্তি
  • ৬ সেপ্টেম্বর ১৯১০ (1910-09-06)
দেশযুক্তরাষ্ট্র
ভাষানির্বাক চলচ্চিত্র
ইংরেজি

মাদার (ইংরেজি: Mother) ১৯১০ সালের আমেরিকান নির্বাক স্বল্পদৈর্ঘ্য নাট্য চলচ্চিত্র। এটি প্রযোজনা করেছে থানহাউসার কোম্পানি। এটি একটি আবেগপ্রধান চলচ্চিত্র যেখানে উইল এ্যালেন নামের একটি ছেলে তার সৎ বাবার ভয়ানক অত্যাচারের কারণে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয় আর তার মা একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখে তার ফিরে আসার প্রতীক্ষায়। কুড়ি বছর পর উইল বাড়ি ফিরে আসে একজন প্রখ্যাত উকিল হয়ে কিন্তু সে তার বাবা-মা কে আর খুজে পায় না। পরবর্তীতে উইল একজন মহিলার হয়ে কেস লড়ে যার বিপক্ষে ছিল একটি খরিদ্দার প্রতিষ্ঠান। সেই মহিলাকে উইল মা হিসেবে চিনতে পারে এবং এভাবে তাদের পূনঃমিলন হয়। চলচ্চিত্রটির মূল অভিনয়ে ছিলেন আনা রোসমন্ড, ফ্রাঙ্ক এইচ ক্রেনক্যারি এল. হ্যাসিং। অন্যান্য চরিত্রসমূহের তথ্য অনিশ্চিত। চলচ্চিত্রটি ১৯১০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায়। এটি মিশ্র দর্শক প্রতিক্রিয়া পায়। চলচ্চিত্রটি “হারানো চলচ্চিত্র” হিসেবে ধরা হয়।

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

চলচ্চিত্রটি যদিও হারানো চলচ্চিত্রের তালিকায় আছে, তারপরও এর একটা সারাংশ দ্যা মুভিং পিকচার ওয়ার্ল্ড এ সংরক্ষিত আছে ১৯১০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে। এটাতে লেখা আছে “চলচ্চিত্রটি একটি ছোটো বালককে কেন্দ্র করে যে তার পরিবারে অখুশি ছিল, সে খামারে কাজ করার চেয়ে পড়াশুনা করতে বেশি পছন্দ করত। যার কারণে তার বাবা তাকে অপছন্দ করত এবং শত্রুতে পরিণত হয়েছিল। তার বাবা ছিল একজন অসভ্য ও রুক্ষ মেজাজের কৃষক যার কাছে পড়াশুনার কোনো মূল্য নেই।” উইল বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তার মা একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে জানলার কাছে রাখতো এই আশায় যে তার ছেলে আলোর পথ চিনে বাড়ি আসবে।কিন্তু উইল ফেরেনি। কুড়ি বছর পর উইল যখন উকিল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হল, সে তার পুরোনো খামারে ফিরে গেল শুধু তার মায়ের খোজে। কিন্তু তার অভাগী বিধবা মা কোথায় তা কেউ বলতে পারল না। ঐ সময়ে তার মা ছিল পৃথিবীতে একদম একা , সে শহরে জীবনধারণ করতে জামাকাপড় তৈরীর কাজ করত। সে একটি মুদি দোকানে কেনাকাটা করার সময় অন্যায়ভাবে চুরির দোষে আরোপিত হয়। একমাত্র দোকানের বিক্রয়কমী মহিলাটি তার কথা বিশ্বাস করে। তাকেও তার চাকরি খোয়াতে হয় তার মালিকের কথার ওপর কথা বলার ধৃষ্টতার শাস্তিস্বরূপ। মেয়েটি বৃদ্ধা মহিলাটিকে যথার্থ সাহায্য করে এবং উইল কে তার বিবাদী পক্ষের উকিল হিসেবে নিযুক্ত করে। উইল প্রথমে একটি অলাভজনক কেস হিসেবে এটিকে বাতিল করে দিতে যাচ্ছিল কিন্তু যখন সে মেয়েটির কাছে বৃদ্ধা মহিলাটির দুর্দশার কথা শোনে এবং মেয়েটি উইলের মায়ের সাথে তুলনা করে তখন সে কেসটি নিতে আগ্রহী হয়। উইল মেয়েটির সাক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে তার মামলা আদালতে উপস্থাপন করে। বিচারক তার মা’কে নির্দোষ হিসেবে ছেড়ে দেয়। যখন আদালতে আসামীর পরিচয় উত্থাপিত হয় তখনই উইল তাঁর মা’কে চিনতে পারে এবং তাদের পুনঃমিলন ঘটে[১]

অভিনেতা-অভিনেত্রী[সম্পাদনা]

উৎপাদন[সম্পাদনা]

চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য কে লিখেছিল সেটা অজানা। কিন্তু সেটা সম্ভবত লয়ড লনারজেন ছিলেন। সে নিউইয়র্ক ইভিনিং ওয়ার্ল্ড এর একজন দক্ষ সংবাদপত্রকর্মী ছিলেন এবং তিনি থানহাউজ এর জন্য চিত্রনাট্য লিখতেন।[২] চলচ্চিত্রটি একজন চলচ্চিত্র সমালোচক কড়া সমালোচনা করে সেটা প্রকাশ করেন দ্যা নিউইয়র্ক ড্রামাটিক মিরর-এ, কারণ বালকটি এটা জানে না যে তাঁর বাবা মারা গেছে এবং তাঁর মা কাজের সন্ধানে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সমালোচনাটিতে লেখা ছিল, “যে ছেলে মাকে এত ভালবাসে সে নিশ্চয়ই তার মায়ের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারত”।[১] চলচিত্রটির পরিচালক কে তা জানা যায়নি, তবে সেটা ব্যারি ও’নেইল হতে পারে। ছবির ইতিবৃত্তকার কিউ. ডেভিড বোয়ার্স কোনো চিত্রগ্রাহকের (ক্যামেরাম্যান) কথা উল্লেখ করেননি কিন্তু অন্তত দুইজন চিত্রগ্রাহক ছিল সেটা আন্দাজ করা যায়। ব্লায়ার স্মিথ ছিল থাননহাউজ প্রতিষ্ঠানের প্রথম চিত্রগ্রাহক এবং কিছুকাল পরেই কার্ল লুইস গ্রেগরি এ ছবিতে নিযুক্ত হয় যে ছিল মোশন পিকচার্স এর একজন দক্ষ চিত্রগ্রাহক। চিত্রগ্রাহকের অবদান ১৯১০ সালের প্রযোজনাতে সংযুক্ত করা হয়নি।[৩] অভিনেত্রী আনা রোসমন্ড ও অভিনেতা ফ্রাঙ্ক এইচ. ক্রেইন দু’জনই থানহাউস প্রতিষ্ঠানের প্রথমশ্রেণীর অভিনেতা ছিলেন[৪][৫]ক্যারি এল.হ্যাসিং এর আসল নাম ছিল ক্যারি টি’বল, সে ছিল গার্চু দ্যানহাউস এর বোন এবং থানহাউস প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য অভিনেত্রী। হ্যাস্টিং প্রথমদিকে থানহাউজার্স স্ট্রিট এলমো এডাপ্টেশন এ কর্মরত হিসেবে পরিচিত ছিল এবং ১৯১২ সাল পর্যন্ত আর কোনো পরিচয় ছিল না[৬]।দ্যা সাইলেস্ট এরা ওয়েবসাইট উল্লেখ করে যে হ্যারি বেনহাম এবং মাউড ফ্যালি ঐ প্রযোজনা তে কাজ করেছিল। যদিও ওই উল্লেখগুলো বোয়ার্সের ইতিবৃত্তের আগেই[৭]।জানা যায় হ্যারি বেনহাম ১৯১০ সালে দ্যানহাউস প্রতিষ্ঠানে যোগদান করে,কিন্তু তার নামের উল্লেখ প্রথম পাওয়া যায় ১৯১১ সালে দ্যা ওল্ড কিউরিওসিটি শপ ছবিতে[৮]। ১৯১১ সালে তৈরী দ্যা আর্লি লাইফ অফ ডেভিড কপারফিল্ড ছবিতেও বোয়ার্স কে কিছু সময়ের জন্য দেখা যায়[৯] । অন্যান্য কলাকুশলীদের কথা যায়নি। ১৯১০ দ্যানহাউস প্রযোজনা সংস্থাটিতে অধিকাংশ কলাকুশলীর উল্লেখ অস্পষ্ট[১০]

শুভমুক্তি ও অভর্থনা[সম্পাদনা]

এটি একটি এক রিলে তৈরী ছবি, এটার দৈর্ঘ্য ছিল ৯৭৫ ফুট। এটা মুক্তি পায় ৬ সেপ্টেম্বর,১৯১০ সালে[১]। ছবিটি পরিবেশনা করে মোশন পিকচার্স ডিস্ট্রিবিউটিং এন্ড সেলস কোম্পানি[৭]। ছবিটি মুক্তি পাবার পর এটা অনেক সময়ই অন্য ছবির প্রযোজনা সংস্থার সাথে গুলিয়ে যেত একই নাম থাকার কারণে। এরকম একটি ঘটনা ঘটে যখন ঐ ছবিটির মতই আরেকটি ছবি,যেটা তৈরী করেছিলো ক্রিস্টাল থিয়েটার হাচিনসন-ক্যানসাস[১১]। ভুল করে ছবির প্রচার করে ইন্ডিয়ানা এবং অ্যারিজোনা তে[১২][১৩]দ্যা মুভিং পিকচার ওয়ার্ড একটি সমালোচনায় লিখেছে –“ এটি একটি পারিবারিক বেদনাদায়ক ছবি যেটাতে দেখানো হয়েছে ছেলেরা কীভাবে মাঝে মাঝে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং তার ফল কি হয়।” এটি এমন একটি হৃদয়-বিদারক ছবি যেটাতে দর্শকরা কোনো না কোনো একটা চরিত্রের সাথে নিজের মিল খুঁজে পাবেন[১]। সম্ভবত “মা” এমন একটি জাদুকরী শব্দ, যেটার মধ্যে লুকিয়ে আছে সব সমস্যার সমাধান। 'দ্যা নিউইয়র্ক ড্রামাটিক মিরর' এটি প্রকাশ করেছিল “একজন বালকের প্রতি একজন অত্যাচারী পিতার আচরণ এবং একটি নাটকীয় সমবেদনাপূর্ণ সমাপ্তি” হিসেবে।[১]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Q. David Bowers (১৯৯৫)। "Volume 2: Filmography - Mother"। Thanhouser.org। ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫ 
  2. Q. David Bowers (১৯৯৫)। "Volume 3: Biographies - Lonergan, Lloyd F."। Thanhouser.org। জানুয়ারি ১৭, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৭, ২০১৫ 
  3. Q. David Bowers (১৯৯৫)। "Volume 1: Narrative History - Chapter 3 - 1910: Film Production Begins"। Thanhouser.org। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৪, ২০১৫ 
  4. Q. David Bowers (১৯৯৫)। "Volume 3: Biographies - Rosemond, Anna"। Thanhouser.org। জানুয়ারি ২২, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৬, ২০১৫ 
  5. Q. David Bowers (১৯৯৫)। "Volume 3: Biographies - Crane, Frank H."। Thanhouser.org। জানুয়ারি ১৯, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৬, ২০১৫ 
  6. Q. David Bowers (১৯৯৫)। "Volume 3: Biographies - Hastings, Carey L."। Thanhouser.org। ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫ 
  7. "Silent Era - Mother"। Silent Era। জানুয়ারি ২৭, ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫ 
  8. Q. David Bowers (১৯৯৫)। "Volume 3: Biographies - Benham, Harry"। Thanhouser.org। ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫ 
  9. Q. David Bowers (১৯৯৫)। "Volume 3: Biographies - Fealy, Maude"। Thanhouser.org। ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫ 
  10. Q. David Bowers (১৯৯৫)। "Volume 2: Filmography - Thanhouser Filmography - 1910"। Thanhouser.org। ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৫ 
  11. "Crystal Theatre"। The Hutchinson News (Hutchinson, Kansas)। ডিসেম্বর ১৫, ১৯১০। পৃষ্ঠা 7। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫ 
  12. "Rustic"। Seymour Daily Republican (Seymour, Indiana)। নভেম্বর ২৯, ১৯১০। পৃষ্ঠা 1। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫ 
  13. "O.K. Theatre"। Bisbee Daily Review (Bisbee, Arizona)। ডিসেম্বর ৬, ১৯১০। পৃষ্ঠা 3। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৫