পাফ্ অ্যাডার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পাফ্ অ্যাডার
(Puff Adder)
পাফ্ অ্যাডার
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: কর্ডাটা
উপপর্ব: Vertebrata
শ্রেণী: Reptilia
বর্গ: Squamata
উপবর্গ: Serpentes
পরিবার: Viperidae
উপপরিবার: Viperinae
গণ: Bitis
প্রজাতি: B. arietans
দ্বিপদী নাম
Bitis arietans
(Merrem, 1820)
প্রতিশব্দ
  • Cobra lachesis Laurenti, 1768
  • Cobra clotho Laurenti, 1768
  • [Coluber] Lachesis Gmelin, 1788
  • [Coluber] Clotho — Gmelin, 1788
  • C[oluber]. Bitin Bonnaterre, 1790
  • Col[uber]. Intumescens
    Donndorff, 1798
  • Vipera severa
    Latreille In Sonnini & Latreille, 1801
  • [Vipera (Echidna)] arietans
    Merrem, 1820
  • Vipera inflata Burchell, 1822
  • Echidna arietans Wagler, 1828
  • Vip[era]. brachyura Cuvier, 1829
  • Vipera arietans Schlegel, 1837
  • Clotho [(Bitis)] arietans Gray, 1842
  • Clotho [(Bitis)] lateristriga Gray, 1842
  • Echidna arietans A.M.C. Duméril, Bibron & A.H.A. Duméril, 1854
  • Bitis arietans Günther, 1858
  • Bitis arietans Boulenger, 1896
  • Cobra lachesis Mertens, 1937
  • Bitis lachesis — Mertens, 1938
  • Bitis lachesis lachesis
    de Witte, 1953
  • Bitis arietans arietans
    Loveridge, 1953
  • Bitis arietans peghullae
    Steward, 1973
  • Bitis arietans — Golay et al., 1993
  • Vipera (Clotho) arietans
    — Herprint Int'l, 1994
  • Bitis arietans
    — Spawls & Branch, 1995[১]

পাফ্ অ্যাডার (বৈজ্ঞানিক নাম: Bitis arietans) বিষাক্ত ভাইপার সাপের একটি প্রজাতি , যাদের মরক্কো এবং পশ্চিম আরবের সাভানা (নিস্পাদপ) অঞ্চলে এবং তৃণভূমিতে পাওয়া যায়। আফ্রিকা সাহারা অঞ্চল ও রেইন ফরেষ্ট ব্যতীত বাকি আফ্রিকা জুড়ে এদের দেখা মেলে।[২] আফিকাতে সর্পদংশন সংক্রান্ত অধিকাংশ ঘটনা এবং সর্পদংশনের মারাত্মক ফলাফলের জন্য এই সাপ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দায়ী। আফিকা জুড়ে অধিকাংশ মারাত্মক সর্পদংশনের ঘটনায় Bitis arietansএর জড়িত থাকার বিভিন্ন কারণগুলি হল; এরা বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে থাকে, উচ্চ ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে এরা ঘনঘন হানা দেয় এবং এদের আক্রমণাত্মক স্বভাব।[৩][৪] পাফ্ অ্যাডার এর দুটি উপপ্রজাতি আপাতত চিহ্নিত করা গেছে যাদের মধ্যে একটি (আফ্রিকান পাফ্ অ্যাডার) বর্তমান লেখায় আলোচ্য।[৫]

সাধারণ নাম[সম্পাদনা]

এই সর্প প্রজাতির সাধারণ নাম হল পাফ্ অ্যাডার,[৩][৬] আফ্রিকান পাফ্ অ্যাডার[৭][৮] অথবা কমন পাফ্ অ্যাডার[৯]

"arietans" (অ্যারিয়েন্টান্স) শব্দটি ল্যাটিন arieto(অ্যারিয়েটো) শব্দজাত যার অর্থ হল "striking violently" অর্থাৎ উন্মত্ত এবং প্রবল ভাবে ছোবল দেওয়া।[১০]

বর্ণনা[সম্পাদনা]

পাফ্ অ্যাডার প্রজাতির দেহ এবং লেজ মিলে গড় সামগ্রিক দৈর্ঘ্য ১মিটার(৩৯.৩ ইঞ্চি) এবং এরা খুব স্থূলদেহের হয়ে থাকে। এই প্রজাতির সর্ববৃহত নমুনাগুলির সামগ্রিক দৈর্ঘ্য ১৯০সেন্টিমিটার(৭৫ইঞ্চি), প্রস্থ ৪০সেন্টিমিটার(১৬ইঞ্চি) এবং ওজন ৬কিলোগ্রাম(১৩.২ পাউন্ড) এর অধিক হতে পারে এমন তথ্যপ্রমাণ নথিভুক্ত রয়েছে। সৌদি আরবে প্রাপ্ত এই প্রজাতির নমুনাগুলি অবশ্য এত বড় হয় না; সাধারণত এদের দৈর্ঘ্য ৮০সেন্টিমিটার(৩১ইঞ্চি)এর অধিক নয়। পুরুষ পাফ্ অ্যাডারগুলি সাধারণত স্ত্রীগুলির তুলনায় বড় হয় এবং পুরুষদের লেজ তুলনামূলক ভাবে বেশি লম্বা। [৩]

এদের মাথা প্রায় ত্রিভূজাকৃতি, ভোঁতা এবং গোলাকৃতি নাসিকা ছিদ্রযুক্ত হয়। মাথাটি ঘাড় অপেক্ষা বেশি চওড়া। রোস্ট্রাল স্কেল অথবা নাসিকার আঁশ ক্ষুদ্র। 'সারক্যাম অরবিটাল রিং' অর্থাৎ চক্ষু আবরণী আঁশ গুলো ১০ থেকে ১৬টি আঁশ দ্বারা গঠিত। মাথার শীর্ষস্থলে বা উপরে আড়াআড়ি ভাবে ৭ থেকে ১১টি ইন্টারোকুলার আঁশ রয়েছে। ৩ থেকে ৪টি আঁশ চোখের নিম্নভাগে এবং উপরের ঠোঁটের আঁশ বিন্যাসকে আলাদা করেছে। উপরের ঠোঁট বা উর্দ্ধচোয়ালের প্রথম ৩-৪টি আঁশ চিবুকের ঢাল বা শক্ত অংশগুলিকে স্পর্শ করেছে। Chin shields বা চিবুকের ঢাল এক জোড়া। মাঝেমধ্যে প্রতিটি ম্যাক্সিলা অর্থাৎ উপরের চোয়ালের হাড়ে দুটি করে বিষদাঁত দেখা যায় এবং উভয়েই কার্যকরী হতে পারে।[৩][৬]

দেহের মধ্যভাগে ২৯-৪১টি পৃষ্ঠ আঁশের সারি দেখা যায়। দু'পাশের শেষ সারি দুটি বাদ দিলে বাকী সব সারির আঁশগুলি উত্তল অর্থাৎ মধ্যভাগ উঁচু (keeled)। উদর দেশীয় আঁশের সংখ্যা ১২৩-১৪৭টি। লেজের নিম্নভাগে আঁশ ১৪-৩৮টি। স্ত্রী সাপেদের লেজের নিম্নবর্তী আঁশের সংখ্যা ২৪ টির বেশি হয় না। পায়ুপথের উপর আঁশ একটি হয় এবং অবিভাজিত।[৩]

পূর্নাংগ Bitis arietans

এদের দেহের বর্ণবিন্যাস ভৌগোলিক অবস্থানের পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তিত হয়। মাথায় দুটি সুস্পষ্ট কালো ব্যান্ড বা পটি রয়েছে; একটি মাথার শীর্ষস্থানে এবং অন্যটি দুই চোখের মধ্যভাগে। মাথার দুপাশে দুটি তেরচা ব্যান্ড বা বার রয়েছে যেগুলি চোখ থেকে উপরের ঠোঁটের দিকে নেমে গেছে। মাথার নিচের অংশের রঙ হলদেটে সাদা এবং অবিন্যস্ত কালো ছিট ছিট দাগে পূর্ণ। চোখের মণির রঙ সোনালী থেকে ধূসর রূপালী অবধি নানারকম হতে পারে। পৃষ্ঠদেশের মূল রঙ নানাবিধ হয়- খড়ের মত হলদেটে, ঈষৎ বাদামী, কমলা অথবা লালচে বাদামী। পৃষ্ঠদেশের মূল রঙ(ground-color)এর উপর ১৮-২২টি পশ্চাৎমুখী কালচে-বাদামী বা কালো ব্যান্ড রয়েছে যেগুলি দেহের পশ্চাৎভাগ এবং লেজ অবধি বিস্তৃত হয়েছে। সাধারণত এই ব্যান্ড অথবা বন্ধনীগুলি মোটামুটি ভাবে 'V' আকৃতিবিশিষ্ট, তবে অনেক ভৌগোলিক অবস্থানে এই বন্ধনীগুলি 'V' অপেক্ষা 'U' আকৃতিবিশিষ্ট হতে দেখা যায়। এই প্রজাতির সাপের লেজে ২ থেকে ৬টি হালকা এবং কালো বর্ণের ক্রস চিনহের মত বন্ধনী দেখা যায়। কিছু সাপেদের গায়ে বাদামী অথবা কালো রঙের ঘন রোঁয়া দেখা যায় যা প্রায়শই এদের দেহের বর্নবিন্যাসকে অস্পষ্ট করে দেয়। এ সময় সাপগুলিকে ধূসর বাদামী অথবা কালচে রঙের দেখতে লাগে। এদের উদরদেশের রঙ হলুদ অথবা সাদা যার মধ্যে কয়েকটি অবিন্যস্ত কালো দাগ থাকে। নবজাতক সাপেদের মাথায় সোনালী দাগ থাকে এবং উদরদেশে দুপাশের কিনারে ঈষৎ গোলাপী থেকে লালচে প্লেট থাকে। [৩][৬]

ব্রাঞ্চ এবং ফ্যারেল ১৯৮৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্ব লন্ডন এর সামার প্রাইড অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত পাফ্ অ্যাডার এর একটি অস্বাভাবিক নমুনার বর্ণনা দেন যেটির দেহ ডোরাকাটা বা স্ট্রাইপযুক্ত। ডোরা বা স্ট্রাইপগুলি ছিল সরু (একটি স্কেল এর মত চওড়া), ফ্যাকাশে হলুদ বর্ণের যেগুলি মাথার চূড়া বা শীর্ষস্থান থেকে লেজের ডগা অবধি বিস্তৃত।[৩]
পাফ্ অ্যাডার সাধারণভাবে অপেক্ষাকৃত অনুজ্জ্বল এবং অনাকর্ষনীয় সাপ, তাই এদের সৌন্দর্য একদমই কম, তবে পূর্ব আফ্রিকার উচ্চভূমি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ প্রভিন্স এ প্রাপ্ত পুরুষ সাপগুলি এর ব্যতিক্রম তাদের আকর্ষনীয় হলদে-কালো বর্ণ বিন্যাসের জন্য।[৬]

ভৌগোলিক সীমা[সম্পাদনা]

আফ্রিকাতে পাফ্ অ্যাডারএর ভৌগোলিক সীমা[৬] এবং আরবের অঞ্চলে[১][১১]

পাফ্ অ্যাডার সম্ভবত আফ্রিকার[৩] সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া এবং সর্বত্রচারী সাপ। উপ-সাহারান আফ্রিকার দক্ষিণ ভাগের অধিকাংশ স্থান থেকে উত্তমাশা অন্তরীপপর্যন্ত, দক্ষিণ মরক্কো, মৌরিতানিয়া, সেনেগাল, মালি, দক্ষিণ আলজেরিয়া, গিনি, সিয়েরা লিওন,আইভরি কোষ্ট, ঘানা, টোগো, বেনিন,নাইজার, নাইজেরিয়া,চাদ,সুদান, ক্যামেরুন, মধ্য আফ্রিকান রিপাবলিক, উত্তর,পূর্ব ও দক্ষিণ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো, উগান্ডা, কেনিয়া, সোমালিয়া,রুয়ান্ডা,বুরুন্ডি, তানজেনিয়া,অ্যাংগোলা,জাম্বিয়া,মালি, মোজাম্বিক, জিম্বাবুয়ে, বোতসোয়ানা, নামিবিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকাতে এদের প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়। অ্যারাবিয়ান পেনিনসুলার অন্তর্গত দক্ষিণ পশ্চিম সৌদি আরব এবং ইয়েমেনেও এদের দর্শন মেলে। এদের আদর্শ বাসস্থান হল দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ।[১]

বাসভূমি[সম্পাদনা]

আদর্শ মরুভূমি, রেইন ফরেস্ট এবং ক্রান্তীয়(ট্রপিক্যাল) অ্যালপাইন বাসভূমি বাদ দিয়ে সমস্ত রকম বাসভূমিতে পাফ্ অ্যাডার এর দেখা মেলে। পাথুরে ঘাসজমিতে প্রায়শই এদের দর্শন পাওয়া যায়।[১২]

রেইন ফরেস্ট অঞ্চলে এদের পাওয়া যায় না; যেমন পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলবর্তী অঞ্চলে এবং মধ্য আফ্রিকার (মধ্য ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো) , উত্তর আফ্রিকার ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলবর্তী অঞ্চলে এদের অনুপস্থিতি লক্ষ করা যায়। অ্যারাবিয়ান পেনিনসুলায় এদের পাওয়া যায় উত্তর দিকে যেমন তায়েফ[৬] , দক্ষিণ ওমানএর[১১] ধোফার (Dhofar) অঞ্চলে এদের দেখা পাওয়া যাওয়ার নথি প্রমাণ রয়েছে।

আচরণ[সম্পাদনা]

পাফ্ অ্যাডার সাধারণ ভাবে অলস প্রকৃতির। নিজের সুরক্ষার জন্য এরা ক্যামোফ্লেজ করে থাকার উপর নির্ভরশীল। এদের গমন প্রাথমিক ভাবে ঋজুরেখা অথবা সরলরৈখিক। এদের গমনের ধরন অনেকটা শুঁয়োপোকার মতো চলাফেরার জন্য এরা এদের চওড়া উদরদেশীয় আঁশগুলিকে ব্যবহার করে এবং সেই সঙ্গে নিজেদের দেহের ওজনকেও ব্যবহার করে এবং দেহকে টেনে নিয়ে অগ্রসর হয়।[৩][১২] তবে ভয় পেলে অথবা উত্তেজিত হয়ে পড়লে এদের গমন ভঙ্গিমার পরিবর্তন ঘটে। সেক্ষেত্রে এরা আদর্শ আঁকাবাকা চলনের আশ্রয় নেয় এবং বিস্ময়কর গতিতে চলে। পাফ্ অ্যাডার প্রজাতি যদিও মুখ্যতঃ ভূচর অথবা স্থলচর, কিন্তু এরা ভাল সাতারু এবং অনায়াসে গাছে বা অন্যত্র চড়তে পারে। এদের প্রায়শই দেখা যায় নিচু ঝোপঝাড়ে রোদের উত্তাপ পোয়াতে। একবার এই সর্প প্রজাতির একটি নমুনাকে মাটি থকে ৪.৬ মিটার উচ্চতায় একটি ঘন ডালপালা বেষ্টিত গাছে দেখা গিয়েছিল।[৩] উত্ত্যক্ত করলে এরা উচ্চস্বরে একনাগাড়ে 'হিস' শব্দ করতে থাকে। এই সময় এরা শক্তভাবে কুন্ডলি পাকিয়ে দেহের অগ্রভাগ টানটান রেখে "S" এর মত আকৃতির ভঙ্গিমায় আত্মরক্ষামূলক অবস্থান নেয় এবং একসঙ্গে বিপদ থেকে বাঁচতে পিছাতে থাকে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে। এই আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে, এরা আচমকা এবং দ্রুতগতিতে পাশের দিকে অথবা সামনে ছোবল দিতে পারে অনায়াসে। এমনকি ছোবল দেওয়ার পর দ্রুত তার আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে ফিরে যাওয়ার সময় অথবা আঘাত হানার প্রাবল্য এবং শক্তি এতটাই বেশি থাকে যে এদের দীর্ঘ বিষদাঁত দেহের গভীরে ঢুকে যায়, বিষদাঁত এতটাই গভীরে ঢুকে যায় যে অনেক ক্ষেত্রেই এদের শিকার শুধুমাত্র দৈহিক যন্ত্রণা এবং আঘাতেই মারা যায়। এদের বিষদাঁত এমনই তীক্ষ্ণ এবং শক্তিশালী যে নরম লেদার অথবা চামড়া অবধি ফুঁটো করে দিতে পারে।[৩][১২]

নিজেদের দেহের দৈর্ঘ্যের এক-তৃতীয়াংশ দূরত্ব অবধি এরা ছোবল দিতে পারে। কমবয়স্ক সাপগুলি ছোবল দেওয়ার সময় সমগ্র দেহ সামনে নিয়ে যায়। এই প্রজাতির সাপেরা আক্রান্ত ব্যক্তি অথবা শিকারকে কামড়ে ধরে থাকে না বরং কামড় দেওয়ার পরেই পুনরায় আঘাত হানার অবস্থানে ফিরে আসে।[৩]

পাফ্ অ্যাডার (দক্ষিণ আফ্রিকা)

খাদ্য গ্রহণ[সম্পাদনা]

পাফ্ অ্যাডার প্রজাতি মুখ্যতঃ নিশাচর। এরা কদাচিৎ শিকারের সন্ধানে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ায় এবং এরা আগত শিকারের অপেক্ষায় ওঁৎ পেতে থাকে। এদের খাদ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত হল ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখী, উভচর এবং গিরগিটি।[১২]

প্রজনন[সম্পাদনা]

B. a. arietans,শিশু পাফ্ অ্যাডার ছোবল দেওয়ার জন্য তৈরী

স্ত্রী পাফ্ অ্যাডাররা 'ফেরোমোন' হরমোন নিঃসরনের মাধ্যমে পুরুষদের আকৃষ্ট করে। তারপর শুরু হয় একে অপরের গলা পেঁচিয়ে শঙ্খিনী নৃত্য। মালিন্দিতে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, একটি স্ত্রী সাপের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ৭টি পুরুষ সাপ[৪] তাকে অনুসরণ করেছিল। এরা প্রচুর শিশু সাপের জন্ম দিয়েছিল। এই ঘটনায় ৮০টির উপর বাচ্চার একটি ঝাঁক পাওয়ার তথ্য প্রমাণ রয়েছে। ৫০-৬০টি শিশু সাপের একসাথে জন্ম হওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। নবজাতকরা দৈর্ঘে ১২.৫ থেকে ১৭.৫ সেন্টিমিটার হয়।[১২] পূর্নবয়স্ক খুব বড় নমুনাগুলি বিশেষত পূর্ব আফ্রিকা থেকে প্রাপ্র পূর্ন দৈর্ঘ্যের সাপগুলি সবচাইতে বেশি সংখ্যক বাচ্চার জন্ম দেয়। চেকোলোভাস্কিয়ার (Czech) একটি চিড়িয়াখানায় অবস্থিত কেনিয়া থেকে প্রাপ্ত একটি স্ত্রী পাফ্ অ্যাডার এর ১৫৬টি শিশু সাপের জন্ম দেওয়ার নজির রয়েছে, যেটি যে কোনো প্রজাতির যা কোন সাপের বাচ্চা জন্ম দেওয়ার নথি অনুসারে সর্ববৃহত।[৪][৬]

বন্দীত্ব[সম্পাদনা]

এই প্রজাতির সাপেরা বন্দী দশায়ও ভালভাবে বাস করতে পারে। তবে বন্দিত্ব অবস্থায় এদের মধ্যে অত্যধিক পরিমাণে খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ১৯৬৯ সালে Kauffeld এর সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বন্দী দশায় থাকা নমুনাগুলিকে সপ্তাহে একটি করে ইঁদুর খাওয়ানোর জন্য দিয়েও বছরের পর বছর চালিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু যখনই এদেরকে প্রচুর পরিমাণে খাবার একসাথে দেওয়া হচ্ছে, অতিমাত্রিক খাদ্যগ্রহণ প্রবণতার হলে অনেকক্ষেত্রে এদের মৃত্যু ঘটতে অথবা একসাথে পুরো খাবারটা উগড়ে দিতেও দেখা গেছে।[৮] পাফ্ অ্যাডাররা সাধারণ ভাবে বদমেজাজি এবং কিছু নমুনা এই চূড়ান্ত বদমেজাজের কারণে কখনই বন্দিত্ব দশায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করতে পারে না; প্রতিমুহুর্তেই এদেরকে রাগে ফুলতে এবং তীব্র হিস শব্দ করতে দেখা যায়।[৪]

বিষ[সম্পাদনা]

সর্পাঘাতের ভয়ংকরতা এবং আধিক্যের ব্যাপারে এই পাফ্ অ্যাডার প্রজাতির সাপেরা আফ্রিকার যে কোনো প্রজাতির সাপের চাইতে অনেক এগিয়ে রয়েছে। সমস্ত আফ্রিকা জুড়ে এই প্রজাতির সর্পাঘাতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা সবচেয়ে বেশি। এর কারণ হিসাবে অনেকগুলি বিষয়কে তুলে ধরা যায় যেমন- বিস্তৃত ক্ষেত্র জুড়ে এদের সক্রিয় অবস্থান, মানুষের বিভিন্ন বাসভূমিতে এদের প্রতিনিয়ত আবির্ভাব, এদের বিশাল আকৃতি, প্রচুর পরিমাণে স্থায়ী বিষ উৎপন্ন হওয়া, সুদীর্ঘ বিষদাঁত, মানুষের সাধারণ পায়ে চলার পথে এদের রোদ পোয়ানোর অভ্যাস এবং কেউ এদের দিকে এগিয়ে আসার সময় চুপচাপ নিশ্চল হয়ে বসে থাকা। এদের এই নিশ্চল হয়ে বসে থাকার কারণে এদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায় না এবং সেই কারণে সর্পাঘাতের সম্ভবনা অধিক হয়ে যায়।[৩][৪][৬]

এদের বিষের ধরন সাইটোটক্সিক এবং দেহকোষের উপর প্রভাবশীল।[১৩] লেথাল ডেনসিটি ৫০(এলডি50) নির্ভর করে যে কোনো ভাইপারদের মধ্যে অন্যতম বিষাক্ত [৩] এদের বিষ। ইঁদুরের উপর এদের বিষের প্রয়োগে প্রাপ্ত এলডি50 র মান ভিন্ন ভিন্ন রকমের দেখা গেছে; ০.৪ থেকে ২.০মিগ্রা/কেজি ইন্ট্রাভেনাস, ০.৯ থেকে ৩.৭মিগ্রা/কেজি ইন্ট্রাপেরিটোনিয়াল এবং ৪.৪ থেকে ৭.৭মিগ্রা/কেজি সাবকিউটেনিয়াস।[১৪] ২০০৩ সালে 'ম্যালো' (Mallow) এবং তার সঙ্গীরা একটি এলডি50 ব্যাপ্তি নির্ধারণ করেন যা হল ১.০-৭.৭৫মিগ্রা/কেজি সাবকিউটেনিয়াস।এই প্রজাতির সাপের বিষথলিতে উৎপন্ন বিষের আদর্শ পরিমাণ ১০০-৩৫০মিগ্রা এবং সর্বোচ্চ পরিমাণ ৭৫০মিগ্রা পর্যন্ত হতে পারে।[৩] ব্রাউন ১৯৭৩ সালে উল্লেখ করেছেন বিষথলিতে প্রাপ্ত বিষের পরিমাণ ১৮০-৭৫০মিগ্রা।[১৪] পাফ্ অ্যাডার এর প্রায় ১০০মিগ্রা বিষ একজন সুঠাম স্বাস্থ্যবান পূর্ণবয়স্ক পুরুষমানুষকে মোটামুটি ২৫ ঘণ্টা পর হত্যা করতে পারে এমনটাই ভাবা হয়।

এই প্রজাতির সাপের কামড়ে মানবদেহে প্রচুর স্থানীয় এবং শরীরের বিভিন্ন 'তন্ত্রে' উপসর্গ দেখা যায়। স্থানীয় প্রতিক্রিয়ার ধরন অনুসারে সর্পাঘাতকে দুটি উপসর্গ জনিত ভাগে বিভক্ত করা যায়; দেহত্বক এর উপরিভাগে অল্প রক্তক্ষরণ অথবা রক্তপাতহীন এবং দেহের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ ও ফুলে ওঠা। দুটি ক্ষেত্রেই প্রচন্ড ব্যথা হয়। তবে পরবর্তী ক্ষেত্রে দেহজুড়ে বাইরে বা অভ্যন্তরে ও গভীরে পচন বা নেক্রোসিস এবং "কম্পার্টমেন্ট সিনড্রোম" নামক জটিলতা দেখা যায়।[১৫] গুরুতর রকম কামড়ের ক্ষেত্রে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অনড়ভাবে নেতিয়ে যায় যার কারণে রীতিমত রক্তক্ষরণ অথবা আক্রান্ত মাংসপেশীগুলিতে রক্ত ঘনীভূত হওয়া বা জমাট বাঁধা বা রক্ত তঞ্চন ঘটে, তবে রেসিড্যুয়াল ইন্ডিউরেশন কদাচিৎ ঘটে।[৩]

মানবদেহে এই প্রজাতির সর্পাঘাতজনিত অন্যান্য লক্ষণগুলি হল ইডিমা বা দেহকোষে অতিরিক্ত জল বা তরল জমে যাওয়া(এটা চূড়ান্ত ভাবে ঘটতে পারে), তীব্র যন্ত্রনাবোধের সাথে জমাটবদ্ধ রক্ত তরল সহকারে চুঁইয়ে পড়া, বমি বমি ভাব এবং বমির উদ্বেগ হওয়া, চামড়ার নিচে ঘা হওয়া,রক্ত-ফোসকা( যা খুব দ্রুত গজিয়ে উঠতে পারে), স্থানীয় লিম্ফ নোডস গুলি ফুলে ওঠা এবং যন্তনা করা। কদিন পর দংশনসথান ছাড়া প্বার্শবর্তী অংশের ফোলা ভাব ধীরে ধীরে কমে যায়। এছাড়া রক্তচাপ ভীষণ কমে যাওয়া, দূর্বলতা, মাথা ঘোরা এবং মাঝেমধ্যে সংজ্ঞা হারানোর উপসর্গ ও দেখা যায়।[৩]

দংশনের পর ঠিকমতো চিকিৎসা না করালে, পচন ছড়িয়ে পড়তে পারে যার ফলে সুস্থ কোষগুলি থেকে চামড়ার নিচের কোষগুলি এবং পেশী আলাদা হয়ে যায় এবং পঁচা-গলা চামড়া এবং পেশী উঠে আসে। এই পচা চামড়া এবং মাংস উঠে আসাটা উপরিভাগ বা গভীরে হতে পারে, কখনো কখনো হাড় অবধি পঁচাগলা মাংস উঠে আসে। গ্যাংগ্রিন ও গভীর সংক্রমণ খুব সাধারণ ভাবেই ঘটে থাকে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই অঙ্গহানির ঘটনা দেখা যায়।[৩][৪][৬]

বিষের ভয়াবহতার মাত্রা ভীষণভাবে নির্ভর করে কামড়ের তীব্রতা এবং আরো কয়েকটি বিষয়ের উপর। মৃত্যুহার খুবই কম, নগণ্য বলা চলে, খুব ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে মৃত্যু ঘটে। বিষক্রিয়ার পর চিকিৎসা করা হয় না এমন ঘটনাগুলির ১০% এরও কম ক্ষেত্রে মৃত্যু হতে পারে। যে ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রগুলিতে মৃত্যু হয়, সেক্ষেত্রে মৃত্যু হয় রক্তের আয়তনের ঘাটতি হয় বা রক্তবাহ নালিকাতে রক্ত ঘন হয়ে জমাট বেঁধে গেলে।এই জাতীয় জটিলতা দেখা দিলে সাধারণত তার ২ থেকে ৪ দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়। তবে এই জাতীয় সম্ভাবনা খুবই কম। কিছু নথিতে দেখানো হয়েছে যে তীব্রতম বিষক্রিয়ার ক্ষেত্রে মৃত্যুহার ৫২%।[২][১৬] তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যুর কারণ হল চিকিৎসাতে গাফিলতি।[৪][৬]

উপপ্রজাতি[সম্পাদনা]

উপপ্রজাতি[৫] Taxon author[৫] সাধারণ নাম ভৌগোলিক বিস্তৃতি
B. a arietans (Merrem, 1820) পাফ্ অ্যাডার আফ্রিকাসহ উত্তর মরক্কো থেকে কেপ প্রভিন্স দক্ষিণ আফ্রিকা, দক্ষিণ-পশ্চিম আরব [৩][৪]
B. a. somalica Parker, 1949 সোমালিয়া পাফ্ অ্যাডার সোমালিয়া, উত্তর কেনিয়া[৩]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

সংগৃহীত চিত্র[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. McDiarmid RW, Campbell JA, Touré T. 1999. Snake Species of the World: A Taxonomic and Geographic Reference, Volume 1. Herpetologists' League. 511 pp. আইএসবিএন ১-৮৯৩৭৭৭-০০-৬ (series). আইএসবিএন ১-৮৯৩৭৭৭-০১-৪ (volume).
  2. U.S. Navy. 1991. Venomous Snakes of the World. US Govt. New York: Dover Publications Inc. 203 pp. আইএসবিএন ০-৪৮৬-২৬৬২৯-X.
  3. Mallow D, Ludwig D, Nilson G. 2003. True Vipers: Natural History and Toxinology of Old World Vipers. Krieger Publishing Company, Malabar, Florida. 359 pp. আইএসবিএন ০-৮৯৪৬৪-৮৭৭-২.
  4. Spawls S, Howell K, Drewes R, Ashe J. 2004. A Field Guide to the Reptiles Of East Africa. A & C Black Publishers Ltd., London. 543 pp. আইএসবিএন ০-৭১৩৬-৬৮১৭-২.
  5. "Bitis arietans"ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্সোনোমিক ইনফরমেশন সিস্টেম। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০০৬ 
  6. Spawls S, Branch B. 1995. The Dangerous Snakes of Africa. Ralph Curtis Books. Dubai: Oriental Press. 192 pp. আইএসবিএন ০-৮৮৩৫৯-০২৯-৮.
  7. Fichter GS. 1982. Venomous Snakes. (A First Book). Franklin Watts. 66 pp. আইএসবিএন ০-৫৩১-০৪৩৪৯-৫.
  8. Kauffeld C. 1969. Snakes: The Keeper and the Kept. Garden City, New York: Doubleday & Company, Inc. 248 pp. LCCCN 68-27123.
  9. Bitis arietans at Munich AntiVenom INdex. Accessed 2 August 2007.
  10. Chambers Murray Latin-English Dictionary (1976)
  11. Bitis arietans at the TIGR Reptile Database. সংগ্রহের তারিখ 2 August 2007
  12. Mehrtens JM. 1987. Living Snakes of the World in Color. New York: Sterling Publishers. 480 pp. আইএসবিএন ০-৮০৬৯-৬৪৬০-X.
  13. Widgerow AD, Ritz M, Song C. 1994. Load cycling closure of fasciotomies following puff adder bite. European Journal of Plastic Surgery 17: 40-42. Summary[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] at Springerlink ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে
  14. Brown JH. 1973. Toxicology and Pharmacology of Venoms from Poisonous Snakes. Springfield, Illinois: Charles C. Thomas. 184 pp. LCCCN 73-229. আইএসবিএন ০-৩৯৮-০২৮০৮-৭.
  15. Rainer PP, Kaufmann P, Smolle-Juettner FM, Krejs GJ (২০১০)। "Case report: Hyperbaric oxygen in the treatment of puff adder (Bitis arietans) bite"Undersea & Hyperbaric Medicine : Journal of the Undersea and Hyperbaric Medical Society, Inc37 (6): 395–398। পিএমআইডি 21226389। ৩০ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০১৬ 
  16. Davidson, Terence। "IMMEDIATE FIRST AID"। University of California, San Diego। ২০১২-০৪-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-১৪ 

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

  • Boulenger GA. 1896. Catalogue of the Snakes in the British Museum (Natural History). Volume III., Containing the...Viperidæ. London: Trustees of the British Museum (Natural History). (Taylor and Francis, printers.) xiv + 727 pp. + Plates I.- XXV. (Bitis arietans, pp. 493–495.)
  • Branch, Bill. 2004. Field Guide to Snakes and Other Reptiles of Southern Africa. Third Revised edition, Second impression. Sanibel Island, Florida: Ralph Curtis Books. 399 pp. আইএসবিএন ০-৮৮৩৫৯-০৪২-৫. (Bitis arietans, pp. 114–115 + Plates 3, 12.)
  • Broadley DG, Cock EV. 1975. Snakes of Rhodesia. Zimbabwe: Longman Zimbabwe Ltd. 97 pp.
  • Broadley DG. 1990. FitzSimons' Snakes of Southern Africa. Parklands (South Africa): J Ball & AD Donker Publishers. 387 pp.
  • Merrem B. 1820. Versuch eines Systems der Amphibien: Tentamen Systematis Amphibiorum. J.C. Krieger. Marburg. xv + 191 pp. + 1 plate.
    ("Vipera. Echidna. arietans", p. 152.)
  • Pienaar U de V. 1978. The reptile fauna of Kruger National Park. National Parks Board of South Africa. 19 pp.
  • Sweeney RCH. 1961. Snakes of Nyasaland. Zomba, Nyasaland: The Nyasaland Society and Nyasaland Government. 74 pp.
  • Turner RM. 1972. Snake bite treatment. Black Lechwe 10 (3): 24–33.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]