ম্গার বংশ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ম্গার বংশ সপ্তম শতাব্দীর দ্বিতীয় ভাগে তিব্বত সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল।

উৎপত্তি[সম্পাদনা]

ম্গার বংশের উৎপত্তি সম্বন্ধে অনেকরকম ধারণা করা হয়। কিছু মতে এই পরিবার প্রাগৈতিহাসিক ঙ্গাস-পো রাজ্যের অধিবাসী ছিলেন। ব্লোন-পো-ব্কা-থাং গ্রন্থে তাঁদের বা-গোরের বাসিন্দা বলা হয়েছে।[n ১] কোন কোন মতে ম্গার-স্রোং-র্ত্সানের জন্ম স্তোদ-লুঙ্গের নিকটে ল্দিং-খার নিকটে।

ম্গার-স্রোং-র্ত্সান[সম্পাদনা]

তিব্বত সম্রাট স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পোর মন্ত্রীদের মধ্যে ম্গার-স্রোং-র্ত্সান সম্বন্ধে পুরাতন তিব্বতী বর্ষানুক্রমিক ইতিবৃত্ত গ্রন্থে সচেয়ে বেশিবার উল্লেখ করা হয়েছে। স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পোর এক মন্ত্রী খ্যুং-পো-স্পুং-সাদ-জু তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলে ম্গার-স্রোং-র্ত্সান সেই কথা স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পোকে জানালে তিনি সম্রাটের বিশ্বাসভাজন হয়ে মন্ত্রীত্ব লাভ করেন। [২]

৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পো ট্যাং সম্রাট ট্যাং তাইজংয়ের নিকট ম্গার-স্রোং-র্ত্সানকে দূত হিসেবে পাঠিয়ে চীনের যে কোন একজন রাজকুমারীকে বিবাহ করার প্রার্থনার পুনর্বিবেচনা করার প্রস্তাব দেন,[৩][৪] যার ফলশ্রুতিতে ৬৪১ খ্রিষ্টাব্দে ওয়েংচেন গোংঝুর সাথে স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পোর বিবাহ হয়। [৫] স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পোর মৃত্যু হলে তিনি সাম্রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত হন। ৬৫৯ থেকে ৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি তুয়ুহুন রাজ্যে থেকে এই রাজ্যটিকে সম্পূর্ণরূপে তিব্বতের অধীনে আনেন। ৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাধর্ক্যের কারণে অবসর নিলে তাঁর জায়গায় 'ও-মা-ল্দে-খ্রি-ব্জাং-লোদ-ব্ত্সান দায়িত্ব নেন কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হলে ম্গার-স্রোং-র্ত্সান আবার দায়িত্ব নেন। [২]

ম্গার-স্রোং-র্ত্সানের পুত্ররা[সম্পাদনা]

৬৮৮ খ্রিষ্টাব্দে ম্গার-স্রোং-র্ত্সানের মৃত্যু হলে তাঁর পদে দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁর পুত্র ম্গার-ব্ত্সান-স্ন্যা-ল্দোম-বুকে। [২] তিনি ৬৭৬ খ্রিষ্টাব্দে তুর্কিস্তানে সৈন্য নিয়ে যুদ্ধে যান এবং ম্গার বংশের ম্গার-ব্ত্সান-ন্যেন-গুং-র্তোন খোটানে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। ৬৭৬ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট খ্রি-মাং-স্লোন-র্ত্সানের মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র খ্রি-দুস-স্রোং-ব্ত্সন মাত্র ছয় বছর বয়সে সিংহাসনে বসলে ম্গার-স্রোং-র্ত্সানের দ্বিতীয় পুত্র ম্গার-খ্রি-ব্রিং-ব্ত্সান-ব্রোদ সাময়িক ভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে ম্গার-ব্ত্সান-স্ন্যা-ল্দোম-বুর রহস্যময় মৃত্যু ঘটলে ম্গার-স্রোং-র্ত্সানের দ্বিতীয় পুত্র ম্গার-খ্রি-ব্রিং-ব্ত্সান-ব্রোদ তাঁর পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[২] দায়িত্ব নিয়ে ম্গার-খ্রি-ব্রিং-ব্ত্সান-ব্রোদ ৬৯০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তুর্কিস্তানে থাকেন ও তারপরে তুয়ুহুন রাজ্যে চলে যান। ৬৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ম্গার-স্রোং-র্ত্সানের অপর পুত্র ম্গার-স্তা-গু সোগদিয়াদের হাতে বন্দী হন এবং খোটান তিব্বতের হাতছাড়া হয়। এরফলে সম্রাট খ্রি-মাং-স্লোন-র্ত্সানের আদেশে ৬৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ম্গার-ব্ত্সান-ন্যেন-গুং-র্তোনের মৃত্যদন্ড দেওয়া হয়। [২]

৬৯৫ খ্রিষ্টাব্দে কোকো নরের নিকটে ম্গার-খ্রি-ব্রিং-ব্ত্সান-ব্রোদ ট্যাং সেনাদের পরাজিত করলে ট্যাং সাম্রাজ্য আলোচনায় বসতে বাধ্য হয়। এই আলোচনায় তিব্বতীরা দাবী করে যাতে চীনারা পশ্চিম তুর্কী খাগানাততারিম নদী উপত্যকার অধিকার ছেড়ে দেয়। অপরদিকে চীনারা পশ্চিম তুর্কী খাগানাত তিব্বতকে ছেড়ে দিতে চাইলেও তারিম নদী উপত্যকা নিজেদের অধিকারে রাখতে চায় ও তুয়ুহুন রাজ্যকোকো নর থেকে তিব্বতীদের চলে যেতে বলে। [২]

ক্ষমতা লোপ[সম্পাদনা]

৬৯৯ খ্রিষ্টাব্দে শিকারে বেরোনোর নাম করে খ্রি-দুস-স্রোং-ব্ত্সন তাঁর অনুগামীদের ম্গার বংশের সদস্যদের আক্রমণের আদেশ দিয়ে তাঁদের হত্যা করেন। এরপর নিজে উত্তরে সৈন্যবাহিনী নিয়ে গিয়ে ম্গার-খ্রি-ব্রিংয়ের সম্মুখীন হলে বিনা যুদ্ধে খ্রি-ব্রিং ও তাঁর বিশ্বস্ত অনুগামীরা আত্মসমর্পণ করেন ও জিউ ট্যাংসু গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী আত্মহত্যা করেন। [৬][৭]

তিব্বতের বিরুদ্ধে[সম্পাদনা]

ম্গার বংশের কিছু সদস্য সম্রাটের আক্রমণ থেকে পালিয়ে চীন চলে যেতে সক্ষম হন। চীনের ট্যাং সাম্রাজ্ঞী ঊ জেতিয়েন তাঁদের আশ্রয় দেন। জিউ ট্যাংসু গ্রন্থে এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের উল্লেখ আছে। যেমন এই বংশের ম্গার-জাংপো চীনের সীমান্ত রক্ষার জন্য তিব্বতের বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন এবং ম্গার-খ্রি-ব্রিং-ব্ত্সান-ব্রোদের পুত্র ম্গার-গোংগ্রেন ট্যাং সাম্রাজ্ঞী ঊ জেতিয়েনসম্রাট ট্যাং ঝংজংট্যাং রুইজংয়ের প্রধান উপদেষ্টাদের মধ্যে একজন ছিলেন। [২]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. বা গোর লা ব্লোন ল্ঙ্গা ব্যুং স্তে / ম্গার স্রোং ব্ত্সান য়ুল গ্জুং দাং / খ্রি ব্রিং ব্ত্সান স্রোল দাং / ব্ত্সান স্ন্যা ল্দোম বু দাং / খ্রি থোগ র্জে আ নু দাং / খ্রি স্গ্রা জিন লুং দাং ল্ঙ্গা /” [১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. উ র্গ্যান গ্লিং পা, ১৯৮৬: ৪৩৬–৪৩৭
  2. Kerihuel,Thomas . (1996) The early History of mGar: When History becomes Legend
  3. Lee, Don Y. The History of Early Relations between China and Tibet: From Chiu t'ang-shu, a documentary survey (1981) Eastern Press, Bloomington, Indiana. ISBN 0-939758-00-8pp. 7-9
  4. Pelliot, Paul. Histoire ancienne du Tibet (1961) Librairie d'Amérique et d'orient, Paris, pp. 3-4
  5. Powers, John. History as Propaganda: Tibetan Exiles versus the People's Republic of China (2004) Oxford University Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৫১৭৪২৬-৭, pp. 168-9
  6. Ancient Tibet: Research materials from the Yeshe De Project. 1986. Dharma Publishing, California. আইএসবিএন ০-৮৯৮০০-১৪৬-৩
  7. Lee, Don Y. (1981). The History of Early Relations between China and Tibet: From Chiu t'ang-shu, a documentary survey. Bloomington, IN: Eastern Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৯৩৯৭৫৮-০০-৫

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]