কেপলার-১১

কেপলার-১১

শিল্পীর কল্পনায় কেপলার-১১ এর তিনটি গ্রহের পরিক্রমণ নাসার নভোযান কর্তৃক ২৬ আগস্ট ২০১০ সালে আবিস্কারের পূর্বে।
পর্যবেক্ষণ তথ্য ইপক জে২০০০      বিষুব জে২০০০
তারামণ্ডল	সিগনাস
বিষুবাংশ	১৯ঘ ৪৮মি ২৭.৬২২সে
বিষুবলম্ব	+৪১° ৫৪′ ৩২.৮৭″
আপাত  মান (V)	১৪.২
জ্যোতির্মিতি
যথার্থ গতি (μ)	বি.বাং.: –০.৭ mas/yr বি.ল.: –৪.১ mas/yr
দূরত্ব	৬১৩ pc
বৈশিষ্ট্যসমূহ
বর্ণালীর ধরন	জি৬ভি
বিবরণ
ভর	০.৯৬১+০.০২৫ −০.০২৫ M☉
ব্যাসার্ধ	১.০৬৫+০.০১৭ −০.০২২ R☉
উজ্জ্বলতা	১.০৪৫+০.০৬১ −০.০৭৮ L☉
ভূপৃষ্ঠের অভিকর্ষ (log g)	৪.৩৬৬+০.০১৪ −০.০১৬<
তাপমাত্রা	৫৬৬৩+৫৫ −৬৬< K
ধাতবতা [Fe/H]	0 (± 0.1) dex
বয়স	৮.৫+১.১ −১.৪ Gyr
অন্যান্য বিবরণ
কেআইসি 6541920, KOI 157

কেপলার-১১ হচ্ছে একটি সূর্য সদৃশ নক্ষত্র, সূর্য থেকে সামান্য বড় ও এর অবস্থান সিগনাস নক্ষত্রপুঞ্জে, এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ২০০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।  এটা কেপলার মহাকাশযানের দৃষ্টি ক্ষেত্রের মধ্যে অবস্থিত, যে স্যাটেলাইটটি নাসার কেপলার মিশন ব্যবহার করে থাকে, সেই সব গ্রহ শনাক্ত করতে যারা তাদের নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণয়মান থাকে। ২রা ফেব্রুয়ারি,২০১১ সালে ঘোষিত তারকা মন্ডলটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে ঘন সন্নিবেশিত ও সমতল মন্ডল। ছয়টি পরিক্রমকারী গ্রহ সহ আবিষ্কৃত এটিই প্রথম তারকা মন্ডল। আবিষ্কৃত সবগুলো গ্রহই পৃথিবীর চেয়ে বড়, সবচেয়ে বড়টি প্রায় নেপচুনের সমান।

নামকরণ ও ইতিহাস

কেপলার-১১ ও তার গ্রহগুলো নাসার কেপলার মিশন দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল, মিশনের লক্ষ্য ছিল সেই সব গ্রহ শনাক্ত করা যারা তাদের তারকাকে পরিক্রমন করে থাকে। যে পরিক্রমন সূত্র কেপলার ব্যবহার করেছিল তা হচ্ছে নক্ষত্রদের  উজ্জলতার ঘাঢ়ত্ব শনাক্ত করা। এই উজ্জলতার ঘাঢ়ত্বকে পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে ব্যাখ্যা করা হয় সেই সব গ্রহের সাথে যারা তাদের কক্ষপথে তারকাকে পরিক্রমন করছে।  কেপলার-১১ হচ্ছে প্রথম আবিষ্কৃত গ্রহমণ্ডল যার তিনের অধিক পরিক্রমণকারী গ্রহ রয়েছে। 

কেপলার-১১ নামটি কেপলার মিশনের জন্য নামকরণ করা হয়: কেপলার এর দৃষ্টি ক্ষেত্রের মধ্যে এটি ১১তম তারকা যার সাথে গ্রহমন্ডল রয়েছে । গ্রহগুলোর বর্ণানুক্রমে নামকরণ করা হয়, অন্তরতম দিয়ে শুরু: বি, সি, ডি, ই, এফ, এবং জি, পৃথক করার জন্য কারণ তাদের নিজস্ব তারকার নামের সাথে জুড়ে দেয়া হয়।

কেপলার -১১ এর গ্রহ গুলোর কক্ষপথ মঙ্গল ও শুক্র গ্রহের কক্ষপথের সাথে তুলনীয়।

বৈশিষ্ট্য

কেপলার -১১ একটি জি-টাইপ নক্ষত্র যা প্রায় সূর্যের ভরের ৯৬% এবং সূর্যের ব্যাসার্ধের ১০৭% । এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৫৬৬৩ কেলভিন এবং   বয়স আনুমানিক ৮.৫ বিলিয়ন বছর। এর তুলনায়, সূর্য ৪.৬ বিলিয়ন বছর বয়সী এবং সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৫৭৭৮ কেলভিন।

নক্ষত্রটির আপাত বিস্মৃতি, অথবা এর উজ্জলতা যা পৃথিবী থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তার মান ১৩.৭। ফলে, এটা খালি চোখে দৃশ্যমান নয়।

গ্রহমণ্ডল

আবিষ্কৃত সকল গ্রহই নক্ষত্রকে পরিক্রমন করছে; এর মানে ছয়টি গ্রহই কক্ষপথে পরিক্রমনের সময় নক্ষত্রের সামনের দিক যা পৃথিবী থেকে প্রতীয়মান হয় সেখান দিয়ে অতিক্রম করে। তাদের নতি পৃথিবীর  দর্শন রেখার তুলনায়, বা দৃষ্টি সমতলের কতটুকু  উপরে বা নিচে তার জন্য, এক ডিগ্রীর সামান্য বেশি পরিমানে পরিবর্তিত হয়. এটাই সরাসরি গ্রহগুলোর আবর্তন ও নক্ষত্রের আপেক্ষিক পরিধির(তাদের প্রধান নক্ষত্রের তুলনায়) পর্যবেক্ষণে ব্যবহার করা হয়. সিমিউলেশানে অনুমান হয় যে গ্রহগুলোর কক্ষপথের গড় পারস্পরিক প্রবণতা প্রায় ১ °, যার অর্থ সিস্টেমটি সৌরজগৎের তুলনায়  অধিক সমতল, তুলনামুলক চিত্র হচ্ছে ২.৩°।

বি থেকে এফ গ্রহগুলোর আনুমানিক ভর পৃথিবী থেকে নেপচুনের ভরের মতই। তাদের আনুমানিক ঘনত্ব, সবারই পৃথিবীর চেয়ে কম, অর্থাৎ তাদের কারো গঠনই পৃথিবীর মত নয়।  একটি উল্লেখযোগ্য হাইড্রোজেন বায়ুমণ্ডল, গ্রহ ডি, ই এবং সম্ভবত এফ তে রয়েছে , বি এবং সি সম্ভবত যথেষ্ট পরিমানে বরফ এবং কার্বন বা হিলিয়াম বা উভয়ই রয়েছে। নিম্ন ঘনত্বের কারণ সম্ভবত উচ্চমানের বর্ধিত পরিবেশ যা আয়রন , রক, অথবা উভয়ের কোর ঘেরা। কেপলার-১১ সিস্টেমের ভেতরের গঠন, তার আবিস্কারের সময়, ছিল সৌরজগৎের বাইরে নেপচুনের চেয়ে ছোট গ্রহের মধ্যে সবচেয়ে বিশদ।

সিস্টেমটি জ্ঞাত গুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিবিড় ; বি থেকে এফ গ্রহগুলোর কক্ষপথ খুব সহজেই বুধ গ্রহের কক্ষপথে এটে যাবে, শুধু জি গ্রহটাই এর বাইরে থাকবে।কক্ষপথ গুলোর এই আঁটসাঁট অবস্থান স্বত্বেও , গতিশীলতার ঐক্যবদ্ধতা ইঙ্গিত করে যে  সিস্টেমটি বিলিয়ন বিলিয়ন বছর স্থিতিশীল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। 

কোন গ্রহতেই কম অনুপাতের কক্ষপথের অনুরণন নেই, যাতে একাধিক গ্রহ মহাকর্ষীয় টানে একে অপরের কক্ষপথে স্থির থাকে , ফলে তাদের কক্ষপথের আবর্তনের সরল অনুপাত রয়েছে। যেমন বি ও সি এর অনুপাত প্রায় ৫:৪ ।

সিস্টেমটিতে আরও গ্রহ থাকতে পারে যারা তাদের নক্ষত্রকে পরিক্রমন করে না। দৃশ্যমান গ্রহ গুলোর গতিতে তাদের মাধ্যাকর্ষণ প্রভাব পড়লে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে  (নেপচুন যে ভাবে আবিষ্কৃত হয়েছিল)।

গ্রহ	ভর (ME)	পরিধি (RE)	ঘনত্ব (g/cm3)	কক্ষীয় পর্যায়কাল (দিন)	পরাক্ষ (AU)	উৎকেন্দ্রিকতা	নতি (°)	আবিষ্কারের বর্ষ
বি	১.৯+১.৪ −১.০	১.৮+০.০৩ −০.০৫	১.৭২+১.২৫ −০.৯১	১০.৩০৩৯+০.০০০৬ −০.০০১০	০.০৯১+০.০০১ −০.০০১	০.০৪৫+০.০৬৮ −০.০৪২	৮৯.৬৪+০.৩৬ −০.১৮	2011
সি	২.৯+২.৯ −১.৬	২.৮৭+০.০৫ −০.০৬	০.৬৬+০.৬৬ −০.৩৫	১৩.০২৪১+০.০০১৩ −০.০০০৮	০.১০৭+০.০০১ −০.০০১	০.০২৬+০.০৬৩ −০.০১৩	৮৯.৫৯+০.৪১ −০.১৬	২০১১
ডি	৭.৩+০.৮ −১.৫	৩.১২+০.০৬ −০.০৭	১.২৮+০.১৪ −০.২৭	২২.৬৮৪৫+০.০০০৯ −০.০০০৯	০.১৫৫+০.০০১ −০.০০১	০.০০৪+০.০০৭ −০.০০২	৮৯.৬৭+০.১৩ −০.১৬	২০১১
ই	৮.০+১.৫ −২.১	৪.১৯+০.০৭ −০.০৯	০.৫৮+০.১১ −০.১৬	৩১.৯৯৯৬+০.০০০৮ −০.০০১২	০.১৯৫+০.০০২ −০.০০২	০.০১২+০.০০৬ −০.০০৬	৮৯.৮৯+০.০২ −০.০২	২০১১
এফ	২.০+০.৮ −০.৯	২.৪৯+০.০৪ −০.০৭	০.৬৯+০.২৯ −০.৩২	৪৬.৬৮৮৮+০.০০২৭ −০.০০৩২	০.২৫০+০.০০২ −০.০০২	০.০১৩+০.০১১ −০.০০৯	৮৯.৪৭+০.০৪ −০.০৪	২০১১
জি	<300	৩.৩৩+০.০৬ −০.০৮	<4	১১৮.৩৮০৭+০.০০১০ −০.০০০৬	০.৪৬৬+০.০০৪ −০.০০৪		৮৯.৮৭+০.০৫ −০.০৬	২০১১

কেপলার-১১ এর ৬টি গ্রহের পারস্পরিক আকার ও অবস্থান, এবং তুলনার জন্য সৌর জগতের সবচেয়ে ভেতরের অংশ। গ্রহগুলোর পরিধি (নক্ষত্র বাদে) ৫০ এর এককে নির্ধারণ করা হয়েছে।

আরো দেখুন

• কেপলার মিশন
• গ্লিজে ৫৮১
• ৫৫ ক্যানক্রি
• এইচডি ১০১৮০

বহিঃসংযোগ

• Official release: NASA's Kepler Spacecraft Discovers Extraordinary New Planetary System ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে
• YouTube: Animation of Kepler-11 planetary system
• Kepler 11 Planetary System with Orbits and Planet Sizes