কেইপ লবস্টার (স্কন্ধাবরণ গলদা চিংড়ি)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কেইপ লবস্টার (Cape lobster)
Herbst's 1792 illustration[Note ১]
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Arthropoda
উপপর্ব: Crustacea
শ্রেণী: Malacostraca
বর্গ: Decapoda
পরিবার: Nephropidae
গণ: Homarinus
Kornfield, Williams & Steneck, 1995 [২]
প্রজাতি: H. capensis
দ্বিপদী নাম
Homarinus capensis
(Herbst, 1792) [৩]
প্রতিশব্দ [৪]
  • Cancer (Astacus) capensis Herbst, 1792
  • Astacus fulvus Fabricius, 1793
  • Homarus fulvus: Weber, 1795
  • Astacus capensis: Latreille, 1802
  • Cancer (Astacus) fulvus: Turton, 1806

কেইপ লবস্টার (বৈজ্ঞানিক নাম-Homarinus capensis) নেফ্রপিডি পরিবারভুক্ত এক প্রজাতির গলদা চিংড়িডেকাপোডা গোত্রীয় এ প্রজাতির গলদা চিংড়ির বসবাস মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলবর্তী দ্বীপ অঞ্চলে। জলের উপরিভাগে থাকা মাছ এদের মধ্যে অধিকাংশকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। এই গলদা চিংড়িগুলো কঠিন প্রবালপ্রাচীরের উপর বাস করে এবং মনে করা হয় এটি সেখানেই ডিম পাড়ে। পরবর্তীতে ডিমগুলো পরিস্ফুটিত হয়ে স্বল্পকালীন লার্ভা দশা প্রাপ্ত হয় এবং শিশু চিংড়ি বেরিয়ে আসে। পূর্ণবয়স্ক কেইপ লবস্টার দৈর্ঘ্যে প্রায় ১০সে.মি (৩.৯ ইঞ্চি) লম্বা হয় এবং দেখতে আমেরিকান লবস্টার (ইংরেজি- American lobster, বৈজ্ঞানিক নাম- Homarus americanus) সদৃশ হয়। কেইপ লবস্টার প্রজাতি পূর্বে হুমারাস গণেরই অন্তুর্ভুক্ত ছিল যদিও এই গণের অন্তর্ভুক্ত প্রজাতির প্রাণীদের বৈশিষ্ট্যের সাথে কেইপ লবস্টার প্রজাতির বৈশিষ্ট্যের পুর্ণাঙ্গ মিল ছিল না। পরবর্তীতে কেইপ লবস্টার প্রজাতির প্রাণীদের আলাদা করা হয় এবং হুমারিনাস নামক গণের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। থিমপস এবং থিমপিডিস গণের সাথে এই গণের বৈশিষ্ট্যের সর্বাপেক্ষা বেশি মিল পাওয়া যায়।

বিতরণ ও বাস্তুসংস্থান[সম্পাদনা]

দক্ষিণ আফ্রিকার ড্যাসেন আইল্যান্ড থেকে হাগা হাগা অঞ্চল পর্যন্ত সর্বাধিক পরিমাণে Homarinus capensis পাওয়া যায়।

কেইপ লবস্টার দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলীয় অঞ্চল জাত। এটি দক্ষিণ আফ্রিকার ড্যাসেন আইল্যান্ড, ওয়েস্টার্ন কেইপ এবং ইস্টার্ন কেইপ হতে ৯০০ কিলোমিটার (৫৬০ মাইল)[৫] পর্যন্ত পাওয়া যায়। জলের উপরিভাগ থেকে ২০-৪০ মিটার (৬৬-১৩১ ফিট)[৫] গভীরে থাকা মাছ এদের মধ্যে অধিকাংশ প্রজাতিকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। বলা হয়ে থাকে যে, কেইপ লবস্টার নিম্নস্তরের শিলায় বসবাস করে যে জায়গায় কর্দমাদি তোলা বা মাছ ধরা হয় না এবং এই প্রজাতির প্রাণীগুলো চিংড়ি ফাঁদে ধরা পড়ার জন্য খুবই ছোট।[৫]

বর্ণনা[সম্পাদনা]

আটলান্টিক মহাসাগরের নর্দান লবস্টার অপেক্ষা কেইপ লবস্টার আকারে ছোট হয়। ইউরোপিয়ান লবস্টার (বৈজ্ঞানিক নাম- Homarus gammarus) এবং আমেরিকান লবস্টার(বৈজ্ঞানিক নাম-"Homarus americanus") দৈর্ঘ্যে ৮-১০সে.মি(১.৬-২.০ইঞ্চি)[৪][৬] লম্বা হয়। কেইপ লবস্টার প্রজাতিভুক্ত চিংড়িগুলো ইউরোপিয়ান লবস্টার এর ন্যায় বিভিন্ন রঙ এর হয়ে থাকে। এরা সাধারণত লাল, হলুদপিঙ্গলবর্ণের হয়ে থাকে[৭]

নেফ্রোপিডি পরিবার অন্তর্ভুক্ত হুমারিনাসহুমারাস গণভুক্তদের মাঝেই এই পরিবারের সবচেয়ে বেশি বংশানুক্রমিক বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।[৮] তবু, হুমারাস গণভুক্ত প্রজাতির সাথে কেইপ লবস্টার প্রজাতির দৈহিক ও চারিত্রিক ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। কেইপ লবস্টারের ক্ষেত্রে, তাদের রস্ট্রাম চ্যাপ্টা ধরনের হয়ে থাকে, তিন জোড়া নখর[Note ১] লোমযুক্ত থাকে। অন্যদিকে হুমারাস গণভুক্ত প্রজাতির রস্ট্রাম আকৃতিতে গোল হয় ও বাকানো অবস্থায় মাথা[৫] পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, এদের নখরে লোম থাকে না।[৪] স্ত্রী কেইপ লবস্টার আকৃতিতে ইউরোপিয়ান লবস্টারআমেরিকান লবস্টার অপেক্ষা বড় হয়। [৫]কেইপ লবস্টার প্রজাতির চিংড়িগুলো হুমারাস গণভুক্ত চিংড়ি অপেক্ষা কম ডিম ধারণ করে। পরবর্তীতে ডিমগুলো স্বল্পকালীন লার্ভা দশা প্রাপ্ত হয় বা সরাসরি ডিম ফুটে শিশু চিংড়ি বেরিয়ে আসে।[৫][১০]

শ্রেনীবিন্যাস ও বিবর্তন[সম্পাদনা]

কেইপ লবস্টার খুবই দুর্লভ ও বিরল। ১৭৯২ খিষ্টাব্দ হতে ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এর চৌদ্দটি প্রজাতি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।[৭] এদের মধ্যে পাঁচটি পুরুষ জাত দ্য সাউথ আফ্রিকান মিউজিয়াম (কেইপ টাউন), দুইটি জাত দি ন্যাচারাল হিস্টরি মিউজিয়াম (লন্ডন), এবং একটি জাত ইস্ট লন্ডন মিউজিয়াম, দি ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টরি (ডাচ- রাইকজমিউজিয়াম ভ্যান ন্যাচুয়ারলিকা হিস্টেরি), আলবানি মিউজিয়াম (গ্রাহামসটাউন)-এ সংরক্ষিত রয়েছে। দি ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্টরি (প্যারিস, ফ্রান্স)-এ একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী জাতের কেইপ লবস্টার রয়েছে।[৬] ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে ড্যাসেন আইল্যান্ড-এ এক প্রকার কেইপ লবস্টার এর সন্ধান পাওয়া যায় এবং পরবর্তীতে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে নতুন ২০ প্রকারের প্রজাতির অস্তিত্ব অনুমান করা হয়।[৫]

১৭৯২ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান পরিবেশবিদ জোহান ফ্রিডরিখ উইলহেম হার্বস্ট সর্বপ্রথম কেইপ লবস্টারকে কাঁকড়া (বৈজ্ঞানিক নাম- "Astacus capensis" হিসেবে বর্ণনা দেন।[৯][১১] পরবর্তীতে জোহান ক্রিস্টিয়ান ফ্রেব্রিসিয়াস এটিকে কাঁকড়া (বৈজ্ঞানিক নাম- "Astacus flavus") হিসেবে বর্ণনা দেন।[৯] ১৭৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রেডরিখ ওয়েবার কর্তৃক হুমারাস গণ আবিষ্কার হওয়ার পর তিনি ফেব্রিসিয়াস প্রজাতিকে এই গণের অন্তর্ভুক্ত করলেন, যদিও পরবর্তীকালে কোনো গ্রন্থকার তা অনুসরণ করেননি।[৯] ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ইর্ভ কর্নফিল্ড, অস্টিন উইলিয়ামস এবং রবার্ট স্টিনেক হুমারিনাস গণ আবিষ্কার হওয়ার পর কেইপ লবস্টার প্রজাতির শ্রেনীবিন্যাস করা হয় যা এখনও প্রচলিত আছে।[৭]

অঙ্গসংস্থানবিদ্যা পর্যালোচনার মাধ্যমে ধারণা করা হয়েছিল যে, হুমারিনাসহুমারাস গণ দুটির মধ্যে বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ-এর আণবিক বিশ্লেষণ-এ দেখা গিয়েছিল যে, তাদের বৈশিষ্ট্যে যথেষ্ট ভিন্নতা রয়েছে।[৮] উভয় গণ-এর কাটা ও পার্শ্বীয় পাখনায় বিচ্ছিন্ন সন্নিবেশ লক্ষ্য করা গেলেও এদের মধ্যে স্ব-স্ব এবং স্বাধীনভাবে বিবর্তন ঘটেছিল।[৮] মূলত, হুমারাস গণের সাথে নেফ্রপস গণের এবং হুমারিনাস গণের সাথে থিমপস এবং থিমপিডিস গণের বৈশিষ্ট্যের সর্বাধিক মিল পাওয়া যায়।[৮]

টীকা[সম্পাদনা]

  1. কোপেনহেগেন থেকে প্রেরিত ছবি অনুসারে জোহান ফ্রিডরিখ উইলহেম হার্বস্ট কেইপ লবস্টার এর পাঁচ জোড়া নখরের বর্ণনা করেছেন।[৯] পরবর্তীতে থমাস রস্কো রিড স্টেবিংও অন্যান্য লেখক দাবি করেন যে, কোপেনহেগেন থেকে প্রেরিত ছবিটি নিশ্চয়ই ত্রুটিপূর্ণ ছিল।[৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. A. Cockcroft, M. Butler, T. Y. Chan, A. MacDiarmid & R. Wahle (২০১১)। "Homarinus capensis"বিপদগ্রস্ত প্রজাতির আইইউসিএন লাল তালিকা। সংস্করণ 2011.2প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১, ২০১২ 
  2. "Homarinus Kornfield, Williams and Steneck, 1995"ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্সোনোমিক ইনফরমেশন সিস্টেম। সংগ্রহের তারিখ জুন ২৫, ২০১১ 
  3. "Homarinus capensis (Herbst, 1792)"ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্সোনোমিক ইনফরমেশন সিস্টেম। সংগ্রহের তারিখ জুন ২৫, ২০১১ 
  4. Lipke B. Holthuis (১৯৯১)। Homarus Weber, 1795 (PDF)Marine Lobsters of the World। FAO Fisheries Synopsis No. 125। Food and Agriculture Organization। পৃষ্ঠা 57–60। আইএসবিএন 92-5-103027-8 [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. Ryusuke Kado, Jiro Kittaka, Yasuhiro Hayakawa & D. E. Pollock; Kittakai; Hayakawai (১৯৯৪)। "Recent discoveries of the "rare" species Homarus capensis (Herbst, 1792) on the South African coast"। Crustaceana67 (1): 71–75। জেস্টোর 20104967ডিওআই:10.1163/156854094x00305 
  6. Torben Wolff (১৯৭৮)। "Maximum size of lobsters (Homarus) (Decapoda, Nephropidae)"। Crustaceana34 (1): 1–14। জেস্টোর 20103244ডিওআই:10.1163/156854078x00510 
  7. Irv Kornfield; Austin B. Williams (১৯৯৫)। "Assignment of Homarus capensis (Herbst, 1792), the Cape lobster of South Africa, to the new genus Homarinus (Decapoda: Nephropidae)" (PDF)Fishery Bulletin93: 97–102। 
  8. Dale Tshudy, Rafael Robles, Tin-Yam Chan, Ka Chai Ho, Ka Hou Chu, Shane T. Ahyong & Darryl L. Felder (২০০৯)। "Phylogeny of marine clawed lobster families Nephropidae Dana, 1852, and Thaumastochelidae Bate, 1888, based on mitochondrial genes"। Joel W. Martin, Keith A. Crandall & Darryl L. Felder। Decapod Crustacean PhylogeneticsCRC Press। পৃষ্ঠা 357–368। আইএসবিএন 978-1-4200-9258-5ডিওআই:10.1201/9781420092592-c18 
  9. L. B. Holthuis (১৯৮৬)। "J. C. Fabricius' (1798) species of Astacus, with an account of Homarus capensis (Herbst) and Eutrichocheles modestus (Herbst) (Decapoda Macrura)" (PDF)Crustaceana50 (3): 243–256। ডিওআই:10.1163/156854086X00278 
  10. Bruce F. Phillips (২০০৬)। Lobsters: Biology, Management, Aquaculture and FisheriesJohn Wiley & Sons। পৃষ্ঠা 62। আইএসবিএন 978-1-4051-2657-1 
  11. Tin-Yam Chan (২০১০)। Martyn E. Y. Low and S. H. Tan, সম্পাদক। "Annotated checklist of the world's marine lobsters (Crustacea: Decapoda: Astacidea, Glypheidea, Achelata, Polychelida)" (পিডিএফ)Zootaxa। Suppl. 23: 153–181। ১৬ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]