ব্যা, ব্যা, ব্ল্যাক শীপ

এটি একটি ভালো নিবন্ধ। আরও তথ্যের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
"ব্যা, ব্যা, ব্ল্যাক শীপ"
সঙ্গীত
ভাষাইংরেজি
ইংরেজি শিরোনামBaa, Baa, Black Sheep
রচিতইংল্যান্ড
প্রকাশিত১৭৪৪ খ্রিস্টাব্দ
গান লেখকঐতিহ্যগত
গীতিকার

ব্যা, ব্যা, ব্ল্যাক শীপ একটি ইংরেজি শিশুতোষ ছড়া, যা ১৭৩১ থেকে বর্তমান পর্যন্ত টিকে থাকা সংস্করণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো। বিগত দুইশত পঞ্চাশ বছরে ছড়াটির কিছু শব্দ পরিবর্তিত হয়েছে। ১৭৬১ সালের ফরাসী সঙ্গীত আহ! ভৌ দিরাই-জে, মামাঁ (Ah! vous dirai-je, maman)-এর সুরে ছড়াটি গাওয়া হয়। ছড়াটির ব্যাখ্যা সম্পর্কে বিভিন্ন অসমর্থিত তত্ত্ব প্রচলিত রয়েছে। যার মধ্যে মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডে ভেড়ার পশমের উপর কর-আরোপের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং দাসপ্রথা সম্পর্কে বক্তব্য রয়েছে। বিংশ শতাব্দীতে ছড়াটি রাজনৈতিক শুদ্ধতা সম্পর্কিত বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছিল। সাহিত্যে, জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে রূপকভাবে এবং ইঙ্গিতমূলকভাবে ছড়াটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রাউড ফোক সং ইনডেক্স ছড়াটির কথা এবং রূপান্তরগুলোকে ৪৪৩৯ নম্বরে শ্রেণিভুক্ত করেছে।

আধুনিক সংস্করণ[সম্পাদনা]

ছড়াটি ডরোথি এম. হুইলার কর্তৃক সচিত্রকরণ করা হয়েছে।

ছড়াটির আধুনিক সংস্করণ নিম্নরূপ:

ব্যা, ব্যা, ব্ল্যাক শীপ
হ্যাভ ইউ অ্যানি উল?
ইয়েস, স্যার, ইয়েস, স্যার,
ত্রি ব্যাগস ফুল;
ওয়ান ফর দ্যা মাস্টার,
এন্ড ওয়ান ফর দ্যা ডেইম,
এন্ড ওয়ান ফর দ্যা লিটল বয়
হু লিভস ডাউন দ্যা লেন.[১]

ছড়াটি একক স্তবক ও দ্বিমাত্রিক ছন্দে রচিত, সাধারণভাবে শিশুতোষ ছড়া যেরকম হয়ে থাকে। এই ছন্দ শিশুদের মুখস্থ রাখার জন্যেও সুবিধাজনক।[২] রৌড ফোক সং ইনডেক্স, লোকগানের তালিকা প্রস্তুত করে ছড়াটিকে ৪৪৩৯ নম্বরে শ্রেণিভুক্ত করেছে এবং এর রূপান্তরগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে গ্রেট ব্রিটেনউত্তর আমেরিকা জুড়ে।[৩]

মূল সংস্করণ[সম্পাদনা]

মাদার গুসেস মেলোডি থেকে ছড়াটির অলংকরণর, প্রথম প্রকাশ ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে

ছড়াটি সর্বপ্রথম ছাপা হয় টমি থাম্ব'স প্রিটি সং বুক বইয়ে, যা ইংরেজি ভাষার শিশুতোষ ছড়ার খুঁজে পাওয়া প্রাচীনতম সংগ্রহ। এর প্রকাশকাল ১৭৪৪ খ্রিষ্টাব্দে এবং ছড়ার কথাগুলো বর্তমানে প্রচলিত সংস্করণটির সদৃশ:

ব্যাহ, ব্যাহ, অ্যা ব্ল্যাক শীপ,
হ্যাভ ইউ অ্যানি উল?
ইয়েস ম্যারি হ্যাভ আই,
ত্রি ব্যাগস ফুল,
ওয়ান ফর মাই মাস্টার,
ওয়ান ফর মাই ডেইম,
ওয়ান ফর দ্যা লিটল বয়
দ্যাট লিভস ইন দ্যা লেন.[১]

পরবর্তীতে খুঁজে পাওয়া সংস্করণটি মাদার গুসেস মেলোডিতে ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়, যেখানে ছড়াটি প্রায় অপরিবর্তিত ছিল। শুধুমাত্র শেষ লাইনটি ছিল এরকম, "বাট নান ফর দ্য লিটল বয় হু ক্রাইস ইন দ্যা লেইন"।[১]

সুর[সম্পাদনা]

ছড়াটি সাধারণত ১৭৬১ সালের ফরাসী সুর আহ! ভৌ দিরাই-জে মামাঁ-এর সুরে গাওয়া হয়, যেটি আরও ব্যবহৃত হয়েছে "টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিটল স্টার" এবং "অ্যালফাবেট সং" ছড়ায়। ছড়াটির কথা ও সুর একত্রে সর্বপ্রথম প্রকাশ করেন এ. এইচ. রোসউইক, (ইলাস্ট্রেটেড ন্যাশনাল) নার্সারি সং অ্যান্ড গেমস বইয়ে, যা ফিলাডেলফিয়ায় ১৮৭৯ সালে প্রকাশিত হয়।[৪]

উৎস এবং ব্যাখ্যা[সম্পাদনা]

অন্যান্য শিশুতোষ ছড়ার মত এই ছড়াটিরও উৎস এবং ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে, যার বেশিরভাগেরই কোন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই।[১] দ্য রিয়াল পার্সোনেজেস অব মাদার গুজ (১৯৩০) বইয়ে ক্যাথরিন এলওয়েল থমাস এ ধারণা দেন যে ছড়াটি ছিল ইংরেজদের পশমের উপর অতিরিক্ত শুল্কের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ।[৫] ছড়াটি মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ডের প্রচলিত ১২৭৫ সালের "গ্রেট" বা "ওল্ড কাস্টম" পশমের উপর করের সাথে সম্পর্কিত বলে ধারণা করা হয়, যা পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত চালু ছিল।[১] আরো পরে ছড়াটির সাথে সাউদার্ন আমেরিকায় দাস ব্যবসার সাথে সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়।[৬] এই ব্যাখাটি রাজনৈতিক শুদ্ধতা সম্পর্কিত বিতর্কের মাধ্যমে এবং ১৯৮০ এর দশকে শিশুতোষ ছড়ার সংস্কার ও ব্যবহারের মাধ্যমে আরো উন্নত হয়, কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই।[৭] এছাড়াও অপর একটি ইতিবাচক ব্যাখ্যা রয়েছে যে হয়তো কালো ভেড়ার পশমের দাম এমন রাখা হত যে সহজেই ডায়িং ছাড়া কালো কাপড় তৈরীতে এটি সহায়ক ছিলো।[৬]

আধুনিক বিতর্ক[সম্পাদনা]

মাদার গুসের ১৯০১ সালের একটি সংস্করণে উইলিয়াম ওয়ালেস ডেনস্লো এর করা ব্যা, ব্যা, ব্ল্যাক শীপ-এর অলংকরণ

"ব্যা, ব্যা, ব্ল্যাক শীপ" এর ভাষা পরিবর্তন নিয়ে ১৯৮৬ সাল থেকে ব্রিটেনে একটি বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে, ট্যাবলয়েড সংবাদপত্রগুলো এটিকে বর্ণবাদের দোষে অভিযুক্ত করে। এর ভিত্তি ছিল একটি প্রাইভেট নার্সারিতে ছড়াটির পুনর্লিখন। এর সাথে কোন স্থানীয় বা কেন্দ্রীয় সরকারি নীতির কোনো সম্পর্ক ছিল না।[৮] ১৯৯৯ সালে অনুরূপ আরেকটি বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে, যখন বার্মিংহাম সিটি কাউন্সিলে শিশুদের মধ্যে বর্ণবাদ নিয়ে কাজ করা একটি গোষ্ঠী ছড়াটি সংশোধন বা বর্জনের জন্য আবেদন করে। এই আবেদন কখনই অনুমোদিত হয়নি।[৯] ২০০৬ সালে অক্সফোর্ডশায়ারে দুইটি প্রাইভেট নার্সারি ছড়াটিকে পরিবর্তিত করে "ব্যা ব্যা রেইনবো শীপ" নামে, যেখানে "ব্ল্যাক" শব্দটি বিভিন্ন বিশেষণ যেমন - "হ্যাপি, স্যাড, হোপিং" এবং "পিঙ্ক" দ্বারা।[১০] ২০১২ সালে টেমসের সন্নিকটে কিংস্টনে একটি প্রাইভেট নার্সারি তাদের ইস্টার অনুষ্ঠানের জন্য ছড়াটির "ব্ল্যাক" শব্দটি "লিটল্" দ্বারা প্রতিস্থাপন করে।[১১] অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন বিতর্কগুলো বেশিরভাগই সংবাদমাধ্যম দ্বারা প্রভাবিত এবং অতিরঞ্জিত হয়েছিল, রাজনৈতিক শুদ্ধতার বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে।[৮]

২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার অঙ্গরাজ্য ভিক্টোরিয়ায় আরেকটি বিতর্কের সুত্রপাত ঘটে যখন কিছু কিন্ডারগার্টেন "ব্ল্যাক শীপ" শব্দটি পরিবর্তন করে এই চিন্তা করে যে "ব্ল্যাক" শব্দটি বর্ণবাদকে উৎসাহিত করতে পারে। এছাড়াও তারা "ওয়ান ফর দ্য লিটল বয় হু লিভস্ ডাউন দ্য লেন," লাইনটিও পরিবর্তনের চিন্তা করেছিল এই ভেবে যে লাইনটি যৌন সম্বন্ধীয় হতে পারে।[১২]

পরোক্ষ উল্লেখ[সম্পাদনা]

"ইয়েস স্যার, ইয়েস স্যার, থ্রি ব্যাগস্ ফুল স্যার" লাইনটি অধস্তনদের চাটুকারিতা বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। এটি ১৯১০ সাল থেকে প্রচলিত হয় এবং ব্রিটিশ রয়েল নেভিতে প্রচলিত ছিল।[১৩]

ছড়াটি প্রায়শই জনপ্রিয় সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৮৮৮ সালে রুডিয়ার্ড কিপলিং তার একটি ছোটগল্পে শিরোনাম হিসেবে ছড়াটি ব্যবহার করেন।[৫] ১৯৪২ সালে ইউনাইটেড স্টেটস মেরিন কর্প্সের মেরিন এটাক স্কোয়াড্রন ২১৪-এর জন্য ব্ল্যাক শীপ স্কোয়াড্রন নামটি ব্যবহৃত হয় এবং এ অভিযানের দলপতি কর্নেল গ্রেগরি "পাপ্পি" বোয়িংটন "ব্যা ব্যা ব্ল্যাক শীপ" শিরোনামটি তার লেখা একটি বইয়ের জন্য ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে ঐ নামের একটি টিভি সিরিজের জন্যেও এই নাম ব্যবহৃত হয় যা ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত এনবিসি চ্যানেলে প্রচারিত হয়।[১৪] ১৯৫১ সালে "ইন দ্যা মুড"-এর সাথে যৌথভাবে "ব্যা, ব্যা, ব্ল্যাক শীপ" প্রথম গান ছিল যা কম্পিউটারে ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করা হয় এবং বাজানো হয়।[১৫]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

টীকা[সম্পাদনা]

  1. Opie, I. & Opie, P. (১৯৯৭) [1951]। The Oxford Dictionary of Nursery Rhymes (2nd সংস্করণ)। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 88আইএসবিএন 0-19-860088-7 
  2. Hunt, P. (১৯৯৭)। International Companion Encyclopedia of Children's Literature। Routledge। পৃষ্ঠা 174। আইএসবিএন 0-2031-6812-7 
  3. "Searchable database" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ মার্চ ২০১৪ তারিখে, English Folk Song and Dance Society, retrieved 28 March 2012.
  4. J. J. Fuld, The Book of World-Famous Music: Classical, Popular, and Folk (Courier Dover Publications, 5th edn., 2000), আইএসবিএন ০-৪৮৬-৪১৪৭৫-২, pp. 593-4.
  5. W. S. Baring-Gould and C. Baring Gould, The Annotated Mother Goose (Bramhall House, 1962), আইএসবিএন ০-৫১৭-০২৯৫৯-৬, p. 35.
  6. "Ariadne", New Scientist, 13 March 1986.
  7. Lindon, J. (২০০১)। Understanding Children's Play। Cheltenham: Nelson Thornes। পৃষ্ঠা 8আইএসবিএন 0-7487-3970-X 
  8. Curran, J.; Petley, J.; Gaber, I. (২০০৫)। Culture wars: the media and the British left। Edinburgh: Edinburgh University Press। পৃষ্ঠা 85–107। আইএসবিএন 0-7486-1917-8 
  9. Cashmore, E. (২০০৪)। Encyclopedia of Race and Ethnic Studies। London: Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 321। আইএসবিএন 0-415-28674-3 
  10. "Nursery opts for "rainbow sheep""BBC News Education। ৭ মার্চ ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০০৮ 
  11. "How private school abandoned nursery rhyme's lyrics for Easter show sparking political correctness accusations"Daily Mail। ৬ এপ্রিল ২০১২। 
  12. "Racial connotations over black sheep prompts changes to Baa Baa Black Sheep at Victorian kindergartens"Herald Sun। ১৭ অক্টোবর ২০১৪। 
  13. Partridge, Eric; Beale, Paul (১৯৮৬)। A dictionary of catch phrases: British and American, from the sixteenth century to the present day (2nd revised & abridged সংস্করণ)। Routledge। পৃষ্ঠা 547। আইএসবিএন 0-415-05916-X 
  14. F. E. Walton, Once They Were Eagles: The Men of the Black Sheep Squadron (University Press of Kentucky, 1996), আইএসবিএন ০-৮১৩১-০৮৭৫-৬, p. 189.
  15. J. Fildes, "Oldest computer music unveiled", BBC News, retrieved 15 August 2012.