সেহরি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(সাহরী থেকে পুনর্নির্দেশিত)
জর্ডানে সেহরির জন্য টেবিলে কী কী খাবার পরিবেশন করা হয় তার একটি উদাহরণ।

সেহরি বা সেহেরি বা সাহরী (আরবি: سحور, প্রতিবর্ণীকৃত: সুহুর, অনুবাদ'ঊষার পূর্বের খাবার বা ভোরের আহার') হল রমযান মাসে অথবা যে কোন দিন সাওম পালনের উদ্দেশ্যে ফজরের নামাজ বা ঊষার পূর্বে বা ভোরের পূর্বে গ্রহণ করা খাবার। সেহেরি শব্দটি আরবি শব্দ সাহুর (سحور) থেকে এসেছে। ইসলামি রীতি অনুসারে, দিনের অন্যান্য তিনটি প্রধান খাবারের (নাস্তা, দুপুরের খাবার, রাতের খাবারের) পরিবর্তে রমজান মাসে দুটি প্রধান খাবার খাওয়া হয় - একটি হলো সুহুর, অপরটি হলো ইফতার। কোনো কোনো স্থানে ইফতারের পর রাতে আরেক দফা রাতের খাবারও খাওয়া হয়।

রমজান মাসে ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা রাখার পূর্বে সেহরি হলো শেষ খাবার। রোজার সময় যে ক্লান্তি বা খিটখিটে ভাব আসতে পারে, ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী সেহরি সেই সমস্যাগুলো এড়াতে সাহায্য করে এবং বরকম বয়ে আনে। সহীহ আল-বুখারীর একটি হাদিসে বর্ণিত আছে যে, আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেছেন, "নবীজি (সা.) বলেছেন, 'সেহরি খাও, কেননা সেহরির মধ্যে অনেক কল্যাণ নিহিত রয়েছে।"[১]

মুসাহারাতি[সম্পাদনা]

মুসাহারাতি হলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি রমজান মাসে সেহরি ও ফজরের নামাজের জন্য মানুষকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন। ইসলামী ইতিহাস অনুযায়ী, বিলাল ইবনে রাবাহ ছিলেন প্রথম মুসাহারাতি। তিনি রাতের বেলায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন এবং মানুষকে জাগিয়ে তুলতেন।

একজন সিরিয়ার দামেস্কের মুসাহারাতি তাঁর পেশা সম্পর্কে বর্ণনা করে বলেন, "রমজানের পবিত্র মাসে আমার কাজ হলো দামেস্কের পুরানো শহরে মানুষকে নামাজ এবং সেহরির খাবারের জন্য জাগিয়ে তোলা।" লেবালনের সিডনের একজন মুসাহারাতির মতে, প্রত্যেক মুসাহারাতির শারীরিক সুস্থতা, ভালো স্বাস্থ্য থাকা উচিত কারণ তাকে প্রতিদিন দীর্ঘ পথ হাঁটতে হয়। তাঁর উচ্চ কণ্ঠস্বর এবং ভালো ফুসফুসের ক্ষমতা থাকা উচিত, পাশাপাশি কবিতা আবৃত্তি করার যোগ্যতাও থাকতে হবে। একজন মুসাহারাতিকে ঘুমন্তদের জাগিয়ে তোলার জন্য সারারাত আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত।"

মুসাহারাতির এই ঐতিহ্য মিশর, সিরিয়া, সুদান, সৌদি আরব, জর্ডান, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং ফিলিস্তিনে প্রচলিত আছে। বর্তমানে শহরাঞ্চলে এই প্রথাটি অনেকটা হ্রাস পেলেও গ্রামাঞ্চলে এখনো এটি দেখা যায়। বেশ কিছু কারণে মুসাহারাতির সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। মুসলমানরা দেরি করে ঘুমান, সেহরির জন্য জাগতে অ্যালার্ম ঘড়ির মতো প্রযুক্তির ব্যবহার এবং শহরগুলোর আকার ও আয়তন বেড়ে যাওয়ায় মুসাহারাতির আওয়াজ শোনা কঠিন হয়ে পড়ছে। তবে, কসিদা গানের পুরনো ঢাকাইয়া ঐতিহ্য এখনও বাংলাদেশের পুরান ঢাকার রাস্তায় দেখা যায়।

ইন্দোনেশিয়ায়, সেহরির খাবার খাওয়ার জন্য বাড়ির লোকজনকে জাগিয়ে তুলতে কেনটোঙ্গান (এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র) ব্যবহার করা হয়।

বাংলাদেশসহ অনেক দেশে এখন, সেহরি সময় মসজিদ থেকে মাইক দিয়ে ডেকে জাগিয়ে তোলা হয়। এছাড়া কিছুক্ষণ পর পর সেহরি শেষ হতে কত সময় বাকি আছে তা ঘোষণা করা হয়। একই সাথে বিভিন্ন ইসলামি গজল, গান পরিবেশন করা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. বুখারী: বই ৩: খণ্ড ৩১: হাদিস ১৪৬ (উপবাস)।