ক্রাসটোজ লাইকেন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
একটি ক্রাস্টোজ লাইকেন, Caloplaca marina

ক্রাস্টোজ লাইকেন একধরনের লাইকেন যা একটি ক্রাস্টের (ক্রাস্টোজ) মত অর্থাৎ আস্তরণের মত জন্মায় এবং এর ধারকের উপর ঘনিষ্ঠভাবে বিস্তৃত থাকে। লাইকেন গঠিত হয় শৈবাল এবং ছত্রাকের একত্রে অবস্থানের ফলে। দুইটি ভিন্ন জীবের এরূপ সহাবস্থানকে মিথোজীবিতা বলে। লাইকনের মিথোজীবিতাকে আংশিক পরজীবীতাও বলা হয়ে থাকে। বিভিন্নপ্রকার লাইকেনের মধ্যে এদের সংখ্যাই তুলনামূলকভাবে বেশি।[১]

ক্রাস্টোজ লাইকেন এর ধারকের (পাথর, গাছ, ফুটপাত অথবা মাটি) সাথে সাধারণত এমনভাবে লেগে থাকে যে ধারককে নষ্ট না করে এদের ধারক থেকে আলাদা করা যায় না। ফোলিয়োজ লাইকেনের সাথে তুলনা করলে বলা যায়, এই লাইকেনের ক্রাস্ট কোনমতে পাতার মত তুলে নিলে নিচে কোন ত্বক (কর্টেক্স) অবশিষ্ট থাকে না; অর্থাৎ এর একটিমাত্র কর্টেক্স রয়েছে। কিন্তু ফোলিয়োজ লাইকেনের ঊর্ধ্ব ও নিম্ন কর্টেক্স উভয়ই রয়েছে। ক্রাস্টোজ লাইকেন সাধারণত চ্যাপ্টা ও ক্ষুদ্রাকার হয়ে থাকে।[২][৩][৪][৫]

নামকরণ[সম্পাদনা]

"ক্রাস্টোজ" শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ "crustōsus" থেকে যার অর্থ আস্তরণ (ত্বক) দ্বারা ঢাকা। ক্রাস্টোজ লাইকেন এর ধারককে ঢেকে ফেলে বলে এর এরূপ নামকরণ করা হয়েছে।[৬]

শ্রেণিবিভাগের ভিত্তি[সম্পাদনা]

লাইকেনকে বিভিন্ন মানদণ্ডের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ করা যায়। দেহের বৃদ্ধি পাওয়ার ধরন, আকৃতি ও ধারকের সাথে আটকে থাকার রীতি দেখে লাইকেনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেঃ ফোলিয়োজ লাইকেন, ফ্রুটিকোজ লাইকেনক্রাস্টোজ লাইকেন

প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

লাইকেনসমূহের মধ্যে ফোলিয়োজ এবং ফ্রুটিকোজ লাইকেনের আকার ত্রিমাত্রিক হওয়ায় এদের মধ্যে প্রকারভেদ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে দ্বিমাত্রিক ক্রাস্টোজ লাইকনেও প্রকারভেদ দেখা যায়। যেসমস্ত ক্রাস্টোজ লাইকেন এর ধারকের ভেতর জন্মায় তাদের এন্ডোসাব্সট্রাটাল (endosubstratal) বলে। মাটির উপর ধারকের রং-এর পরিবর্তণ ও লাইকনের স্পোর সৃষ্টিকারী অঙ্গ ব্যতীত কিছুই দেখা যায় না। পাউডারের মত বা দানাদার ক্রাস্টোজ লাইকেনকে বলা হয় লেপ্রোজ এবং এদের থ্যালাসের সীমা অস্পষ্ট থাকে। ক্রাস্টোজ লাইকেনে অল্প সংখ্যক ফাটল থাকলে তাকে অবিচ্ছিন্ন এবং বেশি ফাটল থাকলে তাকে রাইমোস বলে। যে সমস্ত ক্রাস্টোজ লাইকেন প্রজাতি ধারকে খণ্ড খণ্ড হয়ে জন্মায় তাদের অ্যারিওলেট(Areolate) বলে। যেমনঃ Acarospora (অথবা Pleopsidium)। মনে হতে পারে যে, অ্যারিওলেট হচ্ছে রাইমোসের ফাটলের বৃদ্ধির পরিণাম। তবে তাদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। অ্যারিওলেটের ফাটলের উভয়দিকে ফটোবায়েন্ট কোষ অর্থাৎ সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে এমন কোষ রয়েছে কিন্তু রাইমোসে এগুলো ফাটলের একদিকে রয়েছে। আবার অ্যারিওলেটের থ্যালাসের খণ্ড গুলো গোলাকার হলে এদের বুলেট বলে এবং থ্যালাসের প্রান্তের খণ্ড মাঝের খণ্ড থেকে বড় এবং ধারক থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে ফোলিয়োজ লাইকেনের মত দেখালে তাকে লোবেট বলে। যে সমস্ত ক্রাস্টোজ লাইকেন ধারকে নিমজ্জিত থাকে এবং কেবল ফ্রুটিং বডি বাইরে থাকে তাদের এন্ডোলিথিক এবং যেগুলো উদ্ভিদের টিস্যুতে নিমজ্জিত থেকে বড় হতে থাকে তাদের এন্ডোফ্লইডিক অথবা এন্ডোফ্লইডাল বলে। স্কুয়ামুলোজ লাইকেন কি ক্রাস্টোজ লাইকেন নাকি স্বতন্ত্র লাইকেন তা নিয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।[৬][৭]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. http://www.teara.govt.nz/en/photograph/10982/crustose-lichen
  2. Lichens in Yellowstone Park, Sharon Eversman, Plan Your Visit, National Parks Service, [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ জুন ২০১৪ তারিখে
  3. জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র- গাজী আজমল, সফিউর রাহমান।
  4. জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র- ড. মোহাম্মদ আবুল হাসান।
  5. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২০ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জানুয়ারি ২০১৫ 
  6. http://dictionary.reference.com/browse/crustose
  7. https://www.anbg.gov.au/lichen/form-crustose.html