প্রকৃত সময়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গাঢ় নীল উল্লম্ব রেখাটি স্থানাংক সময় নির্দেশ করে, অর্থাৎ স্থির প্রসঙ্গ কাঠামোতে থেকে E1 and E2 ঘটনা দুটির মধ্যবর্তী নির্ণীত সময় t. লাল রেখাটি দুটি ঘটনার মধ্যেই প্রকৃত সময়ের (τ) পরিমাপকে বোঝাচ্ছে। প্রকৃত পরিমাপের ক্ষেত্রে ঘড়িটি যাত্রাপথের পুরোটা সময় যাত্রীর সাথে সাথেই ছিল।

দুটি ঘটনা যে স্থানে ঘটছে সেই একই স্থানে অবস্থিত একটি ঘড়ির মাধ্যমে ঘটনা দুটির মধ্যবর্তী সময় পরিমাপ করলে তাকে প্রকৃত সময় (ইংরেজি: Proper time) বলা হয়। আপেক্ষিকতার তত্ত্বে এই ধারণাটির ব্যবহার অনেক। এক জোড়া ঘটনার মধ্যে সময়ের ব্যবধান একেক প্রসঙ্গ কাঠামোতে অবস্থিত পর্যবেক্ষকের পরিমাপে একেক রকম হয়। যে পর্যবেক্ষক ঘটনাটি যেখানে শুরু এবং শেষ হয়েছে সেখানেই অবস্থান করে তার পরিমাপকৃত সময়টিই প্রকৃত সময়। অন্য সকল প্রসঙ্গ কাঠামোতে অবস্থিত পর্যবেক্ষকদের পরিমাপকৃত সময়ের মান প্রকৃত সময়ের চেয়ে বেশি হবে। প্রকৃত সময়ই হচ্ছে সম্ভাব্য সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সময়।

উদাহরণস্বরূপ: ধরা যাক "ক" নামের একজন ব্যক্তি ১ নং বিন্দু থেকে ২ নং বিন্দু পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট বেগে ভ্রমণ করল। এই ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করল তিন জন পর্যবেক্ষক, ১ম জন ১ নং বিন্দুতে, সে দেখল ক ১ নং থেকে ২ নং বিন্দুতে যাচ্ছে; ২য় পর্যবেক্ষক ক নিজেই, আর ৩য় পর্যবেক্ষক ২ নং বিন্দুতে স্থির হয়ে আছে। তিনজনের মধ্যে কেবল ক-ই প্রকৃত সময় পরিমাপ করবে, কারণ সে যাত্রার শুরু এবং শেষ- দুটি বিন্দুতেই উপস্থিত ছিল। অন্য দুজনের পরিমাপ সব সময়ই তার প্রকৃত পরিমাপ থেকে বেশি হবে।[১]

প্রকৃত সময়ের সাথে স্থানাংক সময়ের প্রধান পার্থক্য হচ্ছে, স্থানাংক সময় কেবল শুরু এবং শেষ বিন্দু দুটির উপর নির্ভর করে, কোন পথ দিয়ে যাত্রাটি সম্পন্ন হয়েছে তার উপর নির্ভর করে না। কিন্তু প্রকৃত সময় যাত্রাপথের উপর নির্ভর করে। প্রকৃত সময় লরেনৎস ইনভ্যারিয়েন্ট, অর্থাৎ প্রসঙ্গ কাঠামোর লরেনৎস রূপান্তর করলেও প্রকৃত সময় পরিবর্তিত হয় না। কিন্তু স্থানাংক সময় লরেনৎস ইনভ্যারিয়েন্ট নয়।

গাণিতিক রূপ[সম্পাদনা]

গাণিতিকভাবে প্রকৃত সময় বর্ণনা করা হয়, চতুর্মাত্রিক স্থানকালের মধ্য দিয়ে গতিশীল একটি কণা, ঘড়ি বা একজন পর্যবেক্ষকের যাত্রাপথ এবং সেই স্থানকালের মেট্রিক-এর মাধ্যমে। চতুর্মাত্রিক স্থানকালের বিশ্ব রেখাগুলোর ছদ্ম-রিমানীয় আর্ক দৈর্ঘ্যেই হচ্ছে প্রকৃত সময়।

গাণিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, স্থানাংক সময় আগে ধরে নেয়া হয়, পরে প্রকৃত সময়কে স্থানংক সময়ের একটি অপেক্ষক হিসেবে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু পরীক্ষণমূলক তথা ব্যবহারিক দৃষ্টিকোণ থেকে, আমরা যা পরিমাপ করি তা প্রকৃত সময়, এটিই কেবল পরিমাপ করা যায়। জড় প্রসঙ্গ কাঠামোর একটি ঘড়ির প্রকৃত সময়ের পরিমাপ থেকেই কেবল স্থানাংক সময় নির্ণয় করা যায়।

বিশেষ আপেক্ষিকতায়[সম্পাদনা]

বিশেষ আপেক্ষিকতায় প্রকৃত সময়ের সংজ্ঞা সমীকরণের সাহায্যে এভাবে দেয়া যায়:

যেখানে হচ্ছে স্থানাংক সময় t তে স্থানাংক বেগ, আর x, y, z হচ্ছে স্থানের তিনটি কার্তেসীয় স্থানাংক। এই সমীকরণকে এর মাধ্যমে প্যারামেট্রাইজ করা যায়। t, x, y, এবং z সবগুলো রাশিকে এভাবে প্যারামেট্রাইজ করলে পাওয়া যায়:

ব্যবকলনীয় রূপে লাইন ইন্টিগ্রালের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়:

যেখানে P হচ্ছে স্থানকালে ঘড়িটির যাত্রাপথ।

বিশেষ আপেক্ষিকতায় গতির সংজ্ঞার মাধ্যমে আরও সহজ করে সমীকরণটি প্রকাশ করা যায়। বিশেষ আপেক্ষিকতায় গতি বলতে বোঝায়, একই হারে সময়ের স্থানাংকের সাপেক্ষে স্থানের স্থানাংকগুলো পরিবর্তন করা। তাহলে সমীকরণটি দাঁড়ায়:

যেখানে Δ বলতে দুটি ঘটনার মধ্যবর্তী ব্যবধান বোঝানো হয়েছে।

তবে বিশেষ আপেক্ষিকতা সাধারণ আপেক্ষিকতার বিশেষ রূপ।

সাধারণ আপেক্ষিকতায়[সম্পাদনা]

সাধারণ আপেক্ষিকতায় আরও সুসংগতভাবে প্রকৃত সময়ের সংজ্ঞা দেয়া যায়। এর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন লাইন এলিমেন্ট তথা রেখা উপাদান:

প্রকৃত সময় হচ্ছে একই স্থানে ঘটা দুটি ঘটনার মধ্যে সময়ের পার্থক্য। সুতরাং উপরের রেখা উপাদানে আমরা স্থানের ব্যবকলনীয় পরিবর্তনগুলোকে শূন্য ধরতে পারি। এতে রেখা উপাদানের যে রূপ পাওয়া যাবে তাকে প্রকৃত সময়ে () রূপান্তর খুবই সোজা হবে:

উল্লেখ্য প্রকৃত সময় কেন ইনভ্যারিয়েন্ট তা খুব সহজেই বোঝা যায়: , কিন্তু রেখা উপাদান এবং আলোর বেগ দুটোই ইনভ্যারিয়েন্ট। সুতরাং তাদের ভাগফলও ইনভ্যারিয়েন্ট হবে। তবে উপরে যে সমীকরণ দেয়া হয়েছে তা কেবল মিনকভস্কি স্থানের জন্য। একটি সাধারণ তথা জেনেরিক স্থানকালের জন্য প্রকৃত সময়কে লেখা যায় এভাবে:

দেখা যাচ্ছে এখানে মিনকভস্কি স্থানে এর মান ব্যবহার করার পরিবর্তে পুরো মেট্রিক টেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। হচ্ছে মেট্রিক টেন্সরের কাল-কাল রাশি। স্থানের পরিবর্তন শূন্য বিবেচনা করলে কেবল কাল কাল রাশিটিই টিকে থাকে। মেট্রিক টেন্সর এবং রেখা উপাদানের মধ্যে সম্পর্ক এমন:

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Proper Time and Proper Length, EText, Mount Allison University"। ১৯ জুলাই ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মে ২০১১