ই-ইঙ্ক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ই-ইঙ্ক প্রযুক্তির কার্যপ্রণালী.
Legend ব্যাখ্যা
1 বহিঃস্থ স্তর
2 স্বচ্ছ ইলেক্ট্রোড স্তর
3 স্বচ্ছ মাইক্রো-ক্যাপসুল
4 ধনাত্মক আধানযুক্ত সাদা কণা
5 ঋণাত্মক আধানযুক্ত কালো কণা
6 স্বচ্ছ তরল পদার্থ
7 ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আধানবাহী ইলেক্ট্রোড স্তর
8 নিন্মস্তর
9 আলো
10 সাদা রং পরিবহনকারী আলো
11 কালো রং পরিবহনকারী আলো

ই-ইঙ্ক বা ইলেক্ট্রোফোরেটিক ইঙ্ক এক ধরনের ইলেক্ট্রনিক কাগজ বা পর্দা যা ই ইঙ্ক কর্পোরেশন নামক একটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক শিল্পজাতকৃত। এমআইটি মিডিয়া ল্যাব সর্বপ্রথম ই-ইঙ্ক প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে এমআইটির ই-ইঙ্ক গবেষণা প্রকল্পের উপর ভিক্তি করে ই ইঙ্ক কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৬ সালের এক পেটেন্ট অনুযায়ী জোসেফ জ্যাকবসন এবং ব্যারেট কমিস্কিকে ই-ইঙ্ক প্রযুক্তির উদ্ভাবক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।[১]

বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ই-ইঙ্ক পর্দা সাদাকালো (গ্রেস্কেল) ও রঙ্গিন দুরকম ভাবেই উৎপাদিত হচ্ছে।[২] এই ধরনের পর্দা মূলত বিভিন্ন ধরনের বহনযোগ্য যন্ত্রে ব্যাবহা করা হয়। বিশেষ করে ইবুক পাঠযন্ত্রগুলোতে ই-ইঙ্ক পর্দা বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইবুক পাঠযন্ত্র ছাড়াও কিছু কিছু মুঠোফোন, টাচপ্যাড, ইনডিকেটর, ঘড়ি, বেতার যন্ত্র, বিজ্ঞাপন বোর্ড, স্মার্ট কার্ড ইত্যাদিতে এই বিশেষ ধরনের ইলেক্ট্রনিক পর্দা ব্যবহার করা হচ্ছে।[৩]

কর্পোরেট ইতিহাস[সম্পাদনা]

২০০৯ সালের ১লা জুন তাইওয়ান ভিক্তিক প্রাইম ভিউ ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেড (元太科技工業) ২১৪ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ই ইঙ্ক কর্পোরেশনকে কিনে নেয়।[৪] এর আগে প্রাইম ভিউ কেম্পানি ই ইঙ্ক কর্পোরেশনের প্রাথমিক বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল। ধারণা করা হয় প্রাইম ভিউর এই উদ্যোগের ফলে আগের চাইতে আরও অনেক বেশি সংখ্যক ই-ইঙ্ক ডিসপ্লে উৎপাদিত ও বিপণন হবে। প্রাইম ভিউ বিওই হাইডিস টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড (京东方海帝士科技) নামের আরও একটি কোম্পানির সত্ত্বাধিকারী। এছাড়া চি মি অপ্টোইলেক্ট্রনিকস কর্পোরেশন যা বর্তমানে চি মি ইন্নলাক্স কর্পোরেশন (奇美電子) নামে পরিচিত প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রাইম ভিউর কৌশলগত ব্যাবসায়িক অংশীদারত্ব রয়েছে। এদিকে ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে ই ইঙ্ক সিপিক্স নামক প্রতিদ্বন্দ্ব্বী ইলেক্ট্রনিক ডিসপ্লে প্রস্তুতকারী কোম্পানিকে কিনে ফেলে।[৫][৬]

ই-ইঙ্ক প্রযুক্তি[সম্পাদনা]

iLiad e-book reader equipped with an e-paper display visible in the sunlight

ই-ইঙ্ক প্রযুক্তিতে একটি পাতলা ও স্বচ্ছ ইলেকট্রোডের পর্দার নিচে স্বচ্ছ মাইক্রো ক্যাপসুল থাকে। এই ক্যাপসুলগুলোর ভিতর একধরনের তেলের মধ্যে কিছু বিশেষ ধরনের পিগমেনট ভাসমান অবাস্থায় থাকে। এই পিগমেন্টগুলোর কিছু ধনাত্মক ও কিছু ঋণাত্মক চার্জ বিশিষ্ট হয়। ধনাত্মক চার্জবাহী পিগমেন্টগুলো সাদা ও ঋণাত্মক চার্জবাহী পিগমেন্টগুলো কালো রঙয়ের হয়। মাইক্রো ক্যাপসুলগুলোর নিচে থাকা ইলেকট্রোডের মধ্য দিয়ে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জ প্রবাহের মাধ্যমে ক্যাপসুলের অন্তঃস্থিত পিগমেন্টগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। মাইক্রো ক্যাপসুলগুলো এক্ষেত্রে কম্পিউটার বা এধরনের যন্ত্রে ব্যবহারিত ছোট ছোট পিক্সেলের মত কাজ করে। কোন ডিসপ্লেতে গ্রেস্কেলে ছবি বা লেখা বা এজাতিয় কিছু ফুটিয়ে তুলতে হলে ই-ইঙ্ক ডিসপ্লের মধ্যে থাকা মাইক্রো ক্যাপসুলের অভ্যন্তরস্থ পিগমেন্টগুলোকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তা করা হয়।[৭]

মোটোরোলা এফথ্রি হল প্রথম মোবাইল ফোন যা ই-ইঙ্ক প্রযুক্তির ডিসপ্লে ব্যবহার করেছে। স্যামসাং এলিয়াস দুই ই-ইঙ্ক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মডেলটির জন্য স্পর্শকাতর বোতাম বানিয়েছে। যেহেতু ই-ইঙ্ক প্রযুক্তি অত্যন্ত কম বিদ্যুৎ খরচ করে সেহেতু এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগানর জন্য মোবাইল কোম্পানি গুলোর মধ্যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এ্যাসকয়ার ম্যাগাজিনের অক্টোবর, ২০০৮ উত্তর আমেরিকা সংস্করণে ই-ইঙ্ক প্রযুক্তির কভার ব্যবহার করা হয়েছে। এ্যাসকয়ার ম্যাগাজিনের এই কভারটি চীনের সাংহাই এ তৈরি করা হয়েছে। [৮]

ই-ইঙ্ক ভিজপ্লেক্স[সম্পাদনা]

প্রতিনিয়ত গবেষণা ও পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে ই-ইঙ্ক প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটে চলেছে। ই-ইঙ্ক প্রযুক্তির সর্বশেষ সংস্করকে ই-ইঙ্ক ভিজপ্লেক্স বলা হয়।[৯] ভিজপ্লেক্স প্রযুক্তির প্রত্যেক সংস্করণ/মডেলকে ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ড নাম দিয়ে বাজারজাত করা হয়, নিচে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তবে কখনও কখনও ভিজপ্লেক্স কথাটি প্রথম প্রজন্মের ই-ইঙ্ক ডিসপ্লের কথা বোঝানোর জন্যও ব্যবহারিত হয়।

ই-ইঙ্ক পার্ল[সম্পাদনা]

Macro photograph of Kindle 3 screen, focused just below the surface; microcapsules are clearly visible at full size

ই-ইঙ্ক পার্ল সংস্করণের ঘোষণা আসে ৩১ জুলাই, ২০১০ সালে। পার্ল প্রযুক্তিতে তৈরি ই-ইঙ্ক ডিসপ্লেগুলোকে দ্বিতীয় প্রজন্মের ভিজপ্লেক্স ডিসপ্লে ধরা হয়। পার্ল প্রযুক্তির ডিসপ্লেগুলোতে আগের ই-ইঙ্ক ডিসপ্লেগুলোর চাইতে অধিকতর উন্নত কন্ট্রাস্ট পাওয়া যায়। অর্থাৎ এই প্রযুক্তির ডিসপ্লেগুলো প্রথম প্রজন্মের ই-ইঙ্ক ডিসপ্লেগুলোর চাইতে সাদা ও কালো রঙয়ের মধ্যে অনেক বেশি পার্থক্য তৈরি করতে সক্ষম। ফলাফল স্বরূপ ই-ইঙ্ক পার্ল ডিসপ্লের মাধ্যমে আগের চাইতে আরও পরিষ্কার করে ছবি ও টেক্সট প্রদর্শন করা যায়। ই-ইঙ্ক পার্ল ডিসপ্লে সর্বপ্রথম আমাজন কিন্ডল ডিএক্স সংস্করণে ব্যবহার হতে দেখা যায়। পরবর্তীতে কিন্ডল ৩, কিন্ডল ৪ ও কিন্ডল টাচ সংস্করণগুলোতেও পার্ল ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়।[১০][১১] আমাজন ছাড়াও সনি রিডার টাচ সংস্করণে সনি ই-ইঙ্ক পার্ল প্রযুক্তির ডিসপ্লে ব্যবহার করেছে।[১২] এছাড়া বার্নস এন্ড নোবেলের প্রস্তুতকৃত নুক সিম্পল টাচ[১৩] ও কোবো প্রস্তুতকৃত কোবো ইরিডার টাচ[১৪], কোবো গ্লো[১৫], অনিক্স বুক্সের এম৯২[১৬] ইবুক রিডার গুলোতেও ই-ইঙ্ক পার্ল ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে।

ই-ইঙ্ক মোবিয়াস[সম্পাদনা]

ই-ইঙ্ক মোবিয়াস (ই-ইঙ্ক ফ্লেক্স) হল ই-ইঙ্ক পার্লের পরবর্তী সংস্করণ। মোবিয়াস সংস্করণের পূর্ববর্তী ই-ইঙ্ক ডিসপ্লেগুলো অত্যন্ত ভঙ্গুর প্রকৃতির ছিল। কারণ হল ই-ইঙ্ক ভিজপ্লেক্স বা ই-ইঙ্ক পার্লের ডিসপ্লে তৈরি হত পাতলা কাচ ব্যবহার করে। এই সমস্যা দূর করার জন্য ই-ইঙ্ক মোবিয়াস সংস্করণে কাচের পরিবর্তে পাতলা প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। ফলাফল স্বরূপ ই-ইঙ্ক মোবিয়াস ডিসপ্লেগুলো সামান্য তাপ ও বাঁকানোর ফলেই ভেঙ্গে যায় না।[১৭]

ই-ইঙ্ক ট্রাইটন[সম্পাদনা]

২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে ই-ইঙ্ক ভিজপ্লেক্সের তৃতীয় প্রজন্মের ডিসপ্লে ই-ইঙ্ক ট্রাইটনের কথা ঘোষণা করা হয়। ই-ইঙ্ক ট্রাইটন ৪০৯৬ টি প্রথক রং ও ১৬টি ধূসর রঙয়ের শেড প্রদর্শন করতে পারে। সুতরাং ই-ইঙ্ক ট্রাইটন ই-ইঙ্ক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সীমিত পরিসরে রঙ্গিন লেখা বা ছবি প্রদর্শন করতে পারে। বাজারে প্রচলিত অন্যান্য রঙ্গিন ডিসপ্লেগুলোর সাথে ই-ইঙ্ক ট্রাইটনের মৌলিক পার্থক্য হল এই প্রযুক্তির ডিসপ্লেগুলোতে প্রদর্শিত লেখা বা ছবি সূর্যের আলোতেও পরিষ্কার পড়া যায়।[১৮] বেশ কয়েকটি কোম্পানি ই-ইঙ্ক ট্রাইটন বাণিজ্যিকভাবে তাদের পণ্যে ব্যবহার করেছেন। বাণিজ্যিক ভিক্তিতে ট্রাইটন ব্যবহারকারী কোম্পানিগুলো হল হ্যানভন, ইকট্যাকো ও পকেটবুক। হ্যানভন তাদের হ্যানভন কালার ইরিডারে ট্রাইটন ব্যবহার করেছে[১৯], ইকট্যাকো কোম্পানিটির জেটবুক কালার ইবুক রিডারে ট্রাইটন ব্যবহার করেছে ও পকেটবুক তাদের পকেটবুক কালার লাক্স ইরিডারে ট্রাইটন ব্যবহার করেছে।

ই-ইঙ্ক ট্রাইটনের পরবর্তী সংস্করণ ই-ইঙ্ক ট্রাইটন ২ কে ২য় প্রজন্মের রঙ্গিন ই-ইঙ্ক ডিসপ্লে ধরা হয়। ২০১৩ সালে ২য় প্রজন্মের রঙ্গিন ই-ইঙ্ক ডিসপ্লে ব্যবহার করে কিছু ইবুক রিডার তৈরি করা হয়েছে। ইকট্যাকোর জেটবুক কালার ২[২০] ও পকেটবুকের পকেটবুক কালার লাক্স[২১] এই ডিসপ্লে গুলোর মধ্যে অন্যতম।

ই-ইঙ্ক কার্টা[সম্পাদনা]

২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক কনজুমার ইলেক্ট্রনিকস শোতে ই-ইঙ্কের চতুর্থ প্রজন্মের ডিসপ্লে উদ্ভাবনের কথা ঘোষণা করা হয়। নতুন উদ্ভাবিত এই ডিসপ্লের নাম রাখা হয় ই-ইঙ্ক কার্টা। একটি ৬ ইঞ্চি ই-ইঙ্ক কার্টা ডিসপ্লে ২১২ পিপিআই (পিক্সেল ড্যানসিটি) ও ৭৬৮ বাই ১০২৪ রেজুলেশনে লেখা ছবি ইত্যাদি প্রদর্শন করতে পারবে।[২২] আমাজন কিন্ডল পেপারহোয়াইট ই বুক রিডারে ই-ইঙ্ক কার্টা ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে। আমাজন কিন্ডল ছাড়াও ডয়েচে টেলিকমের টলিনো ভিশন (২০১৪) ও কোবো ইরিডার ঔরা এইচটুও (২০১৪) তে কার্টা ব্যবহার করা হয়েছে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. http://worldwide.espacenet.com/publicationDetails/biblio?CC=US&NR=5930026&KC=&FT=E&locale=en_EP
  2. http://www.wired.com/2010/11/how-e-inks-triton-color-displays-work-in-e-readers-and-beyond/
  3. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১৪ 
  4. http://www.fastcompany.com/1288671/e-inks-sale-clears-path-color-kindle-2010
  5. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৪ 
  6. http://www.digitimes.com/news/a20120806PD219.html
  7. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৫ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১৪ 
  8. http://www.esquire.com/the-side/video/e-ink-cover-video
  9. http://www.engadget.com/2007/05/10/e-ink-corp-announces-vizplex-tech-to-speed-brighten-displays/
  10. http://www.engadget.com/2010/07/01/e-ink-explains-the-new-pearl-display-used-in-the-updated-kindle/
  11. http://www.amazon.com/dp/B00I15SB16
  12. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৬ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০১৪ 
  13. http://www.barnesandnoble.com/u/nook-glowlight-ereader/379004122
  14. kobobooks.com/touch_tech
  15. http://www.kobo.com/koboglo
  16. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৯ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০১৪ 
  17. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৩ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৪ 
  18. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" (পিডিএফ)। ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৪ 
  19. http://www.nytimes.com/2010/11/08/technology/08ink.html?_r=0
  20. http://goodereader.com/blog/e-reader/hands-on-with-e-ink-triton-2-and-prototype-front-lite-technology
  21. http://goodereader.com/blog/electronic-readers/review-of-the-pocketbook-color-lux-ereader
  22. https://www.pcworld.com/article/2024917/e-inks-future-foretold-at-ces-next-gen-will-be-high-res-support-color.html