হেডলি ভেরিটি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হেডলি ভেরিটি
১৯৩২ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে হেডলি ভেরিটি
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামহেডলি ভেরিটি
জন্ম(১৯০৫-০৫-১৮)১৮ মে ১৯০৫
হেডিংলি, ওয়েস্ট রাইডিং অব ইয়র্কশায়ার, যুক্তরাজ্য
মৃত্যু৩১ জুলাই ১৯৪৩(1943-07-31) (বয়স ৩৮)
কাসার্তা, কাম্পানিয়া, ইতালি
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনস্লো লেফট আর্ম অর্থোডক্স
ভূমিকাবোলার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২৬২)
২৯ জুলাই ১৯৩১ বনাম নিউজিল্যান্ড
শেষ টেস্ট২৭ জুন ১৯৩৯ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৩০ - ১৯৩৯ইয়র্কশায়ার
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৪০ ৩৭৮
রানের সংখ্যা ৬৬৯ ৫,৬০৩
ব্যাটিং গড় ২০.৯০ ১৮.০৭
১০০/৫০ ০/৩ ১/১৩
সর্বোচ্চ রান ৬৬* ১০১
বল করেছে ১১,১৭৩ ৮৪,২১৯
উইকেট ১৪৪ ১,৯৫৬
বোলিং গড় ২৪.৩৭ ১৪.৯০
ইনিংসে ৫ উইকেট ১৬৪
ম্যাচে ১০ উইকেট ৫৪
সেরা বোলিং ৮/৪৩ ১০/১০
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৩০/– ২৬৯/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৩১ মে ২০১৫

হেডলি ভেরিটি (ইংরেজি: Hedley Verity; জন্ম: ১৮ মে, ১৯০৫ - মৃত্যু: ৩১ জুলাই, ১৯৪৩) লিডসে জন্মগ্রহণকারী পেশাদার ও বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ১৯৩০ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলার হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। পাশাপাশি ডানহাতে ব্যাটিংয়ে পারদর্শী ছিলেন তিনি।

ক্রিকেটের ইতিহাসে তাকে অন্যতম সেরা কার্যকরী স্লো লেফট-আর্ম অর্থোডক্স বোলার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। এছাড়াও ঘরোয়া কাউন্টি ক্রিকেটে ইয়র্কশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৩২ সালে তাকে উইজডেন কর্তৃপক্ষ অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটাররূপে ঘোষণা করে।[১]

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

শৈশবেই ইয়র্কশায়ারের পক্ষে খেলার প্রবল আগ্রহ ছিল তার।[২] স্থানীয় পর্যায়ের ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পর ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হন। প্রথম মৌসুমে তেমন সফলতা না পেলেও ক্লাব পরিবর্তন করে নিজের নামের যথার্থতা দেখান। ল্যাঙ্কাশায়ার লীগ থেকে চলে আসা হেডলি ভেরিটির ১৯৩০ সালে ইয়র্কশায়ারে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়।[৩] শুরুতে মিডিয়াম-পেস বোলার হিসেবে অবস্থান নিলেও পরবর্তীকালে স্পিনের দিকে ঝুঁকে পড়েন ও ইয়র্কশায়ার দলের সক্রিয় সদস্য হন।

১৯৩১ মৌসুম থেকে ইয়র্কশায়ার দল আরও একবার কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে। এবার দলটি ধারাবাহিকভাবে তিনবার শিরোপা জয়ে সক্ষমতা দেখায়।[৪] হেডলি ভেরিটি ও বিল বোস উভয়েই ইয়র্কশায়ারের পক্ষে শতাধিক উইকেট লাভ করেন ও অত্যন্ত শক্তিশালী বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দেন।[৫][৬] ১৯৩২ সালে ইয়র্কশায়ারের সদস্যরূপে হেডলি ভেরিটি প্রতিপক্ষীয় নটিংহ্যামশায়ারের বিপক্ষে ১০/১০ পেয়েছিলেন। এটিই অদ্যাবধি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সেরা বোলিং পরিসংখ্যানরূপে বিবেচিত হয়ে আসেছ। এছাড়াও, ১৯৩১ সালে এ মাঠে ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে সবগুলো উইকেট লাভের নজির রয়েছে তার।[৭]

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ১৪.৯০ গড়ে ১,৯৫৬ উইকেট পেয়েছেন তিনি। ১৯৩৯ মৌসুমে তিনি তার সর্বশেষ প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নেন। কিন্তু আসন্ন বিশ্বযুদ্ধের কারণে ঐ মৌসুমটি ঢাকা পড়ে যায়।[৮]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তার খেলোয়াড়ী জীবন বিঘ্নিত হয়। ঐ সময়ে তার দল আটবার চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা লাভে সক্ষমতা দেখায়। অনেকাংশেই এর নেতৃত্বে ছিলেন বিল বোস ও তিনি স্বয়ং। হার্বার্ট সাটক্লিফ, পার্সি হোমসমরিস লেল্যান্ড - এ তিনজনের সমন্বয়ে গড়া ইয়র্কশায়ারের ব্যাটিং মেরুদণ্ড বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠে। তাস্বত্ত্বেও সর্বদাই উচ্চারিত হতে থাকে যে, বোলারেরা খেলায় জয়সহ চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপায় অধিক ভূমিকা রেখেছেন। বোস ও ভেরিটি’র মধ্যকার বোলিং জুটি গড়ে ইয়র্কশায়ারকে জয়ের ধারায় নিয়ে আসেন।

খেলোয়াড়ী জীবন[সম্পাদনা]

১৯৩১ সালে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলার জন্য মনোনীত হন। ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরেই তিনি তার উত্তম ক্রীড়াশৈলীর পরিচয় দিতে শুরু করেন। এরপর থেকেই ইংল্যান্ডের পক্ষে নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করতে থাকেন। তন্মধ্যে ১৯৩৪ সালে লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত টেস্টে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৫ উইকেট তুলে নেন। তন্মধ্যে তৃতীয় দিনেই তুলে নেন ১৪ উইকেট।[৯] কিন্তু সমালোচকগণ কর্তৃক চমৎকার ব্যাটিং উইকেটে তার ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন। এরফলে পরবর্তী বছরগুলোয় মাঝে-মধ্যেই তাকে দলের বাইরে অবস্থান করতে হয়। তাস্বত্ত্বেও ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের বিপক্ষে যে-কোন বোলারের চেয়ে তার বোলিং বিশ্লেষণ শীর্ষে অবস্থান করেছে। ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের সদস্য থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিস্তৃতি ঘটলে তার খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। টেস্টে ২৪.৩৭ গড়ে ১৪৪ উইকেট পেয়েছেন তিনি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ[সম্পাদনা]

হেডলি ভেরিটির ১৯৩২ সালের স্থিরচিত্র

যুদ্ধের কারণে ১৯৩৯ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পুরোদমে শুরু হলে জানুয়ারি, ১৯৪০ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে ইয়র্কশায়ারের দলীয় সঙ্গী নরম্যান ইয়ার্ডলি’র সাথে তিনিও গ্রীন হাওয়ার্ডসের প্রথম ব্যাটলিয়নে যোগ দেন।[১০] উত্তর আয়ারল্যান্ডের ওমাগায় প্রশিক্ষণ শেষে বেশকিছুসংখ্যক ক্রিকেট খেলায় ইয়ার্ডলি’র সাথে একত্রে খেলেন।[১১] প্রশিক্ষণ শেষে ভারত, পারস্য ও মিশরে স্থানান্তরিত হন। এ সময় তিনি ক্যাপ্টেন পদে ছিলেন। ১৯৪৩ সালে সিসিলি অভিযানে যান।[১২] ঐ অভিযানে ভেরিটি বুকে গুরুতর আঘাত পান[১৩][১৪] ও জার্মানদের হাতে ধরা পড়েন।[১৫] পরবর্তীতে তাকে ইতালিতে নিয়ে যাওয়া হয়। আহত অবস্থাতেই কার্সার্তায় জীবনাবসান ঘটে তার ও সেখানেই তাকে পূর্ণাঙ্গ সামরিক মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।[১৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Wisden Cricketers of the Year"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০২-২১ 
  2. Hill, pp. 19–20.
  3. Kilburn, pp. 78—79.
  4. "County Champions 1890–present"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০১০ 
  5. Woodhouse, p. 368.
  6. "First-class Bowling for Yorkshire in 1931"। CricketArchive। ৪ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১০ 
  7. Warner, David (২০১১)। The Yorkshire County Cricket Club: 2011 Yearbook (113th সংস্করণ)। Ilkley, Yorkshire: Great Northern Books। পৃষ্ঠা 73। আইএসবিএন 978-1-905080-85-4 
  8. Hill, pp. 126–28.
  9. "England v Australia 1934 (Second Test)"Wisden Cricketers' Almanack। London: John Wisden & Co। ১৯৩৫। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১১ 
  10. "Supplement to the London Gazette: 9 January 1940"London Gazette (34768)। London। ৫ জানুয়ারি ১৯৪০। পৃষ্ঠা 149। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১২ 
  11. Hill, Alan (২০০০) [1986]। Hedley Verity. Portrait of a Cricketer। Edinburgh: Mainstream Publishing। আইএসবিএন 1-84018-302-0 
  12. Hill, pp. 143–44.
  13. Hill, pp. 146–47.
  14. Holland, James (৯ এপ্রিল ২০১৩)। "Verity's war"। ESPNCricinfo। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০১৩ 
  15. Hill, p. 148.
  16. Hill, pp. 151–52.

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

গ্রন্থপঞ্জী[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]