শর্মিলা বসু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শর্মিলা বসু
জন্ম(১৯৫৯-০৭-০৪)৪ জুলাই ১৯৫৯
জাতীয়তাভারতীয় আমেরিকান
পেশাসিনিয়র গবেষণা সহযোগী

শর্মিলা বসু (জন্ম: ৪ঠা জুলাই, ১৯৫৯ বস্টন, ম্যাসাচুসেটস), একজন ভারতীয় বংশোদ্ভুত আমেরিকান, বর্তমানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের একজন সিনিয়র গবেষণা সহযোগী।[১] তিনি বিতর্কিত[২] "ডেড রেকনিং: ১৯৭১ এর বাংলাদেশ যুদ্ধের স্মৃতি" বইয়ের লেখিকা।

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

তিনি কোলকাতার মডার্ন হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। পরে তিনি Bryn Mawr College থেকে A. B. অর্জন করেছেন এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক অর্থনীতি বিষয়ে মাস্টার্স ও পিএইচডি লাভ করেছেন।

পরিবার[সম্পাদনা]

তার পিতার নাম শিশির কুমার বসু, যিনি একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তার মায়ের নাম কৃষ্ণা বসু, যিনি একজন ইংরেজির অধ্যাপক, লেখক ও রাজনীতিবিদ।[৩] কৃষ্ণা বসু যিনি ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ছিলেন, তিনি শর্মিলা বসুর বই নিয়ে আলোচনায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।[৩] তার পিতামহ শরৎ চন্দ্র বসু একজন ব্যারিস্টার ও প্রখ্যাত জাতীয়তাবাদী নেতা ছিলেন। তার পিতামহের ভাই ছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। তিনি অ্যালেন রসলিং নামে এক ব্রিটিশ ভদ্রলোক'কে বিবাহ করেছেন যিনি টাটা গোষ্ঠীর অন্যতম ডিরেক্টর। তাদের তিন পুত্র।

বিতর্ক[সম্পাদনা]

বসু তার লেখা বিতর্কিত বই "ডেড রেকনিং: ১৯৭১ এর বাংলাদেশ যুদ্ধের স্মৃতি"-তে এবং অন্যান্য স্থানে দাবি করেছেন যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক যে ব্যাপক গণহত্যা ও ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ও ভারত কর্তৃক অতিরঞ্জিত।[৪][৫][৬] পাকিস্তানিদের মধ্যে যারা ১৯৭১-এর পাকিস্তানিদের চালানো গনহত্যার সমালোচনা করে বই লিখেছেন, তাদের বর্ণনাকে বসু 'সীমাবদ্ধ' আখ্যা দিয়েছেন।[৭] তিনি বহুসংখ্যক প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার গ্রহণপূর্বক উপসংহার টেনেছেন যে, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং মুক্তিবাহিনী উভয় পক্ষই ব্যাপক গণহত্যা চালিয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তার এই দৃষ্টিভঙ্গী বাংলাদেশ ও ভারতে ইতিহাসবিদদের দ্বারা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। অনেক গবেষক তার কাজে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে বলে দাবি করেছেন।[৮][৯][১০][১১][১২] পাকিস্তানে বসুর বই কোন মহলে প্রশংসিত আর কোন মহলে সমালোচিত হয়েছে।[১৩] ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশী সাংবাদিকরাও বসুর লেখা ইতিহাসের সমালোচনা করেছেন।[১১]

শর্মিলা বসু যুক্তরাষ্ট্র হতে পাকিস্তানে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান বিক্রয়ের সমর্থক।[১৪][১৫] তিনি পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজীর উচ্চকিত প্রশংসা করেছেন, যদিও অন্য পাকিস্তানি জেনারেলরা এর সাথে ভিন্নমত পোষন করেন। পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার এফ বি আলীর ভাষ্যমতে, নিয়াজী একজন প্রতারক, লম্পট এবং কাপুরূষ। করাচিতে নিয়াজীর গাড়ি সবসময় নিষিদ্ধ পল্লির বাইরে পাওয়া যেত।[১১] আরেকজন পাকিস্তানি জেনারেল খাদিম হুসেন রাজার মতে, পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজী বাঙ্গালী নারীদের উপরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী লেলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।[১৬] লিপিবদ্ধ ৯৩,০০০ পাকিস্তানি সৈন্যের আত্মসমর্পণকে নিয়াজির দাবির প্রেক্ষিতে ৩৪,০০০ দেখানোতে ইতিহাসবিদরা শর্মিলা ইচ্ছাকৃতভাবে সংখ্যা নিয়ে খেলা করছেন কিনা সেই প্রশ্ন তুলেছেন।[৩]

অন্যদিকে ব্যাপক সমালোচনার পাশাপাশি শর্মিলা বসুর উক্ত বইটি অনেক প্রশংসিতও হয়। দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে এই বইটিকে একটি দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা বলে উল্লেখ করা হয়।[১৭] দ্যা হিন্দু পত্রিকায় বলা হয় বইটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড এবং পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে একটি নৈতিক সমতা তৈরি করে।[১৮] অতুল মিশ্র একজন সমসাময়িক দক্ষিণ এশিয়ার পর্যালোচক, এই বইটিকে একটি স্বচ্ছ ধারণাযুক্ত পেশাদারিত্বের প্রকাশ হিসেবে বিবেচনা করেন এবং বইটি ডক্টরেট শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আদর্শ পাঠ্য হিসেবে যথাযোগ্য মনে করেন।[১৯] পাকিস্তানে এই বইটি অধিকতর প্রশংসিত হয়।[২০]

শর্মিলা বসু ‘ইকোনোমিক এন্ড পলিটিক্যাল উইকলি’ জার্নালে তার বইয়ের সমালোচক নাইম মোহাইমেন সহ অন্যান্যদের জবাবে বলেছেন বইয়ে তার গবেষণা সঠিক ও নিরপেক্ষ ছিল।[২১] এবং তার বইয়ের সমালোচনা কেবল তারাই করেছেন যারা এতদিন ১৯৭১ এর পৌরাণিক কাহিনী থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন।[২২]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Oxford University Faculty Bio"। ২৯ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১২ 
  2. Lawson, Alastair (১৬ জুন ২০১১)। "Controversial book accuses Bengalis of 1971 war crimes"BBC। সংগ্রহের তারিখ ৩০ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  3. Bhaumik, Subir (২৯ এপ্রিল ২০১১)। "Book, film greeted with fury among Bengalis"aljazeera। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  4. Woodrow Wilson Center Woodrow Wilson Center Book Launch event
  5. Anatomy of Violence: Analysis of Civil War in East Pakistan in 1971 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ এপ্রিল ২০১২ তারিখে by Sarmila Bose in the Economic and Political Weekly, October 8, 2005
  6. Losing the Victims: Problems of Using Women as Weapons in Recounting the Bangladesh War ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ এপ্রিল ২০১২ তারিখে by Sarmila Bose in the Economic and Political Weekly, September 22, 2007
  7. Dead Reckoning by Sarmila Bose, Pp 195
  8. "Naeem Mohaiemen, "Flying Blind: Waiting for a real Reckoning on 1971", Economic & Political Weekly, vol xlvi no 36, September 3, 2011" (পিডিএফ)। ২৫ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১২ 
  9. "Sarmila Bose, "'Dead Reckoning': A Response"; Naeem Mohaiemen, "Another Reckoning"; Economic & Political Weekly, vol xlvi no 53, December 31, 2011." (পিডিএফ)। ২৩ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১২ 
  10. Sahgal, Gita (১৮ ডিসেম্বর ২০১১)। "Dead Reckoning: Disappearing stories and evidence"The Daily Star। ২০ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  11. Zeitlin, Arnold (নভেম্বর ১৭, ২০১৩)। "Thoughts on Dead Reckoning"The Daily Star। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  12. Unheard Voice blog has compiled some responses to Bose[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  13. Zia, Afia (১২ জানুয়ারি ২০১২)। "Reading and writing 1971"The Express Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  14. Sobhan, Zafar। "Bose is more Pakistani than Jinnah the Quaid"The Sunday Guardian। ১২ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  15. Milam, William (এপ্রিল ১১, ২০০৫)। "The right stuff: F-16s to Pakistan is wise decision"The Christian Science Monitor। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  16. Ahmed, Khaled (জুলাই ৭, ২০১২)। "'Genetic engineering' in East Pakistan"The Express Tribune। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  17. "Dead Reckoning by Sarmila Bose - review"the Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১১-০৭-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-২২ 
  18. "1971: a different history"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১১-০৯-২৭। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-২২ 
  19. Mishra, Atul (২০১৩-০৩-০১)। "Dead reckoning: memories of the 1971 Bangladesh war"Contemporary South Asia21 (1): 76–77। আইএসএসএন 0958-4935ডিওআই:10.1080/09584935.2012.758473 
  20. "Reading and writing 1971"The Express Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১২-০১-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-২২ 
  21. "'Dead Reckoning': A Response"Economic and Political Weekly (ইংরেজি ভাষায়): 7–8। ২০১৫-০৬-০৫। 
  22. Bose, Sarmila। "Myth-busting the Bangladesh war of 1971"www.aljazeera.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-২২ 
  23. "'Dead Reckoning': A Response"Economic and Political Weekly (ইংরেজি ভাষায়): 7–8। ২০১৫-০৬-০৫। 
  24. "'Dead Reckoning': A Response"Economic and Political Weekly (ইংরেজি ভাষায়): 7–8। ২০১৫-০৬-০৫।