গয়া জেলা

স্থানাঙ্ক: ২৪°৪৫′ উত্তর ৮৫°০০′ পূর্ব / ২৪.৭৫০° উত্তর ৮৫.০০০° পূর্ব / 24.750; 85.000
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গয়া জেলা
गया ज़िला
বিহারের জেলা
বিহারে গয়ার অবস্থান
বিহারে গয়ার অবস্থান
দেশভারত
রাজ্যবিহার
প্রশাসনিক বিভাগমগধ
সদরদপ্তরগয়া
তহশিল৮৮০
সরকার
 • লোকসভা কেন্দ্রগয়া
আয়তন
 • মোট৪,৯৭৬ বর্গকিমি (১,৯২১ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট৪৩,৭৯,৩৮৩
 • জনঘনত্ব৮৮০/বর্গকিমি (২,৩০০/বর্গমাইল)
জনতাত্ত্বিক
 • সাক্ষরতা৬৬.৩৫%
 • লিঙ্গানুপাত৯৩২
প্রধান মহাসড়ক২ নং জাতীয় সড়ক, ৮২ নং জাতীয় সড়ক, ৮৩ নং জাতীয় সড়ক
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট
বৌদ্ধ মূর্তি
গয়া জেলার মানচিত্র

গয়া জেলা হল ভারতের বিহার রাজ্যের ৩৯টি জেলার অন্যতম। ১৮৬৫ সালের ৩ অক্টোবর এই জেলা গঠিত হয়েছিল। এই জেলার সদর শহর গয়া বিহারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর।

পুরাণে উল্লেখ[সম্পাদনা]

রামায়ণমহাভারতে গয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়। রামায়ণে আছে, রাম সীতালক্ষ্মণকে নিয়ে গয়ায় দশরথের পিণ্ডদান করতে এসেছিলেন। মহাভারতে গয়াকে ‘গয়াপুরী’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘গয়া’ নামটির উৎপত্তির কথা জানা যায় বায়ুপুরাণ থেকে। উক্ত পুরাণ মতে, গয়া নামে এক অসুরের দেহ পবিত্র ছিল। তিনি এখানে বিষ্ণুর বর লাভের জন্য কঠোর তপস্যা করেছিলেন। কথিত আছে, গয়াসুরের দেহই গয়াক্ষেত্র নামে পরিচিত।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

গয়া প্রাচীন মগধ অঞ্চলের একাধিক রাজবংশের উত্থান ও পতনের সাক্ষী। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় ১৮শ শতাব্দী পর্যন্ত গয়া এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে শিশুনাগ এই অঞ্চলে শিশুনাগ রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। এই রাজবংশ পাটলীপুত্র (অধুনা পাটনা) অঞ্চল নিজ অধিকারে আনতে সক্ষম হয়েছিল। এই রাজবংশের পঞ্চম শাসক বিম্বিসার (যিনি খ্রিস্টপূর্ব ৫১৯ অব্দের সমসাময়িক ছিলেন) গয়াকে বহির্বিশ্বের সঙ্গে পরিচিত করে তোলেন। বিম্বিসারের রাজত্বকালেই গৌতম বুদ্ধমহাবীর গয়ায় এসেছিলেন। নন্দ রাজবংশের অধীনে কিছুকাল থাকার পর অশোকের রাজত্বকালে (খ্রিস্টপূর্ব ২৭২-২৩২ অব্দ) গয়া ও সমগ্র মগধ অঞ্চল মৌর্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। অশোক বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনিই বোধগয়ায় যেখানে গৌতম বুদ্ধ বোধিলাভ করেছিলেন সেখানে প্রথম মন্দিরটি নির্মাণ করান।

গুপ্ত রাজত্বকালে (খ্রিস্টীয় ৪র্থ-৫ম শতাব্দী) হিন্দু নবজাগরণের সঙ্গেও গয়া অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। সমুদ্রগুপ্ত গয়াকে আলোকবৃত্তে নিয়ে আসতে বিশেষ সাহায্য করেন। গুপ্ত সাম্রাজ্যে বিহার প্রদেশের প্রধান শহর ছিল গয়া।

গোপাল পাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করলে গয়া উক্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। মনে করা হয়, বোধগয়ার বর্তমান মন্দিরটি গোপালের পুত্র ধর্মপাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

খ্রিস্টীয় ১২শ শতাব্দীতে বখতিয়ার খিলজি গয়া লুণ্ঠন করেন। পরবর্তীকালে অবশ্য গয়ার হিন্দু শাসকরা তার সেনাপতিদের পরাজিত করেছিল। ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধের পর গয়া ব্রিটিশদের অধীনে আসে।

১৮৬৪ সাল পর্যন্ত গয়া ছিল বেহার ও রামগড় জেলার অন্তর্গত। ১৮৬৫ সালে গয়া পৃথক জেলার মর্যাদা পায়। ১৯৮১ সালে বিহার সরকার গয়া, নওয়াদা, আওরঙ্গাবাদজাহানাবাদ জেলা নিয়ে মগধ বিভাগ গঠন করেন। উল্লেখ্য, নওয়াদা, আওরঙ্গাবাদ ও জাহানাবাদ ১৮৬৫ সাল থেকে গয়া জেলার মহকুমা ছিল। গয়া জেলা ভেঙে ১৯৭৬ সালে আওরঙ্গাবাদ ও নওয়াদা জেলা[১] এবং ১৯৮৮ সালে জাহানাবাদ জেলা গঠিত হয়।[১]

বর্তমানে গয়া জেলা রেড করিডোরের অন্তর্গত।

ভূগোল[সম্পাদনা]

গয়া জেলার আয়তন ৪,৯৭৬ বর্গকিলোমিটার (১,৯২১ মা)।[২] আয়তনের দিক থেকে এই জেলা ত্রিনিদাদ দ্বীপের প্রায় সমান।[৩] ফল্গু নদী এই জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

২০০৬ সালে ভারত সরকারের পঞ্চায়েত মন্ত্রক দেশের ২৫০টি সর্বাধিক অনগ্রসর জেলার তালিকায় গয়া জেলার নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে।[৪] বিহারের যে ৩৬টি জেলা অনগ্রসর অঞ্চল অনুদান তহবিল কর্মসূচির অধীনে অনুদান পেয়ে থাকে, গয়া জেলা তার মধ্যে অন্যতম।[৪]

বিভাগ[সম্পাদনা]

গয়া জেলা চারটি মহকুমায় বিভক্ত। এগুলি হল: গয়া সদর, নিমচক বাথানি, শেরঘাটিতেকারি। এই মহকুমাগুলি নিম্নোক্ত ব্লকগুলিতে বিভক্ত: গয়া সদর, মানপুর, বোধগয়া, ওয়াজিরগঞ্জ, বেলাগঞ্জ, খিজারসরাই, অত্রি, নিমচক বাথানি, মুহরা, শেরঘাটি, আমাস, মোহনপুর, ফতেপুর, বরাছাত্তি, ইমামগঞ্জ, ডুমারিয়া, বাঁকেবাজার, ডোভি, তঙ্কুপ্পা, গুরুয়া, গুরারু, পারাইয়া, তেকারিকোঞ্চ

বনাঞ্চল[সম্পাদনা]

১৯৭৬ সালে গয়া জেলায় গৌতম বুদ্ধ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য গঠিত হয়। এই অভয়ারণ্যের আয়তন ২৬০ কিমি (১০০.৪ মা)।[৫]

জনপরিসংখ্যান[সম্পাদনা]

২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে, গয়া জেলার জনসংখ্যা ৪,৩৭৯,৩৮৩।[৬] এই জনসংখ্যা মলডোভা রাষ্ট্র[৭] বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় সমান।[৮] জনসংখ্যার দিক থেকে ভারতের ৬৪০টি জেলার মধ্যে এই জেলার স্থান ৪২তম।[৬] গয়া জেলার জনঘনত্ব ৮৮০ জন প্রতি বর্গকিলোমিটার (২,৩০০ জন/বর্গমাইল)।[৬] ২০০১-২০১১ দশকে এই জেলার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২৬.০৮%।[৬] গয়া জেলার লিঙ্গানুপাতের হার প্রতি ১০০০ পুরুষে ৯৩২ জন মহিলা[৬] এবং সাক্ষরতার হার ৬৬.৩৫%।[৬]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Law, Gwillim (২০১১-০৯-২৫)। "Districts of India"Statoids। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-১১ 
  2. Srivastava, Dayawanti et al. (ed.) (২০১০)। "States and Union Territories: Bihar: Government"। India 2010: A Reference Annual (54th সংস্করণ)। New Delhi, India: Additional Director General, Publications Division, Ministry of Information and Broadcasting (India), Government of India। পৃষ্ঠা 1118–1119। আইএসবিএন 978-81-230-1617-7। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-১১ 
  3. "Island Directory Tables: Islands by Land Area"United Nations Environment Program। ১৯৯৮-০২-১৮। ২০১৫-১২-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-১১Trinidad 5,009km2  horizontal tab character in |উক্তি= at position 9 (সাহায্য)
  4. Ministry of Panchayati Raj (সেপ্টেম্বর ৮, ২০০৯)। "A Note on the Backward Regions Grant Fund Programme" (পিডিএফ)। National Institute of Rural Development। ৫ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১১ 
  5. Indian Ministry of Forests and Environment। "Protected areas: Bihar"। ২৩ আগস্ট ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১১ 
  6. "District Census 2011"। Census2011.co.in। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-৩০ 
  7. US Directorate of Intelligence। "Country Comparison:Population"। ২০১১-০৯-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-০১Moldova 4,314,377 July 2011 est.  line feed character in |উক্তি= at position 8 (সাহায্য)
  8. "2010 Resident Population Data"। U. S. Census Bureau। ২০১১-০৮-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-৩০Kentucky 4,339,367  line feed character in |উক্তি= at position 9 (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]