নির্বাচিত কলাম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নির্বাচিত কলাম
বইয়ের প্রচ্ছদ
প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ
লেখকতসলিমা নাসরিন
অনুবাদক
  • দেবযানী সেনগুপ্ত (ইংরেজি)
  • মৃণালিনী গাদকরী (মারাঠি)
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা
ধরনপ্রবন্ধ সংকলন
প্রকাশিতমে ১৯৯২
প্রকাশক
ইংরেজিতে প্রকাশিত
জানৃয়ারি ২০০৪
মিডিয়া ধরনছাপা (শক্তমলাট)
পৃষ্ঠাসংখ্যা১৯২
পুরস্কারআনন্দ পুরস্কার (১৯৯২)
আইএসবিএন৮১-৭২১৫-১১৬-০ (১ম সংস্করণ)

নির্বাচিত কলাম ১৯৯২ সালে প্রকাশিত বাংলা নারীবাদী গ্রন্থ। এটি বাংলাদেশী লেখক তসলিমা নাসরিনের প্রথম গদ্যগ্রন্থ যা মূলত তার লিখিত কলামগুলির সংকলন। ১৯৯২ সালের মে মাসে ভারতের আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশের পূর্বে গ্রন্থে সংকলিত প্রবন্ধগুলি আজকের কাগজ পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল।[১] প্রকাশের বছরই তসলিমা বইটির জন্য আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন।

সংক্ষিপ্ত বিবরণ[সম্পাদনা]

বইটির শুরুর কলামটিতে রয়েছে লেখকের আঠারো-উনিশ বছর বয়সে একটি ছেলের হাতে নির্যাতিত হওয়ার অভিজ্ঞতার বর্ণনা। ছেলেটি তাঁর হাতে একটি জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরে হাসতে হাসতে চলে যায়। কলামটির উপসংহারে লেখক বলেছেনঃ "ময়মনসিংহ শহরের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে মেয়েদের স্কুল, কলেজ, সিনেমা হলের পাশে কাঠের থামের উপর এক ধরনের সাইনবোর্ড ঝুলত, ওতে লেখা ছিল 'বখাটেদের উৎপাতে টহল পুলিশের সাহায্য নিন'। এই ব্যবস্থাটি দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়নি। সম্ভবত বখাটেরা ওর গুঁড়িসুদ্ধ উঠিয়ে নিয়ে গেছে। যতদিন সাইনবোর্ড ছিল, মেয়েদের স্কুলে যাওয়া-আসার সময় বখাটেরা ওই থামে হেলান দিয়েই শিস দিত। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, টহল পুলিশের উৎপাতে একবার স্কুলের মেয়েরা বখাটেদের সাহায্য নিতে বাধ্য হয়েছিল।" বইটিতে এরকম বেশ কিছু কলামে পুরুষ-অধিকৃত একটি সমাজে নারীজীবনের যন্ত্রণা ফুটে উঠেছে।.

বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম এই বইয়েই ইসলাম ও এর প্রবক্তা মুহাম্মদ (স.) কে সরাসরি ভাষায় আক্রমণ করা হয়।[২] বইটিতে হিন্দুধর্মের সমালোচনাও রয়েছে। এই বইটি যেমন অনেক নারীকেই অনুপ্রাণিত করেছে, তেমন অনেক মৌলবাদীকেই রাগান্বিত করেছে। বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম এই বইটিতেই যৌনতা নিয়ে একজন নারী রাখঢাকবিহীন বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশের সমাজে যৌনতা নিয়ে খোলাখুলি আলাপ-আলোচনা এখনও স্বীকৃত নয়। এই বইটিতে সংকলিত কলামগুলি রচিত হয় ১৯৮৯ থেকে ১৯৯০ সালে। বেগম রোকেয়ার প্রায় একশ' বছর পর এই কলামগুলির মাধ্যমেই বাংলাদেশে নারীবাদের লড়াই পুনরুজ্জীবন লাভ করে। এখনও এই কলামগুলিই বাংলা ভাষায় একজন নারীর রচিত সবচেয়ে সাহসী লেখা হিসেবে স্বীকৃত। পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশ- কোথাও বাঙালি নারী লেখকের মাঝে তসলিমা নাসরিনের মতো সাহস খুব কমই দেখা গেছে।

প্রকাশনা[সম্পাদনা]

"ক" বা "দ্বিখন্ডিত"তে তসলিমা নাসরিনের দেয়া ভাষ্য অনুযায়ী ১৯৮৯ সালে তাঁকে সেইসময়ের জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা "আজকের কাগজে" কলাম লিখবার আমন্ত্রণ জানান পত্রিকাটির সম্পাদক ও লেখকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু নাঈমুল ইসলাম খান (পরে ইনি তার সাথে বিবাহবন্ধনেও আবদ্ধ হয়েছিলেন এবং একসময় বিবাহবিচ্ছেদও ঘটে)। তসলিমা নাসরিন উত্তর দেন, "ধুর, কলাম কি করে লিখতে হয় আমি জানি না।" নাঈমুল ইসলাম খান তাকে "তোর যা ইচ্ছে করে তাই লেখ, ঘাবড়ানির কিছু নাই" বলে অভয় দেন।

তসলিমা নাসরিন যখন লিখবার বিষয় কি হতে পারে তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, তার দৃষ্টি আবদ্ধ হয় তার ডান হাতের একটি কালো দাগে। তার মনে পড়ে যায় যে একটি ছেলে তার হাতে একবার সিগারেট চেপে ধরায় ক্ষত থেকে উক্ত কালো দাগটি তৈরী হয়েছিল। এ নিয়ে তিনি তার প্রথম কলামটি লিখে ফেলেন। এরপরও আদৌ লেখাটি কলাম হয়েছে কি হয়নি তা নিয়ে তার দুশ্চিন্তা ছিল। অবশেষে একসময় দ্বিধাগ্রস্ত লেখক "দেখ, কলাম কি করে লিখতে হয় তা তো আমি জানি না। নিজের জীবনের একটা অভিজ্ঞতার কথা লিখেছি শুধু" বলে কলামটি নাঈমুল ইসলাম খানের কাছে জমা দেন।

কলামটি আদৌ প্রকাশিত হবে কি না তা নিয়েও তসলিমা নাসরিন সংশয়ে ছিলেন। যথাসময়ে তাকে অবাক করে দিয়ে কলামটি প্রকাশিত হয়।কলামটি অনেক পাঠকেরই নজরে আসে তখন। এরপরই তসলিমা নাসরিন নিয়মিত কলাম লিখতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তার কলাম ছাপা হলে যে কোনো পত্রিকার বিক্রি বেড়ে যেতে শুরু করে।

১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রকাশক মুজিবর রহমান খোকা (তিনি সেই সময়ে তসলিমা নাসরিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন) তাকে তার লেখা কলামগুলো নিয়ে বই প্রকাশ করার প্রস্তাব দেন। সেই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বইটি "বিদ্যাপ্রকাশ" প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। প্রকাশের পর বইটি সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের তালিকার শীর্ষে চলে আসে। [৩]

বিতর্ক[সম্পাদনা]

বইটিকে আনন্দ পুরস্কার দেয়ার কথা ঘোষণা [৪] করার পর তসলিমা নাসরিন পুরস্কার কমিটিকে জানান যে তিনি বইটির একটি কলামের কিছু অংশ সুকুমারী ভট্টাচার্য্যের বেদের ওপর একটি লেখা থেকে নকল করে লিখেছেন। তবে আনন্দ পুরস্কার কমিটি একে বড় কোনো ব্যাপার বলে বিবেচনা করেনি, সম্ভবত লেখক নিজেই কথাটি সততার সাথে স্বীকার করেছিলেন বলে। তবে বর্তমানেও তসলিমা-বিদ্বেষী ভণ্ড ও মৌলবাদীরা এই নকলের ব্যাপারটি নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত রয়েছে।।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] আনন্দবাজার পত্রিকার অন্যতম কর্তা ও সুলেখক নিখিল সরকার ওরফে শ্রীপান্থ আনন্দ পুরস্কারের জন্যে বইটির নাম সুপারিশ করেছিলেন।

বইটি নিয়ে সম্ভবত এটিই প্রধান বিতর্ক। [৪] এছাড়াও মুসলিমেরা তাকে বরাবরের মতোই এই বইতেও ইসলামের সমালোচনা করার দায়ে অভিযুক্ত করে থাকে । তারা বলে থাকে যে তিনি কুরআন-হাদিস ভাল করে না বুঝেই ইসলামকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছেন। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন] মৌলবাদীরা যে যে কারণে তসলিমা নাসরিনের ওপর বিভিন্ন ফতোয়া ঘোষণা করেছিল, তার মধ্যে এই বইটি লেখাও একটি প্রধান কারণ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

বইটি আনন্দ পুরস্কার পাওয়ার পর বাংলাদেশের অনেক বুদ্ধিজীবীই তসলিমা নাসরিনের প্রতি ঈর্ষা বোধ করতে আরম্ভ করেন। তসলিমা নাসরিনের অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীই রাতারাতি তার শত্রুতে রূপান্তরিত হন এবং তার নামে অসত্য গুজব ও নিন্দা ছড়ানোর কাজে প্রবৃত্ত হন। ঈর্ষান্বিত কিছু লেখক, যাঁরা তসলিমা নাসরিনের একসময়ের বন্ধু ছিলেন, অল্প বয়সে আনন্দ পুরস্কার ও সেইসাথে বাংলাদেশের সীমানার বাইরে খ্যাতি অর্জনের কারণে ঈর্ষান্বিত ও ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে "তৃতীয় শ্রেণির লেখক" উপাধি দেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তসলিমা নাসরিন বইটির জন্য ১৯৯২ সালে "আনন্দ পুরস্কার" লাভ করেন।[৪]

দেবযানী সেনগুপ্ত বইটি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেছেন। এছাড়াও বইটি হিন্দি, অসমীয়া, মারাঠিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Taslima Nasreen: Controversy's child" (ইংরেজি ভাষায়)। বিবিসি নিউজ। ২৩ নভেম্বর ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২০ 
  2. Hashmi, T. (২০০০-০৩-১০)। Women and Islam in Bangladesh: Beyond Subjection and Tyranny (ইংরেজি ভাষায়)। Springer। আইএসবিএন 9780333993873 পাতাসমূহ=194 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য) 
  3. The Book Review (ইংরেজি ভাষায়)। C. Chari for Perspective Publications। ২০০৪-০১-০১। পৃষ্ঠা 47। 
  4. Sekhon, Aradhika। "Bangla rebel's fresh tirade"The Sunday Tribune। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭