আমিন উল্লাহ শেখ (বীর বিক্রম)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আমিন উল্লাহ শেখ
মৃত্যু১৯৯৯
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

আমিন উল্লাহ শেখ (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ১৯৯৯) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। [১]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

আমিন উল্লাহ শেখের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামে। তার বাবার নাম নোয়াব আলী শেখ এবং মায়ের নাম মাহমুদা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম আয়েশা বেগম। তাদের এক মেয়ে, ছয় ছেলে।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

আমিন উল্লাহ শেখ পাকিস্তানি নৌবাহিনীতে ইলেকট্রিক আর্টিফিসার (ইএ) পদে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে ফ্রান্সের তুলন নৌঘাঁটিতে সাবমেরিনার হিসেবে প্রশিক্ষণে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ৩১ মার্চ আরও সাতজন বাঙালি সাবমেরিনারের সঙ্গে তুলন থেকে পালিয়ে অনেক বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে ভারতে যান। পরে তিনি মুক্তিবাহিনীর নৌ-উইংয়ে অন্তর্ভুক্ত হন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিবাহিনীর নৌ মুক্তিযোদ্ধারা কেন্দ্রীয় পরিকল্পনায় আগস্ট মাসে একযোগে কয়েকটি সফল অপারেশন পরিচালনা করেন। এতে পাকিস্তান সরকারের ভিত কেঁপে ওঠে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে হইচই পড়ে। এর সাংকেতিক নাম ছিল ‘অপারেশন জ্যাকপট’। এরপর নৌ মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরে যান। কিছুদিন পর তারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে আবার বাংলাদেশে রওনা হন। আমিন উল্লাহ শেখের নেতৃত্বে ২৬ জনের একটি দল রওনা হয় চাঁদপুরের উদ্দেশে। অক্টোবর মাসের শেষে তারা চাঁদপুরে পৌঁছান। এবার আগের মতো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ছিল না। কোনো নির্দিষ্ট এলাকা বা সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। প্রতিটি দলের দলনেতা সহযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা করে টার্গেট নির্ধারণ করতেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে আমিন উল্লাহ শেখরা চাঁদপুরে অনেকগুলো অপারেশন করেন। এর মধ্যে বার্মা ইস্টার্ন (বর্তমানে মেঘনা) কোম্পানির তেলের ডিপো, এমভি লোরেম, এমভি স্বামী, এমভি লিলিসহ চীনা পতাকাবাহী জাহাজ ও পাকিস্তান নৌবাহিনীর গানবোট ধ্বংস উল্লেখযোগ্য। ৩০ অক্টোবর রাতে তারা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে একই সময় দুটি অপারেশন করেন। আমিন উল্লাহ শেখ পরিকল্পনা করেছিলেন ওই রাতে তারা চাঁদপুরের ভাটিতে নীলকমলের কাছে অপারেশন করবেন। সেখানে রাতে পাকিস্তানি সেনা ও নৌবাহিনীর কয়েকটি গানবোট নোঙর করা থাকত। এদিকে ডাকাতিয়া নদীর লন্ডন ঘাটে মার্কিন পতাকাবাহী এমভি লোরেমও সেদিন নোঙর করা ছিল। জাহাজটি পাকিস্তানিদের জন্য খাদ্য ও সমরাস্ত্র বহন করে সেখানে আসে। এ খবর আমিন উল্লাহ শেখ সে দিনই জানতে পারেন। তিনি সহযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা করে একই দিন ওই জাহাজেও অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় পাকিস্তানি গানবোট ধ্বংসের অভিযান। অপর দল এমভি লোরেম জাহাজ ধ্বংস করে। নীলকমলে নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত মজবুত। এরই মধ্যে সে দিন তার সহযোদ্ধারা দুঃসাহসিকতার সঙ্গে মাইন লাগিয়ে পাকিস্তানি নৌবাহিনীর একটি গানবোট ডুবিয়ে দেন। দুর্ধর্ষ নৌ-মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ পাকিস্তানিরা কঠোর নিরাপত্তাবলয় তৈরি করেও প্রতিরোধ করতে পারেনি। অন্যদিকে লন্ডন ঘাটে ডুবে যাওয়া ‘এমভি লোরেম’ স্বাধীনতার পর তিন দশক ওই অভিযানের স্মৃতি বহন করে। তখন পর্যন্ত সেটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মুক্তিযুদ্ধকালের এসব অভিযানের ধরন ও বিবরণ এখন মনে হয় একই রকম। কিন্তু বাস্তবে কোনো ঘটনাই এক রকম ছিল না। স্থান ও অবস্থানভেদে প্রতিটি অভিযান ছিল ভিন্ন রকমের। সুচিন্তিত পরিকল্পনা করে মুক্তিযোদ্ধাদের এক একটি অভিযান সফল করতে হয়েছে।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১০-১০-২০১২"। ২০২০-০৮-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩