হাজীগঞ্জ দুর্গ

স্থানাঙ্ক: ২৩°৩৮′০০″ উত্তর ৯০°৩০′৪৬″ পূর্ব / ২৩.৬৩৩৪° উত্তর ৯০.৫১২৮° পূর্ব / 23.6334; 90.5128
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(হাজিগঞ্জ দুর্গ থেকে পুনর্নির্দেশিত)
হাজীগঞ্জ দুর্গ
নারায়ণগঞ্জ, বাংলাদেশ
হাজীগঞ্জ দুর্গ
হাজীগঞ্জ দুর্গ বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
হাজীগঞ্জ দুর্গ
হাজীগঞ্জ দুর্গ
স্থানাঙ্ক২৩°৩৮′০০″ উত্তর ৯০°৩০′৪৬″ পূর্ব / ২৩.৬৩৩৪° উত্তর ৯০.৫১২৮° পূর্ব / 23.6334; 90.5128
ধরনজল দুর্গ
সাইটের তথ্য
নিয়ন্ত্রন করেপ্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, ঢাকা বিভাগ
জনসাধারনের জন্য উন্মুক্তহ্যাঁ
অবস্থাপুনঃনির্মাণ
সাইটের ইতিহাস
নির্মিত১৬১০/১৬৫০ [১]
নির্মাতামীর জুমলা বা ইসলাম খান[১]

হাজীগঞ্জ দুর্গ মুঘল আমলে নির্মিত একটি জল দুর্গ। এটি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার হাজীগঞ্জ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। এটি খিজিরপুর দুর্গ নামেও পরিচিত।[২] ঢাকা শহর কে রক্ষা করতে সপ্তদশ শতকের আগে পরে যে তিনটি জল দুর্গকে নিয়ে ত্রিভূজ জল দুর্গ বা ট্রায়াঙ্গল অব ওয়াটার ফোর্ট গড়ে তোলা হয়েছিল তারই একটি হলো এই হাজীগঞ্জ দুর্গ;[১] সম্ভবত মুঘল সুবাদার ইসলাম খান কর্তৃক ঢাকায় মুঘল রাজধানী স্থাপনের অব্যবহিত পরে নদীপথে মগ ও পর্তুগীজ জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে দুর্গটি নির্মিত হয়।[৩] দুর্গটি রাজধানী ঢাকা থেকে ১৪.৬৮ কি.মি. দূরে অবস্থিত।

নির্মাণ[সম্পাদনা]

সপ্তদশ শতকের পূর্বে ঢাকাকে রক্ষা করতে গড়ে উঠেছিল যে তিনটি ত্রিভূজ জল দুর্গ তার একটি হল হাজিগঞ্জ দুর্গ। এটি শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে গড়ে উঠেছিল। অপর দুটির একটি হল সোনাকান্দা দুর্গ যা বন্দর এলাকার ব্রহ্মপুত্র ও শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গমস্থলের কিনারে এবং পরটি ইদ্রাকপুর দুর্গ যা মুন্সিগঞ্জে জেলায় অবস্থিত।

প্রাচীন কালে বুড়িগঙ্গা নদী এসে লক্ষ্যা নদীর সাথে এই স্থানে মিলিত হত। মুঘল আমলের প্রথম দিকে স্থানটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।[৪] কোন লিখিত প্রমাণ না থাকায়, এটি ১৬৫০ সালে নির্মিত হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়ে থাকে। এটি কে নির্মাণ করেছেন তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। লেখক মুন্সি রহমান আলী তার এক গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায় যে, মীর জুমলা ১৬৬০-১৬৬৩ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে দুর্গটি নির্মাণ করেন।[১] এছাড়া অন্যান্য লেখকদের মতে, যেমন হাসান (১৯০৪), তালিস (১৯৮৫) এবং আহমেদ (১৯৯১), দুর্গটির নির্মাতা হলেন মীর জুমলা।[৫] অন্যদিকে অন্যান্য লেখকদের মতে, যেমন দানি (১৯৬১) ও তাইফুর (১৯৫৬), এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ ভিন্ন মত পোষণ করেন। আহম্মাদ হাসান দানি তার মুসলিম আর্কিটেকশ্চার ইন বেঙ্গল গ্রন্থে লিখেছেন, ইসলাম খান ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করার পর এটি নির্মাণ করেন।[১]

মুগল সেনাপতি মির্জা নাথান তার বাহারিস্তান-ই-গায়বীতে উল্লেখ করেন, সে তার বিশাল সৈন্য বাহিনী সহকারে খিজিরপুরে (বর্তমান হাজীগঞ্জ) প্রধান ঘাঁটি স্থাপন করেন। নদী তীরবর্তী স্থানে সেনাদের ছাউনি স্থাপন করেছিলেন। তিনি ১৬১০ সালে মুগল রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করার পূর্বেই ‘ভুঁইয়া’দের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এই এলাকাটিকে কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

তাই ধারণা করা হয় বাহারিস্তান-ই-গায়বী'র খিজিরপুরই বর্তমানের হাজিগঞ্জ, এবং স্থাপনাটি খিজিরপুরের অন্তর্ভুক্ত ছিল যা হয়তো পরবর্তীতে পুনঃ নির্মাণ করা হয়েছিল।[৫] মোগল যুগের পূর্বে এ অঞ্চলে আরেকটি দুর্গ ছিল বলে জানা যায়। যা খিজিরপুর দুর্গ নামে পরিচিত। অনেক গবেষক মত প্রকাশ করেছেন— খিজিরপুর দুর্গের ওপরই হাজীগঞ্জ দুর্গ নির্মিত হয়েছিল। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে এবং ভৌগোলিক কৌশলগত দিক বিচারে এই মত নির্বিচারে গ্রহণ করা যায় না। নির্মাণযুগে হাজীগঞ্জ দুর্গটি শীতলক্ষ্যার কোল ঘেঁষে ছিল। এখন নদী বেশ কিছুটা পূর্বদিকে সরে গিয়েছে।[৬]

বর্তমান অবস্থা[সম্পাদনা]

হাজীগঞ্জ দুর্গকে বহুবার সংস্কার করা হয়েছে। ১৮৯৬ সালে প্রকাশিত ‘লিস্ট অব অ্যানসিয়েন্ট মনুমেন্টস ইন বেঙ্গল’ বইয়ের লেখা অনুসারে সেই সময় এটি প্রায় ধ্বংস অবস্থায় ছিল। সেই সময় বেষ্টনী প্রাচীর এবং একটি বুরুজ থাকার কথা বইতে উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে। দুর্গটিকে ১৯৫০ সালে প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর অধিদপ্তরের আওতায় নিয়ে আসার পরে একে বিভিন্ন পর্যায়ে সংস্কার করে বর্তমান অবস্থা নিয়ে আসা হয়।[৬]

গ্যালারি[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. হাজীগঞ্জ জল দুর্গ [Hajiganj water tower]। Ittefaq। ১ মার্চ ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুন ২০১৯ 
  2. bn.banglapedia.org (হাজীগঞ্জ দুর্গ)
  3. "বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন- নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা-হাজীগঞ্জ দুর্গ"। ১৩ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০২২ 
  4. আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া। "বাংলাদেশের প্রাচীন কীর্তি- ২য় খন্ড মুসলিম যুগ": 160। 
  5. Kamrun Nessa Khondker (21/10/2014)। "Mughal River Forts in Bangladesh: An Archaeological Appraisal"। LAP LAMBERT Academic Publishing। ৭ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ৭, ২০১৯  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  6. অধ্যাপক এ কে এম শাহনাওয়াজ (১০ অক্টোবর ২০১৫)। "ঢাকার কথা ৮ : মোগল জলদুর্গ"। এনটিভি.কম। ৭ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ৭, ২০১৯