কড লিভার অয়েল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জিলেটিন ক্যাপসুল আকারে কড লিভার অয়েল
কোলিকেলসিফেরো (ভিটামিন ডি3)

কড লিভার অয়েল একটি সম্পূরক পুষ্টি উপাদান যা কড মাছের যকৃত থেকে আহরণ করা হয়। অধিকাংশ মাছের তেলের ন্যায় কড লিভার অয়েলেও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড:আইকোসেপেন্টিনোয়িক এসিড (EPA) এবং ডোকোসেহেক্সানোয়িক এসিড (DHA) রয়েছে। কড লিভার অয়েলে বিদ্যমান প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি-এর জন্যে মানুষ দীর্ঘকালধরে এটি গ্রহণ করছে। সাধারণত শিশুদের ভিটাভিন ডি-এর অভাব প্রতিরোধে ক্যাপসুল বা সিরাপ আকারে কড লিভার অয়েল খাওয়ানো হয়। এছাড়া ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি স্বল্পতাজনিত সমস্যাজনিত কারণে কড লিভার অয়েল বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।[১]

উৎপাদন[সম্পাদনা]

কড লিভার অয়েল উৎপাদনের জন্য একটি কাঠের ব্যারেলে টাটকা কড মাছের যকৃত এবং সাগরের পানি একত্রে রাখা হয়। এই মিশ্রণের গাজন প্রক্রিয়া হবার জন্য প্রায় এক বছর পর্যন্ত তা ঐ অবস্থাতেই রাখা হয়, তারপর মিশ্রণ থেকে তেল সংগ্রহ করা হয়।[২] এছাড়া কড মাছের মাংস রান্না করার মাধ্যমেও তেল তৈরি করা হয়ে থাকে।

ভেষজ ব্যবহার[সম্পাদনা]

হৃৎপিণ্ড আক্রমণের পরে কড লিভার অয়েলের ব্যবহার হৃৎপিণ্ডের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া কড লিভার অয়েল হৃদযন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ভূমিকা পালন করে।[৩] কড লিভার অয়েল এবং মাছের তেল প্রায় একই ধরনের, তবে কড লিভার অয়েলে বেশি পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ডি রয়েছে। এক টেবিল চা-চামচ পরিমাণ কড লিভার অয়েলে ৪০৮০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ এবং ৩৪ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি রয়েছে।[৪] প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের প্রতিদিন ভিটামিন এ-এর চাহিদা ৯০০ মাইক্রোগ্রাম এবং মহিলাদের ৭০০ মাইক্রোগ্রাম। এবং ভিটামিন ডি-এর চাহিদা ১৫ মাইক্রোগ্রাম। তবে সর্বোচ্চ ব্যবহারযোগ্য ভিটামিন-এ গ্রহণের পরিমাণ ১০০০০০ মাইক্রোগ্রাম/দিন এবং ভিটামিন ডি ১০০ মাইক্রোগ্রাম/দিন। তাই যেসব মানুষ ভিটামিন-এ এবং ডি-এর উৎস হিসেবে কড লিভার অয়েল গ্রহণ করে, তাদের খেয়াল রাখা উচিত যে কী পরিমাণ ভিটামিন এ এবং ডি তারা তাদের দৈনিক খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে নিচ্ছে।[৫][৬]

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

প্রতি চা-চামচ পরিমাণ কড লিভার অয়েলে থাকে ১৩৬% ভিটামিন এ-এর দৈনিক সহ্যক্ষমতার সর্বোচ্চ গ্রহণসীমা।[৭][৮] অতিরিক্ত পরিমাণ ভিটামিন এ যকৃতে জমা হয় এবং শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।[৫] গর্ভবতী মহিলাদের কড লিভার অয়েল গ্রহণের আগে চিকিৎসকের সরনাপন্ন হওয়া উচিত, কারণ অতিরিক্ত পরিমাণ ভিটামিন এ শিশুর জন্মগত সমস্যার জন্য দায়ী হতে পারে।[৯] বিষক্রিয়া সম্পন্ন ভিটামিন এ-এর পরিমাণ হল ২৫০০০ IU/kg, বা একজন ৫০ কিলোগ্রাম মানুষের প্রায় ১.২৫ কিলোগ্রাম ভিটামিন-এ গ্রহণ।

রক্তে অতিরিক্ত পরিমাণ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের উপস্থিতি পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যান্সারের কারণ হতে পারে, তবে এই সংক্রান্ত গবেষণাটিতে মূল্যায়নকারী ব্যক্তির ওমেগা-৩ গ্রহণকারী খাদ্য বা সম্পূরক পুষ্টি উপাদান কী ছিল – তা বিবেচনা করা হয়নি।[১০]

ভিটামিনের আধিক্যজনিত হাইপারভিটামিনোসিস এবং বিভিন্ন উপাদানের বিষক্রিয়া; যেমন- মার্কারি, পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইল, ডাইঅক্সিন ও অন্যান্য দূষনকারী উপাদানের প্রভাব রোধে মৎস্যজাত তেলের পরিশোধন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়া মৎস্যজাত তেলের পরিশোধন তেলে বিদ্যমান ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড; যেমন- ইপিএ ও ডিএইচএ-এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে।[১১]

গর্ভবতী মহিলাদের অতিরিক্ত পরিমাণ কড লিভার অয়েল গ্রহণ গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার আশঙ্কা পাঁচগুণ বৃদ্ধি করতে পারে।[১২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Rajakumar, K.। "Vitamin D, Cod-Liver Oil, Sunlight, and Rickets: A Historical Perspective. 2003"। Pediatrics112 (2): 132–135। 
  2. David Wetzel (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৬)। "Cod Liver Oil Manufacturing"The Weston A. Price Foundation। ১০ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০১৫ 
  3. von Schacky, C. (২০০০)। "n-3 Fatty acids and the prevention of coronary atherosclerosis"। Am J Clin Nutr71 ((1 Suppl)): 224S–7S। পিএমআইডি 10617975 
  4. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৫ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০১৫ 
  5. Paul Lips (৮ মে ২০০৩)। "Hypervitaminosis A and fractures"N Engl J Med348 (4): 1927–1928। ডিওআই:10.1056/NEJMe020167পিএমআইডি 12540650। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০০৮ 
  6. Haddad J.G. (৩০ এপ্রিল ১৯৯২)। "Vitamin D — Solar Rays, the Milky Way, or Both?"The New England Journal of Medicine। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জানুয়ারি ২০১২ 
  7. National Nutrient Database for Standard Reference "USDA Nutrition Facts: Fish oil, cod liver"[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] USDA
  8. Jane Higdon, Ph.D. of the Linus Pauling Institute "Linus Pauling Institute Micronutirent Center" Oregon State University
  9. Myhre AM, Carlsen MH, Bøhn SK, Wold HL, Laake P, Blomhoff R (ডিসেম্বর ২০০৩)। "Water-miscible, emulsified, and solid forms of retinol supplements are more toxic than oil-based preparations"Am. J. Clin. Nutr.78 (6): 1152–9। পিএমআইডি 14668278 
  10. Theodore M. Brasky, Amy K. Darke, Xiaoling Song, Catherine M. Tangen, Phyllis J. Goodman, Ian M. Thompson, Frank L. Meyskens Jr, Gary E. Goodman, Lori M. Minasian, Howard L. Parnes, Eric A. Klein and Alan R. Kristal (২০১৩)। "Plasma Phospholipid Fatty Acids and Prostate Cancer Risk in the SELECT Trial"J Natl Cancer Inst105 (15): 1132–1141। ডিওআই:10.1093/jnci/djt174পিএমআইডি 23843441পিএমসি 3735464অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  11. Bays H E (১৯ মার্চ ২০০৭)। "Safety Considerations with Omega-3 Fatty Acid Therapy"। The American Journal of Cardiology। 99। (Supplement 1) (6): S35–S43। ডিওআই:10.1016/j.amjcard.2006.11.020পিএমআইডি 17368277 
  12. Olafsdottir AS, Skuladottir GV, Thorsdottir I, Hauksson A, Thorgeirsdottir H, Steingrimsdottir L (মার্চ ২০০৬)। "Relationship between high consumption of marine fatty acids in early pregnancy and hypertensive disorders in pregnancy"BJOG113 (3): 301–9। ডিওআই:10.1111/j.1471-0528.2006.00826.xপিএমআইডি 16487202 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]