রাজা হরিশচন্দ্র

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রাজা হরিশচন্দ্র
রাজা হরিশচন্দ্র চলচ্চিত্রের ভিডিও
পরিচালকদাদাসাহেব ফালকে
প্রযোজকদাদাসাহেব ফালকে
রচয়িতাদাদাসাহেব ফালকে
কাহিনিকাররণছোড়বাঈ উদয়রাম
শ্রেষ্ঠাংশেদত্তাত্রেয় দামোদর দাবকে
আন্না সলুঙ্কে
চিত্রগ্রাহকত্র্যম্বক তেলং
মুক্তি
  • ৩ মে ১৯১৩ (1913-05-03)
স্থিতিকাল৪০ মিনিট
দেশব্রিটিশ ভারত
ভাষানির্বাক চলচ্চিত্র

রাজা হরিশচন্দ্র (মারাঠি: राजा हरिशचनद्र) দাদাসাহেব ফালকে দ্বারা প্রযোজিত ও পরিচালিত ও ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি নির্বাক চলচ্চিত্র, যা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ভারতীয় চলচ্চিত্র হিসেবে গণ্য হয়।[১]

কাহিনীসংক্ষেপ[সম্পাদনা]

চলচ্চিত্রটি ভারতীয় পৌরাণিক চরিত্র হরিশচন্দ্রের জীবনের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে। চলচ্চিত্রের শুরুতেই রাজা রবি বর্মার আঁকা স্ত্রী-পুত্র সহ হরিশচন্দ্রের একটি চিত্র দেখানো হয়েছে। ধার্মিক রাজা হরিশচন্দ্র কীভাবে বিশ্বামিত্রকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষার সম্মানে একে একে তার রাজ্য, স্ত্রী ও সন্তানদের বলিপ্রদান করেন, সেই কাহিনীকে কেন্দ্র করে এই চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। চলচ্চিত্রের শেষে হরিশচন্দ্রের সত্যরক্ষার নীতিতে মুগ্ধ দেবতারা তাকে তার পূর্ব গৌরব ও পরিবারকে ফিরিয়ে দেন।

অভিনয়ে[সম্পাদনা]

দত্তাত্রেয় দামোদর দাবকে নামক একজন মারাঠি মঞ্চ অভিনেতা হরিশচন্দ্রের ভূমিকায় অভিনয় করেন। হরিশচন্দ্রের পত্নী তারামতীর ভূমিকায় আন্না সলুঙ্কে নামক একজন অভিনেতা অভিনয় করেন। দাদাসাহেব ফালকের পুত্র বালচন্দ্র ফালকে হরিশচন্দ্রের পুত্র রোহিতাশ্বের ভূমিকায় অভিনয় করেন।[২]

নির্মাণ[সম্পাদনা]

রাজা হরিশচন্দ্র চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য

দাদাসাহেব ফালকে, পরবর্তীকালে যিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রের জনক রূপে গণ্য হয়েছেন[৩] এই চলচ্চিত্রের প্রযোজক ও পরিচালক ছিলেন। তিনি দাদর মেইন রোডে তার স্টুডিওতে এই চলচ্চিত্রের সেট নির্মাণ করেন। এই চলচ্চিত্রটি দাদাসাহেব ফালকে দ্বারা নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র। ৪০ মিনিট সময়ের ৩৭০০ ফুট দৈর্ঘ্যের রীলযুক্ত চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে সাত মাস একুশ দিন সময় লাগে।[৪]

দাদাসাহেব ফালকে চিত্রকর রাজা রবি বর্মার অঙ্কনশৈলী দ্বারা বহুলাংশে প্রভাবিত ছিলেন। হিন্দু পৌরাণিক ঘটনাগুলির ওপর রাজা রবি বর্মার চিত্রগুলিকে দাদাসাহেব চলচ্চিত্রে নিয়ে আসেন।[৫]

চলচ্চিত্রটিতে স্ত্রীচরিত্র সহ সকল ভূমিকায় পুরুষরা অভিনয় করেন।[৬] দাদাসাহেব এই চলচ্চিত্রে নারীদের অভিনয়ে আনার বহু চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সেই কারণে তিনি হরিশচন্দ্রের পত্নী তারামতীর ভূমিকায় একজন কমনীয় পুরুষকে খুঁজতে গিয়ে আন্না সলুঙ্কে নামক একজন হোটেলের রাঁধুনিকে আবিষ্কার করেন, যিনি পরবর্তীকালে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে স্ত্রী চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয় হন।[৭]

এই চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে হরিশচন্দ্রাচী ফ্যাক্টরী নামক একটি মারাঠি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়।[৮]

মুক্তি[সম্পাদনা]

বম্বে শহরের করোনেশন সিনেমায় রাজা হরিশচন্দ্র চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনের বিজ্ঞাপন

১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে এপ্রিল বম্বে শহরের গ্র্যান্ট রোডের অলিম্পিয়া থিয়েটারে শহরের কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সামনে প্রথম দেখানো হয়।[৯] ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা মে বম্বে শহরের করোনেশন সিনেমায় জনগণের দর্শনের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়।[১০][১১] প্রথমে চলচ্চিত্রটির একটিমাত্র প্রিন্ট নির্মিত হলেও দ্রুত জনপ্রিয়তা ও বাণিজ্যিক ভাবে সফলতা লাভ করায়[২] গ্রামীণ অঞ্চলে দেখানোর জন্য দাদাসাহেব চলচ্চিত্রটির অনেকগুলি প্রিন্ট তৈরী করেন।

বিতর্ক[সম্পাদনা]

রাজা হরিশচন্দ্র চলচ্চিত্রটি মুক্তিলাভ করার প্রায় এক বছর পূর্বে দাদাসাহেব তোর্নের চলচ্চিত্র শ্রী পুন্ডলিক ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই মে মুক্তিলাভ করে। সেই কারণে রাজা হরিশচন্দ্র চলচ্চিত্রটিকে প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্র হিসেবে গণ্য করার ব্যাপারে বিতর্ক তৈরী হয়েছে। অপরদিকে একটি জনপ্রিয় মারাঠি নাটকের রেকর্ডিং তৈরী করে সেটিকে চলচ্চিত্রের রূপ দেওয়ায় শ্রী পুন্ডলিককে অনেকেই চলচ্চিত্র হিসেবে গণ্য করেন না।[১২][১৩]

অবশিষ্ট প্রিন্ট[সম্পাদনা]

রাজা হরিশচন্দ্র চলচ্চিত্রে চারটি রীল থাকলেও বর্তমানে পুণের রাষ্ট্রীয় ফিল্ম সংগ্রহালয়ে প্রথম ও শেষ রীলটি অবশিষ্ট রয়েছে। যদিও অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, এই রীল দুটি ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের সত্যবাদী রাজা হরিশচন্দ্র নামক চলচ্চিত্রের অংশ।[১৪][১৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Overview New York Times.
  2. Ramesh Dawar (১ জানুয়ারি ২০০৬)। Bollywood Yesterday Today and Tomorrow। Star Publications। পৃষ্ঠা 1987–। আইএসবিএন 978-1-905863-01-3। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০১৩ 
  3. Kirpal Sigh Annie Mathew। Middle School Social Sciences। Frank Brothers। পৃষ্ঠা 8–। আইএসবিএন 978-81-8409-103-8। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৩ 
  4. The Beginning: The Silent Movie Era ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে, Asia Studies, University of Berkeley.
  5. Tamhane, Abhijit (এপ্রিল ২৮, ২০০৮)। "एक मल्याळी चित्रकार 'मराठी' चित्रं रंगवतो..." (Marathi ভাষায়)। Maharashtra Times। সংগ্রহের তারিখ জুন ৮, ২০১২ 
  6. Subhash K. Jha,। "10 pre-release big ones"Rediff.com। সংগ্রহের তারিখ জুন ৮, ২০১২ 
  7. "Dadasaheb Phalke: Father of Indian Cinema"Dadasaheb Phalke Academy। ১৮ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ৮, ২০১২ 
  8. Plan to showcase making of India's 1st film ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ আগস্ট ২০০৯ তারিখে bignews.big927fm.com
  9. Bhingarde, Santosh (এপ্রিল ২১, ২০১২)। "भारतातील पहिल्या "प्रीमियर'चे आज शताब्दी वर्षात पदार्पण" (Marathi ভাষায়)। Mumbai: Sakal। ২২ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ৮, ২০১২ 
  10. Today in History আর্কাইভইজে আর্কাইভকৃত ৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে 3 May, NDTV.
  11. "Anurag Kashyap shoots in Amitabh Bachchan's home - The Times of India"The Times Of India। ২০১৩-১২-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৩-৩০ 
  12. Damle, Manjiri (২১ এপ্রিল ২০১২)। "Torne's 'Pundlik' came first, but missed honour"The Times Of India। ৩০ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০১৫ 
  13. Mishra, Garima (৩ মে ২০১২)। "Bid to get Pundalik recognition as first Indian feature film"The Indian Express। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৩ 
  14. Raja Harishchandra ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে National Film Archive of India.
  15. Raja Harishchandra" (1913) www.filmthreat.com.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]