শিল্পকলার ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অবলোকিতেশ্বর পদ্মপাণি, অজন্তার গুহাচিত্র, আ. ৪৫০-৫০০ খ্রিঃ

শিল্পকলার ইতিহাস বলতে নান্দনিক বা ভাব-বিনিময়ের উদ্দেশ্যে মানুষের দ্বারা নির্মিত সেই সমস্ত দৃশ্যমান বস্তুর ইতিহাসকে বোঝায় যেগুলির মাধ্যমে বিভিন্ন ধারণা, আবেগ বা সাধারণভাবে কোনো দৃষ্টিভঙ্গী দর্শকসমক্ষে উপস্থাপিত হয়েছে। বিভিন্ন যুগে দৃশ্য কলার বিভিন্ন রকম শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে, যেমন- আধুনিক ললিত কলাফলিত কলার বিভাজন অথবা মানব মননের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে কলাবিদ্যাকে তুলে ধরে প্রদত্ত বিভিন্ন সংজ্ঞা। বিংশ শতাব্দীতে কলার প্রধান শাখা হিসেবে নয়টি বিদ্যাকে চিহ্নিত করা হয়, যথা স্থাপত্য, ভাস্কর্য,চিত্রকলা, সঙ্গীত, নৃত্য, কাব্য (সাধারণভাবে সাহিত্যের অংশ হিসেবে চিহ্নিত, যার মধ্যে নাটক ও অন্যান্য বিবরণীও পড়ে), চলচ্চিত্র, ফটোগ্রাফি এবং গ্রাফিক আর্টফ্যাশনগ্যাস্ট্রোনমি প্রভৃতি পুরোনো বিদ্যার সাথে ভাব প্রকাশের নতুন অনেক মাধ্যমকেও বর্তমানে শিল্পের মর্যাদা দেওয়া হয়, যথা ভিডিও, ডিজিটাল শিল্প, পারফর্ম্যান্স শিল্প, বিজ্ঞাপন, অ্যানিমেশন, টেলিভিশন এবং ভিডিও গেম

শিল্পকলার ইতিহাস হল বিভিন্ন বিজ্ঞানশিল্পের একটি বহুশাস্ত্রীয় শাখা। এর উদ্দেশ্য হল সময়ের নিরিখে শিল্পের নৈর্ব্যক্তিক মূল্যায়ন, বিভিন্ন সংস্কৃতির শ্রেণীকরণ ও আলোচনার সুবিধার্থে যুগ বিভাগ।[১] শিল্পের ইতিহাসের ধারাবাহিক চর্চা পাশ্চাত্যে প্রথম শুরু হয় রেনেসাঁস-এর সময়ে, এবং তখন এই সদ্যোজাত শাস্ত্রটির উপজীব্য বিষয় ছিল কেবল পাশ্চাত্য শিল্প। সময়ের সাথে সাথে বিশ্বের বিভিন্ন সভ্যতার শিল্পকলার যথাযথ বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে, আর প্রতিটি সভ্যতার শিল্পকে শুধুমাত্র পাশ্চাত্য মাপকাঠিতে বিচার না করে তাদের স্ব-মূল্যায়নের স্বীকৃতিও দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে শিল্পকলার বিশ্বব্যাপী চর্চা, প্রসার ও সংরক্ষণ সম্ভব হয়েছে। বিংশ শতাব্দী জুড়ে ব্যক্তিগত ও সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত শিল্প জাদুঘর, শিল্প প্রদর্শনশালা প্রভৃতি নির্মিত হয়েছে। এই সমস্ত স্থানে বিভিন্ন প্রকার শিল্পকীর্তির বিশ্লেষণ ও নথিবদ্ধকরণের পাশাপাশি জনসাধারণের উপভোগের স্বার্থে শিল্প প্রদর্শনীরও ব্যবস্থা করা হয়। গণমাধ্যমের উদ্ভব ও অগ্রগতি শিল্পকলার চর্চা ও বিস্তারের ক্ষেত্রে প্রভূত সহায়তা করছে। হুইটনি দ্বিবার্ষিক, সাও পাওলোর দ্বিবার্ষিক, ভেনিসের দ্বিবার্ষিক এবং কাসেলে অনুষ্ঠিত ডকুমেন্টা প্রভৃতির মাধ্যমে শিল্পের নিত্য-নতুন ভঙ্গী ও ঐতিহ্যের বিকাশ সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রচলনের মাধ্যমে শিল্পকলায় উৎসাহ প্রদান শুরু হয়েছে। ইউনেস্কোর মত সংস্থাও বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকা প্রস্তুতির মাধ্যমে পৃথিবীর প্রধান প্রধান সৌধ ও স্মারক প্রভৃতির সংরক্ষণে এগিয়ে এসেছে।[২]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Gardner, p.xlvi
  2. Onians (2008), p. 316-317.