বিল জনস্টন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিল জনস্টন
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামউইলিয়াম আরাস জনস্টন
জন্ম(১৯২২-০২-২৬)২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২২
বিয়েক, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া
মৃত্যু২৫ মে ২০০৭(2007-05-25) (বয়স ৮৫)
মসম্যান, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
ডাকনামবিগ বিল
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনলেফট-আর্ম অর্থোডক্স স্পিন বা ফাস্ট মিডিয়াম
ভূমিকাবোলিংয়ে দক্ষ
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৪৫-১৯৫৫ভিক্টোরিয়ান বুশরেঞ্জার্স
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৪০ ১৪২
রানের সংখ্যা ২৭৩ ১১২৯
ব্যাটিং গড় ১১.৩৭ ১২.৬৮
১০০/৫০ ০/০ ০/০
সর্বোচ্চ রান ২৯ ৩৮
বল করেছে ১১০৪৮ ৩৪৫৭৬
উইকেট ১৬০ ৫৫৪
বোলিং গড় ২৩.৯১ ২৩.৩৫
ইনিংসে ৫ উইকেট ২৯
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৬/৪৪ ৮/৫২
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১৬/০ ৫২/০
উৎস: ক্রিকইনফো, ২৫ অক্টোবর ২০১৫

উইলিয়াম আরাস জনস্টন (ইংরেজি: Bill Johnston; জন্ম: ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯২২ - মৃত্যু: ২৫ মে, ২০০৭) ভিক্টোরিয়া প্রদেশের বিয়েক এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৫ সময়কালে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। বামহাতি পেস বোলার বিল জনস্টন বামহাতে অর্থোডক্স স্পিনাররূপেও দলে ভূমিকা রাখেন। নতুন বলে পেস ও পুরনো বলে স্পিন করানোয় সবিশেষ খ্যাতি লাভ করেছিলেন।[১][২]

অবসর পরবর্তীকালে বিক্রয় ও বিপণন কাজের সাথে সম্পৃক্ত হন। পরবর্তীতে নিজেই ব্যবসায়ী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন জনস্টন। তার দুই পুত্র সন্তান ছিল। তাদের একজন পরবর্তীকালে ক্রিকেট প্রশাসক হয়েছিলেন। ২৫ মে, ২০০৭ তারিখে ৮৫ বছর বয়সে তার দেহাবসান ঘটে।[৩]

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

শৈশবকালেই ক্রিকেটের প্রতি আসক্ত ছিলেন জনস্টন। পিতার দুগ্ধজাত খামারের পাশে বড় ভাই অ্যালানের সাথে ঐ সময়ে ক্রিকেট খেলতেন তিনি। কোল্যাক ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশনে বিকসের স্থানীয় দল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতো। কিন্তু, দলটি মাঝে-মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ দলে পরিণত করতে বেশ বেগ পেতে হতো। ফলশ্রুতিতে, নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মহোদয় কর্তৃক বড় ভাইয়ের সাথে তাকেও মাত্র ১২ বছর বয়সেই খেলায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। অভিষেক খেলাটি নিশ্চিত ড্রয়ে পর্যবসিত হবার পূর্বক্ষণে চূড়ান্ত ওভারে তাকে বোলিং করানো হলে তিনি উইকেট মেইডেন লাভ করেন।

১৯ বছর বয়সে ভিক্টোরিয়ার পক্ষে শেফিল্ড শীল্ডে কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার জন্য মনোনীত হন। কিন্তু পার্ল হারবার আক্রমণের কারণে খেলাটি বাতিল হয়।[১][২] বড় ভাইয়ের সাথে তিনিও রয়্যাল অস্ট্রেলিয়ান এয়ার ফোর্সে যোগ দেন। অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাংশে রাডার টেকনিশিয়ান হিসেবে চার বছর কাজ করেন। এ প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রথমবারের মতো কিথ মিলারের সাথে তার স্বাক্ষাৎ হয়।[৪] জনস্টন বিদেশে স্থানান্তরিত না হলেও অ্যালানের বিদেশে নিযুক্তি ঘটে ও আয়ারল্যান্ডে বিমানের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন।[১][২]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে জনস্টন স্লো-মিডিয়াম ও বামহাতি অর্থোডক্স স্পিন বোলার ছিলেন। কিন্তু, অনুশীলনীতে সাবেক অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক জ্যাক রাইডারকে গতিসম্পন্ন বল করতেন। এরফলে রাইডার তাকে পেস বোলার হিসেবে গড়ে তুলতে উৎসাহিত করেন।[১][৫]

খেলোয়াড়ী জীবন[সম্পাদনা]

ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে সফরকারী ভারত দলের বিপক্ষে তার টেস্ট অভিষেক ঘটে। প্রথম ইনিংসে হিমু অধিকারীকে আউট করে প্রথম টেস্ট উইকেট পান। ঐ ইনিংসে তিনি ২/১৭ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১/১১ লাভ করেন। খেলায় ভারত দল ইনিংস ব্যবধানে পরাজিত হয়। ঐ টেস্টে তাকে ব্যাট করার প্রয়োজন পড়েনি। ড্র হওয়া দ্বিতীয় টেস্টে ৫/৪৮ লাভ করেন।

১৯৪৮ সালে ডন ব্র্যাডম্যানের ‘অপরাজেয় দলের’ ইংল্যান্ড সফরে টেস্ট ও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিয়ে শীর্ষ উইকেট সংগ্রহকারী হন। এছাড়াও সর্বশেষ অস্ট্রেলীয় হিসেবে ইংল্যান্ড সফরে শতাধিক উইকেট লাভে সফলতা দেখান তিনি।

১৯৫১-৫২ মৌসুমে দ্রুততম সময়ে ১০০ টেস্ট উইকেট পান। উনিশ বলেরও কম বলে তিনি উইকেট লাভ করেন। ঐ মৌসুম শেষে ২৪ টেস্টে ১১১ উইকেট দখল করেন। তন্মধ্যে অস্ট্রেলিয়া দল ১৯টিতে জয় পায় ও বাদ-বাকী টেস্টের মধ্যে মাত্র দুইটিতে পরাজিত হয়েছিল। কিন্তু, ১৯৫৩ সালে হাঁটুর আঘাতপ্রাপ্তিতে বোলিংয়ের ধরন পাল্টাতে বাধ্য হন তিনি। এরফলে, তার বোলিংয়ের ধার অনেকাংশেই কমে যায়। ফলশ্রুতিতে ১৯৫৫ সালে অবসর গ্রহণ করতে বাধ্য হন জনস্টন।

সম্মাননা[সম্পাদনা]

অপরাজেয় দলের সদস্য থাকাকালীন অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী উপস্থাপন করায় ১৯৪৯ সালে উইজডেন কর্তৃপক্ষ তাকে বর্ষসেরা ক্রিকেটাররূপে ঘোষণা করে। এ প্রসঙ্গে প্রকাশনা সংস্থাটি মন্তব্য করে যে, ১৯৪৮ সালে অন্য কোন অস্ট্রেলীয় তার ন্যায় ব্যক্তিগত সফলতা লাভ করতে পারেনি। এছাড়াও, ব্র্যাডম্যান স্বয়ং তাকে অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা বামহাতি বোলার হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।[২] কার্যকর স্পিন ও পেস বোলিংয়ে তার অবদানের কথা স্বীকার করে দলীয় সঙ্গী নীল হার্ভে মন্তব্য করেন যে, ‘দলটি মূলতঃ ১৩ খেলোয়াড় সমৃদ্ধ। ব্র্যাডম্যান দুইজন ও বিল জনস্টন দুইজন খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামতেন।’[৬]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

ক্রিকেট খেলা থেকে বিদায় নিয়ে বিভিন্ন কাজের সাথে জড়িত থাকেন। তন্মধ্যে ডানলপ স্পোর্টসের মালামাল ও জুতা বিক্রয়ের বিক্রয় প্রতিনিধি হন।[৭] তিনি ও তার স্ত্রী কুইন্সল্যান্ডের গোল্ড কোস্টে স্থানান্তরিত হবার পর ডাকঘর পরিচালনা করেন।[৮] ক্রিকেটের বাইরে বেসবল খেলতেন।[৯] বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশীপে ১২৫ গজ দূরত্ব অতিক্রম করে স্বর্ণপদক জয় করেন। এছাড়াও, সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫ সালে ১৩২ গজ দূরত্বে বল ফেলে জাতীয় বেসবলে রেকর্ড গড়েন।[১]

জুডি নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন তিনি। তাদের সংসারে ডেভিড ও পিটার নামীয় দুই পুত্র সন্তান ছিল। তন্মধ্যে ডেভিড দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেন।[২] পরবর্তীতে পিতার মৃত্যুকালীন সময় পর্যন্ত তাসমানিয়ান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাহী ও প্রশাসক ছিলেন।[৮] ২০০৪ সালে নিজ স্ত্রীর মৃত্যুর পর গোল্ড কোস্ট থেকে সিডনিতে অবস্থানকারী পিটারের সাথে বাস করেন। ২৫ মে, ২০০৭ তারিখে সিডনি নার্সিং হোমে তার দেহাবসান ঘটে।[৪][৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Wisden 1949 – William Johnston"Wisden। ১৯৪৯। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-২৫ 
  2. Cashman, Franks, Maxwell, Sainsbury, Stoddart, Weaver, Webster (১৯৯৭)। The A-Z of Australian cricketers। Melbourne: Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-550604-9 
  3. "Bill Johnston Obit (photos)"। AAP। ২৫ মে ২০০৭। ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  4. Frith, David (২৮ মে ২০০৭)। "Obituary: Bill Johnston"। London: The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-৩১ 
  5. Haigh, p. 11.
  6. "Invincibles pay tribute to Johnston"Cricinfo। ২৫ মে ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-০১ 
  7. Haigh, p. 22.
  8. "'Invincible' Bill Johnston dies"The Sydney Morning Herald। ২০০৭-০৫-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-২৫ 
  9. Haigh, p. 32.

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]