আমর ইবনে হিশাম: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
আফতাবুজ্জামান-এর করা 4267818 নং সংস্করণে প্রত্যাবর্তন করা হয়েছে: কপিরাইটযুক্ত, https://bangla393.rssing.com/chan-63757403/all_p64.html থেকে অনুলিপি করা হয়েছে।। ট্যাগ: পূর্বাবস্থায় ফেরত পুনর্বহালকৃত |
Ryan Mahmud (আলোচনা | অবদান) ট্যাগ: পূর্বাবস্থায় ফেরত পুনর্বহালকৃত |
||
১৩ নং লাইন: | ১৩ নং লাইন: | ||
| children = [[ইকরামাহ ইবনে আবু জাহল|ইকরামাহ]] <br> জাহারা <br> তামিমি <br> শাখরা <br> আসমা <br> জামিলা <br> উম্মে হাকিম <br> উম্মে সাঈদ <br> জুয়াইরিয়া <br> হুনফা <br> উম্মে হাবিব |
| children = [[ইকরামাহ ইবনে আবু জাহল|ইকরামাহ]] <br> জাহারা <br> তামিমি <br> শাখরা <br> আসমা <br> জামিলা <br> উম্মে হাকিম <br> উম্মে সাঈদ <br> জুয়াইরিয়া <br> হুনফা <br> উম্মে হাবিব |
||
}} |
}} |
||
'''ʿআমর ইবনে হিশাম''' ({{lang-ar|عمرو إبن هشام|Amr ibn Hishām}}) (৫৫৬ – ১৩ মার্চ ৬২৪), '''আবু আল-হাকাম''' ({{lang-ar|أبو الحكم|link=no}}) অথবা '''আবু জাহল''' ({{lang-ar|أبو جهل|link=no}}) হিসাবেও ডাকা হয়, ছিলেন [[মক্কা]]র একজন বহুঈশ্বরবাদী [[পৌত্তলিক]] বা মূর্তিপূজারী কুরাইশ নেতা, ইসলামের নবী [[মুহাম্মাদ]] ও মক্কার প্রাথমিক মুসলমানদের ব্যপক |
'''ʿআমর ইবনে হিশাম''' ({{lang-ar|عمرو إبن هشام|Amr ibn Hishām}}) (৫৫৬ – ১৩ মার্চ ৬২৪), '''আবু আল-হাকাম''' ({{lang-ar|أبو الحكم|link=no}}) অথবা '''আবু জাহল''' ({{lang-ar|أبو جهل|link=no}}) হিসাবেও ডাকা হয়, ছিলেন [[মক্কা]]র একজন বহুঈশ্বরবাদী [[পৌত্তলিক]] বা মূর্তিপূজারী কুরাইশ নেতা, একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলামের শেষ নবী [[মুহাম্মাদ]]ের প্রতি ঘোরতর শত্রুতা ও মক্কার প্রাথমিক মুসলমানদের প্রতি ব্যপক বিদ্বেষ পোষণের জন্য তিনি পরিচিত ও ঘৃণিত। নবী মুহাম্মাদের নবুয়াত ও ইসলাম প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই তিনি ইসলামের ঘোর বিরোধিতা, ঘৃণ্য চক্রান্ত, বিদ্বেষ ছড়ানো ও ইসলামের অনুসারীদের প্রতি অকথ্য নির্যাতন শুরু করেন। |
||
তিনি [[উমর ইবনে আবু রাবিয়াহ]]র ভাই <ref>''Ibn Khallikan's Biographical Dictionary'', trans. by Bn Mac Guckin de Slane, Oriental Translation Fund (Series), 57, 4 vols (Paris: Printed for the Oriental translation fund of Great Britain and Ireland, 1842-71), I 373.</ref> এবং [[উমর ইবনুল খাত্তাব]]ের চাচা। তিনি মুহাম্মাদের অন্যতম |
তিনি [[উমর ইবনে আবু রাবিয়াহ]]র ভাই <ref>''Ibn Khallikan's Biographical Dictionary'', trans. by Bn Mac Guckin de Slane, Oriental Translation Fund (Series), 57, 4 vols (Paris: Printed for the Oriental translation fund of Great Britain and Ireland, 1842-71), I 373.</ref> এবং [[উমর ইবনুল খাত্তাব]]ের চাচা। তিনি মুহাম্মাদের অন্যতম ঘোরবিরোধী এবং ইসলাম ও মক্কার প্রাথমিক মুসলমানদের শত্রুদের প্রথম সারির লোক ছিলেন। ইসলামের আবির্ভাবের পর আল্লাহর একত্ববাদ (তাওহীদ) এর প্রতি দাওয়াত আসার পরও সে জাহেলী যুগের মুর্তি পূজাকেই আকড়ে ধরে রাখে এবং বিভিন্ন ঘৃণ্য উপায় ইসলাম ও মুসলিমদের নিয়ে মিথ্যা, অমূলক ও নোংরা কথার দ্বারা কূৎসা ও বিদ্বেষ ছড়াতে অন্যান্য কুরাইশদের নেতৃত্ব দিয়েছিলো। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন উপায়ে সে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হত্যার জন্য ন্যক্কারজনক ষড়যন্ত্রও করেছিলো। তাই তাকে "আবু জেহেল" বা মূর্খদের পিতা ডাকা হয়। |
||
ইবনে হিশাম মুহাম্মাদের চাচা ছিলেন না (যেমন আবু লাহাব ছিলেন) বা অন্যকোনো রক্তের আত্মীয়। মুহাম্মাদ কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্রের এবং ইবনে হিশাম কুরাইশের বানু মাখজম গোত্রের। আমর ইবনে হিশাম আসাদ আল-আহলাফ নামেও পরিচিত ছিলেন, কারণ তসে ইসলামের শত্রু ও বিদ্বেষী দলগুলোর নেতা ছিলো, যারা ইসলাম ও মুহাম্মাদের বিরুদ্ধে জাহেলী মূর্খতার মূখপাত্র হিসেবে যুদ্ধ করেছিলো।<ref>Letter No.28, 2nd paragraph, Peak of Eloquence (Page-575), {{ISBN|0-941724-18-2}}; retrieved 11 January 2015</ref> |
|||
আবু জাহল [[মুআউয়াজ ইবনে আমর|মুয়াউয়াজ ইবনে আফ্রি]] এবং [[মুয়াজ ইবনে আমর|মুয়াদ ইবনে আমর ইবনে আল জামুহ]] কর্তৃক গুরুতরভাবে আহত হন এবং অবশেষে ৬২৪ সালের ১৩ ই মার্চ বদরে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাবস্থায় আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ কর্তৃক নিহত হন। |
আবু জাহল [[মুআউয়াজ ইবনে আমর|মুয়াউয়াজ ইবনে আফ্রি]] এবং [[মুয়াজ ইবনে আমর|মুয়াদ ইবনে আমর ইবনে আল জামুহ]] কর্তৃক গুরুতরভাবে আহত হন এবং অবশেষে ৬২৪ সালের ১৩ ই মার্চ বদরে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাবস্থায় আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ কর্তৃক নিহত হন। |
||
==নাম ও উপাধি সমূহ== |
==নাম ও উপাধি সমূহ== |
||
তাঁর উপাধিটি ছিল আবু আল-হাকাম (أبو الحكم) (আক্ষরিক অর্থে "জ্ঞানী বিচারের জনক") কারণ তিনি গভীর জ্ঞানের মানুষ হিসাবে বিবেচিত ছিলেন, কুরাইশের প্রবীণ নেতাদের মধ্যে দক্ষ্ণতা ও উপলব্ধির জন্য তারা তাঁর মতামতকে বিশ্বাস করেতেন এবং তাদের সভার একজন অভিজাত সদস্য হিসাবে তারা তাঁর উপর নির্ভর করতেন। এমনকি তিরিশ বছর বয়সেই তিনি দার-আন-নাদ্বায় অনুষ্ঠিত একটি বিশেষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন, যে বাড়ি [[হাকিম ইবনে হিজাম]]ের মালিকানাধীন, যদিও এই গোপন সম্মেলনে প্রবেশের বয়স ছিল কমপক্ষে চল্লিশ বছর।{{citation needed|date=May 2020}} |
তাঁর উপাধিটি ছিল আবু আল-হাকাম (أبو الحكم) (আক্ষরিক অর্থে "জ্ঞানী বিচারের জনক") কারণ তিনি গভীর জ্ঞানের মানুষ হিসাবে বিবেচিত ছিলেন, কুরাইশের প্রবীণ নেতাদের মধ্যে দক্ষ্ণতা ও উপলব্ধির জন্য তারা তাঁর মতামতকে বিশ্বাস করেতেন এবং তাদের সভার একজন অভিজাত সদস্য হিসাবে তারা তাঁর উপর নির্ভর করতেন। এমনকি তিরিশ বছর বয়সেই তিনি দার-আন-নাদ্বায় অনুষ্ঠিত একটি বিশেষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন, যে বাড়ি [[হাকিম ইবনে হিজাম]]ের মালিকানাধীন, যদিও এই গোপন সম্মেলনে প্রবেশের বয়স ছিল কমপক্ষে চল্লিশ বছর।{{citation needed|date=May 2020}} এতদসত্বেও তার ডাক উপাধী পরিবর্তন করে হয়ে যায় "আবু জাহল" বা মূর্খদের পিতা। কারণ একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলামের আহ্ববান আসার পরও যেসকল কুরাইশ গোত্রপতি সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছিলো ও সত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলো, আবু জাহল ছিলো তাদের নেতাদের মধ্যে অন্যতম। |
||
‘আমর ইবনে হিশাম |
‘আমর ইবনে হিশাম মুহাম্মাদ ের প্রতি কঠোরভাবে শত্রুতা প্রদর্শন করেছিলেন এবং তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্য পথের আহ্ববানে সাড়া দেয় নি। অতএব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে "আবু জাহল" (أبو جهل) (আক্ষরিক অর্থে "অজ্ঞতার জনক বা অজ্ঞ/মূর্খদের পিতা বা নেতা") হিসাবে উল্লেখ করেছেন। আমর ইবনে হিশামকে তাঁর মায়ের দিক থেকে ইবনে আল-হানাজালিয়াও ডাকা হতো।<ref>Guillaume, p. 298</ref> |
||
==পরিবার== |
==পরিবার== |
||
৭২ নং লাইন: | ৭২ নং লাইন: | ||
==মৃত্যু== |
==মৃত্যু== |
||
বদরের ময়দান। |
|||
আমর ইবনে হিশাম [[বদর যুদ্ধ|বদরের যুদ্ধে]] আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ কর্তৃক নিহত হন। |
|||
একদিকে মুসলমান। আরেক দিকে কাফের। মুসলমানদের দলে আছেন স্বয়ং রাসূলে করীম (সাঃ)। আরো আছেন সাহাবীগণ। কাফেরদের দলে রয়েছে মক্কার বড় বড় কাফের সর্দার। বহুদিন পর্যন্ত যেসব কাফের মক্কায় মুসলমানদের কষ্ট দিয়েছে, নির্যাতন করেছে, রাসূল (সাঃ)-কে হত্যার চেষ্টা করেছে, তাঁদের অনেকেই এই যুদ্ধে এসেছে। বদর যুদ্ধ হলো কাফেরদের সাথে মুসলমানদের প্রথম প্রকাশ্য #জিহাদ। |
|||
তুমুল যুদ্ধ চলছে। চারিদিকে শত্রুকে খুঁজে চলেছে সবাই। কেউ কারো দিকে নজর দিতে পারছেনা। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) এক জায়গায় দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করেছিলেন, শত্রুকে কিভাবে ঘায়েল করা যায়। হঠাৎ দেখলেন, তার দু’পাশে এসে দাঁড়ালো দুটি বালক। দু’জনই মুসলিম। |
|||
আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) বালক দু’জনের দিকে তাকালেন। মনে মনে তিনি হতাশ। এরা তো নিতান্তই বালক! এরা যুদ্ধ করবে কিভাবে! তিনি ভাবছিলেন, যদি তার আশে-পাশে আরো শক্তসমর্থ মুসলমান থাকতেন, তাহলে কাফেরদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর সময় একজন আরেকজনকে সহযোগিতা করতে পারতেন; কিন্তু সেই কাজ কি এই বালক দু’জনকে দিয়ে সম্ভব? |
|||
বালক দু’জন সম্পর্কে তিনি যখন এ ধরনের ভাবনা ভাবছিলেন, তখনই এক বালক এসে তার হাত জড়িয়ে ধরলো। তারপর বল—চাচাজান! আপনি আবু জেহেল কে চিনেন? |
|||
আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ জবাবে বললেন—হ্যাঁ, চিনি। কিন্তু আবু জেহেলকে তোমার কী প্রয়োজন?’ |
|||
সেই বালক বললো—“আমরা শুনেছি, আবু জেহেল আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ)-কে গালা গালি করে। নবীজীর নামে আজে-বাজে কথাবার্তা বলে বেড়ায়। আল্লাহর কসম! যদি আবু জেহেলকে দেখতে পাই, তবে তার জীবন খতম করার আগে আমি ক্ষ্যান্ত হবো না। যদি তাঁকে খতম করতে না পারি তবে নিজেই শহীদ যাবো।” |
|||
বালকের কথা শুনে আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) অবাক হয়ে গেলেন। অল্প বয়সী বালক! অথচ কী অসামান্য সাহস! |
|||
এসময়ের অপর বালকটিও তাঁকে জিজ্ঞাসা করল—আবু জেহেল কে, কোথায় পাওয়া যাবে, জানতে চাইলো। আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) তাঁকেও প্রশ্ন করলেন—“আবু জেহেলকে তোমার কী প্রয়োজন?”—এই বালকটিও আগের বালকের মতই জবাব দিল। আবু জেহেলকে যেখানেই পাওয়া যাবে, তাঁকে হত্যা করবোই, এই প্রত্যয় ব্যক্ত করল। |
|||
পাশে দাঁড়ানো দুই কিশোরের কথায় আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) যখন বিস্মিত হচ্ছিলেন; অবাক হয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই দেখলেন, যুদ্ধের ময়দানে ঘোড়ায় চড়ে ছূটে বেড়াচ্ছে আবু জেহেল। কিশোর দু’জনকে দেখিয়ে দিলেন তিনি। বললেন-“তোমরা আমার কাছে যার পরিচয় জানতে চাচ্ছ, ঐ যে সেই লোকটা যাচ্ছে।” |
|||
আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ)-এর মুখের কথা শেষ হতে না হতেই বালক দু’জন ছুটলো। তীরের মত ছুটতে ছুটতে গিয়ে আবু জেহেলের সামনে হাজির হলো দু’জনই। |
|||
আবু জেহেল ঘোড়ায় চড়ে ছুটছিল। বালক দু’জনের পক্ষে ঘোড়ায় চড়ে থাকা আবু জেহেলের শরীরে সরাসরি আঘাত করা ছিল অসম্ভব। একজন আক্রমণ করল আবু জেহেলের ঘোড়ায়। আরেকজন আবু জেহেলের পায়ে খোলা তলোয়ার দিয়ে আঘাত করল। |
|||
মুহূর্তের মধ্যেই কাফের সর্দার আবু জেহেল মাটিতে গড়িয়ে পড়ল। মাটিতে পড়েই ছটফট করতে লাগল আবু জেহেল। বালক দু’জন সমানতালে তাঁকে আঘাত করে চলল। |
|||
আবু জেহেলের পাশে পাশে যুদ্ধ করছিল এক ছেলে। হঠাৎ করেই বাবার এই করুণ দশা হতে দেখে সে থমকে গিয়েছিল প্রথমে। এরপর সে বালক দু’জনের একজনের উপর তরবারী চালিয়ে দিল। বালকের মাথা লক্ষ্য করে তরবারীর আঘাত করেছিল আবু জেহেলের ছেলে। কিন্তু সেই আঘাত এসে লাগল বালকের হাতে। হাতটি শরীর থেকে আলাদা হয়ে একটি চামড়ায় ঝুলে রইল। |
|||
আবু জেহেলের ছেলে ভেবেছিল আক্রমণ করে সে বালকের হাত যখন কেটে ফেলতে পেরেছে, তখন আর বালক দু’জনকে ধরাশায়ী করা কোন ব্যাপারই নয়। কিন্তু তার এই ভাবনার মৃত্যু হলো সামান্য সময়েই। |
|||
যেই বালকের হাত কেটে ঝুলে গেছে, যুদ্ধ করতে অসুবিধা হচ্ছে বলে সে পায়ের নিচে হাত রেখে একটানে নিজের হাতটা ছিঁড়ে ফেললো। তারপর ছিঁড়ে ফেলা হাত দূরে নিক্ষেপ করে আবারো যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো। |
|||
এই অবাক করা কাণ্ড দেখে আবু জেহেলের ছেলে দ্রুত সেখন থেকে সটকে পড়ল। |
|||
বালক দু’জন আবারো আবু জেহেলের শরীরের উপর চড়ে বসলো। এখনো আবু জেহেল মরেনি। দূরথেকে বালকদের অভাবনীয় আক্রমণে আবু জেহেলের এই মরণ দশা দেখে আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) এগিয়ে এলেন। এক কোপে আবু জেহেলের শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেললেন। |
|||
রাসূলের এক ভয়ানক দুশমনকে খতম করল দুই কিশোর। সাহসী কিশোর দু’জনের একজনের নাম মা’আয। এর হাত কাটা গিয়েছিলো। অপর জনের নাম মুআ’ও ওয়ায। |
|||
রাসূল (সাঃ)-এর কিশোর সাহাবী এরা। এদের সাহস ও বীরত্ব দেখে শেষ পর্যন্ত বদর প্রান্তরের সবাই অবাক হয়ে গেলো। |
|||
==তথ্যসূত্র== |
==তথ্যসূত্র== |
১৭:৪০, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
আমর ইবনে হিশাম | |
---|---|
জন্ম | ৫৫৬ |
মৃত্যু | ১৩ মার্চ ৬২৪ |
মৃত্যুর কারণ | বদর যুদ্ধে শিরশ্ছেদ |
পরিচিতির কারণ | ইসলামের নবী মুহাম্মাদের বিরোধিতা |
দাম্পত্য সঙ্গী | মুজালিদ্যা বিনতে আমর আরওয়া বিনতে আবি আল-আস |
সন্তান | ইকরামাহ জাহারা তামিমি শাখরা আসমা জামিলা উম্মে হাকিম উম্মে সাঈদ জুয়াইরিয়া হুনফা উম্মে হাবিব |
ʿআমর ইবনে হিশাম (আরবি: عمرو إبن هشام, প্রতিবর্ণীকৃত: Amr ibn Hishām) (৫৫৬ – ১৩ মার্চ ৬২৪), আবু আল-হাকাম (আরবি: أبو الحكم) অথবা আবু জাহল (আরবি: أبو جهل) হিসাবেও ডাকা হয়, ছিলেন মক্কার একজন বহুঈশ্বরবাদী পৌত্তলিক বা মূর্তিপূজারী কুরাইশ নেতা, একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলামের শেষ নবী মুহাম্মাদের প্রতি ঘোরতর শত্রুতা ও মক্কার প্রাথমিক মুসলমানদের প্রতি ব্যপক বিদ্বেষ পোষণের জন্য তিনি পরিচিত ও ঘৃণিত। নবী মুহাম্মাদের নবুয়াত ও ইসলাম প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই তিনি ইসলামের ঘোর বিরোধিতা, ঘৃণ্য চক্রান্ত, বিদ্বেষ ছড়ানো ও ইসলামের অনুসারীদের প্রতি অকথ্য নির্যাতন শুরু করেন।
তিনি উমর ইবনে আবু রাবিয়াহর ভাই [১] এবং উমর ইবনুল খাত্তাবের চাচা। তিনি মুহাম্মাদের অন্যতম ঘোরবিরোধী এবং ইসলাম ও মক্কার প্রাথমিক মুসলমানদের শত্রুদের প্রথম সারির লোক ছিলেন। ইসলামের আবির্ভাবের পর আল্লাহর একত্ববাদ (তাওহীদ) এর প্রতি দাওয়াত আসার পরও সে জাহেলী যুগের মুর্তি পূজাকেই আকড়ে ধরে রাখে এবং বিভিন্ন ঘৃণ্য উপায় ইসলাম ও মুসলিমদের নিয়ে মিথ্যা, অমূলক ও নোংরা কথার দ্বারা কূৎসা ও বিদ্বেষ ছড়াতে অন্যান্য কুরাইশদের নেতৃত্ব দিয়েছিলো। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন উপায়ে সে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হত্যার জন্য ন্যক্কারজনক ষড়যন্ত্রও করেছিলো। তাই তাকে "আবু জেহেল" বা মূর্খদের পিতা ডাকা হয়।
ইবনে হিশাম মুহাম্মাদের চাচা ছিলেন না (যেমন আবু লাহাব ছিলেন) বা অন্যকোনো রক্তের আত্মীয়। মুহাম্মাদ কুরাইশ বংশের বনু হাশিম গোত্রের এবং ইবনে হিশাম কুরাইশের বানু মাখজম গোত্রের। আমর ইবনে হিশাম আসাদ আল-আহলাফ নামেও পরিচিত ছিলেন, কারণ তসে ইসলামের শত্রু ও বিদ্বেষী দলগুলোর নেতা ছিলো, যারা ইসলাম ও মুহাম্মাদের বিরুদ্ধে জাহেলী মূর্খতার মূখপাত্র হিসেবে যুদ্ধ করেছিলো।[২]
আবু জাহল মুয়াউয়াজ ইবনে আফ্রি এবং মুয়াদ ইবনে আমর ইবনে আল জামুহ কর্তৃক গুরুতরভাবে আহত হন এবং অবশেষে ৬২৪ সালের ১৩ ই মার্চ বদরে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাবস্থায় আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ কর্তৃক নিহত হন।
নাম ও উপাধি সমূহ
তাঁর উপাধিটি ছিল আবু আল-হাকাম (أبو الحكم) (আক্ষরিক অর্থে "জ্ঞানী বিচারের জনক") কারণ তিনি গভীর জ্ঞানের মানুষ হিসাবে বিবেচিত ছিলেন, কুরাইশের প্রবীণ নেতাদের মধ্যে দক্ষ্ণতা ও উপলব্ধির জন্য তারা তাঁর মতামতকে বিশ্বাস করেতেন এবং তাদের সভার একজন অভিজাত সদস্য হিসাবে তারা তাঁর উপর নির্ভর করতেন। এমনকি তিরিশ বছর বয়সেই তিনি দার-আন-নাদ্বায় অনুষ্ঠিত একটি বিশেষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন, যে বাড়ি হাকিম ইবনে হিজামের মালিকানাধীন, যদিও এই গোপন সম্মেলনে প্রবেশের বয়স ছিল কমপক্ষে চল্লিশ বছর।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এতদসত্বেও তার ডাক উপাধী পরিবর্তন করে হয়ে যায় "আবু জাহল" বা মূর্খদের পিতা। কারণ একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলামের আহ্ববান আসার পরও যেসকল কুরাইশ গোত্রপতি সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছিলো ও সত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলো, আবু জাহল ছিলো তাদের নেতাদের মধ্যে অন্যতম।
‘আমর ইবনে হিশাম মুহাম্মাদ ের প্রতি কঠোরভাবে শত্রুতা প্রদর্শন করেছিলেন এবং তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্য পথের আহ্ববানে সাড়া দেয় নি। অতএব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে "আবু জাহল" (أبو جهل) (আক্ষরিক অর্থে "অজ্ঞতার জনক বা অজ্ঞ/মূর্খদের পিতা বা নেতা") হিসাবে উল্লেখ করেছেন। আমর ইবনে হিশামকে তাঁর মায়ের দিক থেকে ইবনে আল-হানাজালিয়াও ডাকা হতো।[৩]
পরিবার
পিতামাতা ও ভাইবোন
তার বাবা ছিলেন হিশাম বিনতে আল মুগীরাহ এবং মা আসমা বিনতে মাখরাবাহ ইবনে জান্দাল আল-তামিমি, যারা প্রথমদিকে মুসলিম হয়ে যান। তার ৮ জন পূর্ণ ভাইবোন ছিল, তারা হচ্ছে:
১. সালামা ইবনে হিশাম
২. উরওয়াহ ইবনে হিশাম
৩. খালিদ ইবনে হিশাম
৪. হারিস ইবনে হিশাম, ফাতিমা বিনতে আল-ওয়ালিদ ইবনে মুগীরার স্বামী এবং উম্মে হাকিম (জারা), আবু সাদ (সাঈদ), আব্দুর রহমান, মুগীরা এবং আব্দুল্লাহর পিতা।
৫. আল-আস ইবনে হিশাম, সারা বিনতে হুকায়েকে স্বামী এবং খালিদ ও ওয়ালিদের পিতা।
৬. হানতামাহ বিনতে হিশাম, খাত্তাব ইবনে নুফায়েলের স্ত্রী এবং উমর, ফাতিমা, জায়েদ, সাফিয়ার মা।
৭. উম্মে হারমলা বিনতে হিশাম, আল-আস ইবনে ওয়াইলের স্ত্রী ও হিশামের মা।
স্ত্রী ও সন্তান
তার প্রথম স্ত্রী মুজালিদ্যা বিনতে আমর ইবনে উমায়র ইবনে মাবাদ ইবনে জুরারা এবং তাদের সন্তান ছিল, তারা হচ্ছে:
১. 'ইকরিমাহ, উম্মে হাকিম বিনতে আল-হারিসের স্বামী
২. জুরারা
৩. তামিমি
তার দ্বিতীয় স্ত্রী হচ্ছে আরওয়া বিনতে আবি আল-আস ইবনে উমাইয়া এবং তাদের ৮জন কন্যা ছিলো, তার হচ্ছে:
১. শাখরা
২. আসমা
৩. জামিলা
৪. উম্মে হাকিম (হাকিমা)
৫. উম্মে সাঈদ (সা'ঈদা)
৬. জুয়াইরিয়া
৭. হুনফা'
৮. উম্মে হাবিব (হাবিবা)
মৃত্যু
বদরের ময়দান।
একদিকে মুসলমান। আরেক দিকে কাফের। মুসলমানদের দলে আছেন স্বয়ং রাসূলে করীম (সাঃ)। আরো আছেন সাহাবীগণ। কাফেরদের দলে রয়েছে মক্কার বড় বড় কাফের সর্দার। বহুদিন পর্যন্ত যেসব কাফের মক্কায় মুসলমানদের কষ্ট দিয়েছে, নির্যাতন করেছে, রাসূল (সাঃ)-কে হত্যার চেষ্টা করেছে, তাঁদের অনেকেই এই যুদ্ধে এসেছে। বদর যুদ্ধ হলো কাফেরদের সাথে মুসলমানদের প্রথম প্রকাশ্য #জিহাদ।
তুমুল যুদ্ধ চলছে। চারিদিকে শত্রুকে খুঁজে চলেছে সবাই। কেউ কারো দিকে নজর দিতে পারছেনা। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) এক জায়গায় দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করেছিলেন, শত্রুকে কিভাবে ঘায়েল করা যায়। হঠাৎ দেখলেন, তার দু’পাশে এসে দাঁড়ালো দুটি বালক। দু’জনই মুসলিম।
আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) বালক দু’জনের দিকে তাকালেন। মনে মনে তিনি হতাশ। এরা তো নিতান্তই বালক! এরা যুদ্ধ করবে কিভাবে! তিনি ভাবছিলেন, যদি তার আশে-পাশে আরো শক্তসমর্থ মুসলমান থাকতেন, তাহলে কাফেরদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর সময় একজন আরেকজনকে সহযোগিতা করতে পারতেন; কিন্তু সেই কাজ কি এই বালক দু’জনকে দিয়ে সম্ভব?
বালক দু’জন সম্পর্কে তিনি যখন এ ধরনের ভাবনা ভাবছিলেন, তখনই এক বালক এসে তার হাত জড়িয়ে ধরলো। তারপর বল—চাচাজান! আপনি আবু জেহেল কে চিনেন?
আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ জবাবে বললেন—হ্যাঁ, চিনি। কিন্তু আবু জেহেলকে তোমার কী প্রয়োজন?’
সেই বালক বললো—“আমরা শুনেছি, আবু জেহেল আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ)-কে গালা গালি করে। নবীজীর নামে আজে-বাজে কথাবার্তা বলে বেড়ায়। আল্লাহর কসম! যদি আবু জেহেলকে দেখতে পাই, তবে তার জীবন খতম করার আগে আমি ক্ষ্যান্ত হবো না। যদি তাঁকে খতম করতে না পারি তবে নিজেই শহীদ যাবো।”
বালকের কথা শুনে আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) অবাক হয়ে গেলেন। অল্প বয়সী বালক! অথচ কী অসামান্য সাহস!
এসময়ের অপর বালকটিও তাঁকে জিজ্ঞাসা করল—আবু জেহেল কে, কোথায় পাওয়া যাবে, জানতে চাইলো। আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) তাঁকেও প্রশ্ন করলেন—“আবু জেহেলকে তোমার কী প্রয়োজন?”—এই বালকটিও আগের বালকের মতই জবাব দিল। আবু জেহেলকে যেখানেই পাওয়া যাবে, তাঁকে হত্যা করবোই, এই প্রত্যয় ব্যক্ত করল।
পাশে দাঁড়ানো দুই কিশোরের কথায় আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) যখন বিস্মিত হচ্ছিলেন; অবাক হয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই দেখলেন, যুদ্ধের ময়দানে ঘোড়ায় চড়ে ছূটে বেড়াচ্ছে আবু জেহেল। কিশোর দু’জনকে দেখিয়ে দিলেন তিনি। বললেন-“তোমরা আমার কাছে যার পরিচয় জানতে চাচ্ছ, ঐ যে সেই লোকটা যাচ্ছে।”
আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ)-এর মুখের কথা শেষ হতে না হতেই বালক দু’জন ছুটলো। তীরের মত ছুটতে ছুটতে গিয়ে আবু জেহেলের সামনে হাজির হলো দু’জনই।
আবু জেহেল ঘোড়ায় চড়ে ছুটছিল। বালক দু’জনের পক্ষে ঘোড়ায় চড়ে থাকা আবু জেহেলের শরীরে সরাসরি আঘাত করা ছিল অসম্ভব। একজন আক্রমণ করল আবু জেহেলের ঘোড়ায়। আরেকজন আবু জেহেলের পায়ে খোলা তলোয়ার দিয়ে আঘাত করল।
মুহূর্তের মধ্যেই কাফের সর্দার আবু জেহেল মাটিতে গড়িয়ে পড়ল। মাটিতে পড়েই ছটফট করতে লাগল আবু জেহেল। বালক দু’জন সমানতালে তাঁকে আঘাত করে চলল।
আবু জেহেলের পাশে পাশে যুদ্ধ করছিল এক ছেলে। হঠাৎ করেই বাবার এই করুণ দশা হতে দেখে সে থমকে গিয়েছিল প্রথমে। এরপর সে বালক দু’জনের একজনের উপর তরবারী চালিয়ে দিল। বালকের মাথা লক্ষ্য করে তরবারীর আঘাত করেছিল আবু জেহেলের ছেলে। কিন্তু সেই আঘাত এসে লাগল বালকের হাতে। হাতটি শরীর থেকে আলাদা হয়ে একটি চামড়ায় ঝুলে রইল।
আবু জেহেলের ছেলে ভেবেছিল আক্রমণ করে সে বালকের হাত যখন কেটে ফেলতে পেরেছে, তখন আর বালক দু’জনকে ধরাশায়ী করা কোন ব্যাপারই নয়। কিন্তু তার এই ভাবনার মৃত্যু হলো সামান্য সময়েই।
যেই বালকের হাত কেটে ঝুলে গেছে, যুদ্ধ করতে অসুবিধা হচ্ছে বলে সে পায়ের নিচে হাত রেখে একটানে নিজের হাতটা ছিঁড়ে ফেললো। তারপর ছিঁড়ে ফেলা হাত দূরে নিক্ষেপ করে আবারো যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো।
এই অবাক করা কাণ্ড দেখে আবু জেহেলের ছেলে দ্রুত সেখন থেকে সটকে পড়ল।
বালক দু’জন আবারো আবু জেহেলের শরীরের উপর চড়ে বসলো। এখনো আবু জেহেল মরেনি। দূরথেকে বালকদের অভাবনীয় আক্রমণে আবু জেহেলের এই মরণ দশা দেখে আব্দুর রহমান ইবনে আ’উফ (রাঃ) এগিয়ে এলেন। এক কোপে আবু জেহেলের শরীর থেকে মাথা আলাদা করে ফেললেন।
রাসূলের এক ভয়ানক দুশমনকে খতম করল দুই কিশোর। সাহসী কিশোর দু’জনের একজনের নাম মা’আয। এর হাত কাটা গিয়েছিলো। অপর জনের নাম মুআ’ও ওয়ায।
রাসূল (সাঃ)-এর কিশোর সাহাবী এরা। এদের সাহস ও বীরত্ব দেখে শেষ পর্যন্ত বদর প্রান্তরের সবাই অবাক হয়ে গেলো।
তথ্যসূত্র
- ↑ Ibn Khallikan's Biographical Dictionary, trans. by Bn Mac Guckin de Slane, Oriental Translation Fund (Series), 57, 4 vols (Paris: Printed for the Oriental translation fund of Great Britain and Ireland, 1842-71), I 373.
- ↑ Letter No.28, 2nd paragraph, Peak of Eloquence (Page-575), আইএসবিএন ০-৯৪১৭২৪-১৮-২; retrieved 11 January 2015
- ↑ Guillaume, p. 298