উত্তর মহাসাগর

স্থানাঙ্ক: ৯০° উত্তর ০° পূর্ব / ৯০° উত্তর ০° পূর্ব / 90; 0
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(উত্তর মহাসমুদ্র থেকে পুনর্নির্দেশিত)
আন্তর্জাতিক জললেখবিজ্ঞান সংস্থা (আইএইচও) কর্তৃক বর্ণিত সীমানাসহ উত্তর মহাসাগর, যার মধ্যে হাডসন উপসাগর (যার মধ্যে কিছু মানচিত্র থেকে ৫৭°উ অক্ষাংশের দক্ষিণে) এবং অন্যান্য সমস্ত প্রান্তিক সমুদ্র রয়েছে।

উত্তর মহাসাগর বা সুমেরু মহাসাগর উত্তর গোলার্ধের সুমেরু অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের ক্ষুদ্রতম ও সর্বাপেক্ষা কম গভীর একটি মহাসাগর। এটি পৃথিবীর পাঁচটি প্রধান মহাসাগরের অন্যতম।[১] আন্তর্জাতিক জললেখবিজ্ঞান সংস্থা (আইএইচও) তথা আন্তর্জাতিক জললেখচিত্রন সংস্থা এটিকে মহাসাগরের স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে কোনো কোনো সমুদ্রবিজ্ঞানী এটিকে সুমেরু ভূমধ্যসাগর (Arctic Mediterranean Sea) বা সুমেরু সাগর (Arctic Sea) বলে থাকেন।[২] এটিকে প্রায় আটলান্টিক মহাসাগরের মোহনা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।[৩][৪] এটিকে সর্বব্যাপী বিশ্ব মহাসাগরের উত্তরতম অংশ হিসাবেও দেখা হয়।

উত্তর মহাসাগর উত্তর গোলার্ধের মাঝখানে উত্তর মেরু অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করে ও দক্ষিণে প্রায় ৬০°উ পর্যন্ত বিস্তৃত। উত্তর মহাসাগরের প্রায় সমগ্র অংশই ইউরেশিয়াউত্তর আমেরিকা মহাদেশ দ্বারা বেষ্টিত এবং সীমানাগুলি স্থানবিবরণী বৈশিষ্ট্যগুলির অনুবর্তী হয়: প্রশান্ত মহাসাগরীয় দিকে বেরিং প্রণালী ও আটলান্টিকের দিকে গ্রিনল্যান্ড স্কটল্যান্ড শৈলশিরা। বছরের অধিকাংশ সময় এই মহাসাগরের অংশবিশেষ সামুদ্রিক বরফে ঢাকা থাকে।[৫] শীতকালে সম্পূর্ণ মহাসাগরটিই বরফে ঢাকা পড়ে যায়। উত্তর মহাসাগরের তাপমাত্রা ও লবণাক্ততা ঋতু অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়। সমুদ্রের বরফের আবরণীর গলন ও জমাট বাঁধার কারণেই এমনটি হয়ে থাকে।[৬] পাঁচটি প্রধান মহাসাগরের তুলনায় এই মহাসাগরের পানির লবণাক্ততা কম। এর কারণ, বাষ্পীভবনের নিম্ন হার, বিভিন্ন বড়ো ও ছোটো নদী থেকে এসে মেশা মিষ্টি জলের প্রবাহ এবং পার্শ্ববর্তী উচ্চ লবণাক্ততাযুক্ত মহাসাগরগুলির সঙ্গে সীমাবদ্ধ সংযোগ ও বহির্গমন স্রোত। গ্রীষ্মকালে প্রায় ৫০% বরফ গলে যায়।[১] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশানাল স্নো অ্যান্ড আইস ডেটা সেন্টার (এনএসআইডিসি) উপগ্রহ তথ্যের মাধ্যমে গড় সময়কাল ও নির্দিষ্ট পূর্ববর্ষের সঙ্গে তুলনা করার জন্য উত্তর মহাসাগরের বরফাবরণী ও বরফ গলনের দৈনিক তথ্য রাখে।[৭] ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে, সুমেরুর বরফের পরিমাণ একটি নতুন রেকর্ড সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। গড় পরিমাণের (১৯৭৯-২০০০) তুলনায় সমুদ্রের বরফ ৪৯% কমে গেছে।[৮]

প্রাচীন উত্তর সাগরের বরফের হ্রাস ১৯৮২-২০০৭

ইতিহাস[সম্পাদনা]

উত্তর আমেরিকা[সম্পাদনা]

উইসকনসিন হিমবাহের সময় উত্তর আমেরিকার মেরু অঞ্চলে মানুষের বসতি কমপক্ষে ১৭,০০০-৫০,০০০ বছরের পুরনো। এই সময়ে, সমুদ্র সমতলের স্তর হ্রাসের ফলে লোকেরা বেরিং ভূ-সেতু অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছিল যা সাইবেরিয়ার সাথে উত্তর-পশ্চিম উত্তর আমেরিকার (আলাস্কা) সাথে যুক্ত হয়ে আমেরিকায় বসতি স্থাপন দিকে নিয়ে যায়।[৯]

থুলে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান

প্রাথমিক প্যালিও-এস্কিমো গোষ্ঠীগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল প্রাক-ডরসেট (আনু. ৩২০০-৮৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ); গ্রিনল্যান্ডের সাক্কাক সংস্কৃতি (২৫০০-৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ); উত্তর-পূর্ব কানাডাগ্রিনল্যান্ডের প্রথম স্বাধীনতা ও দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংস্কৃতি (আনু. ২৪০০–১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দআনু. ৮০০–১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ); এবং ল্যাব্রাডর ও নুনাভিকের গ্রোসওয়াটার। ডরসেট সংস্কৃতি খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ থেকে ১৫০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সুমেরু উত্তর আমেরিকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। আধুনিক ইনুইটের পূর্বপুরুষ থুলে জাতির বর্তমান আলাস্কা থেকে পূর্বে অভিবাসনের আগে ডরসেট ছিল সুমেরুর সর্বশেষ প্রধান প্যালিও-এস্কিমো সংস্কৃতি।[১০]

থুলে ঐতিহ্য প্রায় ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল, যা বেরিং প্রণালীর আশেপাশে গড়ে উঠেছিল এবং পরে উত্তর আমেরিকার প্রায় পুরো সুমেরু অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। থুলে জাতি ইনুইটদের পূর্বপুরুষ ছিল, যারা এখন আলাস্কা, উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল, নুনাভুট, উত্তর কুইবেক, ল্যাব্রাডর ও গ্রিনল্যান্ডে বাস করে।[১১]

ইউরোপ[সম্পাদনা]

১৮৮৬ সালে অ্যাডলফ এরিক নরডেনস্কিওল্ডের সুমেরু অভিযানের চিত্র; জর্জ ভন রোসেন অঙ্কিত

ইউরোপের প্রাচীন ইতিহাসে উত্তর মেরু অভিযানের নজির বিশেষ নেই। এই অঞ্চলের ভূগোল সম্পর্কে সঠিক ধারণাও সে যুগে কারো ছিল না। মাসিলিয়ার পাইথিয়াস ৩২৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে উত্তরদিকে "এসচ্যাট থুলে" নামে একটি স্থানে যাত্রার একটি বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছিলেন। এই অঞ্চলে সূর্য প্রতিদিন মাত্র তিন ঘণ্টার জন্য অস্ত যেত এবং পানি এখানে এমন এক থকথকে পদার্থে পরিণত হত "যার উপর দিয়ে হাঁটাও যেত না, আবার নৌকা চালানোও যেত না।" সম্ভবত তিনি "গ্রাওলার" বা "বার্গি বিটস" নামে পরিচিত হালকা সামুদ্রিক বরফের কথা লিখেছেন। তার বিবরণীর "থাল" সম্ভবত আইসল্যান্ড। যদিও কোনো কোনো মতে তিনি নরওয়ের কথা লিখেছেন।[১২]

ইমানুয়েল বোয়েনের ১৭৮০ সালের সুমেরু মানচিত্রে একটি "উত্তর মহাসাগর" রয়েছে।

প্রথম যুগের মানচিত্রকারেরা সঠিকভাবে জানতেন না যে, উত্তর মেরু সংলগ্ন অঞ্চলটি জলভাগ (যেমন, মার্টিন ওয়াল্ডসিমুলারের ১৫০৭ সালের বিশ্বমানচিত্র) না স্থলভাগ (যেমন, জোহানেস রুইসের ১৫০৭ সালের মানচিত্র, গেরার্ডাস মেরক্যাটরের ১৫৯৫ সালের মানচিত্র)। "ক্যাথে" (চীন) পৌঁছানোর একটি উত্তরমুখী রাস্তা আবিষ্কারের প্রত্যাশায় অত্যুৎসাহী একদল নাবিকের আগ্রহে শেষপর্যন্ত এই অঞ্চলটিকে জলভাগ আখ্যা দেওয়া হয়। ১৭২৩ সাল নাগাদ জোহান হোম্যান প্রমুখ মানচিত্রকারেরা তার মানচিত্রের উত্তর সীমায় একটি "Oceanus Septentrionalis" আঁকতে শুরু করেন।

এই যুগে সুমেরু বৃত্তের ভিতরে অল্প কয়েকটি অভিযান হলেও, তা কয়েকটি ছোটো দ্বীপেই সীমাবদ্ধ ছিল। নোভায়া জেমল্যা দ্বীপে একাদশ শতাব্দীতে ও স্পিটসবার্গেন দ্বীপে ১৫৯৬ সালে অভিযান চলে। কিন্তু এই সব দ্বীপ বরফ-পরিবৃত থাকায় এগুলির উত্তরসীমা সে সময় জানা যায়নি। সমুদ্র-মানচিত্র নির্মাতারা কোনো কোনো কল্পনাপ্রবণ মানচিত্রকারের ধারণার ধার ধরতেন না। তারা মানচিত্রে এই অঞ্চলটিকে শূন্য রেখে দিতেন। কেবল জ্ঞাত উপকূলরেখাটির চিত্র আঁকতেন।

জর্জ হুবার্ট উইলকিনসের ১৯২৬ সালের ডেট্রয়েট উত্তর মেরু অভিযান
সুমেরু অঞ্চল উত্তর-পূর্ব উত্তরণ, এর মধ্যে উত্তর সাগর পথ ও উত্তর-পশ্চিম পথ দেখাচ্ছে

ঊনবিংশ শতাব্দী[সম্পাদনা]

বরফের সঞ্চরণশীল ব্যারিয়ারের ওপারে কী আছে সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য না থাকায় এই সম্পর্কে নানারকম গালগল্প ছড়িয়ে পড়ে। ইংল্যান্ড সহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে "মুক্ত মেরু সাগর" ধারণাটি জনপ্রিয়তা পায়। ব্রিটিশ অ্যাডমিরাল্টির দীর্ঘকালের সেকেন্ড সেক্রেটারি জন বারো এই সমুদ্রের সন্ধানে ১৮১৮ থেকে ১৮৪৫ সালের মধ্যে একাধিক মেরু অভিযান প্রেরণ করেছিলেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৫০-এর ও ১৮৬০-এর দশকে এলিশা কেন ও আইজ্যাক ইজরায়েল হায়েস নামে দুই অভিযাত্রী এই রহস্যময় বিরাট জলভাগ দেখেছেন বলে দাবি করেন। এই শতাব্দীর শেষভাগেও ম্যাথিউ ফনটেইন মুরে তার দ্য ফিজিক্যাল জিওগ্রাফি অফ দ্য সি (১৮৮৮) গ্রন্থে মুক্ত মেরু সাগরের এক বৃত্তান্ত অন্তর্ভুক্ত করেন। তবে সকল অভিযাত্রীই, যাঁরা মেরু অঞ্চলের দিকে আরও বেশি অগ্রসর হয়েছিলেন, তারা জানান যে মেরু অঞ্চলের বরফের টুপিটি বেশ মোটা ও তা সারাবছরই বজায় থাকে।

ফ্রিডজোফ নানসেন ১৮৯৬ সালে উত্তর মহাসাগরের প্রথম একটি নৌ অতিক্রমণ তৈরি করেছিলেন।

বিংশ শতাব্দী[সম্পাদনা]

১৯৬৯ সালে ওয়ালি হার্বার্টের নেতৃত্বে আলাস্কা থেকে সভালবার্দ পর্যন্ত একটি কুকুর স্লেজ অভিযানে সমুদ্রের উপরিতল প্রথম অতিক্রম করা হয়।[১৩] উত্তর মেরুর প্রথম নৌ পরিবহন ১৯৫৮ সালে সাবমেরিন ইউএসএস নটিলাস দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল ও ১৯৭৭ সালে বরফভাঙ্গা জাহাজ এনএস আর্কটিকা প্রথম সাগরের উপরিতলে নৌ পরিবহন করেছিল।

১৯৩৭ সাল নাগাদ সোভিয়েত ও রাশিয়ান মানবচালিত ভাসমান বরফ স্টেশনগুলি উত্তর মহাসাগরের উপর ব্যাপক নজরদারি শুরু করে। এই সব ভাসমান বরফের উপর বৈজ্ঞানিক বসতিও স্থাপিত হয়।[১৪]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে, উত্তর মহাসাগরের ইউরোপীয় অঞ্চলটি ব্যাপকভাবে বিবাদে জড়িয়েছিল: সোভিয়েত ইউনিয়নকে এর উত্তর বন্দর দিয়ে পুনরায় সরবরাহ করার মিত্র প্রতিশ্রুতি জার্মান নৌ ও বিমান বাহিনী বিরোধিতা করেছিল।

১৯৫৪ সাল থেকে বাণিজ্যিক বিমান সংস্থাগুলি উত্তর মহাসাগরের উপর দিয়ে তাদের বিমান উড়িয়েছে (পোলার পথ দেখুন)।

ভূগোল[সম্পাদনা]

উত্তর মহাসাগর ও তার পার্শ্ববর্তী দ্বীপগুলির বাথিমেট্রিক/টোপোগ্রাফিক মানচিত্র
উত্তর মেরু অঞ্চল; উল্লেখ্য, এই মানচিত্রে অঞ্চলটির দক্ষিণের সীমানা একটি লাল আইসোথার্ম দ্বারা চিত্রিত হয়েছে, যেখানে উত্তরের সমস্ত অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা ছিল জুলাই মাসে ১০ °সে (৫০ °ফা) এর কম।

বিস্তার[সম্পাদনা]

উত্তর মহাসাগর মোটামুটি একটি বৃত্তাকার অববাহিকা জুড়ে অবস্থিত এবং এর আয়তন প্রায় ১,৪০,৫৬,০০০ কিমি (৫৪,২৭,০০০ মা), যা অ্যান্টার্কটিকার বিস্তারের সমান।[১৫][১৬] এর উপকূলরেখার আয়তন ৪৫,৩৯০ কিমি (২৮,২০০ মা)।[১৫][১৭] এটি রাশিয়ার চেয়ে ছোট একমাত্র মহাসাগর, যার স্থল আয়তন ১,৬৩,৭৭,৭৪২ কিমি (৬৩,২৩,৪৮২ মা)।

পার্শ্ববর্তী ভূমি ও একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল[সম্পাদনা]

উত্তর মহাসাগর ইউরেশিয়া (রাশিয়ানরওয়ে), উত্তর আমেরিকা (কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্য), গ্রিনল্যান্ডআইসল্যান্ড দ্বারা বেষ্টিত।

উত্তর মহাসাগর একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল[১৮]
দেশের অংশ আয়তন (কিমি)
 রাশিয়ালাপ্তেভ সাগর থেকে চুকচি সাগর ২,০৮৮,৭

০৭৫

 রাশিয়াকারা সাগর ১,০৫৮,১২৯
 রাশিয়াবারেন্টস সাগর ১,১৯৯,০০৮
 নরওয়ে—মূল ভূখণ্ড ৯৩৫,৩৯৭
 নরওয়েস্‌ভালবার্দ দ্বীপ ৮০৪,৯০৭
 নরওয়েইয়ান মায়েন দ্বীপ ২৯২,১৮৯
 আইসল্যান্ড—মূল ভূখণ্ড ৭৫৬,১১২
 গ্রিনল্যান্ড—মূল ভূখণ্ড ২,২৭৮,১১৩
 কানাডাপূর্ব উপকূল ২,২৭৬,৫৯৪
 কানাডাসুমেরু অঞ্চল ৩,০২১,৩৫৫
 যুক্তরাষ্ট্রসুমেরু অঞ্চল ৫০৮,৮১৪
অন্যান্য ১,৫০০,০০০
সর্বমোট উত্তর মহাসাগর ১৪,০৫৬,০০০

দ্রষ্টব্য: সারণীতে তালিকাভুক্ত এলাকার কিছু অংশ আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত। অন্যটি উপসাগর, প্রণালী, চ্যানেল ও নির্দিষ্ট নাম ছাড়া অন্যান্য অংশ নিয়ে গঠিত ও একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলকে বাদ দেয়।

উপ-অঞ্চল ও সংযোগ[সম্পাদনা]

বেরিং প্রণালী দ্বারা উত্তর মহাসাগর প্রশান্ত মহাসাগরের সঙ্গে যুক্ত। গ্রিনল্যান্ড সাগরলাব্রাডর সাগর আটলান্টিক মহাসাগরের সঙ্গে উত্তর মহাসাগরের সংযোগ রক্ষা করছে।[১] (আইসল্যান্ড সাগরকে কখনও কখনও গ্রিনল্যান্ড সাগরের অংশ ও কখনও কখনও আলাদা বলে মনে করা হয়।)

উত্তর মহাসাগরের অন্তর্ভুক্ত বৃহত্তম সাগরগুলি হল:[১৯][২০][২১]

  1. বারেন্টস সাগর—১.৪ মিলিয়ন কিমি
  2. হাডসন উপসাগর—১.২৩ মিলিয়ন কিমি (কখনও কখনও অন্তর্ভুক্ত নয়)
  3. গ্রিনল্যান্ড সাগর—১.২০৫ মিলিয়ন কিমি
  4. পূর্ব সাইবেরীয় সাগর—৯৮৭,০০০ কিমি
  5. কারা সাগর—৯২৬,০০০ কিমি
  6. লাপ্তেভ সাগর—৬৬২,০০০ কিমি
  7. চুকচি সাগর—৬২০,০০০ কিমি
  8. বোফর্ট সাগর—৪৭৬,০০০ কিমি
  9. আমুন্ডসেন উপসাগর
  10. শ্বেত সাগর—৯০,০০০ কিমি
  11. পেচোরা সাগর—৮১,২৬৩ কিমি
  12. লিংকন সাগর—৬৪,০০০ কিমি
  13. প্রিন্স গুস্তাফ অ্যাডলফ সাগর
  14. কুইন ভিক্টোরিয়া সাগর
  15. ওয়ান্ডেল সাগর

বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ উত্তর মহাসাগর বা আটলান্টিক মহাসাগরে বিভিন্ন প্রান্তিক সমুদ্রপথ স্থাপন করেছে, [২২][২৩][২৪][২৫][২৬][২৭][২৮][২৯] যার মধ্যে রয়েছে: হাডসন উপসাগর, বাফিন উপসাগর, নরওয়েজিয়ান সাগর এবং হাডসন প্রণালী।

দ্বীপ[সম্পাদনা]

উত্তর মহাসাগরের প্রধান দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জ পশ্চিম মূল মধ্যরেখা থেকে এসেছে:

বন্দর[সম্পাদনা]

উত্তর মহাসাগরে বেশ কয়েকটি বন্দর ও পোতাশ্রয় রয়েছে।[৩০]

সমুদ্রগর্ভ[সম্পাদনা]

লোমোনোসোভ শৈলশিরা নামে একটি সমুদ্রগর্ভস্থ শৈলশিরা গভীর সমুদ্রের তলায় অবস্থিত উত্তর মেরু সামুদ্রিক অববাহিকাটিকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। একটি হল ইউরেশীয় সামুদ্রিক অববাহিকা; এর গভীরতা ৪,০০০ এবং ৪,৫০০ মি (১৩,১০০ এবং ১৪,৮০০ ফু)। অপরটি হল আমেরেশীয় সামুদ্রিক অববাহিকা (এটি উত্তর আমেরিকান বা হাইপারবোরিয়ান সামুদ্রিক অববাহিকা নামেও পরিচিত); এর গভীরতা ৪,০০০ মি (১৩,০০০ ফু)। সমুদ্রের তলদেশে অনেক ফল্ট-ব্লক শৈলশিরা, নিতলীয় সমভূমি, খাতঅববাহিকা দেখা যায়। উত্তর মহাসাগরের গড় গভীরতা ১,০৩৮ মি (৩,৪০৬ ফু)।[৩২] গভীরতম বিন্দুটি অবস্থিত ফ্র‍্যাম প্রণালীর মোলোয় অববাহিকায়; এর গভীরতা ৫,৫৫০ মি (১৮,২১০ ফু)।[৩৩]

দুটি প্রধান অববাহিকা একাধিক শৈলশিরা দ্বারা ক্ষুদ্রতর অংশে বিভক্ত। এগুলি হল কানাডা সামুদ্রিক অববাহিকা (কানাডা/আলাস্কাআলফা শৈলশিরার মধ্যে অবস্থিত), মাকারোভ সামুদ্রিক অববাহিকা (আলফা ও লোমোনোসোভ শৈলশিরার মধ্যে অবস্থিত), ফ্রাম সামুদ্রিক অববাহিকা (লোমোনোসোভ ও গেক্কেল শৈলশিরার মধ্যে অবস্থিত) ও নানসেন সামুদ্রিক অববাহিকা (অ্যামান্ডসেন সামুদ্রিক অববাহিকা) (গেক্কেল শৈলশিরা ও ফ্রাঞ্জ জোসেফ ল্যান্ডের মহীসোপানের মধ্যে অবস্থিত)।

মহীসোপান[সম্পাদনা]

উত্তর মহাসাগর একাধিক উত্তর মেরু মহীসোপান দ্বারা বেষ্টিত। যার মধ্যে রয়েছে কানাডীয় মহীসোপান, কানাডীয় সুমেরু দ্বীপপুঞ্জের নিম্নাংশ ও রুশ মহাদেশীয় মহীসোপান; যাকে কখনও কখনও "উত্তর মেরু মহীসোপান" বলা হয় কারণ এটি বড়। রুশ মহাদেশীয় মহীসোপান তিনটি পৃথক, ছোট মহীসোপান নিয়ে গঠিত: ব্যারেন্টস মহীসোপান, চুকচি সাগর মহীসোপান ও সাইবেরীয় মহীসোপান। এগুলির মধ্যে রুশ মহাদেশীয় সাইবেরীয় মহীসোপানটি বিশ্বের বৃহত্তম মহীসোপান; এটি তেল ও গ্যাসের বিশাল মজুদ রাখে। ইউএসএসআর-ইউএসএ সামুদ্রিক সীমানা চুক্তিতে বলা হয়েছে চুকচি মহীসোপানটি রুশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সীমানা গঠন করে। সমগ্র এলাকা আন্তর্জাতিক আঞ্চলিক দাবির অধীন।

চুকচি মালভূমি চুকচি সাগর মহীসোপান থেকে বিস্তৃত।

ভূতত্ত্ব[সম্পাদনা]

উত্তর মহাসাগরের আশেপাশের পর্বতের স্ফটিক বুনিয়াদ শিলাগুলি প্যালিওজোয়িক যুগে বৃহত্তর ক্যালেডোনিয়ান অরোজেনের আঞ্চলিক পর্যায়ে এলিসমেরিয়ান অরোজেনির সময় পুনরায় স্ফটিকিত বা গঠিত হয়েছিল। জুরাসিকট্রায়াসিক যুগে আঞ্চলিক অবনমনের ফলে যথেষ্ট পলি জমেছিল, যা বর্তমান দিনের তেল ও গ্যাস জমার জন্য অনেক জলাধার তৈরি করেছিল। ক্রিটেসিয়াস সময়কালে কানাডীয় অববাহিকা উন্মুক্ত হয়েছিল ও আলাস্কার সমাবেশের কারণে টেকটোনিক কার্যকলাপের ফলে হাইড্রোকার্বন এখন প্রুধো উপসাগরের দিকে স্থানান্তরিত হয়। একই সময়ে ক্রমবর্ধমান কানাডীয় রকিজ থেকে পলি পড়ে বৃহৎ ম্যাকেঞ্জি বদ্বীপ তৈরি হয়।

ট্রায়াসিক সময়কাল থেকে শুরু হওয়া সুপারমহাদেশ প্যানজিয়ার বিচ্ছিন্নতা প্রাথমিক আটলান্টিক মহাসাগরকে উন্মুক্ত করে দেয়। ফাটল তখন উত্তর দিকে প্রসারিত হয়ে উত্তর মহাসাগরে যাওয়া-আসার পথ উন্মুক্ত করে দেয় কারণ মধ্য-আটলান্টিক শৈলশিরার একটি শাখা থেকে ম্যাফিক মহাসাগরীয় ভূত্বক উপাদান বেরিয়ে আসে। রূপান্তর চ্যুতির মাধ্যমে চুকচি বর্ডারল্যান্ড উত্তর-পূর্ব দিকে সরে যাওয়ার সাথে সাথে আমেরাসিয়া অববাহিকা হয়ত প্রথমে উন্মেষিত হয়েছিল। অতিরিক্ত ব্যাপ্তিশীল ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষের দিকে আলফা-মেন্ডেলিভ শৈলশিরার "ত্রি-জংশন" তৈরি করতে সহায়তা করেছিল।

সিনোজোয়িক যুগব্যাপী প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটের অধীনতা, ইউরেশিয়ার সাথে ভারতের সংঘর্ষ ও উত্তর আটলান্টিকের ক্রমাগত উন্মেষের ফলে নতুন হাইড্রোকার্বন কূট তৈরি হয়েছিল। প্যালিওসিন যুগ ও ইওসিন যুগের গাক্কেল শৈলশিরা থেকে সমুদ্রতল ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, যার ফলে লোমোনোসভ শৈলশিরা ভূমি থেকে দূরে সরে যায় ও তলিয়ে যায়।

সমুদ্রের বরফ ও দূরবর্তী অবস্থার কারণে উত্তর মহাসাগরের ভূতত্ত্ব এখনও দুর্বলভাবে অনুসন্ধান করা হয়। আর্কটিক কোরিং এক্সপিডিশন ড্রিলিং লোমোনোসোভ শৈলশিরার উপর কিছুটা নজরে আনে যা প্যালিওসিনের ব্যারেন্টস-মহীসোপান থেকে বিচ্ছিন্ন মহাদেশীয় ভূত্বক বলে ধারণা করা হয় এবং এরপরে পলিতে পতিত হয়। এতে ১০ বিলিয়ন ব্যারেল পর্যন্ত তেল থাকতে পারে। গাক্কেল শৈলশিরা ফাটলটিও খুব রুগ্ন বলে ধারণা করা হয় ও এটি ল্যাপ্টেভ সাগর পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে।[৩৪][৩৫]

সমুদ্রবিদ্যা[সম্পাদনা]

জলপ্রবাহ[সম্পাদনা]

উত্তর মহাসাগরের প্রধান পানি ভর বণ্টন। এই অংশটি ভৌগোলিক উত্তর মেরুতে বেরিং প্রণালী থেকে ফ্র্যাম প্রণালী পর্যন্ত একটি উল্লম্ব অংশ বরাবর বিভিন্ন পানির ভরকে চিত্রিত করে। যেহেতু স্তরবিন্যাস স্থিতিশীল, উপরের স্তরগুলির চেয়ে গভীর পানির ভর ঘন।
উত্তর মহাসাগরে ১,২০০ মি (৩,৯০০ ফু) উপরের গঠন। আমুন্ডসেন অববাহিকা, কানাডীয় অববাহিকা এবং গ্রিনল্যান্ড সাগরের তাপমাত্রা ও লবণাক্ততার পরিলেখ চিত্রিত করা হয়েছে।

উত্তর মহাসাগরের বৃহত্তর অংশের উপরিতলে (৫০-৫০ মিটার) উষ্ণতা ও লবণাক্ততার হার অপরাপর অংশের চেয়ে কম। এটি আপেক্ষিকভাবে স্থির। কারণ গভীরতার উপর লবণাক্ততার প্রভাব উষ্ণতার প্রভাবের চেয়ে বেশি। বড়ো বড়ো সাইবেরীয় ও কানাডীয় নদীর (ওব, ইয়েনিসে, লেনা, ম্যাককেঞ্জি) স্বাদু পানি এই মহাসাগরে পতিত হয়। এই স্বাদু পানি মহাসাগরের অধিক লবণাক্ত, অধিক ঘন ও অধিক গভীর পানির উপর ভেসে থাকে। এই কম লবণাক্তযুক্ত তল ও মহাসাগরীয় লবণাক্ত পানির মধ্যবর্তী অংশে অবস্থিত তথাকথিত হ্যালোক্লিন

একটি কোপপড
উত্তর মহাসাগরের ৮৫,১৮ উত্তর ও ১১৭,২৮ পূর্বের উষ্ণতা ও লবণতার প্লট, ১ জানুয়ারি, ২০১০।[৩৬]

অন্যান্য মহাসাগর থেকে আপেক্ষিক বিচ্ছিন্নতার কারণে উত্তর মহাসাগরে পানি প্রবাহের একটি অনন্য জটিল ব্যবস্থা রয়েছে। এটি ভূমধ্যসাগরের কিছু হাইড্রোলজিকাল বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ যা আটলান্টিক অববাহিকার সাথে ফ্র্যাম প্রণালীর মাধ্যমে কেবল মাত্র এর সীমিত যোগাযোগের কথা উল্লেখ করে বলেছে "যেখানে সঞ্চালন থার্মোহ্যালাইন বল আধিপত্য বিস্তার করে"।[৩৭] উত্তর মহাসাগরের মোট আয়তন ১৮.০৭×১০ কিমি, যা বিশ্ব মহাসাগরের প্রায় ১.৩% এর সমান। গড় পৃষ্ঠের সঞ্চালন মূলত ইউরেশীয় দিকে ঘূর্ণিঝড়ের মতো ও কানাডীয় অববাহিকার দিকে ঘূর্ণিঝড় মুক্ত।[৩৮]

প্রশান্ত ও আটলান্টিক উভয় মহাসাগর থেকে পানি উত্তর মহাসাগরে প্রবেশ করে এবং তিনটি অনন্য পানির ভরে বিভক্ত করা যেতে পারে। গভীরতম পানির ভরকে উত্তর পাদ পানি বলা হয় ও এটি প্রায় ৯০০ মি (৩,০০০ ফু) গভীরতায় শুরু হয়।[৩৭] এটি বিশ্ব মহাসাগরের সবচেয়ে ঘন পানির সমন্বয়ে গঠিত এবং এর দুটি প্রধান উৎস রয়েছে: সুমেরু মহীসোপান পানি ও গ্রীনল্যান্ড সাগরের গভীর পানি। প্রশান্ত মহাসাগর থেকে প্রবাহ হিসাবে শুরু হওয়া মহীসোপান অঞ্চলের পানি ০.৮ সেভার্ড্রুপের গড় হারে সংকীর্ণ বেরিং প্রণালীর মধ্য দিয়ে যায় ও চুকচি সাগরে পৌঁছায়।[৩৯] শীতকালে আলাস্কানের ঠান্ডা বাতাস চুকচি সাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় ফলে সমুদ্রস্তরের পানি জমাট বাঁধে এবং এই নবগঠিত বরফকে প্রশান্ত মহাসাগরে ঠেলে দেয়। বরফ প্রবাহের গতি প্রায় ১-৪ সেমি/সেকেন্ড।[৩৮] এই প্রক্রিয়াটি সমুদ্রে ঘন, লবণাক্ত পানি ছেড়ে দেয় যা মহাদেশীয় মহীসোপানের উপর দিয়ে পশ্চিম উত্তর মহাসাগরে নিমজ্জিত হয় এবং একটি হ্যালোক্লিন তৈরি করে।[৪০]

কেনেডি চ্যানেল

এই পানি গ্রিনল্যান্ড সাগরের গভীর পানির নিকটে মিলিত হয় যা শীতকালীন ঝড়ের উত্তরণের সময় তৈরি হয়। শীতকালে তাপমাত্রা নাটকীয়ভাবে ঠান্ডা হওয়ার সাথে সাথে বরফের গঠন ও তীব্র উল্লম্ব সংবহন পানিকে নীচের উষ্ণ লবণাক্ত পানির নীচে নিমজ্জিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট ঘন করে তোলে।[৩৭] সুমেরু পাদ পানি এর বহিঃপ্রবাহের কারণে সমালোচনীয় দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ, যা আটলান্টিক গভীর পানি গঠনে অবদান রাখে। এই পানির উল্টান বৈশ্বিক সঞ্চালন এবং জলবায়ু রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৫০-৯০০ মিটার (৪৯০-২,৯৫০ ফুট) গভীরতার পরিসরে পানির ভরকে আটলান্টিক পানি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। উত্তর আটলান্টিক স্রোত থেকে অন্তঃপ্রবাহ ফ্র্যাম প্রণালীর মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে, ঠান্ডা হয় ও নিমজ্জিত হ্যালোক্লিনের গভীরতম স্তর গঠন করে, যেখানে এটি সুমেরু অববাহিকাকে ঘড়ির বিপরীত দিকে প্রদক্ষিণ করে। এটি উত্তর মহাসাগরে সর্বোচ্চ আয়তনের অন্তঃপ্রবাহ যা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অন্তঃপ্রবাহের প্রায় ১০ গুণ সমান ও এটি উত্তর মহাসাগরের সীমানা স্রোত তৈরি করে।[৩৯] এটি প্রায় ০.০২ মিটার/সেকেন্ডে ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয়।[৩৭] আটলান্টিকের পানিতে সুমেরু পাদ পানির মতো একই লবণাক্ততা রয়েছে তবে এটি অনেক বেশি উষ্ণ (৩°সে [৩৭°ফা] পর্যন্ত)। প্রকৃতপক্ষে, এই পানির ভর প্রকৃতপক্ষে পৃষ্ঠের পানির চেয়ে উষ্ণ ও শুধুমাত্র ঘনত্বে লবণাক্ততার ভূমিকার কারণে নিমজ্জিত থাকে। যখন পানি অববাহিকায় পৌঁছায় তখন প্রবল বাতাসের মাধ্যমে এটিকে বিউফোর্ট গায়ার নামক একটি বড় বৃত্তাকার স্রোতে ঠেলে দেওয়া হয়।[৩৭] বড় কানাডীয় ও সাইবেরীয় নদী থেকে অন্তঃপ্রবাহের কারণে বিউফোর্ট গায়ারের পানি চুকচি সাগরের তুলনায় অনেক কম লবণাক্ত।[৪০]

উত্তর মহাসাগরে চূড়ান্ত সংজ্ঞায়িত পানির ভরকে বলা হয় সুমেরু পৃষ্ঠ পানি এবং এটি ১৫০–২০০ মি (৪৯০–৬৬০ ফু) গভীরতার পরিসরে পাওয়া যায়। এই পানি ভরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল একটি অংশ যাকে উপ-পৃষ্ঠের স্তর হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি আটলান্টিক পানির সৃষ্ট যা গভীর খাদের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে ও সাইবেরীয় মহীসোপানে তীব্র মিশ্রণে বশীভূত হয়।[৩৭][৪১] যেহেতু এটি প্রবেশ করে তাই এটি স্তরগুলির মধ্যে দুর্বল মিশ্রণের কারণে পৃষ্ঠস্তরের জন্য শীতল ও উষ্ণ ঢাল হিসাবে কাজ করে।[৪২][৪৩]

যাইহোক, গত কয়েক দশক ধরে আটলান্টিকের পানির উষ্ণতা[৪৪] ও স্রোতের সংযোগ পূর্ব সুমেরু সমুদ্রের বরফ গলে আটলান্টিকের পানির তাপের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।[৪৫] ২০১৬-২০১৮ সালের সবচেয়ে সাম্প্রতিক অনুমানগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, পৃষ্ঠের মহাসাগরীয় তাপ প্রবাহ এখন পূর্ব ইউরেশীয় অববাহিকার বায়ুমণ্ডলীয় প্রবাহকে ছাড়িয়ে গেছে।[৪৬] একই সময়ের মধ্যে দুর্বল হ্যালোক্লিন স্তরবিন্যাস সামুদ্রিক বরফ হ্রাসের সাথে সম্পর্কিত বলে বিবেচিত এমন ক্রমবর্ধমান উচ্চ মহাসাগরীয় স্রোতের সাথে মিলিত হয়েছে যা এই অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান মিশ্রণের ইঙ্গিত করে।[৪৭] বিপরীতে পশ্চিম সুমেরুর মিশ্রণের প্রত্যক্ষ পরিমাপ ইঙ্গিত দেয় যে, ২০১২ সালের শক্তিশালী সুমেরু ঘূর্ণিঝড় 'নিখুঁত ঝড়' পরিস্থিতিতেও আটলান্টিকের পানির তাপ মধ্যবর্তী গভীরতায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে।[৪৮]

প্রশান্ত ও আটলান্টিক উভয়ই মহাসাগর থেকে উদ্ভুত পানি গ্রিনল্যান্ড ও স্‌ভালবার্দ দ্বীপের মধ্যে ফ্র্যাম প্রণালী দিয়ে বেরিয়ে যায়, যা প্রায় ২,৭০০ মি (৮,৯০০ ফু) গভীর ও ৩৫০ কিমি (২২০ মা) প্রশস্ত। এই বহিঃপ্রবাহ প্রায় ৯ এসভি।[৩৯] ফ্র্যাম প্রণালীর প্রস্থে উত্তর মহাসাগরের আটলান্টিক অংশে অন্তঃপ্রবাহ ও বহিঃপ্রবাহ উভয়ই হয়ে থাকে। এই কারণে এটি কোরিওলিস প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়, যা পশ্চিম দিকে পূর্ব গ্রিনল্যান্ড স্রোতে বহিঃপ্রবাহকে কেন্দ্রীভূত করে এবং পূর্ব দিকে নরওয়েজিয়ান অন্তঃপ্রবাহে প্রবাহিত হয়।[৩৭] প্রশান্ত মহাসাগরীয় পানিও গ্রিনল্যান্ডের পশ্চিম উপকূল ও হাডসন প্রণালী (১-২ এসভি) বরাবর বেরিয়ে যায়, যা কানাডীয় দ্বীপপুঞ্জে পরিপোষক পদার্থ সরবরাহ করে।[৩৯]

উল্লিখিত হিসাবে, বরফের গঠন ও চলনের প্রক্রিয়াটি উত্তর মহাসাগরের সঞ্চালন ও পানির ভর গঠনের একটি মূল চালিকাশক্তি। এই সাপেক্ষতা সহ উত্তর মহাসাগরে সামুদ্রিক বরফ আচ্ছাদনে ঋতু পরিবর্তনের কারণে তারতম্য দেখা দেয়। সামুদ্রিক বরফের চলন বায়ুর চাপের ফলাফল, যা সুমেরুতে সারা বছর ধরে বেশ কয়েকটি আবহাওয়াগত অবস্থার সাথে সম্পর্কিত। উদাহরণস্বরূপ, বিউফোর্ট উচ্চ তল—সাইবেরীয় উচ্চ তল ব্যবস্থার একটি সম্প্রসারণ—একটি চাপ ব্যবস্থা যা বিউফোর্ট গায়ারের ঘূর্ণিঝড় মুক্ত গতিকে চালিত করে।[৩৮] গ্রীষ্মের সময় উচ্চ চাপের এই অঞ্চলটিকে এর সাইবেরীয় ও কানাডীয় পার্শ্ব ঘেঁষে প্রবল ধাক্কা দেওয়া হয়। উপরন্তু, গ্রিনল্যান্ডের উপর একটি সমুদ্রস্তর চাপ (এসএলপি) শৈলশিরা রয়েছে যা বরফ রফতানির সুবিধার্থে ফ্র্যাম প্রণালীর মধ্য দিয়ে শক্তিশালী উত্তর বায়ু চালিত করে। গ্রীষ্মে এসএলপি বৈপরীত্য ক্ষুদ্র হওয়ায় হালকা বায়ু উৎপাদন করে। মৌসুমী চাপ ব্যবস্থা চলনের একটি চূড়ান্ত উদাহরণ হল নিম্ন চাপ ব্যবস্থা যা নর্ডিক ও ব্যারেন্টস সাগরের উপরে বিদ্যমান। এটি আইসল্যান্ডীয় নিম্ন স্তরের একটি সম্প্রসারণ, যা এই এলাকায় মহাসাগরীয় ঘূর্ণিঝড় সঞ্চালন তৈরি করে। গ্রীষ্মে অগভীর অংশ উত্তর মেরুতে কেন্দ্রের দিকে সরে যায়। সুমেরুর এই সকল বৈচিত্র গ্রীষ্মের মাসগুলিতে বরফের প্রবাহকে এর দুর্বলতম বিন্দুতে পৌঁছাতে অবদান রাখে। এছাড়াও প্রমাণ রয়েছে যে, প্রবাহটি সুমেরু দোলন ও আটলান্টিক বহুদশকীয় দোলনের পর্যায়ের সাথে যুক্ত।[৩৮]

উত্তর মহাসাগরের দক্ষিণ চুকচাই সাগরে একটি প্রধান রুদ্ধক বিন্দু রয়েছে।[৩০] এই বিন্দুর মাধ্যমে আলাস্কা ও পূর্ব সাইবেরিয়ার মধ্যবর্তী বেরিং প্রণালী দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশ করা যায়। বরফের অবস্থা ভেদে, উত্তর মহাসাগর হল পূর্ব ও পশ্চিম রাশিয়ার মধ্যে নিকটতম সামুদ্রিক যোগসূত্র। উত্তর মহাসাগরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার অনেকগুলি ভাসমান গবেষণা স্টেশন রয়েছে।

সারা বছরই এই মহাসাগরের উপরিতলের অধিকাংশ স্থান বরফে আবৃত থাকে। এর ফলে বায়ুর উষ্ণতাও হিমশীতল হয়। বিষুবরেখার দিকে প্রবাহিত শীতল বায়ুর একটি প্রধান উৎস হল উত্তর মহাসাগর। ৬০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে উষ্ণ বায়ুর সঙ্গে মিলিত হয়ে এই বায়ু বৃষ্টি ও তুষারপাত ঘটায়। মুক্ত অঞ্চলে, বিশেষ করে দক্ষিণ জলভাগে, প্রচুর সামুদ্রিক জীবজন্তু দেখা যায়। এই মহাসাগরের প্রধান বন্দরগুলি হল মুরমানস্ক, আরখানগেলস্কপ্রধো উপসাগর[৪৯]

বরফ টুপি[সম্পাদনা]

উত্তর মহাসাগরে সামুদ্রিক আচ্ছাদন, ২০০৫ ও ২০০৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ের পরিধি দেখাচ্ছে।[৫০]
উত্তর মহাসাগরের সামুদ্রিক বরফে অস্থায়ী লজিস্টিক স্টেশন স্থাপন করা যেতে পারে, এখানে, একটি টুইন অটারকে ৮৬°উত্তর, ৭৬°৪৩'পশ্চিম এ আচ্ছাদিত বরফের উপর জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে।
উত্তর মহাসাগরীয় সামুদ্রিক বরফের প্রসারক্ষেত্রের ঋতুভিত্তিক হ্রাসবৃদ্ধি ও দীর্ঘকালীন হ্রাস।[৫১]
উত্তর মহাসাগরীয় সামুদ্রিক বরফের ঘনত্বের ঋতুভিত্তিক হ্রাসবৃদ্ধি ও দীর্ঘকালীন হ্রাস।[৫২]

উত্তর মহাসাগরের অধিকাংশ অঞ্চল একটি বরফের "টুপি" দ্বারা আবৃত থাকে। এটির ঋতু অনুযায়ী হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে থাকে। এই টুপির প্রসারক্ষেত্রটির (যা মূলত সামুদ্রিক বরফ দ্বারা গঠিত) আকার ১৯৮০ সালে ছিল ১২,০০০ কিমি (৪,৬০০ মা)। ২০১০ সালে তা কমে হয় ১০,০০০ কিমি (৩,৯০০ মা)। ঋতুভিত্তিক পার্থক্য প্রায় ৯,০০০ কিমি (৩,৫০০ মা)। সর্বোচ্চ প্রসার এপ্রিল মাসে এবং সর্বনিম্ন প্রসার সেপ্টেম্বরে। বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোত বরফের বিরাট অঞ্চলকে স্থানান্তর বা ঘোরাতে সক্ষম হয়। চাপ অঞ্চলও সৃষ্টি হয়। সেখানে বরফের স্তুপ জমে প্যাক আইস গঠন করে।।[৫৩][৫৪][৫৫] উত্তর মহাসাগরীয় সামুদ্রিক বরফের প্রসার ও গভীরতা এবং বরফের মোট ঘনত্ব বিগত দশকগুলিতে হ্রাস পেয়েছে।

হিমশৈল মাঝে মাঝে উত্তর এলেসমেয়ার দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং পশ্চিম গ্রিনল্যান্ড ও প্রান্তবর্তী উত্তর-পূর্ব কানাডার হিমবাহ থেকে হিমশৈল তৈরি হয়। হিমশৈল সামুদ্রিক বরফ নয় তবে আচ্ছাদন বরফের মধ্যে অনুবিদ্ধ হয়ে যেতে পারে। হিমশৈল জাহাজের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে, যার মধ্যে টাইটানিকের ঘটনা অন্যতম বিখ্যাত। অক্টোবর থেকে জুন পর্যন্ত মহাসাগর কার্যত বরফে ঢাকা থাকে ও জাহাজের উপরি কাঠামো অক্টোবর থেকে মে পর্যন্ত বরফের সাপেক্ষে থাকে।[৪৯] আধুনিক বরফভাঙ্গা জাহাজের আবির্ভাবের আগে উত্তর মহাসাগরে যাত্রা করা জাহাজগুলি সামুদ্রিক বরফে আটকা পড়া বা চূর্ণ হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতো (যদিও এইসব বিপদ সত্ত্বেও বাইচিমো কয়েক দশক ধরে উত্তর মহাসাগরের মধ্য দিয়ে চলাচল করেছিল)।

জলবায়ু[সম্পাদনা]

১৯৯০ ও ১৯৯৯ সালের মধ্যে বরফের পরিবর্তন

উত্তর মহাসাগর একটি মেরু জলবায়ুতে রয়েছে যাকে ক্রমাগত ঠান্ডা ও তুলনামূলকভাবে সংকীর্ণ বার্ষিক তাপমাত্রা পরিসীমা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। শীতকালকে মেরু রাত্রি, প্রচণ্ড ঠান্ডা, ঘন ঘন নিম্ন-স্তরের তাপমাত্রার পরিবর্তন ও স্থিতিশীল আবহাওয়ার অবস্থা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।[৫৬] ঘূর্ণিঝড় শুধুমাত্র আটলান্টিকের দিকে সাধারণ ঘটনা।[৫৭] গ্রীষ্মকালকে ক্রমাগত দিনের আলো (মধ্যরাতের সূর্য) দ্বারা চিহ্নিত করা হয় ও বাতাসের তাপমাত্রা ০ °সে (৩২ °ফা)-এর উপরে কিছুটা বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড় গ্রীষ্মে অধিক ঘন ঘন হয়ে থাকে এবং বৃষ্টি বা তুষারও হতে পারে।[৫৭] এখানে সারা বছর আকাশ মেঘলা থাকে, গড় মেঘের আবরণ শীতকালে ৬০% থেকে গ্রীষ্মকালে ৮০% পর্যন্ত থাকে।[৫৮]

উত্তর মহাসাগরের পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা সমুদ্রের পানির হিমাঙ্কের কাছাকাছি প্রায় −১.৮ °সে (২৮.৮ °ফা) থাকে বলে মোটামুটি স্থিতিশীল।

বিশুদ্ধ পানির বিপরীতে সমুদ্রের পানির ঘনত্ব হিমাঙ্কের কাছাকাছি আসার সাথে সাথে বৃদ্ধি পায় এবং এইভাবে এটি নিচের দিকে বাড়তে থাকে। এটা সাধারণত প্রয়োজনীয় যে সমুদ্রের ১০০–১৫০ মি (৩৩০–৪৯০ ফু) উপরের পানি হিমাঙ্কে ঠাণ্ডা হয় যাতে সামুদ্রিক বরফ তৈরি হয়।[৫৯] শীতকালে তুলনামূলকভাবে উষ্ণ সমুদ্রের পানি এমনকি বরফে ঢাকা থাকলেও একটি পরিমিত প্রভাব পড়ে। এটি একটি কারণ যে সুমেরু অ্যান্টার্কটিক মহাদেশে লক্ষিত চরম তাপমাত্রা ধারণ করে না।

সুমেরুর বরফ রাশির কত রাশি বরফ উত্তর মহাসাগরকে ঢেকে রাখে তার মধ্যে যথেষ্ট ঋতুগত তারতম্য রয়েছে। সুমেরুর বরফ রাশির বেশিরভাগ অংশ বছরের প্রায় ১০ মাস তুষারে ঢাকা থাকে। সর্বাধিক তুষার আচ্ছাদন মার্চ বা এপ্রিলে - প্রায় ২০–৫০ সেমি (৭.৯–১৯.৭ ইঞ্চি) হিমায়িত সমুদ্রের উপরে থাকে।

পৃথিবীর ইতিহাসে সুমেরুর জলবায়ু উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। প্যালিওসিন-ইওসিন তাপীয় সর্বোচ্চ ৫৫ মিলিয়ন বছর আগে যখন বৈশ্বিক জলবায়ু প্রায় ৫–৮ °C (৯–১৪ °F) উষ্ণতার মধ্য দিয়ে যায় তখন এই অঞ্চলটি ১০–২০ °সে (৫০–৬৮ °ফা) গড় বার্ষিক তাপমাত্রায় পৌঁছেছিল।[৬০][৬১][৬২] উত্তরাঞ্চলীয়[৬৩] উত্তর মহাসাগরের উপরিভাগের পানি ঋতুগতভাবে যথেষ্ট উষ্ণ হয় কারণ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জীবনরূপকে (ডাইনোফ্ল্যাজেলেটস অ্যাপেক্টোডিনিয়াম অগাস্টাম) গঠনের জন্য ২২ °সে (৭২ °ফা)-এর বেশি তাপমাত্রার প্রয়োজন।[৬৪]

বর্তমানে, সুমেরু অঞ্চল গ্রহের বাকি অংশের তুলনায় দ্বিগুণ দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে।[৬৫][৬৬]

জীবতত্ত্ব[সম্পাদনা]

তিনটি মেরু ভালুক উত্তর মেরুর কাছে ইউএসএস হনুলুলুর কাছে আসছে।

উত্তর মহাসাগরে সুস্পষ্ট ঋতুর জন্য ২-৬ মাসের নিশীথ সূর্যমেরু রাতের [৬৭] কারণে বরফ শৈবাল ও ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের মতো সালোকসংশ্লেষণকারী জীবের প্রাথমিক উৎপাদন বসন্ত ও গ্রীষ্মের মাসগুলিতে (মার্চ/এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর) সীমাবদ্ধ। [৬৮] মধ্য উত্তর মহাসাগর ও সংলগ্ন মহীসোপান প্রাথমিক উৎপাদকের গুরুত্বপূর্ণ খাদকের মধ্যে রয়েছে জুপ্ল্যাঙ্কটন, বিশেষ করে কোপেপড (ক্যালানাস ফিনমার্চিকাস, ক্যালানাস গ্লাসিয়ালিসক্যালানাস হাইপারবোরিয়াস)[৬৯] ও ইউফৌসিডস,[৭০] পাশাপাশি বরফ-সম্পর্কিত প্রাণীকুল (যেমন অ্যাম্পিফডস)।[৬৯] এই প্রাথমিক খাদকরা প্রাথমিক উৎপাদক ও উচ্চতর ট্রফিক স্তরের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ তৈরি করে। উত্তর মহাসাগরে উচ্চতর ট্রফিক স্তরের সংমিশ্রণ অঞ্চলভেদে (আটলান্টিক পার্শ্ব বনাম প্রশান্ত মহাসাগরীয় পার্শ্ব) ও সামুদ্রিক বরফের আচ্ছাদনের সাথে পরিবর্তিত হয়। আটলান্টিক-প্রভাবিত উত্তর মহাসাগরের মহীসোপানে ব্যারেন্টস সাগরের মাধ্যমিক খাদক মূলত হেরিং, ইয়ং কড ও ক্যাপেলিন সহ উপ-উত্তর প্রজাতি।[৭০] মধ্য উত্তর মহাসাগরের বরফ আচ্ছাদিত অঞ্চলে মেরু কড হল প্রাথমিক খাদকের একটি মধ্য শিকারী। উত্তর মহাসাগরের শীর্ষ শিকারী হল - সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী যেমন সীল, তিমিমেরু ভালুক - যারা মাছ শিকার করে।

উত্তর মহাসাগরের বিপন্ন সামুদ্রিক প্রজাতির মধ্যে রয়েছে ওয়ালরাসতিমি। অঞ্চলটির একটি ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্র রয়েছে ও এটি বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের সংস্পর্শে আসে কারণ এটি বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দ্রুত উষ্ণ হয়। উত্তরের পানিতে লায়ন্স মানি জেলিফিশ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ও ব্যান্ডেড গানেল হল সমুদ্রে বসবাসকারী একমাত্র প্রজাতির গানেল।

মিনকে তিমি
উত্তর বরফ ভাসমান তুষারস্তরের উপর ওয়ালরাস

প্রাকৃতিক সম্পদ[সম্পাদনা]

পেট্রোলিয়ামপ্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র, প্লেসার মজুদ, পলিমেটালিক নোডুলস, বালি ও নুড়ি সমষ্টি, মাছ, সীল এবং তিমি এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।[৪৯][৭১]

সমুদ্রের মধ্যভাগের রাজনৈতিক মৃত অঞ্চলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, নরওয়ে ও ডেনমার্কের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু।[৭২] এটি বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি বিশ্বের অনাবিষ্কৃত তেল ও গ্যাস সম্পদের ২৫% বা এরও বেশি ধারণ করতে পারে।[৭৩]

পরিবেশগত উদ্বেগ[সম্পাদনা]

সুমেরু বরফ গলন[সম্পাদনা]

সুমেরু বরফ আচ্ছাদন পাতলা হচ্ছে ও ওজোন স্তরে একটি মৌসুমী ফাঁক প্রায়শই ঘটে।[৭৪] সুমেরু সামুদ্রিক বরফের আয়তন হ্রাস গ্রহের গড় অ্যালবেডো হ্রাস করে যা সম্ভবত একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রক্রিয়ায় বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।[৫৫][৭৫] গবেষণায় দেখা গেছে যে, সুমেরু ২০৪০ সালের মধ্যে মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গ্রীষ্মে বরফমুক্ত হতে পারে।[৭৬][৭৭] শেষবার সুমেরু কখন বরফমুক্ত ছিল তার অনুমান নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে: ৬৫ মিলিয়ন বছর আগের জীবাশ্মগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, প্রায় ৫,৫০০ বছর আগেও সেখানে উদ্ভিদের অস্তিত্ব ছিল; বরফ ও সমুদ্রের অন্তঃস্থল চূড়ান্ত উষ্ণ সময়কাল থেকে ৮,০০০ বছর বা চূড়ান্ত আন্তঃগ্লাসিয়াল সময়কাল থেকে ১২৫,০০০ বছরেরও বেশি পুরনো।[৭৮]

সুমেরুর উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ গলিত পানি উত্তর আটলান্টিকে প্রবেশ করতে পারে ফলস্বরূপ সম্ভবত বৈশ্বিক মহাসাগরের বর্তমান নিদর্শনগুলিকে ব্যাহত করতে পারে। তখন পৃথিবীর জলবায়ুতে সম্ভাব্য মারাত্মক পরিবর্তন ঘটতে পারে।[৭৫]

সামুদ্রিক বরফের পরিমাণ হ্রাস ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উন্মুক্ত পানির উপর ২০১২ সালের শক্তিশালী সুমেরু ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঝড়ের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে, যেমন ম্যাকেঞ্জি বদ্বীপের মতো স্থানে উপকূলে উদ্ভিদের সম্ভাব্য লবণাক্ত পানির ক্ষতি রয়ে যায় কারণ শক্তিশালী ঝড়ে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা বেশি থাকে।[৭৯]

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মেরু ভালুক ও মানুষের মধ্যে সংঘর্ষ বাড়িয়েছে। সামুদ্রিক বরফ গলে যাওয়ার কারণে মেরু ভাল্লুকদের খাদ্যের নতুন উৎস খুঁজতে হচ্ছে।[৮০] ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এবং ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পরিস্থিতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যখন নোভায়া জেমলিয়ার দ্বীপপুঞ্জে মেরু ভাল্লুকের ব্যাপক আক্রমণের ফলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। কয়েক ডজন মেরু ভালুককে বাড়ি, সরকারি ভবন ও বসতি এলাকায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে।[৮১][৮২]

ক্ল্যাথ্রেট ভাঙ্গন[সম্পাদনা]

ক্যাম্ব্রিয়ানঅর্ডোভিশিয়ানসিলুরিয়ানডেভোনিয়ানকার্বনিফেরাসপার্মিয়ানট্রায়াসিকজুরাসিকক্রিটেশিয়াসপ্যালিওজিননিওজিন
ফ্যানারোজোয়িক অধিযুগ জুড়ে সামুদ্রিক বিলোপনের হার
%
কোটি বছর আগে
ক্যাম্ব্রিয়ানঅর্ডোভিশিয়ানসিলুরিয়ানডেভোনিয়ানকার্বনিফেরাসপার্মিয়ানট্রায়াসিকজুরাসিকক্রিটেশিয়াসপ্যালিওজিননিওজিন
পার্মিয়ান-ট্রায়াসিক বিলুপ্তির ঘটনা (বড় গতায়ু) ক্ল্যাথ্রেট থেকে মিথেন নির্গত হওয়ার কারণে হতে পারে। আনুমানিক ৫২% সামুদ্রিক গণ বিলুপ্ত হয়ে গেছে, যা সমস্ত সামুদ্রিক প্রজাতির ৯৬% প্রতিনিধিত্ব করে।

সামুদ্রিক বরফ ও এটি যে শীতল পরিস্থিতি বজায় রাখে তা উপকূলরেখায় ও এর কাছাকাছি মিথেন গ্যাস জমাকে স্থিতিশীল করতে কাজ করে,[৮৩] যা ক্ল্যাথ্রেট ভেঙ্গে যাওয়া ও বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাস ছড়িয়ে পড়াকে প্রতিরোধ করে ফলে উষ্ণতা আরও বৃদ্ধি করে। এই বরফ গলে বায়ুমণ্ডলে একটি শক্তিশালী গ্রিনহাউজ গ্যাস মিথেন প্রচুর পরিমাণে নির্গত হতে পারে, যার ফলে একটি শক্তিশালী ধনাত্মক প্রতিক্রিয়া চক্রে অধিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং সামুদ্রিক বংশ ও প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।[৮৩][৮৪]

অন্যান্য উদ্বেগ[সম্পাদনা]

অন্যান্য পরিবেশগত উদ্বেগগুলি উত্তর মহাসাগরের তেজস্ক্রিয় দূষণের সাথে সম্পর্কিত উদাহরণস্বরূপ, কারা সাগরে রুশ তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ডাম্পের জায়গা,[৮৫] স্নায়ুযুদ্ধ পারমাণবিক পরীক্ষার জায়গা যেমন নোভায়া জেমল্যা,[৮৬] গ্রিনল্যান্ডে ক্যাম্প সেঞ্চুরির দূষণকারী[৮৭] ও ফুকুশিমা দাইচি পারমাণবিক বিপর্যয় থেকে তেজস্ক্রিয় দূষণ।[৮৮]

২০১৫ সালের ১৬ জুলাই পাঁচটি দেশ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, নরওয়ে, ডেনমার্ক/গ্রিনল্যান্ড) উত্তর মেরুর নিকটবর্তী মধ্য উত্তর মহাসাগরের ১.১ মিলিয়ন বর্গমাইল অঞ্চল থেকে তাদের মাছ ধরার জাহাজ দূরে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটি ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছে। চুক্তিতে সামুদ্রিক সম্পদ সম্পর্কে অধিক ভাল বৈজ্ঞানিক জ্ঞান না থাকলে ও সেই সম্পদগুলিকে রক্ষা করার জন্য একটি নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত এই দেশগুলিকে সেখানে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।[৮৯][৯০]

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Michael Pidwirny (২০০৬)। "Introduction to the Oceans"www.physicalgeography.net। ২০০৬-১২-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১২-০৭ 
  2. General oceanography : an introduction (2nd সংস্করণ)। New York: Wiley। ১৯৮০। পৃষ্ঠা 501আইএসবিএন 0471021024ওসিএলসি 6200221 
  3. Tomczak, Matthias; Godfrey, J. Stuart (২০০৩)। Regional Oceanography: an Introduction (2 সংস্করণ)। Delhi: Daya Publishing House। আইএসবিএন 81-7035-306-8। ৩০ জুন ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০১১ 
  4. "'Arctic Ocean' – Encyclopædia Britannica"Encyclopedia Britannica। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০১২As an approximation, the Arctic Ocean may be regarded as an estuary of the Atlantic Ocean. 
  5. Since the beginning of the 21st century, sea ice covers only 1/3 to 1/2 the surface of the Arctic Ocean at the end of summer.
  6. Some Thoughts on the Freezing and Melting of Sea Ice and Their Effects on the Ocean K. Aagaard and R. A. Woodgate, Polar Science Center, Applied Physics Laboratory University of Washington, January 2001. Retrieved 7 December 2006.
  7. "Arctic Sea Ice News and Analysis | Sea ice data updated daily with one-day lag" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০১ 
  8. "Understanding the Arctic sea ice: Polar Portal"polarportal.dk। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০১ 
  9. Goebel T, Waters MR, O'Rourke DH (২০০৮)। "The Late Pleistocene Dispersal of Modern Humans in the Americas" (পিডিএফ): 1497–502। ডিওআই:10.1126/science.1153569পিএমআইডি 18339930সাইট সিয়ারX 10.1.1.398.9315অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  10. "The Prehistory of Greenland" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ মে ২০০৮ তারিখে, Greenland Research Centre, National Museum of Denmark, accessed 14 April 2010.
  11. Park, Robert W.। "Thule Tradition"Arctic Archaeology। Department of Anthropology, University of Waterloo। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০১৫ 
  12. Pytheas ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮ তারিখে Andre Engels. Retrieved 16 December 2006.
  13. "Channel 4, "Sir Wally Herbert dies" 13 June 2007" 
  14. North Pole drifting stations (1930s-1980s)
  15. Wright, John W. (ed.) (২০০৬)। The New York Times Almanac (2007 সংস্করণ)। New York, New York: Penguin Books। পৃষ্ঠা 455আইএসবিএন 0-14-303820-6  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
  16. "Oceans of the World" (পিডিএফ)। rst2.edu। ২০১১-০৭-১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১০-২৮ 
  17. "Arctic Ocean Fast Facts"। wwf.pandora.org (World Wildlife Foundation)। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১০-২৮ 
  18. "Sea Around Us | Fisheries, Ecosystems and Biodiversity"seaaroundus.org 
  19. June 2010, Remy Melina 04 (৪ জুন ২০১০)। "The World's Biggest Oceans and Seas"livescience.com 
  20. "World Map / World Atlas / Atlas of the World Including Geography Facts and Flags - WorldAtlas.com"WorldAtlas 
  21. "List of seas"listofseas.com 
  22. Wright, John (৩০ নভেম্বর ২০০১)। The New York Times Almanac 2002। Psychology Press। পৃষ্ঠা 459। আইএসবিএন 978-1-57958-348-4। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১০ 
  23. "IHO Publication S-23 Limits of Oceans and Seas; Chapter 9: Arctic Ocean"। International Hydrographic Organization। ২০০২। ২০১৪-০২-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০১ 
  24. Calow, Peter (১২ জুলাই ১৯৯৯)। Blackwell's concise encyclopedia of environmental management। Wiley-Blackwell। পৃষ্ঠা 7। আইএসবিএন 978-0-632-04951-6। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০১০ 
  25. Lewis, Edward Lyn; Jones, E. Peter; ও অন্যান্য, সম্পাদকগণ (২০০০)। The Freshwater Budget of the Arctic Ocean। Springer। পৃষ্ঠা 101, 282–283। আইএসবিএন 978-0-7923-6439-9। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১০ 
  26. McColl, R.W. (২০০৫)। Encyclopedia of World Geography। Infobase Publishing। পৃষ্ঠা 57। আইএসবিএন 978-0-8160-5786-3। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১০ 
  27. Earle, Sylvia A.; Glover, Linda K. (২০০৮)। Ocean: An Illustrated Atlas। National Geographic Books। পৃষ্ঠা 112। আইএসবিএন 978-1-4262-0319-0। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১০ 
  28. Reddy, M. P. M. (২০০১)। Descriptive Physical Oceanography। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 8। আইএসবিএন 978-90-5410-706-4। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১০ 
  29. Day, Trevor; Garratt, Richard (২০০৬)। Oceans। Infobase Publishing। পৃষ্ঠা 21। আইএসবিএন 978-0-8160-5327-8। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১০ 
  30. Arctic Ocean ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে. CIA World Fact Book
  31. "Backgrounder – Expanding Canadian Forces Operations in the Arctic"। Canadian Armed Forces Arctic Training Centre। ১০ আগস্ট ২০০৭। ২ জুন ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০০৭ 
  32. "The Mariana Trench - Oceanography"www.marianatrench.com। ২০০৩-০৪-০৪। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১২-০২ 
  33. "Five Deeps Expedition is complete after historic dive to the bottom of the Arctic Ocean" (পিডিএফ) 
  34. Whaley, Jane (২০০৭)। "Geological History of the Arctic Ocean" (পিডিএফ)। GEO ExPro। ৩ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ 
  35. Piskarev, Alexey; Poselov, Victor; Kaminsky, Valery, সম্পাদকগণ (২০১৯)। Geologic Structures of the Arctic Basin। Springer। আইএসবিএন 9783319777429 
  36. U.S. National Oceanographic Data Center: Global Temperature–Salinity Profile Programme. June 2006. U.S. Department of Commerce, National Oceanic and Atmospheric Administration, National Oceanographic Data Center, Silver Spring, Maryland, 20910. Date of Access, <http://www.nodc.noaa.gov/GTSPP/>.
  37. [Regional Oceanography: An Introduction. Tomczak, Godfrey. Retrieved 18 November 2013.]
  38. Pickard, George L.; Emery, William J. (১৯৮২)। Descriptive Physical Oceanography। Pergamon। আইএসবিএন 978-1-4832-7877-3 
  39. "Arctic Ocean Circulation: Going Around at the Top of the World. Retrieved 2 November 2013."। ১২ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১৩ 
  40. Arctic Ocean Circulation ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে. Polar Discovery
  41. Lenn, Y., Rippeth, T. P., Old, C., Bacon, S., Polyakov, I., Ivanov, V. & Holemann, J (2011). Journal of Physical Oceanography. 41(3), 531-547
  42. Lenn, Y. D., Wiles, P. J., Torres-Valdes, S., Abrahamsen, E. P., Rippeth, T. P., Simpson, J. H., Bacon, S., Laxon, S. W., Polyakov, I., Ivanov, V. & Kirillov, S. (2009). Vertical mixing at intermediate depths in the Arctic boundary current. Geophysical Research Letters. 36, p. L05601
  43. Fer, I. (2009). Weak vertical diffusion allows maintenance of cold halocline in the central Arctic. Atmospheric and Oceanic Science Letters 2(3):148–152.
  44. Barton, B., Lenn, Y-D. & Lique, C. (2018). Observed atlantification of the Barents Sea causes the Polar Front to limit the expansion of winter sea ice, Journal of Physical Oceanography, 28(8), 1849-1866
  45. Igor V. Polyakov1, Andrey V. Pnyushkov, Matthew B. Alkire, Igor M. Ashik, Till M. Baumann, Eddy C. Carmack, Ilona Goszczko, John Guthrie, Vladimir V. Ivanov,Torsten Kanzow, Richard Krishfield, Ronald Kwok, Arild Sundfjord, James Morison, Robert Rember, Alexander Yulin (2017). Greater role for Atlantic inflows on sea-ice loss in the Eurasian Basin of the Arctic Ocean. Science, 356(6335), 285-291
  46. Polyakov, I., Rippeth, T., Fer, I., Alkire, M., Baumann, T., Carmack, E., Ivanov, V., Janout, M. A., Padman, L., Pnyushkov, A. & Rember, R (2020). Weakening of the cold halocline layer exposes sea ice to oceanic heat in the eastern Arctic Ocean. Journal of Climate, 33(18), 8107-8123
  47. Polyakov, I., Rippeth, T., Fer, I., Baumann, T., Carmack, E., Ivanov, V., Janout, M. A., Padman, L., Pnyushkov, A. & Rember, R (2020). Intensification of Near-Surface Currents and Shear in the Eastern Arctic Ocean: A More Dynamic Eastern Arctic Ocean, Geophysical Research Letters, 47(16), e2020GL089469
  48. Lincoln, B., Rippeth, T., Lenn, Y-D., Timmermans, M-L., Williams, W. & Bacon, S (2016). Wind-driven mixing at intermediate depths in an ice-free Arctic Ocean. Geophysical Research Letters, 43(18), 9749-9756
  49. Arctic Ocean ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে. CIA World Fact Book
  50. "Continued Sea Ice Decline in 2005"। Graph by Robert Simmon, Earth Observatory, and Walt Meier, NSIDC; photo by Nathaniel B. Palmer, NOAA। ৭ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০০৬ 
  51. Fetterer, F., K. Knowles, W. Meier, and M. Savoie. 2002, updated 2009. Sea Ice Index. Boulder, Colorado USA: National Snow and Ice Data Center. Digital media.
  52. Zhang, Jinlun and D.A. Rothrock: Modeling global sea ice with a thickness and enthalpy distribution model in generalized curvilinear coordinates, Mon. Wea. Rev. 131(5), 681-697, 2003. [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ জুলাই ২০১০ তারিখে
  53. Sea Ice Index ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে. Nsidc.org. Retrieved on 6 March 2011.
  54. Polar Sea Ice Cap and Snow – Cryosphere Today ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে. Arctic.atmos.uiuc.edu (23 September 2007). Retrieved on 2011-03-06.
  55. Buixadé Farré, Albert; Stephenson, Scott R.; Chen, Linling; Czub, Michael; Dai, Ying; Demchev, Denis; Efimov, Yaroslav; Graczyk, Piotr; Grythe, Henrik; Keil, Kathrin; Kivekäs, Niku; Kumar, Naresh; Liu, Nengye; Matelenok, Igor; Myksvoll, Mari; O'Leary, Derek; Olsen, Julia; Pavithran .A.P., Sachin; Petersen, Edward; Raspotnik, Andreas; Ryzhov, Ivan; Solski, Jan; Suo, Lingling; Troein, Caroline; Valeeva, Vilena; van Rijckevorsel, Jaap; Wighting, Jonathan (১৬ অক্টোবর ২০১৪)। "Commercial Arctic shipping through the Northeast Passage: Routes, resources, governance, technology, and infrastructure"। Polar Geography37 (4): 298–324। ডিওআই:10.1080/1088937X.2014.965769অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  56. Serreze, Mark C; Barry, Roger G (২০১৪)। The Arctic Climate System (2nd সংস্করণ)। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 168–172। আইএসবিএন 978-1-107-03717-5 
  57. Simmonds, Ian; Burke, Craig (২০০৮)। "Arctic climate change as manifest in cyclone behavior": 5777। ডিওআই:10.1175/2008JCLI2366.1অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  58. Serreze, Mark C; Barry, Roger G (২০১৪)। The Arctic Climate System (2nd সংস্করণ)। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 56–59। আইএসবিএন 978-1-107-03717-5 
  59. "NSIDC sea ice"। ১৭ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০ 
  60. McInerney, Francesca A.; Wing, Scott L. (২০১১-০৪-২৫)। "The Paleocene-Eocene Thermal Maximum: A Perturbation of Carbon Cycle, Climate, and Biosphere with Implications for the Future": 489–516। আইএসএসএন 0084-6597ডিওআই:10.1146/annurev-earth-040610-133431 
  61. Nunes, Flavia; Norris, Richard D. (২০০৬-০১-০১)। "Abrupt reversal in ocean overturning during the Palaeocene/Eocene warm period": 60–63। ডিওআই:10.1038/nature04386পিএমআইডি 16397495 
  62. Shellito, C.J.; Sloan, L.C. (২০০৩)। "Climate model sensitivity to atmospheric CO2 levels in the Early-Middle Paleogene": 113–123। ডিওআই:10.1016/S0031-0182(02)00718-6 
  63. Drill cores were recovered from the Lomonosov Ridge, presently at 87°N
  64. Sluijs, A.; Schouten, S. (২০০৬)। "Subtropical Arctic Ocean temperatures during the Palaeocene/Eocene thermal maximum" (পিডিএফ): 610–613। ডিওআই:10.1038/nature04668পিএমআইডি 16752441 
  65. Pierre-Louis, Kendra (২০১৯-১২-১০)। "Climate Change Is Ravaging the Arctic, Report Finds"The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-১১ 
  66. Crew, Bec (১৫ ডিসেম্বর ২০১৬)। "The Arctic Is Warming Twice as Fast as The Rest of The Planet"ScienceAlert (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-১১ 
  67. Berge, J.; Renaud, P. E. (২০১৫)। "In the dark: A review of ecosystem processes during the Arctic polar night": 258–271। ডিওআই:10.1016/j.pocean.2015.08.005অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  68. Leu, E.; Søreide, J. E. (২০১১)। "Consequences of changing sea-ice cover for primary and secondary producers in the European Arctic shelf seas: Timing, quantity, and quality": 18–32। ডিওআই:10.1016/j.pocean.2011.02.004 
  69. Kosobokova, K. N.; Hopcroft, R. R. (২০১১)। "Patterns of zooplankton diversity through the depths of the Arctic's central basins": 29–50। ডিওআই:10.1007/s12526-010-0057-9 
  70. Dalpadado, P.; Ingvaldsen, R. B. (২০১২)। "Climate effects on Barents Sea ecosystem dynamics": 1303–1316। ডিওআই:10.1093/icesjms/fss063অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  71. Buixadé Farré, Albert; Stephenson, Scott R. (১৬ অক্টোবর ২০১৪)। "Commercial Arctic shipping through the Northeast Passage: Routes, resources, governance, technology, and infrastructure": 298–324। ডিওআই:10.1080/1088937X.2014.965769অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  72. Reynolds, Paul (25 October 2005) The Arctic's New Gold Rush ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে. BBC.
  73. Yenikeyeff, Shamil and Krysiek, Timothy Fenton (August 2007) The Battle for the Next Energy Frontier: The Russian Polar Expedition and the Future of Arctic Hydrocarbons ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ এপ্রিল ২০১২ তারিখে. Oxford Institute for Energy Studies.
  74. "Erreur HTTP 404 - Non trouvé"ec.gc.ca 
  75. Earth – melting in the heat? ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ জুন ২০১৮ তারিখে Richard Black, 7 October 2005. BBC News. Retrieved 7 December 2006.
  76. Russia the next climate recalcitrant Peter Wilson, 17 November 2008, The Australian. Retrieved 3 November 2016.
  77. "When will the Arctic lose its sea ice?"। National Snow & Ice Data Center। মে ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০১৬ 
  78. "Has the Arctic Ocean always had ice in summer?"। National Snow & Ice Data Center। ফেব্রুয়ারি ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৬ 
  79. Lauren Morello (৫ মার্চ ২০১৩)। "Warmer Arctic with Less Ice Increases Storm Surge"Climate Central। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০১৩ 
  80. Brackett, Ron (১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)। "Arctic Russian Town Declares Polar Bear Invasion Emergency After 52 Wander In"weather.com। The Weather Company। ৬ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৯ 
  81. Abellan Matamoros, Cristina (১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)। "Watch: Polar bear in Russian archipelago peeks inside a house"। euronews.com। Euronews। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  82. Stambaugh, Alex (১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)। "Polar bear invasion: Parents scared to send children to school in remote Russian archipelago"। edition.cnn.com। CNN। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  83. Connor, Steve (২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৮)। "Exclusive: The methane time bomb"The Independent। ৩ এপ্রিল ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০০৯ 
  84. Mrasek, Volker (১৭ এপ্রিল ২০০৮)। "A Storehouse of Greenhouse Gases Is Opening in Siberia"Spiegel Online। ১ মে ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মে ২০০৯ 
  85. 400 million cubic meters of radioactive waste threaten the Arctic area ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে Thomas Nilsen, Bellona, 24 August 2001. Retrieved 7 December 2006.
  86. Plutonium in the Russian Arctic, or How We Learned to Love the Bomb ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে Bradley Moran, John N. Smith. Retrieved 7 December 2006.
  87. "A Top-Secret US Military Base Will Melt Out of the Greenland Ice Sheet"VICE Magazine। ৯ মার্চ ২০১৯। 
  88. "Radioactive contamination from Fukushima found as far north as Alaska's Bering Strait"The Straits Times। ২৮ মার্চ ২০১৯। 
  89. "Arctic deal bans North Pole fishing"BBC News। ১৬ জুলাই ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১৫ 
  90. Rosen, Yereth (১৬ জুলাই ২০১৫)। "5 nations sign declaration to protect Arctic 'donut hole' from unregulated fishing"। Alaska Dispatch News। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১৫ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

সকল স্থানাঙ্কের মানচিত্র: ওপেনস্ট্রীটম্যাপ 
এই হিসেবে স্থানাঙ্ক ডাউনলোড করুন: KML · GPX

স্থানাঙ্ক: ৯০° উত্তর ০° পূর্ব / ৯০° উত্তর ০° পূর্ব / 90; 0