আইজাক রবিন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আইজাক রবিন
ইসরায়েলের ৫ম ও ১০ম প্রধানমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৩ জুলাই, ১৯৯২ – ৪ নভেম্বর, ১৯৯৫
রাষ্ট্রপতিচেইম হারজগ
এজার ওয়েজম্যান
পূর্বসূরীআইজাক শামির
উত্তরসূরীশিমন পেরেজ
কাজের মেয়াদ
৩ জুন, ১৯৭৪ – ২২ এপ্রিল, ১৯৭৭
রাষ্ট্রপতিএফরাইম কাতজির
পূর্বসূরীগোল্ডা মেয়ার
উত্তরসূরীশিমন পেরেজ (ভারপ্রাপ্ত)
১০ম প্রতিরক্ষামন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
১৩ জুলাই, ১৯৯২ – ৪ নভেম্বর, ১৯৯৫
প্রধানমন্ত্রীস্বয়ং
পূর্বসূরীমোশে অ্যারেন্স
উত্তরসূরীশিমন পেরেজ
কাজের মেয়াদ
১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৪ – ১৫ মার্চ, ১৯৯০
প্রধানমন্ত্রীশিমন পেরেজ
আইজাক শামির
পূর্বসূরীমোশে অ্যারেন্স
উত্তরসূরীমোশে অ্যারেন্স
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম(১৯২২-০৩-০১)১ মার্চ ১৯২২
জেরুসালেম, মেন্ডেটরি প্যালেস্টাইন
মৃত্যু৪ নভেম্বর ১৯৯৫(1995-11-04) (বয়স ৭৩)
তেল আভিভ, ইসরায়েল
জাতীয়তাইসরায়েলী
রাজনৈতিক দলঅ্যালাইনমেন্ট, লেবার পার্টি
দাম্পত্য সঙ্গীলিহ রবিন
সন্তানডালিয়া রবিন-পেলোসফ
যুবাল রবিন
জীবিকাসামরিক কর্মকর্তা
স্বাক্ষর
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্য ইসরায়েল
শাখাহাগানাহ
ইসরায়েলী প্রতিরক্ষা বাহিনী
কাজের মেয়াদ১৯৪১-১৯৬৭
পদলেফট্যানেন্ট জেনারেল
যুদ্ধসিরিয়া-লেবানন প্রচারণা
১৯৪৮ আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধ
ছয়দিনের যুদ্ধ

আইজাক রবিন (হিব্রু ভাষায়: יצחק רבין‎; IPA: [jitsˈχak ʁaˈbin] (শুনুন); জন্ম: ১ মার্চ, ১৯২২ - মৃত্যু: ৪ নভেম্বর, ১৯৯৫) মেন্ডেটরি ফিলিস্তিনের জেরুসালেমে জন্মগ্রহণকারী বিশিষ্ট ইসরায়েলী রাজনীতিবিদ ও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দুই মেয়াদে ইসরায়েলের নেতৃত্ব দেন। বিদ্যালয় জীবনে তিনি কৃষি বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। ভাল ছাত্র হিসেবেও তিনি সুনাম কুড়িয়েছেন। ইসরায়েলে প্রথম জন্মগ্রহণকারী প্রধানমন্ত্রী তিনি। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়ার পথিকৃৎ হিসেবে তিনি চিত্রিত হয়ে আছেন।

নভেম্বর, ১৯৯৫ সালে ইসরায়েলের কট্টর ইহুদি ধর্মাবলম্বী ও শান্তি প্রস্তাবের বিরোধী ইগাল আমির কর্তৃক তিনি নিহত হন। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিহত হন ও লেভি ইশকোলের পর দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে মৃত্যুমুখে পতিত হন।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

মায়ের সাথে শিশু রবিন

১ মার্চ, ১৯২২ তারিখে বাধ্যতামূলক ফিলিস্তিনের জেরুসালেমের শারে জেদেক মেডিক্যাল সেন্টারে তার জন্ম। ইউরোপ থেকে তৃতীয় পর্যায়ে ফিলিস্তিনে অভিবাসিত নেহেমিয়া ও রোজা দম্পতির সন্তান তিনি। তার বাবা নেহেমিয়া রুবিতজভ ইউক্রেনের সিদরোভিচি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[১] শৈশবেই বাবার মৃত্যুর ফলে পরিবারকে সহযোগিতার জন্য তাকে কাজে নামতে হয়। ১৮ বছর বয়সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান ও পোল জিও পার্টিতে যোগ দেন। এ সময় তিনি নাম পরিবর্তন করে রবিন রাখেন।

তেল আভিভে তিনি বড় হন। ১৯২৮ সালে তেল আভিভ বেইত হিনাখ লেয়ালদেই অভদিমে ভর্তি হন ও ১৯৩৫ সালে পড়াশোনা শেষ করেন। ছাত্রদেরকে কৃষিশিক্ষার পাশাপাশি ইহুদিধর্ম বিষয়েও শিক্ষা প্রদান করা হতো।[২] বিদ্যালয়ে তিনি খুব ভাল নম্বর তোলেন। কিন্তু ঘরকুনো থাকায় খুব কম ব্যক্তিই তার প্রখর বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে অবগত ছিলেন।[৩]

১৯৩৭ সালে দুই বছর মেয়াদে কাদুরি এগ্রিকালচারাল হাই স্কুলে ভর্তি হন। কৃষি সম্পৃক্ত বিষয়গুলোতে আশানুরূপ নম্বর পান কিন্তু ব্রিটিশ বিরোধীতায় ইংরেজি ভাষাকে অপছন্দ করতেন তিনি।[৪][৫] শুরুতে কৃষি প্রকৌশলী হবার চিন্তা-ভাবনা থাকলেও ১৯৩৮ সালে আরব উত্থানে সামরিক বিষয়ে তার আগ্রহ জন্মে। বিদ্যালয় জীবন শেষ করে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি নিয়ে কৃষি প্রকৌশল বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য বার্কলে চলে যান।[৬] কিন্তু, ফিলিস্তিনে বসবাস করে যুদ্ধ করার দিকেই তার নজর ছিল।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

দীর্ঘ ২৭ বছর সৈনিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিশোর বয়সে পালমাখে যোগ দেন ও ইসরায়েলের স্বাধীনতার যুদ্ধে প্রধান হন। ১৯৪৮-এর শেষ দিকে নবগঠিত ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগ দেন ও উদীয়মান কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫০-এর দশকে আইডিএফের প্রশিক্ষণের রূপরেখা বাস্তবায়নে সহায়তা করেন। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৩ মেয়াদে আইডিএফের পরিচালক ছিলেন। ১৯৬৪ সালে চিফ অব জেনারেল স্টাফ হিসেবে মনোনীত হন ও ১৯৬৭ সালে ছয়দিনের যুদ্ধ বিজয়ে নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের দূত হিসেবে কাজ করেন। এ সময়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের মধ্যকার সম্পর্কের ভিত মজবুত আকার ধারণ করে।

গোল্ডা মেয়ারের পদত্যাগের পর ১৯৭৪ সালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হন। প্রথম মেয়াদে সিনাই অন্তর্বতী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ও এনতেবে এলাকা অবরোধের আদেশ দেন। আর্থিক কেলেঙ্কারীর কারণে ১৯৭৭ সালে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ১৯৮০-এর দশকের অধিকাংশ সময়ই তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। এ সময়েই প্রথম ইন্তিফাদা’র সূত্রপাত ঘটে।

১৯৯২ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুণঃনির্বাচিত হন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়ার সূত্রপাত ঘটান। ফিলিস্তিনী নেতৃবৃন্দের সাথে অসলো চুক্তিসহ বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এছাড়াও, ১৯৯৪ সালে জর্দানের সাথেও শান্তি চুক্তি করেন।[৭]

মার্চ, ১৯৭৪ সালে গোল্ডা মেয়ারের স্বল্পকালীন সময়ের সরকারের পক্ষে শ্রমমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হন।[৮] দূত হিসেবে কর্মরত অবস্থায় রবিনের সাথে মেনাখেম এম. স্নিয়ারসনের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে।[৯]

শান্তি চুক্তি[সম্পাদনা]

অসলো চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বে রবিন পিএলও চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাতের কাছ থেকে সন্ত্রাস বন্ধ ও ইসরায়েলকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতিপত্র পান। একই দিন ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৩ তারিখে পিএলওকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতির বিষয়ে আরাফাতকে এক চিঠিতে জানান।[১০]

চুক্তিতে স্বাক্ষরের পর ঐতিহাসিক করমর্দনকালে আরাফাতকে রবিন বলেন,[১১]

ইসরায়েলীদের পক্ষে ঘোষণা করছি যে, আমরা একে-অপরের বিপক্ষে যুদ্ধ করেছি। ফিলিস্তিনীগণ, আমরা আপনাদেরকে উচ্চস্বরে ও স্পষ্টভাষায় বলছি যে, যথেষ্ট রক্ত ঝরেছে ও চোখের জল পড়েছে ... যথেষ্ট হয়েছে!

১৯৯৪ সালে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শিমন পেরেজ ও ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাতের সাথে যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।[১২][১৩]

দেহাবসান[সম্পাদনা]

এ চুক্তির ফলে ইসরায়েলীরা দ্বিধা-বিভক্ত হয়। কেউ রবিনকে বীর আবার কেউ বিশ্বাসঘাতকরূপে চিহ্নিত করেন। অসলো শান্তি চুক্তির ফলে তেল আভিভের কিংস অব ইসরায়েল স্কয়ারে (বর্তমানে - রবিন স্কয়ার) গণ শোভাযাত্রায় তিনি উপস্থিত ছিলেন। শোভাযাত্রা শেষে সিটি হলে থাকা গাড়িতে উঠার সময় অর্ধ-স্বয়ংক্রিয় পিস্তলে আমির তাকে তিনটি গুলি করেন। দু’টি গুলি রবিনকে ও একটি তাঁর দেহরক্ষীকে অল্প আঘাত করে। কাছাকাছি ইচিলভ হাসপাতালে নেয়া হলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও ফুসফুসের জখমে তাঁর দেহাবসান ঘটে। মন্ত্রীসভার জরুরি বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিমন পেরেজকে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।[১৪]

৬ নভেম্বর, ১৯৯৫ তারিখে মাউন্ট হার্জলে তাঁকে সমাহিত করা হয়। মার্কিন রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটন, অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী পল কিটিং, মিশরীয় রাষ্ট্রপতি হোসনি মুবারক, জর্দানের বাদশাহ হুসেনসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। ক্লিনটন হিব্রু ভাষায় দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, শালম, হাভের (হিব্রু ভাষায়: שלום חבר‎, বিদায়, বন্ধু)।[১৫][১৬]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

১৯৪৮ সালে সংঘটিত আরব-ইসরায়েল যুদ্ধকালীন সময়ে লেহ শ্যুলবার্গের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদন্ধ হন। ঐ সময়ে পালমাখ সংবাদপত্রে লেহ রবিন কাজ করতেন। এ দম্পতির সংসারে ডালিয়া ও ওভাল নাম্নী দুই সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। রবিন নাস্তিক ছিলেন। মার্কিন কূটনীতিবিদ ডেনিস রসের মতে, ইসরায়েলের সর্বাপেক্ষা ধর্মনিরপেক্ষবাদী ইহুদি হিসেবে তাঁর সাথে পরিচিত হয়েছেন।[১৭]

রবিনের মৃত্যুর পর তাঁর কন্যা ডালিয়া রবিন-পেলোসফ রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ও ১৯৯৯ সালে সেন্টার পার্টির সদস্যরূপে নেসেট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে ডালিয়া উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।[১৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. izrus.co.il (১৮ মার্চ ২০১০)। "Доказано украинское происхождение Ицхака Рабина | Еврейские новости мира и Украины | ВЕК – Всеукраинский еврейский конгресс"। Jewish.kiev.ua। ২৬ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০১১ 
  2. Slater, p. 28–29.
  3. Slater, p. 31.
  4. Kurzman, Dan (১৯৯৮)। Soldier of Peace: The Life of Yitzhak Rabin, 1922-1995 (1. সংস্করণ)। New York, NY: HarperCollins। পৃষ্ঠা 75আইএসবিএন 0060186844। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  5. Slater, p. 41.
  6. Kurzman, p. 81.
  7. Dicus, Howard (১৯৯৪)। "1994 Year in Review: Treaty between Israel and Jordan and Peace in Ireland"। United Press International। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ 
  8. Jewish Virtual Library Yitzhak Rabin
  9. ইউটিউবে Yitchok Rabin, Prime Minister of Israel, recalls his visit to Menachem Schneerson in 1972.
  10. Gelvin, James L (২০০৭)। "Chapter 10: Coming full circle – Oslo and its aftermath"The Israel-Palestine conflict: One Hundred Years of War। Cambridge & New York: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 233। আইএসবিএন 978-0521716529। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ 
  11. Dicus, Howard (১৯৯৩)। "1993 Year in Review: Israeli-Palestinian Peace Treaty"। United Press International। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ 
  12. "Yitzhak Rabin - Biographical"। Nobelprize.org। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০১১ 
  13. Nobel Prize.org 1994 Nobel Prize Laureates
  14. BBC On This Day
  15. The Assassination and Funeral of Yitzhak Rabin CNN
  16. "Shalom haver"। ২৪ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৫ 
  17. Dennis Ross. August 2004. The Missing Peace: The Inside Story of the Fight for Middle East Peace. Farrar, Straus, and Giroux. Page 91.
  18. "Deputy Defense Minister Dalia Rabin-Pelossof"IMRA। ১২ জুন ২০০১। সংগ্রহের তারিখ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ 

গ্রন্থপঞ্জী[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

পার্টির রাজনৈতিক কার্যালয়
পূর্বসূরী
গোল্ডা মেয়ার
অ্যালাইনমেন্টের নেতা
১৯৭৩-১৯৭৭
উত্তরসূরী
শিমন পেরেজ
পূর্বসূরী
শিমন পেরেজ
লেবার পার্টি নেতা
১৯৯২-১৯৯৫
উত্তরসূরী
শিমন পেরেজ
পুরস্কার
পূর্বসূরী
কলিন পাওয়েল
রোনাল্ড রেগান ফ্রিডম পুরস্কার
১৯৯৪
উত্তরসূরী
বাদশাহ প্রথম হোসেন