শান্তিপুর

স্থানাঙ্ক: ২৩°১৫′ উত্তর ৮৮°২৬′ পূর্ব / ২৩.২৫° উত্তর ৮৮.৪৩° পূর্ব / 23.25; 88.43
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(Shantipur থেকে পুনর্নির্দেশিত)
শান্তিপুর
নগর
শান্তিপুর পশ্চিমবঙ্গ-এ অবস্থিত
শান্তিপুর
শান্তিপুর
পশ্চিমবঙ্গে শান্তিপুরের অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৩°১৫′ উত্তর ৮৮°২৬′ পূর্ব / ২৩.২৫° উত্তর ৮৮.৪৩° পূর্ব / 23.25; 88.43
দেশ ভারত
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
জেলানদিয়া
উচ্চতা১৫ মিটার (৪৯ ফুট)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট২,৮৮,৭১৮
ভাষা
 • দাপ্তরিকবাংলা, ইংরেজি
সময় অঞ্চলভাঃপ্রঃসঃ (ইউটিসি+5:30)
পিন৭৪১৪০৪
কলিং কোড০৩৪৭২
লোকসভা নির্বাচনী ক্ষেত্ররানাঘাট
বিধানসভা নির্বাচনী ক্ষেত্রশান্তিপুর
অদ্বৈত অঙ্গন, শান্তিপুর
পাঁচপোতা জামা মসজিদ, শান্তিপুর
সত্যচরণ স্মৃতি নিম্ন বুনিয়াদী বিদ্যালয়, শান্তিপুর

শান্তিপুর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদিয়া জেলার একটি শহর ও পৌরসভা এলাকা। শান্তিপুর মূলত তাঁতশিল্প-তন্তুবায়, মেয়েদের রূপচর্চা-কেশবিন্যাস এবং বৈষ্ণবাচার্য অদ্বৈত মহাপ্রভু তথা সংস্কৃত বিদ্বদসমাজের জন্য বিখ্যাত ছিল। বর্তমানেও শিক্ষা সংস্কৃতির পীঠস্থান।[১]

ইতিহাস ও সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

নদীয়ার শান্তিপুর একটি সুপ্রাচীন ও ঐতিহাসিক গঙ্গা (সুরধনী) তীরবর্তী জনপদ। প্রায় হাজার বছরের প্রাচীন এই জনপদ বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতির পীঠস্থান ও বিখ্যাত তাঁত শিল্পের সূতিকাগার। মহাপুরুষ চৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষাগুরু অদ্বৈত আচার্যর সাধনপীঠ শান্তিপুর স্টেশনের নিকটবর্তী বাবলা গ্রামে বলে কেউ কেউ মনে করেন ।যদিও অদ্বৈত মহাপ্রভুর আদি বাড়ি শান্তিপুর শহরের দক্ষিণে গঙ্গা গর্ভে বিলীন বলে গবেষকদের অভিমত।তার প্রকৃত পৈতৃক বাসভূমি ছিল বর্তমান বাংলাদেশের সিলেট জেলা তে। চৈতন্যদেব, নিত্যানন্দ মহাপ্রভু ও অদ্বৈতাচার্যের মিলন ঘটেছিল এই শান্তিপুরে। সন্ন্যাস গ্রহণের পর এই শান্তিপুরেই চৈতন্যের সঙ্গে দেখা হয়েছিল শচীমায়ের। অদ্বৈতাচার্যের বংশেই জন্ম আরেক বৈষ্ণবসাধক বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর। তারও স্মৃতিমন্দির রয়েছে শান্তিপুরে। শান্তিপুরের কাছে হরিপুর গ্রামে কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের পৈত্রিক বাসভূমি এবং শান্তিপুর মিউনিসিপাল স্কুলের পাশে কবি করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়ফুলিয়ায় আদি কবি রামায়ণ রচয়িতা কৃত্তিবাস ওঝার জন্মস্থান। অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতাব্দীর কবিগানের একজন বাধনদার সাতু রায় ও পণ্ডিত হরিমোহন প্রামাণিক এর বাড়িও শান্তিপুর। এছাড়া শান্তিপুরের রাসযাত্রা জগৎ বিখ্যাত এবং দোলযাত্রা, সূত্রাগড় জগদ্ধাত্রী পূজা, হরিপুরের রামনবমী ও অদ্বৈত প্রভুর জন্মতিথি মাঘি সপ্তমী বা মাকড়ি সপ্তমী, বৈশাখ মাসের শেষে রবিবার মুসলিম সম্প্রদায়ের গাজী মিয়ার বিয়ে এখানকার উল্লেখযোগ্য উৎসব ও পরব।[২] বড়গোস্বামী বাড়ি সহ বিভিন্ন গোস্বামী বাড়ি ও গোকুলচাঁদের আটচালা মন্দির এবং অদ্বৈত পৌত্র মথুরেশ গোস্বামী প্রতিষ্ঠিত বড় গোস্বামী বাড়িতে হাজার বছরের প্রাচীন কষ্টি পাথরের রাধারমণ বিগ্রহ (শান্তিপুরের বিখ্যাত রাস উৎসব এই রাধারমন বিগ্রহকে কেন্দ্র করেই সূচনা হয়) এবং অদ্বৈত মহাপ্রভু আনীত নেপালের গণ্ডকী নদী থেকে প্রাপ্ত নারায়ণ শিলা এবং শান্তিপুরের একমাত্র চৈতন্যদেবের ষড়ভূজ মূর্তি বর্তমান।

তন্ত্রসিদ্ধ কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের বংশধর শান্তিপুরে দক্ষিণাকালীমূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন; যা একটি দালান-মন্দিরে দেবী আগমেশ্বরী নামে অধিষ্ঠিত। পটেশ্বরীতলায় আছেন দেবী পটেশ্বরী (চার-পাঁচশো বছর আগে তান্ত্রিক সাধকরা রাসপূর্ণিমাতে পঞ্চমুণ্ডির আসন স্থাপন করে তার উপর বৃহৎ বৃহৎ পটে আঁকা দক্ষিণাকালীমূর্তি 'পটেশ্বরী'র পূজা করতেন; পরে বারোয়ারি পূজা প্রবর্তিত হলে রাসোৎসবে পটেশ্বরী কালীমূর্তির শোভাযাত্রা শুরু হয়)। এছাড়া এখানে মহিষখাগী, শ্যামাচাঁদুনী, ঘাটচাঁদুনী, বিল্বেশ্বরী, সিদ্ধেশ্বরী প্রভৃতি লোকায়ত কালীমূর্তি অধিষ্ঠিতা আছেন।

মতিগঞ্জ-বেজপাড়ায় অষ্টাদশ শতকের গোড়ার দিকে প্রতিষ্ঠিত নিপুণ হাতের পোড়ামাটির কারুকাজযুক্ত জলেশ্বর শিবমন্দির বিদ্যমান। বউবাজার পাড়ায় আছে দক্ষিণাকালীর পঞ্চরত্ন মন্দির

শ্যামচাঁদ পাড়ায় ১৭২৬ খ্রিষ্টাব্দে তন্তুবায় সম্প্রদায়ের রামগোপাল খাঁ চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত কোষ্ঠীপাথরের কৃষ্ণমূর্তি শ্যামচাঁদের আটচালা মন্দির আছে। মন্দিরটি তৈরী করতে সেসময় ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল।

এছাড়া, শান্তিপুরে ১৭০৩-০৪ খ্রিষ্টাব্দে (১১১৫ হিজরী) তখনকার স্থানীয় ফৌজদার গাজী মহম্মদ ইয়ার খাঁ নির্মিত 'তোপখানা মসজিদ' বিখ্যাত। এর গম্বুজ ও মিনার এখনো অক্ষত আছে।

দানবীর বলে খ্যাত শরিয়ৎসাহেব নতুনহাট এলাকায় ১৭৯৬ খ্রিষ্টাব্দে একটি মসজিদ ও একটি অতিথিশালা নির্মাণ করেন। ডাকঘর-পাড়ায় দুশো বছরেরও প্রাচীন একটি মসজিদ এবং তার পাশে ফকির তোপসেনিয়ার সমাধি আছে।[১]

ভৌগোলিক অবস্থান[সম্পাদনা]

শহরটির অবস্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২৩°১৫′ উত্তর ৮৮°২৬′ পূর্ব / ২৩.২৫° উত্তর ৮৮.৪৩° পূর্ব / 23.25; 88.43[৩] সমুদ্র সমতল হতে এর গড় উচ্চতা হল ১৫ মিটার (৪৯ ফুট)।

জনসংখ্যা[সম্পাদনা]

শান্তিপুর রেল স্টেশন

ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে শান্তিপুর শহরের জনসংখ্যা হল ১৩৮,১৯৫ জন।[৪] এর মধ্যে পুরুষ ৫১% এবং নারী ৪৯%।

এখানে সাক্ষরতার হার ৬৪%। পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৬৯% এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৫৮%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে শান্তিপুর এর সাক্ষরতার হার বেশি।

এই শহরের জনসংখ্যার ১২% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।

ধর্মবিশ্বাস[সম্পাদনা]

শান্তিপুরের প্রায় ৭৯.১৫ % মানুষ হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী। এখানে ইসলামে ২০.২৫ %, খ্রিস্ট ধর্মে ০.০৪ %, শিখধর্মে ০.০২ %, বৌদ্ধ ধর্মে ০.০১ %, জৈন ধর্মে ০.০১ % মানুষ বিশ্বাসী। এছাড়া অন্যান্য ধর্মে ০.৪২ % মানুষ বিশ্বাসী ও বিবৃতি নেই এমন মানুষ ০.১১ %।

শান্তিপুরের ধর্মবিশ্বাস (২০১১)[৫]

  হিন্দুধর্ম (৭৯.১৫%)
  ইসলাম (২০.২৫%)
  শিখধর্ম (০.০২%)
  জৈন ধর্ম (০.০১%)
  অন্যান্য (০.৪২%)
  বিবৃতি নেই (০.১১%)

যোগাযোগ[সম্পাদনা]

শান্তিপুর শহর বাস ও রেল যোগাযোগের মাধ্যমে রাজ্য রাজধানী কলকাতা ও জেলা সদর কৃষ্ণনগরের সাথে যুক্ত। কলকাতা হতে শান্তিপুরের ওপর দিয়ে ৩৪ নং জাতীয় সড়ক অতিক্রম করেছে। রেলপথে শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশন হতে সরাসরি শান্তিপুর বিদ্যুৎচালিত ট্রেনের মাধ্যমে সংযুক্ত। অতীতে শান্তিপুর - কৃষ্ণনগর - নবদ্বীপ ঘাট ন্যারো গেজ রেলপথ ছিল। অধুনা তা ব্রড গেজে রূপান্তরিত হয়েছে। ভাগীরথী নদীর অপর পাড়ে বর্ধমান জেলাকালনাহুগলী জেলাস্থিত গুপ্তিপাড়ার সাথে শান্তিপুর নৌকা পথে যুক্ত।[৬]

বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ[সম্পাদনা]

অদ্বৈত আচার্য, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, স্যার আজিজুল হক,কবি মোজাম্মেল হক, সুধাময় প্রামানিক,কৃত্তিবাস ওঝা, কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত,কবি করুণা নিধান বন্দ্যোপাধ্যায়,অরুণ চন্দ্র গুহ,নির্মলেন্দু লাহিড়ি, পণ্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র, কৌশিক চ্যাটার্জি, শ্রীঞ্জয় মুখার্জি, অজয় দে,, কবি দামোদর মুখার্জি,মতি রায়

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. ঘোষ, বিনয়, "পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি", তৃতীয় খন্ড, প্রথম সংস্করণ, প্রকাশ ভবন, পৃষ্ঠা: ১০৬-১০৯
  2. "শান্তিনগর"ভিকাসপেডিয়া। ২০১৮-০৬-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৬-১০-১৫ 
  3. "Santipur"Falling Rain Genomics, Inc (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১৫, ২০০৬ 
  4. "ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি" (ইংরেজি ভাষায়)। Archived from the original on ১৬ জুন ২০০৪। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১৫, ২০০৬ 
  5. "Santipur Religion 2011" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১৭ 
  6. "ভুটভুটিতে ফেরি ,পুরসভার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন"EI Samay। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১১-২৪