ফরিদপুর জেলা

স্থানাঙ্ক: ২৩°৩০′০″ উত্তর ৮৯°৪৯′৪৮″ পূর্ব / ২৩.৫০০০০° উত্তর ৮৯.৮৩০০০° পূর্ব / 23.50000; 89.83000
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(Faridpur District থেকে পুনর্নির্দেশিত)
ফরিদপুর জেলা
জেলা
উপরে-বাম থেকে ঘড়ির দিকে: পাতরাইল মসজিদ, গোয়ালন্দ ঘাট, মথুরাপুর দেউল, ফরিদপুর সার্কিট হাউস, সাতৈর মসজিদ।
বাংলাদেশে ফরিদপুর জেলার অবস্থান
বাংলাদেশে ফরিদপুর জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৩°৩০′০″ উত্তর ৮৯°৪৯′৪৮″ পূর্ব / ২৩.৫০০০০° উত্তর ৮৯.৮৩০০০° পূর্ব / 23.50000; 89.83000 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগঢাকা বিভাগ
প্রতিষ্ঠা১৭৮৬; ২৩৭ বছর আগে (1786)
আসন৪টি
সরকার
 • জেলা প্রশাসকজনাব মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার পিএএ
আয়তন
 • মোট২,০৭২.৭২ বর্গকিমি (৮০০.২৮ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০২২)[১]
 • মোট২১,৬২,৮৭৯
 • জনঘনত্ব১,০০০/বর্গকিমি (২,৭০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৭১.৯৯%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৭৮০০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ২৯
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

ফরিদপুর জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত ঢাকা বিভাগের একটি জেলা ও প্রশাসনিক অঞ্চল। ফরিদপুর বাংলাদেশের বাংলাদেশের ১৪ তম বৃহত্তম শহর এবং ১২তম সিটি করপোরেশন (প্রস্তাবিত)। উপজেলার সংখ্যানুসারে ফরিদপুর বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা।[২] ভৌগলিকভাবে পরিপূর্ণ থাকায় এবং নিজস্ব ৫টি মহকুমা পরবর্তীতে জেলা হওয়ায় ফরিদপুর তথা পদ্মা বিভাগ প্রস্তাবিত৷ প্রস্তাবিত পদ্মা বিভাগের সদর-দপ্তর হবে ফরিদপুর জেলা এবং ফরিদপুর সিটি কর্পোরেশন প্রস্তাবিত রয়েছে। ব্রিটিশ আমলের এক ঐতিহ্যবাহী জেলা এটি।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

ভাঙ্গা উপজেলায় অবস্থিত পাথরাইল শাহী মসজিদ।
ষোড়শ শতাব্দীতে পর্তুগিজ ইতিহাসবিদ জোয়াও দে ব্যারোস ফরিদপুরকে ফাতিয়াবাস নামে উল্লেখ করেছিলেন।
মধুখালী উপজেলায় অবস্থিত মথুরাপুর দেউল।

ফরিদপুর শহরটির পুরনো নাম ছিল ফতেহাবাদ। মরা পদ্মা নামে একটি নদীর তীরে এই শহরটির অবস্থান ছিল, যেটি মূল পদ্মা নদী থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে ছিল। পঞ্চদশ শতকের শুরুর দিকে সুলতান জালালউদ্দিন মুহাম্মদ শাহ ফতেহাবাদে একটি টাঁকশাল স্থাপন করেছিলেন। ১৫৩৮ সাল পর্যন্ত ফতেহাবাদ বাংলা সুলতানির টাঁকশাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সম্রাট আকবরের মুঘল সাম্রাজ্যকালে 'আইন-ই-আকবরী'-তে শহরটি 'হাওয়েলি মহল ফতেহাবাদ' নামে উল্লেখিত হয়। পর্তুগিজ মানচিত্রকার জোয়াও দে ব্যারোস একে 'ফাতিয়াবাস' নামে উল্লেখ করেছেন। ভ্যান ডেন ব্রুকের ওলন্দাজ মানচিত্রে একে 'ফাথুর' হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

বাংলা সাহিত্যে এই শহরের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় কবি দৌলত উজির বাহরাম খানের লেখা লায়লি-মজনু উপাখ্যানে। বিখ্যাত মধ্যযুগীয় কবি আলাওল ফরিদপুরেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ছিল ফতেহাবাদ। এটি একটি সু-বিকশিত নগর কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি ছিল। শহরে গুরুত্বপূর্ণ মুঘল সরকারি কর্মকর্তারা, যেমন জেনারেল, বেসামরিক কর্মচারী এবং জায়গিরদারদের বসবাস ছিল। সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে, সতেরো শতকে, স্থানীয় জমিদার সত্রাজিত ও মুকুন্দ মুঘল সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। উনিশ শতকে আজমীর চিশতিয়া তরিকার অনুসারী সুফি সাধক শাহ ফরিদ উদ্দিন মাসুদের সম্মানে শহরটির নামকরণ করা হয় ফরিদপুর। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে হাজী শরীয়তুল্লাহ এবং দুদু মিয়া ফরিদপুরে রক্ষণশীল ফরায়েজি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।

১৭৮৬ সালে ব্রিটিশরা ফরিদপুর জেলা প্রতিষ্ঠা করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ঢাকা বিভাগের অধীনে ছিল ফরিদপুর মহকুমা। ১৮৬৯ সালে ফরিদপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই মহকুমা বর্তমান ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর এবং গোপালগঞ্জ জেলাগুলো (সম্মিলিতভাবে যা বৃহত্তর ফরিদপুর নামে পরিচিত) অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ছিল। ১৯০৫ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ রাজের সময় এটি পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ফরিদপুর ছিল বেঙ্গল প্রোভিন্সিয়াল রেলওয়ে এবং ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের একটি রেল টার্মিনাস যা কলকাতাকে গুরুত্বপূর্ণ গোয়ালন্দ ঘাটের সাথে সংযুক্ত করেছিল। এখান থেকেই জাহাজগুলো তৎকালীন ঔপনিবেশিক আসাম ও বার্মায় চলাচল করত। ব্রিটিশ ফরিদপুর বেশ কয়েকজন উপমহাদেশীয় জাতীয়তাবাদী নেতার জন্মস্থান ছিল, যাদের মধ্যে ছিলেন অম্বিকা চরণ মজুমদার, হুমায়ূন কবির, মৌলভী তমিজউদ্দিন খান, শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ কুমরুল ইসলাম সালেহ উদ্দিন, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং কে.এম ওবায়দুর রহমান। বাংলাদেশের প্রগতিশীল সংস্কৃতি, সাহিত্য ও নাট্যজগতের পথিকৃৎ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষক - নাট্যগুরু নূরুল মোমেন বর্তমান ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার বুরাইচ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। প্রখ্যাত আমেরিকান প্রকৌশলী ফজলুর রহমান খানও এই অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ফরিদপুর তীব্র লড়াইয়ের সাক্ষী হয়। এটি স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশের আঠারোটি মহকুমার একটি ছিল। ১৯৮৪ সালে, রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বিকেন্দ্রীকরণ সংস্কার পুরানো মহকুমাকে পাঁচটি জেলায় বিভক্ত করে। ২০১৫ সালে, বাংলাদেশ সরকার ফরিদপুর বিভাগ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ঘোষণা করে।

রাজনীতি ও স্থানীয় সরকার[সম্পাদনা]

ফরিদপুর জেলায় ৯টি উপজেলা, ৬টি পৌরসভা, ৩৬টি ওয়ার্ড, ১০০টি মহল্লা, ৭৯টি ইউনিয়ন এবং ১,৮৯৯টি গ্রাম রয়েছে। জাতীয় সংসদে জেলার চারটি আসন রয়েছে। ফরিদপুর জেলা পরিষদ স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ স্তর।

উপজেলাগুলোর তালিকা:[সম্পাদনা]

জনপরিসংখ্যান[সম্পাদনা]

ঐতিহাসিক জনসংখ্যা
বছরজন.ব.প্র. ±%
১৯৭৪১১,২০,০৩১—    
১৯৮১১৩,১৪,০০৪+২.৩১%
১৯৯১১৫,০৫,৬৮৬+১.৩৭%
২০০১১৭,৫৬,৪৭০+১.৫৫%
২০১১১,৯১,২২,৯৬৯+২৬.৯৭%
২০২২২১,৬২,৮৭৯−১৭.৯৭%
তথ্যসূত্র:[৩][৪]

২০২২ সালের বাংলাদেশের আদমশুমারি অনুযায়ী, ফরিদপুর জেলায় ৫২৫,৮৭৭ টি পরিবার এবং মোট জনসংখ্যা ২,১৬২,৮৭৯ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১,০৫৪ জন। ফরিদপুর জেলার সাক্ষরতার হার (৭ বছর ও তার বেশি বয়সীদের জন্য) ছিল ৭২.১৩%, যা জাতীয় গড় ৭৪.৮০% এর তুলনায় কম। পুরুষ-মহিলা অনুপাত ছিল প্রতি ১০০০ পুরুষের বিপরীতে ১০৫৯ জন মহিলা। ৪১৫,৬৯২ জন (১৯.২২%) শিশু (১০ বছরের কম বয়সী)। জনসংখ্যার ২৩.৮৩% শহরাঞ্চলে বাস করে। [৩]

ফরিদপুর জেলার ধর্মীয় পরিসংখ্যান (২০২২)[৩]
ধর্ম অনুপাত
ইসলাম
  
৯১.৪৯%
হিন্দু
  
৮.৪৪%
অন্যান্য
  
০.০৭%
বর্তমান ফরিদপুর জেলায় ধর্ম[ক]
ধর্ম জনসংখ্যা (১৯৪১)[৫]:৯৮–৯৯ অনুপাত (১৯৪১) জনসংখ্যা (২০২২)[৬] অনুপাত (২০১১)
ইসলাম ৪৮১,৫৮৩ ৬৯.২৮% ১,৯৭৯,৯০০ ৯১.৪৯%
হিন্দু ২১২,৮২২ ৩০.৬২% ১৮২,৫৪৮ ৮.৪৪%
অন্যান্য [খ] ৭৩৮ ০.১১% ১,৪৩১ ০.০৭%
মোট জনসংখ্যা ৬৯৫,১৪৩ ১০০% ২,১৬২,৮৭৯ ১০০%

ফরিদপুর জেলায় জনসংখ্যার ৯১.৪৯% মুসলিম এবং ৮.৪৪% হিন্দু। ১৯৮১ সালে যেখানে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ১.৯৫ লক্ষ, তা আজ কমে দাঁড়িয়েছে ১.৮ লক্ষেরও কিছু বেশি।

ইতিহাস ও ঐতিহ্য[সম্পাদনা]

ভাষা ও সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

সৃষ্টির পর থেকেই পৃথিবীর সব মানব গোষ্ঠিই তাদের নিজ নিজ কামনা-বাসনা, চাওয়া-পাওয়া, ব্যথা-বেদনা, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বিরাহ প্রকাশ করে আসছে।বিভিন্নভাবে প্রকাশের এই মাধ্যমই হচ্ছে সাহিত্য। যে জাতির ভাসা, সাহিত্যসমৃদ্ধ সে জাতি তত সমৃদ্ধ। আমরা বাঙালী আমাদের অতীত সাহিত্যের ঐতিহ্যরয়েছে। লোক সংস্কৃতি বাংলা সাহিত্যের একটি বিশাল ভান্ডার। ফরিদপুরের নিজস্বসংস্কৃতিও এক্ষেত্রে উল্লেখ করার মত। লোকগীতি, লোকসংগীতি, পল্লীগীতি, বাউলগানের বিখ্যাত মরমী লোক কবি ও চারণ কবিদের লালন ক্ষেত্র এ ফরিদপুরে। এজেলার অনুকুল আবহাওয়া ও পরিবেশ এদের লালন করেছে আর যুগে যুগে উপাদান ওউপকরণ সরবরাহ করে মরমী ও লোক কবিদের সাধনা ক্ষেত্রে অনুপ্রেরনা যুগিয়েছে।পল্লী কবি জসীমউদ্দিন, তাইজদ্দিন ফকির, দেওয়ান মোহন, দরবেশ কেতারদি শাহ, ফকির তীনু শাহ, আজিম শাহ, হাজেরা বিবি, বয়াতি আসাদুজ্জামান, আবদুর রহমানচিশতী, আঃ জালাল বয়াতি, ফকির আব্দুল মজিদ প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশের সংস্কৃতাঙ্গনে ফরিদপুরের লোকগানের উল্লেখযোগ্য ভহমিকা রয়েছে।এর প্রমাণ পাওয়া যায় মুহম্মদ মুনসুর উদ্দিনের ‘হারামনি’বাংলা একাডেমীপ্রকাশি লোক সাহিত্য ও ফোকল্যের সংকলন সমূহ, আশুতোষ ভট্রাচার্যের, বাংলারলোক সাহিত্য, উপেন্দ্রনাথ ভট্রাচার্যের, বাংলার বাউল ও বাউল গান, ডঃ আশরাফসিদ্দিকীর, লোক সাহিত্য, জসীম উদদীনের জারীগান ও মুশিদ গান,প্রভৃতি লোকগবেষনামূলক গ্রন্থে।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব :

·পল্লীকবি জমীস উদদীন

·তাইজদ্দিন ফকির

·দেওয়ান মোহন

·দরবেশ কেতাবদি শহ

·ফকির তীনু শাহ

·আজিম শাহ

·হাজেরা বিবি

·বয়াতি আসাদুজ্জামান

·আবদুর রহমান চিশতী

·আঃ জালাল বয়াতি

·বাউল গুরু মহিন শাহ

·ফকির আব্দুল মজিদ

·কোরবান খান

·ছইজদ্দিন ফকির

·আজাহার মন্ডল

·আব্দুর রাজ্জাক বয়াতি

·বাউল রহমান সাধু

·মেঘু বয়াতি

·ডাঃ হানিফা

·শেখ সাদেক আলী

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানঃ

ক্রমিক নং নাম সংখ্যা
ক্লাব ৪৭৯টি
পাবলিক লাইব্রেরী ০৯টি
যাদু ঘর ০১টি
নাট্যমঞ্চ ০৬টি
নাট্যদল ৩০টি
যাত্রা দল ০৩টি
সাহিত্য সমিতি ২৮টি
মহিলা সংগঠন ৬৬টি
সিনেমা হল ১২টি
১০ কমিউনিটি সেন্টার ১০টি
১১ শিল্পকলা একাডেমী ০১টি
১২ খেলার মাঠ ৭১টি

প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব[সম্পাদনা]

অম্বিকাচরণ মজুমদার (সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ)

আম্বিকাচরণ মজুমদার ১৮৫১ সালে ৬ জানুয়ারি বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় জম্মগ্রহণ করেন । তিনি ১৮৫৭ সালে জেনালের এসেম্বলিজ ইন্সিষ্টিটিউট থেকে ইংরেজী সাহিত্যে এম.এ. পাশ করেন । পরে বি এল পাশ করে ফরিদপুর বারে আইন ব্যবসায় যোগদান করেন। কংগ্রেসের রাজনীতিতে তিনি ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আম্বিকাচরণ মজুমদারের সভাপতিত্বে ফরিদপুরে ১৯০৫ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। আম্বিকাচরণ মজুমদারের নেতৃত্বে ফরিদপুরের উকিল ও মোক্তারগণ স্বদেশী আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। জেলার রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । আম্বিকাচরণ মজুমদারই হচ্ছেন রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি কংগ্রেসের ৩১ তম সভাপতি ছিলেন । ১৯২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর কংগ্রেসের এই প্রখ্যাত নেতা মৃত্যুবরণ করেন।

হাজী শরিয়তুল্লাহ

শরীয়তুল্লাহর জন্ম তৎকালীন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এর শাসনাধীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির ফরিদপুর জেলার চর শামাইল গ্রামের এক দরিদ্র তালুকদার পরিবারে। ছেলেবেলায় তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে আসেন কলকাতায়। তিনি তার গুরু মওলানা বাশারত আলীর সাথে ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দে মক্কায় হজের উদ্দেশ্যে গমন করেন, এবং ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে সেখান থেকে দেশে ফিরে আসেন। তিনি আরবি ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন।

হাজী শরীয়তুল্লাহ (১৭৮১-১৮৪০) ধর্মীয় সংস্কারক, নীলকর ও সামন্তবাদ বিরোধী নেতা এবং ভারতবর্ষে সংঘটিত ফরায়েজি আন্দোলনের মুখপাত্র । তিনি শুধু ধর্মীয় সংস্কারক ছিলেন না, বরং কৃষক, তাঁতি এং অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষকে শোষণ থেকে মুক্ত করার জন্য সংস্কার আন্দোলন পরিচালনা করেছিলেন।

হুমায়ুন কবির (শিক্ষাবিদ)

হুমায়ুন কবির (২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯০৬-১৮ আগস্ট, ১৯৬৯) একজন ভারতীয় বাঙালি শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, লেখক ও দার্শনিক । তার জন্ম অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুরের, বর্তমান বাংলাদেশের, কোমরপুর গ্রামে। তিনি দুই দফায় ভারতের শিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম দফায় জওহরলাল নেহেরুর মন্ত্রীসভায় এবং এর পরবর্তীকালে আরেকবার। এছাড়া তিনি বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খান বাহাদুর কবিরুদ্দিন আহমদ তার পিতা। নওগাঁ কে.ডি. স্কুল থেকে ইংরেজিতে লেটারসহ প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক (১৯২২) পাস। অতঃপর কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি। এই কলেজ থেকে ইংরেজিতে লেটারসহ প্রথম বিভাগে তৃতীয় স্থান অধিকার করে আই. এ. (১৯২৪), ইংরেজিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে বি.এ. অনার্স (১৯২৬) এবং ইংরেজিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এম. এ. (১৯২৮) ডিগ্রি লাভ। সরকারি বৃত্তি পেয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য ইংল্যান্ড গমন (১৯২৮)। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একসেটর কলেজে ভর্তি। অক্সফোর্ড ইউনিয়নের সেক্রেটারি নির্বাচিত। অক্সফোর্ড থেকে দর্শন, ইতিহাস ও অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে বি. এ. অনার্স ডিগ্রি লাভ (১৯৩১)

বিচারপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিম

বিচারপতি মোহাম্মদ ইব্রাহিমের জন্ম ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে ১৮৯৪ সালে। তিনি ছিলেন আইনজ্ঞ ও রাজনীতিবিদ। বরিশাল জিলা স্কুল থেকে ১৯১৪ সালে ম্যাট্রিক, ১৯১৬ সালে ঢাকা কলেজ থেকে আইএ ও ১৯১৮ সালে একই কলেজ থেকে ইংরেজিতে বিএ (অনার্স) পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে এমএ কোর্স সমাপ্ত করেন।

১৯২০ সালে ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং ব্রিটিশ সরকার পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বর্জনের জন্য কংগ্রেসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নাগপুর সম্মেলনে যোগদান করেন। এমএ পরীক্ষাও বর্জন করেছিলেন। ১৯২২ সালে ঢাকা ল কলেজ থেকে বিএল পাস করে প্রথমে ফরিদপুর, পরে ঢাকা বারে আইন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। কিছুকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৬ সালে এই পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। দেশে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর প্রথমবারের মতো সামরিক আইন জারি হলে জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক সরকারের প্রথম কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আইনমন্ত্রী নিযুক্ত হন।

তবে সাংবিধানিক প্রশ্নে সরকারের সাথে মতবিরোধ ঘটায় ১৯৬২ সালের এপ্রিলে স্বেচ্ছায় মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যোগ দেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে (২ জানুয়ারি ১৯৬৫) স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে কপের প্রার্থী এবং পাকিস্তানি জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে প্রচারকাজে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন চলাকালে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান অস্ত্র প্রয়োগের ভয় দেখালে তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিশেষ করে ১৯৬২ সালের অগণতান্ত্রিক সংবিধান, আইয়ুব সরকারের স্বৈরাচারী ও জনস্বার্থবিরোধী ভূমিকা এবং পূর্ববাংলার প্রতি বৈষম্যমূলক নীতির তীব্র প্রতিবাদ করেন। তার প্রতিবাদী কণ্ঠ ও বক্তিৃতা-বিবৃতি স্বাধিকার আন্দোলনকারীদের মনে প্রেরণা সৃষ্টি করেছিল। তিনি ১৯৬৬ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। জাতীয় অধ্যাপক সুফিয়া আহমদ তার কন্যা।

পল্লী কবি জসীম উদ্‌দীন

পল্লী কবি জসীম উদ্‌দীন  ১৯০৩ সালে ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার তাম্বুলখানা গ্রামেনানাবাড়ীতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। ঔপনিবেশিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও তিনি বাংলার পল্লী প্রকৃতির রূপমাধুর্য, সহজ সরলমানুষের জীবন ধারণ তাঁর কাব্য সাহিত্যের উপজীব্য হিসেবে নেন। যে মাটি থেকে উথিত তিনি, যে মানুষেরা এই মাটির আদরে লালিত, যারা তথাকথিত ভদ্র লোক সমাজের বিবেচনা থেকে বঞ্চিত ও নাগরিকতা থেকে নির্বাসিত তাদের তিনি আপন করেনিলেন চিরকালেল মত। তাদের নিয়েই তিনি যাপন করলেন তার শিল্প জীবন। বাংলারপ্রধানতঃ পল্লী অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে বিশাল মুসলমান সম্প্রদায়, কৃষি যাদেরপ্রধান উপজীবিকা, তাদের মধ্যেই জসীম উদ্‌দীনের আবির্ভাব। জসীম উদ্‌দীনের বাল্য, কৈশোর ও যৌবনের অনেকটাই কেটেছে এ পল্লীতে, সেখানকার মাঠে-ঘাটে, নদীতীরেবালু চরে সাধারণ মানুষের মধ্যে। জন্মসূত্রে পল্লীর সাথে তাঁর এই নিবিড় সম্পর্কের কারণেই তার সাহিত্য কাব্যে প্রতিফলিত হয়েছে পল্লী প্রকৃতি। তিনি হয়েছেন মাটি ও মানুষের কবি পল্লীকবি। মহান এ কবি ১৪ মার্চ ১৯৭৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ

মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী স্বাধীনতার সূর্য সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ ১৯৪৩ সালের ১লা মে ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার সালামতপুর (রউফ নগর ) গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৩ সনের ০৮ মে তারিখে তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস বাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি চট্রগ্রামের ই.পি.আর-এ ১১ নং উইং এ কর্মরত ছিলেন।যুদ্ধ শুরু হলে তার উইং এ কর্মরত সকল সৈনিক ৮ মে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। ০৮ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে শক্রপক্ষে ২য় কমান্ডে ব্যাটালিয়নের ন্যূনপক্ষে ১টি কোম্পানী লঞ্চ ও স্পীডবোটে করে প্রতিরক্ষা এলাকায় ঢুকে পড়ে এবং অতর্কিতে মুক্তিবাহিনীর লোকদের উপর আক্রমন চালালে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত সকল লোক বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। একমাত্র শহীদ ল্যান্স লায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ নিজের মেশিনগান দিয়ে শক্রর উপর গোলাবর্ষণ অব্যাহত রাখেন, যার ফলে শক্রপক্ষের ২টি লঞ্চ ও ১টি স্পীডবোট পানিতে ডুবে যায় এবং প্রায় ২ প্লাটুন শক্র সৈন্য মারা যায়। হটাৎ করেই শক্রপক্ষের মর্টারের একটি গোলা তার অবস্থানে আঘাত হানলে তিনি শাহাদত বরণ করেন।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব[সম্পাদনা]

দর্শনীয় স্থান[সম্পাদনা]

ভূগোল ও অর্থনীতি[সম্পাদনা]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

আনুষঙ্গিক নিবন্ধ[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; faridpur.gov.bd নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  2. "জেলাগুলোর শ্রেণি হালনাগাদ করেছে সরকার"। বাংলানিউজ২৪। ১৭ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০২০ 
  3. Population and Housing Census 2022 National Report (পিডিএফ)1Bangladesh Bureau of Statistics। নভেম্বর ২০২৩। 
  4. "Bangladesh Population and Housing Census 2011 Zila Report – Faridpur" (পিডিএফ)bbs.gov.bdBangladesh Bureau of Statistics 
  5. "Census of India, 1941 Volume VI Bengal Province" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০২২ 
  6. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; 2022census2 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]


উদ্ধৃতি ত্রুটি: "lower-alpha" নামক গ্রুপের জন্য <ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="lower-alpha"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি