হিংলাজ

স্থানাঙ্ক: ২৫.০°৩০′৫০″ উত্তর ৬৫.০°৩০′৫৫″ পূর্ব / ২৫.৫১৩৮৯° উত্তর ৬৫.৫১৫২৮° পূর্ব / 25.51389; 65.51528
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হিংলাজ
হিংলাজ পাকিস্তান-এ অবস্থিত
হিংলাজ
হিংলাজ
স্থানাঙ্ক: ২৫.০°৩০′৫০″ উত্তর ৬৫.০°৩০′৫৫″ পূর্ব / ২৫.৫১৩৮৯° উত্তর ৬৫.৫১৫২৮° পূর্ব / 25.51389; 65.51528
দেশ পাকিস্তান
প্রদেশবেলুচিস্তান[১]
সময় অঞ্চলপিএসটি (ইউটিসি+৫)

হিংলাজ পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের মাকরান মরুভূমিতে অবস্থিত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান (৫১ সতীপীঠের এক পীঠ)। এখানে অঘোর নদীর তীরে বিখ্যাত হিঙ্গুলা বা হিংলাজ মাতার মন্দির রয়েছে৷ মন্দিরের নামেই গ্রামটির নাম হিংলাজ ৷ বাংলা, হিন্দী, অসমীয়া ও সিন্ধি ভাষায় দেবীর নাম হিংলাজ হলেও মূল সংস্কৃত শব্দটি হল "হিঙ্গুলা"৷ অন্য অর্থে হিঙ্গুল ঐ অঞ্চলে লভ্য এক উদ্ভিজ্জ যৌগ যা আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বিষের ঔষধ বা অ্যান্টিভেনাম হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

স্থান মাহাত্ম্য[সম্পাদনা]

বালুচিস্তানের লাসবেলায় মাকরান উপকূলের কাছে গিরিখাতে থাকা হিংলাজে সতীর ব্রহ্মরন্ধ্র (অথবা সিন্দুর বা হিঙ্গুল চর্চিত অংশ) পতিত হয়েছিল বলে কথিত আছে। তাই হিন্দুদের কাছে হিংলাজ পীঠ খুবই পবিত্র।

ভারতীয় উপমহাদেশে সিন্ধু প্রদেশ, বঙ্গদেশ ও আসামেই মূলত শাক্তদের বসবাস৷ তবে হিংলাজের তীর্থযাত্রীরা আসেন সারা ভারত থেকে৷ তীর্থযাত্রীরা সেকালে যেতেন উটের পিঠে চড়ে৷ যাত্রা শুরু হত করাচী শহরের কাছে হাব নদীর ধারে৷ সঙ্গে থাকত এক মাসের রসদ, যেমন শুকনো খাবার, মরুদস্যুদের প্রতিরোধ করার জন্য অস্ত্র, পানীয় জল ইত্যাদি৷ এছাড়া সঙ্গে থাকত হিংলাজ মাতার প্রসাদের জন্য শুকনো নারকেল, মিছরি, বাতাসা ইত্যাদি৷ এক মাসের অত্যন্ত কঠোর যাত্রার পর শ্রান্ত তীর্থযাত্রীরা পৌঁছতেন হিংলাজে৷ অঘোর নদীতে স্নান সেরে তাঁরা দর্শন করতে যেতেন হিংলাজ মাতাকে৷ এই মন্দির স্থানীয় বালুচ মুসলমানদের কাছেও পরম আদরণীয়৷ তাদের কাছে হিংলাজ যাত্রা "নানী কী হজ" নামে পরিচিত৷ হিংলাজ মাতার ভৈরব ভীমলোচন হলেন কোটেশ্বর মহাদেব, গুজরাতের কচ্ছ জেলার পশ্চিম প্রান্তে যাঁর মন্দির। বাঙালী ঔপন্যাসিক কালিকানন্দ অবধূত-রচিত মরুতীর্থ হিংলাজ এবং হিংলাজের পরে উপন্যাস-দুটিতে হিংলাজ ও কোটেশ্বর তীর্থদ্বয়ের বিস্তৃত ও অনুপুঙ্খ বিবরণ রয়েছে।

হিংলাজের মন্দিরটি একটি গুহার মধ্যে অবস্থিত৷ এটি আসলে দুটি প্রাকৃতিক শিলাময় মুখখণ্ড, এই দুই মুখখণ্ড হিংলাজদেবীর রূপ বলে মানা হয়৷ বর্তমানে এখানে খুব কম পর্যটক আসেন৷ এখানে হিঙ্গোল ন্যাশনাল পার্ক বলে একটি অভয়ারণ্য রয়েছে৷ সেখানে কুমীর সংরক্ষণ করা হয়।

অঞ্চলটি রুক্ষ মরুপ্রান্তর হলেও প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে স্বতন্ত্র, বিশেষতঃ এই স্থানের পাহাড়গুলি আবহবিকারে ক্ষয় পেয়ে এক অকরুণ,রুক্ষ,নির্মম নিসর্গের সৃষ্টি করেছে যা সতী-শিবের বিচ্ছেদ ও শিবের বিরহ ও বৈরাগ্যের আবহকে এক গভীরতর ব্যঞ্জনায় মূর্ত করেছে।

সালফার বা গন্ধক সমৃদ্ধ হওয়ার দরুণ অঞ্চলটি ভৌগোলিক গুরুত্বযুক্ত। এখানে বেশকিছু তপ্ত কাদার কুণ্ড (Mud Volcano) ও গন্ধক যুক্ত উষ্ণ প্রস্রবণের দেখা মেলে। সবচেয়ে বড় কর্দমকু্ণ্ডটি "চন্দ্রকূপ" নামে পরিচিত। পুণ্যার্থী হিংলাজযাত্রীদের কাছে এই কুণ্ড অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রচলিত বিশ্বাস যে হিংলাজ তীর্থের অন্যতম প্রহরী হিসাবে দেবাদিদেব মহাদেব এই তপ্তকুণ্ড চন্দ্রকূপ রূপে এখানে অবস্থান করেন আর হিংলাজ দর্শনের আগে এই চন্দ্রকূপে পূজার্ঘ্য নিবেদন করে তাঁর কাছে সর্বসমক্ষে উচ্চকন্ঠে নিজের যাবতীয় দুষ্কর্ম ও পাপ স্বীকার করে তবে হিংলাজ চত্বরে প্রবেশের অধিকার পাওয়া যায়। লোকশ্রুতি যে পাপ গোপন করলে বা মিথ্যা বললে কুণ্ডের স্ফুটন বন্ধ হয়ে যায় ও কুণ্ড ততক্ষণ শান্ত থাকে যতক্ষণ না অপরাধ স্বীকার করে নেওয়া হয় , তবে এর কোন বাস্তব ভিত্তি নেই।

হিংলাজ মন্দির

হিংলাজ মাতার উদ্দেশ্যে গীত দুটি সংস্কৃত মন্ত্র:

ওঁ হিঙ্গুলে পরমহিঙ্গুলে অমৃতরূপিণি তনুশক্তি শিবে শ্রীহিঙ্গুলায়ৈ স্বাহা

অনুবাদ: যে হিঙ্গুলা দেবী অমৃতস্বরূপিণী এবং অসীম শক্তির অধিকারিণী, যিনি শিব ও সুন্দরে সত্যরূপের প্রতিভূ, তাঁকে নমস্কার জানাই এবং তাঁর কাছে নিজেকে অর্ঘ্যরূপে সমর্পণ করি।

ব্রহ্মরন্ধ্রং হিঙ্গুলায়াং ভৈরবো ভীমলোচনঃ।

কোট্টরী সা মহামায়া ত্রিগুণা যা দিগম্বরী।।

অনুবাদ: মহামায়া, যিনি ত্রিগুণাত্মিকা এবং দিগম্বরী, যাঁর ভৈরব ভীমলোচন এবং যাঁর ব্রহ্মরন্ধ্র হিঙ্গুলাদেশে পতিত হয়েছিল, তিনিই এই গুহার অধিষ্ঠাত্রী দেবী কোট্টরী।

চলচ্চিত্রায়ন[সম্পাদনা]

মায়ের মন্দির দর্শন যাত্রার ভিত্তিতে কালিকানন্দ অবধূত রচিত "মরুতীর্থ হিংলাজ" উপন্যাস অবলম্বনে বিকাশ রায়ের প্রযোজনা ও নির্দেশনায় বাংলা ভাষায় একই নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ১৯৫৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই চলচ্চিত্রটি খুবই জনপ্রিয়তা ও বাণিজ্যিক সাফল্য পায়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]