সালমান খান (শিক্ষক)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সালমান খান
Salman Khan
২০১১ সালের টেড সম্মেলনে সালমান খান
জন্ম১৯৭৬
নিউ অরলিয়ান্স, লুইজিয়ানা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
জাতীয়তামার্কিন
অন্যান্য নামস্যাল, স্যালি খান, এস.এ. খান, স্যাল খান
মাতৃশিক্ষায়তনম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি(BS, MS)
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় (MBA)
পেশাখান একাডেমির নির্বাহী
দাম্পত্য সঙ্গীউমাইমা মারর্ভি[১]
পিতা-মাতাডাঃ ফখরুল আমিন খান (পিতা)
মাসুদা খান (মাতা)

সালমান আমিন খান (জন্ম: ১১ই অক্টোবর ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ) একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন শিক্ষক, গবেষক, উদ্যোক্তা এবং 'খান একাডেমি'র প্রতিষ্ঠাতা। খান একাডেমি একটি উন্মুক্ত অনলাইনভিত্তিক ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এই শিক্ষাবিদ নিজ বাসার ছোট অফিস থেকে যাত্রা শুরু করে, বিস্তৃত ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়সমূহ, বিশেষত গণিত ও বিজ্ঞানের উপর ৬,৫০০ এর অধিক ভিডিও তৈরি করেছেন।[২] ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত, ইউটিউব এ খান একাডেমীর চ্যানেলটি ২,৪১৫,৪০৬ এর অধিক গ্রাহককে আকৃষ্ট করেছে এবং ভিডিও গুলো ৬৯৬ মিলিয়নের অধিক বার দেখা হয়।[৩] ২০১২ সালে মার্কিন পত্রিকা টাইম এর জরিপে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির বার্ষিক তালিকার একটি উল্লেখযোগ্য নাম, খান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা, সালমান আমিন খান।[৪] ফোর্বস ম্যাগাজিন তাদের প্রচ্ছদে জনাব খানকে তুলে ধরে "$১ ট্রিলিয়ন সুযোগ" নামক প্রবন্ধের মাধ্যমে।[৫]

শৈশব[সম্পাদনা]

সালমান খানের দাদাবাড়ি বাংলাদেশের বরিশালে। তার বাবা ডা. ফখরুল আমিন খান চিকিৎসক ছিলেন। তার দাদা আব্দুল ওয়াহাব খান ছিলেন মুসলিম লীগের নেতা এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার (১৯৫৫-৫৮)। সালমানের বাবা অভিবাসী হয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেই লুইজিয়ানার নিউ অরলিন্স শহরে সালমানের জন্ম (১৯৭৬) এবং বেড়ে ওঠা। ১৯৯১ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সেই বাবাকে হারান।[৬][৭]

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

সালমান খান লুইজিয়ানার মেটাইরি শহরে গ্রেস কিং হাই স্কুল নামের সরকারি বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। সেখানে তার অনুভূতি ছিল এরকম "কয়েকজন সহপাঠী ছিল সদ্য কারামুক্ত আর বাকিরা শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য তৈরী হচ্ছিল"।[৮] এভাবে কম বয়সেই তিনি অন্যদের শিখতে সাহায্য করতে শিখেন। সালমান ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে গণিত এবং তড়িৎ প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞান—এ দুই বিষয়ের ওপর স্নাতক করেন।[৯] একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞান এর ওপর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন সালমান। অতঃপর এমবিএ করেন হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে।[৬][৭][১০][১১] সালমান তার স্নাতকের শেষ বছরে ক্লাস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।[১২]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

২০০২ সালের গ্রীষ্মকালে সালমান খান পার্ক নামের প্রতিষ্ঠানে নবীশ হিসেবে কাজ করেন। এরপর ২০০৩ হতে ২০০৯ সাল পর্যন্ত হেজ ফান্ড নামের প্রতিষ্ঠানে পুঁজি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে গবেষণার কাজ করেন।[১৩][১৪][১৫]

খান একাডেমি[সম্পাদনা]

খান একাডেমী (ইংরেজি:Khan Academy) একটি মার্কিন অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।[১৬] ২০০৬ সালে সালমান খান এটি প্রতিষ্ঠা করেন।[১৭]"providing a high quality education to anyone, anywhere" স্লোগানে এই প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা নিয়ে কাজ করছে। একাডেমির নিজের ওয়েবসাইট ও ইউটিউবের মাধ্যমে ৩১০০ বেশি অনলাইন বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিডিও টিউটোরিয়াল নির্মাণ করে খান একাডেমি।[১৮]

ইউটিউবে সালমান খান একাউন্ট তৈরি করেন ২০০৬ সালের ১৬ই নভেম্বর। খান একাডেমি বিভিন্ন বিষয়ের উপর তিন হাজারের বেশি ভিডিও লেকচার, টিউটোরিয়াল তৈরি করেছে। বিষয়গুলোর মধ্যে আছে বীজগণিত, পাটিগণিত, ইতিহাস, ব্যাংকিং, পদার্থবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, ভেনচার ক্যাপিটাল, ক্রেডিট ক্রাইসিসের উপর নানা বিষয়ে অসংখ্য ভিডিও। যেকেউ খুব সহজেই যেকোনো সময়ে বিনা পয়সায় তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়টি জেনে নিতে পারবেন। প্রথম দিকে সালমান তার অবসর সময়গুলোতে এই ভিডিওগুলো তৈরি করতেন। ২০১০ সালের মে মাস থেকে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তার এই প্রজেক্টে এগিয়ে আসে। এদের মধ্যে গেটস ফাউন্ডেশন এবং গুগল অন্যতম। কিছু মানুষ ১০০০০ ডলার অনুদান দেয়, Ann ও John Doerr অনুদান দেয় ১০০,০০০ ডলার, ওয়েব সাইটের বিজ্ঞাপন থেকে আসত মাসে ২০০০ ডলার। তারপরে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গুগল তাদের প্রজেক্ট টেন টু দ্য হান্ড্রেড-এ খান একাডেমিকে ৫ টি প্রজেক্টের একটি হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা করে ও ২ মিলিয়ন ডলার দেয় যাতে খান একাডেমি আরো বেশি কোর্স তৈরি করে ও সারাবিশ্বে জনপ্রিয় ভাষায় সবগুলি লেসন/টিউটোরিয়ালকে অনুবাদ করে। গুগল যখন খান একাডেমিকে ২ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার প্রদান করে তখন তাদের ভিডিওর সংখ্যা ছিল ১৬০০।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

অসাধারণ সব পরিকল্পনা জনসমক্ষে আনার জন্য গুগল ঘোষণা করে ‘প্রজেক্ট টেন টু দ্য হানড্রেড’ নামে ১০ মিলিয়ন ডলারের পুরস্কার। প্রতিষ্ঠানটির দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২০০৮ সালে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এতে বিশ্বের ১৭০টির বেশি দেশ থেকে জমা পড়ে এক লাখ চুয়ান্ন হাজার আবেদন। দুই বছরের যাচাই-বাছাই শেষে প্রথমে ১৬টি পরিকল্পনা নির্বাচন ও তার তালিকা তৈরি করে গুগল। পরে চূড়ান্তভাবে বেছে নেওয়া হয় পাঁচটিকে। নির্বাচিত প্রকল্পগুলোকে আরও বিস্তৃত করার জন্য দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থসহায়তা। শিক্ষা বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে সালমানের ‘খান একাডেমি’র বিনামূল্যে শিক্ষামূলক অনলাইন ভিডিও টিউটরিয়াল। একাডেমিটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ২০ লাখ ডলার পুরস্কার দিয়েছে গুগল।[৬] ২০১২ সালের জুনে ৮ জুন অনুষ্ঠিত ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ১৪৬ তম সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন সালমান। ৩৫ বছর বয়সী সালমান খানই এমআইটির ইতিহাসে কনিষ্ঠতম সমাবর্তন বক্তা। ২০১২ সালের মে মাসে রাইস ইউনিভার্সিটিতেও সমাবর্তন বক্তা ছিলেন সালমান।[৭] ২০১০ সালে সালমান মাইক্রোসফট টেক অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।[১৯]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

সালমান খান, উমাইমা মার্ভিকে বিয়ে করেন যিনি নিজে একজন চিকিৎসক। এ দম্পতি তাদের সন্তানদের নিয়ে বর্তমানে মাউন্টেন ভিউ, ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করছেন।[২০][২১][২২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Rajghatta, Chidanand (ডিসেম্বর ১০, ২০১১)। "His name is Prof Khan"The Times of India। ২৫ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১৯, ২০১২ 
  2. Number of videos, Khan Academy, ১ আগস্ট ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ .
  3. "Khan academy"YouTube (channel)। Google। ১০ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  4. "Salman Khan – Time 100"Time। ১৮ এপ্রিল ২০১২। ১ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০১২ 
  5. "$1 Trillion Opportunity"। Forbes Magazine। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  6. [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৮-০২-০৯ তারিখে, দৈনিক প্রথম আলো, ঢাকা থেকে প্রকাশিত। প্রকাশকাল: ১০ জুন ২০১০।
  7. [২][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], দৈনিক প্রথম আলো, ঢাকা থেকে প্রকাশিত। প্রকাশকাল: ১৮ জানুয়ারি ২০১২।
  8. Sengupta, Somini (৪ ডিসেম্বর ২০১১)। "Khan Academy Blends Its YouTube Approach With Classrooms"The New York Times। ১২ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৪ 
  9. Solomon, Ethan A. (৬ ডিসেম্বর ২০১১)। "Sal Khan Is Commencement Speaker"। The Tech। ৯ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  10. Kaplan, David A. (আগস্ট ২৪, ২০১০)। "Innovation in Education: Bill Gates' favorite teacher"Money। CNN। ২০১০-১২-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৬-৩০ 
  11. "How Khan Academy Is Changing Education With Videos Made In A Closet – with Salman Khan"। Mixergy। ২০১০-০৬-২৮। ২০১৪-০২-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৮-২৬ 
  12. "MIT's Next Commencement Speaker Sal Khan Compares His Alma Mater to Hogwarts"। Wired Academic। ৭ ডিসেম্বর ২০১১। ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  13. Kowarski, Ilana (২০১০-০৬-০৬)। "College 2.0: A Self-Appointed Teacher Runs a One-Man 'Academy' on YouTube – Technology – The Chronicle of Higher Education"। Chronicle। ২০১৬-০৬-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০২-০৯ 
  14. Colbert, Stephen (Host) (২০১১)। The Colbert Report। Colbert Nation। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৬-৩০ 
  15. Khan, Sal। "Sal Khan"। LinkedIn। ২০১৪-০৮-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৯-২৮ 
  16. "Contribute | Khan Academy"। ২২ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  17. "Frequently Asked Questions"। Khan Academy। ২০১১-১১-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-০৩ 
  18. Michels, Spencer (২০১০-০২-২২)। "Khan Academy: How to Calculate the Unemployment Rate"PBS NewsHourPBS। ২০১১-০১-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০১-০৫ 
  19. [৩] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৮ জুলাই ২০১১ তারিখে টেকঅ্যাওয়ার্ড.অর্গ।
  20. "Education 2.0: The Khan Academy"Dawn (newspaper)। ২৬ এপ্রিল ২০১১। ২৪ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ নভেম্বর ২০১২ 
  21. "Meet Sal Khan, Khan Academy"jointventure.org। ২০১৬-১০-২৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৮-২৮ 
  22. "Salman Khan - Educator"Biography। ২০১৭-০৮-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৮-২৮