সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণন

জন্ম(১৯৭৭-০৩-১৫)১৫ মার্চ ১৯৭৭
কোঝিকোড, কেরল
মৃত্যু২৮ নভেম্বর ২০০৮(2008-11-28) (বয়স ৩১)
মুম্বই, মহারাষ্ট্র
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
আনুগত্যভারত ভারত
সেবা/শাখাভারতীয় সেনাবাহিনী, জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী
কার্যকাল১৯৯৯-২০০৮
পদমর্যাদামেজর, কম্যান্ডো
ইউনিটএনএসজি সদর, মানেসর
পুরস্কারঅশোক চক্র

মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণন, এসি (মালয়ালম: സന്ദീപ് ഉണ്ണിക്കൃഷ്ണന്‍, ১৫ মার্চ ১৯৭৭ – ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৮) ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন অধিকারী, যিনি ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি) এর স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপে কর্মরত ছিলেন। ২০০৮ সালের মুম্বই জঙ্গি হামলার সময় সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে তিনি শহীদ হন।[১] তার বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৯ সালের ২৬ জানুয়ারি তাকে ভারতের সর্বোচ্চ শান্তিকালীন সামরিক পুরস্কার অশোক চক্র দ্বারা মরণোত্তর সম্মানিত করা হয়।[২]

এনএসজি অফিসারেরা বলেছেন, অপারেশন ব্ল্যাক টর্নেডোর সময় তাজমহল প্যালেস অ্যান্ড টাওয়ারের ভিতরে যে সশস্ত্র জঙ্গিরা অবস্থান করছিল, তাদের সঙ্গে গুলির লড়াই চলার সময় মেজর উন্নিকৃষ্ণন গুলিবিদ্ধ হন। তার শেষ কথা ছিল, "তোমরা এগিও না, আমিই ওদের সামলে নেব।" (“Don't come up, I will handle them”)[৩]

পরে এনএসজি-র সূত্র থেকে স্পষ্ট করে জানানো হয় যে অপারেশনের সময় একজন প্রহরী আহত হলে, মেজর উন্নিকৃষ্ণন তাকে নিরাপদে বের করে দিয়ে নিজেই জঙ্গিদের পিছনে ধাওয়া করেন। জঙ্গিরা হোটেলের উপরতলায় পালিয়ে যায়। ধাওয়া করার সময় উন্নিকৃষ্ণন গুরুতরভাবে আহত হন এবং সেই আঘাতই তার মৃত্যুর কারণ হয়।[৩]

পরিবার[সম্পাদনা]

সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণন এক মালায়ালি নায়ার পরিবারের সন্তান। তার আদি নিবাস ছিল কেরল রাজ্যের কোঝিকোড জেলার চেরুভান্নুরে। সেখান থেকে তারা সপরিবারে বেঙ্গালুরুতে এসে বসবাস করছিলেন।[৪] তিনি অবসরপ্রাপ্ত ইসরো অফিসার কে. উন্নিকৃষ্ণন ও ধনলক্ষ্মী উন্নিকৃষ্ণনের একমাত্র সন্তান ছিলেন।[৫]

অপারেশন ব্ল্যাক টর্নেডো[সম্পাদনা]

২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর রাতে জঙ্গিরা দক্ষিণ মুম্বইয়ের একাধিক ঐতিহাসিক ভবনে হামলা চালায়। ১০০ বছরের পুরনো তাজমহল প্যালেস হোটেল ছিল তার মধ্যে একটি। মেজর উন্নিকৃষ্ণনকে টিম কম্যান্ডার করে নেতৃত্বে ৫১ এসএজি দলটিকে ওই হোটেলকে জঙ্গিমুক্ত করে পণবন্দীদের উদ্ধার করতে পাঠানো হয়। তিনি দশ জন কম্যান্ডো নিয়ে হোটেলে ঢোকেন এবং সিঁড়ি ধরে সাত তলায় উঠে যান। পরে নামতে নামতে তারা বুঝতে পারেন জঙ্গিরা রয়েছে চার তলায়। জঙ্গিরা একটা ঘরে কয়েকজন মহিলাকে পণবন্দী করে ভিতর থেকে তালা দিয়ে রেখেছিল। কম্যান্ডো দল দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন। এই সময় জঙ্গিরা মেজর উন্নিকৃষ্ণনের সহকারী সুনীল যাদবকে গুলি করে।[৬]

মেজর উন্নিকৃষ্ণন সামনে এগিয়ে এসে জঙ্গিদের সঙ্গে জোরদার লড়াই শুরু করেন। তিনি সুনীল যাদবকে নিরাপদে বাইরে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তারপর নিজের নিরাপত্তার কথা না ভেবেই জঙ্গিদের পিছনে ধাওয়া করেন। জঙ্গিরা মেজর উন্নিকৃষ্ণনের দিকে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পালিয়ে উপরের তলায় চলে যায়।[৭] এই সময় মেজর উন্নিকৃষ্ণনকে পিছন থেকে গুলি করা হয়। মেজর উন্নিকৃষ্ণন আহত হন এবং সেই আঘাতই তার মৃত্যুর কারণ হয়।[৮][৯][১০]

বিতর্ক[সম্পাদনা]

মেজর উন্নিকৃষ্ণনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় কেরল সরকারের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। রাজনৈতিকদের এই সিদ্ধান্ত স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদমাধ্যমে সমালোচিত হয়। যদিও কেরলের মুখ্যমন্ত্রী ভি. এস. অচ্যূতানন্দন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোডিয়েরি বালকৃষ্ণন ৩০ নভেম্বর উন্নিকৃষ্ণনের বাড়ি যান। সন্দীপের বাবা কে. উন্নিকৃষ্ণন ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের চলে যেতে বলেন। এমনকি কেরলের কোনো রাজনৈতিক নেতা তার বাড়িতে প্রবেশ করলে তিনি আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকিও দেন।[১১] পরে অচ্যুতানন্দন গণমাধ্যমের সামনে বলেন, মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণনের বাড়ি না হলে তার বাবা-মার বাড়িতে কোনো কুকুরও যেতে চাইবে না।[১২] এই মাধ্যমে সংবাদমাধ্যম ও জনমানসে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। কিন্তু অচ্যূতানন্দন বলেন, তিনি উন্নিকৃষ্ণনের পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইবেন না; যদিও তিনি নিহত মেজরের পরিবারকে সম্মান করেন।[১৩]

২ ডিসেম্বর ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী)-র সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট অচ্যূতানন্দনের 'কুকুর মন্তব্যে'র জন্য ক্ষমা চান।[১৪] পরদিন অচ্যূতানন্দনও সমস্ত ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন।[১৫][১৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "2 NSG men killed, six others injured in Mumbai gunbattles"। PTI। 28 November। সংগ্রহের তারিখ 2008-11-28  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)[অকার্যকর সংযোগ]
  2. "11 security personnel to get Ashok Chakra"। ২০০৯-০২-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০১-২৫ 
  3. "Hero's last words — The Hindu"। Chennai, India। The Hindu। ২০০৮-১১-৩০। ২০১১-০৯-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-৩০ 
  4. "Army Major from Kerala dies in Mumbai encounter"। WebIndia 123। 28 November। ২০১২-০২-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2008-11-28  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  5. "The Telegraph - Calcutta (Kolkata) | Nation | Boy who had a crew cut in school"। ২৬ মে ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১১ 
  6. "A buddy called Major Unnikrishnan"। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১১ 
  7. "sify.com"। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১১ 
  8. "Sandeep Unnikrishnan waged a valiant battle against terrorists"। Chennai, India: The Hindu। 29 November। ২০০৮-১২-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2008-11-29  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  9. "Nation bids adieu to ATS chief, NSG commando - India News - IBNLive"। ২ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১১ 
  10. "Maj Sandeep UnniKrishnan - A school remembers"The Times Of India। ২০০৮-১১-২৯। 
  11. Martyr's father snubs Kerala chief minister
  12. "Kerala CM insults slain Major's dad"The Times Of India। ২০০৮-১২-০২। 
  13. "NDTV.com: Kerala CM won't apologise to slain Major's family"। ১৩ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১১ 
  14. "Karat apologises for Achuthanandan's 'dog' remark"। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১১ 
  15. "NDTV.com: 'A closed chapter' says Sandeep's family"। ১৩ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ নভেম্বর ২০১১ 
  16. "I feel extremely sorry, says Achuthanandan"The Hindu। Chennai, India। ২০০৮-১২-০৪। ২০১১-০৬-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১১-২৪ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]