শামসুদ্‌দীন আবুল কালাম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(শামসুদ্দীন আবুল কালাম থেকে পুনর্নির্দেশিত)
শামসুদ্‌দীন আবুল কালাম
জন্ম
আবুল কালাম শামসুদ্দীন[ক]

১৯২৬
মৃত্যু১০ জানুয়ারি ১৯৯৭
সম্মাননাবাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার

শামসুদ্‌দীন আবুল কালাম বা শামসুদ্দীন আবুল কালাম (১৯২৬ - ১০ জানুয়ারি ১৯৯৭) ছিলেন একজন বাঙালী কথাসাহিত্যিক ও উপন্যাসিক। তিনি ১৯২৬ সালের আগস্ট মাসে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার কামদেবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পদার্থবিদ অধ্যাপক আবুল মকসুদ হারুন অর রশীদের মামা।[২] ১৯৬৪ সালে তিনি ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’ লাভ করেন। ১৯৯৭ সালের ১০ জানুয়ারি রোমে তাঁর মৃত্যু হয়।[৩]

জীবন ও কর্ম[সম্পাদনা]

শামসুদ্‌দীন আবুল কালাম ১৯২৬ সালে বরিশাল জেলার নলছিটি থানাধীন কামদেবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আকরাম আলী মুন্সি এবং মাতার নাম মেহেরুনেসা। তার চার বোন ছিল (জাহানারা বেগম, রৌশোনারা বেগম, মমতাজ বেগম এবং সাইদা আখতার)। তিনি তার পিতামাতার একমাত্র ছেলে ছিলেন।

আবুল কালাম বরিশাল জেলা স্কুল থেকে ১৯৪১ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৪৩ সালে ব্রজমোহন কলেজ থেকে আই.এ এবং ১৯৪৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ পাস করেন। এরপর তিনি এমএ শ্রেণিতে ভর্তি হন, কিন্তু পাঠ শেষ না করেই বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন।

১৯৪৭ সালে দেশভাগ হলেও তিনি কলকাতায় অবস্থান করেন। ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন। ঢাকায় তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রচার ও তথ্য দপ্তরে প্রথমে স্টাফ আর্টিস্ট ও পরে সহকারী পরিচালক পদে যোগ দেন। এখানে যোগ দিয়ে তিনি ‘মাহে নও’ নামক একটি পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[১] তিনি পাকিস্তানের প্রথম মাসিক ‘সিনেমা’ পত্রিকায় উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করেন। এই পত্রিকার উপদেষ্টা হিসেবে তিনি ‘আল-বেরুনী’ ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। এই ছদ্মনামে তিনি ‘সিনেমা’ পত্রিকায় ধারাবাহিক নাটক লিখতেন।

১৯৫৯ সালে শামসুদ্‌দীন আবুল কালাম আলোকচিত্র, সেট ডিজাইন, সংগীত ও চলচ্চিত্র সম্পাদনা বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী গ্রহণের উদ্দেশ্যে ইতালির রাজধানী রোম গমন করেন এবং সেখানকার সরকারি প্রতিষ্ঠান সিনেসিত্তায় যোগ দেন। ষাটের দশকে তিনি রোম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব লিটারেচার ডিগ্রী অর্জন করেন।

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

১৯৪৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর সেখানে হোসনে আরা বিজুর সাথে শামসুদ্‌দীন আবুল কালামের পরিচয় হয়। শামসুদ্‌দীন আবুল কালাম তাকে নিয়ে ‘সাত সতেরো’ পত্রিকায় একটি কবিতাও লিখেন। ১৯৫০-এর পর তিনি ঢাকায় হোসনে আরাকে বিয়ে করেন।

রচনাবলী[সম্পাদনা]

তার রচনায় বাংলার মানুষের গ্রামীণ জীবন বিস্তারিতভাবে দেখা যায়। আবেগ এবং প্রেমের আধিক্য তার লেখায় যথেষ্ট বিরাজমান।

উপন্যাস[সম্পাদনা]

  • আলমনগরের উপকথা (১৯৫৪)
  • কাশবনের কন্যা (১৯৫৪)
  • দুই মহল (১৯৫৫)
  • কাঞ্চনমালা (১৯৫৬)
  • জীবনকাব্য (১৯৫৬)
  • জায়জংগল (১৯৭৮)
  • সমুদ্রবাসর (১৯৮৬)
  • নবান্ন (১৯৮৭)
  • যার সাথে যার (১৯৮৬)
  • মনের মতো ঠাই (১৯৮৫)
  • কাঞ্চনগ্রাম (১৯৯৭)
  • কাঞ্চনমালা (১৯৬১)
ঈষদাভাস

গল্পসংগ্রহ[সম্পাদনা]

  • অনেক দিনের আশা (১৯৫২)
  • ঢেউ (১৯৫৩)
  • পথ জানা নেই (১৯৫৩)
  • দুই হৃদয়ের তীর (১৯৫৫)
  • শাহের বানু (১৯৫৭)

পুরস্কার[সম্পাদনা]

সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৪ সালে ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’ লাভ করেন।[৪]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

ফুসফুস ও হৃদরোগে ভোগার পর ১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবর ইতালির ভেরোনায় তার ফুসফুসে ও হৃদপিণ্ডে সার্জারি হয়। ১৯৯৩ সালের পর থেকে তার চোখের গ্লুকোমা তীব্র হতে থাকে। ১৯৯৭ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি রোমে তার অ্যাপার্টমেন্টে মৃত্যুবরণ করেন।

টীকা[সম্পাদনা]

  1. সমসাময়িক বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবুল কালাম শামসুদ্দীনের সাথে তার নাম মিলে যাওয়ায় পাঠকের বিভ্রান্তি দূরীকরণের জন্য ১৯৫৫ সালে তার প্রকাশিত ‘দুই হৃদয়ের তীর’ শীর্ষক গল্পগ্রন্থে তিনি নিজের নামের বিন্যাস পরিবর্তিত করে শামসুদ্‌দীন আবুল কালাম লিখতে শুরু করেন।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মতিন, আবদুল। "শামসুদ্দীন আবুল কালাম ও তাঁর পত্রাবলী"। র‌্যাডিকাল এশিয়া পাবলিকেশনস, ঢাকা। ২০০৬।
  2. "এ. এম. হারুন অর রশীদ"গুণীজন.অর্গ.বিডি। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  3. "রোমে সমাহিত আবুল কালামের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী"banglanews24.com। ১০ জানুয়ারি ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০২১ 
  4. "পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক তালিকা"banglaacademy.org.bd। বাংলা একাডেমি। ২৭ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]