শহর-ই-ঘলঘোলা

স্থানাঙ্ক: ৩৪°৪৯′০৮″ উত্তর ৬৭°৫০′২০″ পূর্ব / ৩৪.৮১৮৮১৩° উত্তর ৬৭.৮৩৮৯৯৭° পূর্ব / 34.818813; 67.838997
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শহর-ই-ঘলঘোলা
নৈঃশব্দের শহর
স্থানীয় নাম
ফার্সি: شهر غلغله
২০০০ সালে শহর-ই-ঘলঘোলা
অবস্থানবামিয়ান উপত্যকা, আফগানিস্তান
স্থানাঙ্ক৩৪°৪৯′০৮″ উত্তর ৬৭°৫০′২০″ পূর্ব / ৩৪.৮১৮৮১৩° উত্তর ৬৭.৮৩৮৯৯৭° পূর্ব / 34.818813; 67.838997
শহর-ই-ঘলঘোলা আফগানিস্তান-এ অবস্থিত
শহর-ই-ঘলঘোলা
আফগানিস্তানে শহর-ই-ঘলঘোলা
নৈঃশব্দের শহরের অবস্থান

শহর-ই-ঘলঘোলা (ফার্সি: شهر غلغله‎) শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নৈঃশব্দের শহর । এছাড়াও আর্তনাদের শহর নামেও এটি বহুল পরিচিত।[১][২] আসলে এটি ত্রয়োদশ শতকের বামিয়ান শহর। ১২২১ খ্রিস্টাব্দে মোঙ্গল সম্রাট চেঙ্গিজ খানের আক্রমণে শহরটি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয় ও শহরটির সমস্ত বাসিন্দা গণহত্যার শিকার হয়।[৩] বর্তমানে বামিয়ান শহরের অদূরেই এর ধ্বংসস্তূপটি দেখতে পাওয়া যায়।

অবস্থান[সম্পাদনা]

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে ২৩০-২৪০ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমে হিন্দুকুশ ও কো-ই-বাবা পর্বতমালার সংযোগস্থলে অবস্থিত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৫০০ মিটার বা ৮০০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত বামিয়ান উপত্যকায়[৪] বামিয়ান শহর থেকে ২০ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে শহর-ই-ঘলঘোলার ধ্বংসাবশেষটি দেখতে পাওয়া যায়। আশেপাশের অঞ্চল থেকে অনেকখানি উঁচুতে অবস্থিত দুর্গাকার এই শহরটিকে দেখেই বোঝা যায়, শুধুমাত্র সরাসরি লড়াই'এ এই শহরটি দখল করা ছিল কত কঠিন। বাস্তবিকই মোঙ্গলদের হাতে শহরটির পতনের পিছনে ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার বড় ভূমিকা ছিল।[৫]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দের একেবারে শেষদিকে গজনির সুলতান মামুদের আমলে (৯৯৭ - ১০৩০ খ্রিঃ) এই অঞ্চলে সুদীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত ক্রমক্ষীয়মান বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব থেকে বামিয়ান উপত্যকার পুরোপুরি ইসলামীকরণ ঘটে।[৬] এই সময়েই আগেকার বামিয়ান শহরটিকে উপত্যকার উত্তর-পশ্চিমে বিশালাকার বুদ্ধমূর্তিদুটি খোদাই করা বামিয়ানের পর্বতগাত্রর পাদদেশ থেকে বেশ কিছুটা দক্ষিণপূর্বে সরিয়ে আনা হয়।[৬][৭] ঘুরিদের রাজত্বকালে ১১৫৫ - ১২১২ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬০ বছর এই শহর একটি বেশ বড় রাজ্যের রাজধানীতে পর্যবাসিত হয়। ঘুরিদের পতনের পর এই উপত্যকা খরেজম সাম্রাজ্যের অধীনে আসে।

কিন্তু ১২২১ সালে খরেজম সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী ও সদ্য শাসক সুলতান জালালুদ্দিন মিংবুরনুকে (রাজত্বকাল ১২২০-১২৩১ খ্রিঃ) ধাওয়া করে চেঙ্গিজ খানের মোঙ্গল বাহিনী এই উপত্যকায় প্রবেশ করে। তাদের হাত থেকে বামিয়ান শহর ও উপত্যকাকে রক্ষার উদ্দেশ্যে এই অঞ্চলের প্রশাসক (এঁরও নাম জালালুদ্দিন) প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। শহর ঘিরে অবরোধ চলাকালীন পার্শ্ববর্তী অবরুদ্ধ দুর্গ থেকে ছোঁড়া একটি তীরে চেঙ্গিজ খানের দ্বিতীয় পুত্র চাগাতাই খানের ছেলে, অর্থাৎ চেঙ্গিজ খানের নাতি মুতুকান'এর মৃত্যু ঘটলে প্রতিশোধস্পৃহায় চেঙ্গিজ খানের নির্দেশে সমগ্র উপত্যকা জুড়ে অভূতপূর্ব এবং ধ্বংসলীলা চালানো শুরু হয়।[৩] কিন্তু জালালুদ্দিন আত্মসমর্পণ করেননি। দুর্গের মধ্যে থেকে তিনি লড়াই চালিয়ে যান। কিন্তু তাঁর মেয়ে তাঁর সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে। তার বিপত্নীক বাবা গজনির এক শাহজাদীকে বিয়ে করার রাগে সে গোপনে দুর্গত্যাগ করে ও দুর্গে ঢোকার গোপন রাস্তা মোঙ্গলদের জানিয়ে দেয়। তার আশা ছিল মোঙ্গলাধীপতি স্বয়ং তাকে বিবাহ করবে। কিন্তু মোঙ্গলরা তার কাছ থেকে দুর্গে ঢোকার গোপন পথ জেনে নিয়ে তাকে হত্যা করে ও দুর্গ দখল করে সেখানকার সমস্ত প্রতিরোধকারীদেরই হত্যা করে।[৫] শুধু জালালুদ্দিন পূর্ব দিকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। বিজিত শহর ও উপত্যকায় যাতে একটিও মানুষ বেঁচে থাকতে না পারে, মোঙ্গলরা তা নিশ্চিত করে। ধ্বংসের তাণ্ডব থেকে এমনকী আশেপাশের অঞ্চলগুলোও রেহাই পায়নি। সমগ্র উপত্যকাতে এমনভাবে ধ্বংসকাণ্ড ও নির্বিচার হত্যালীলা চালানো হয় যে, মৃতদের স্মরণে লোকের মুখে মুখে বামিয়ান শহরের নামই হয়ে যায় নৈঃশব্দের শহর (শহর-ই-ঘলঘোলা)।[১][৩] এই ভয়াবহ ধ্বংসলীলার পর বেশ কিছু দশক উপত্যকায় আর কোনও জনবসতি গড়ে ওঠেনি। এমনকী এই ঘটনার চল্লিশ বছর পর যখন ঐতিহাসিক জোভাইনি তাঁর ইতিহাস লিখছেন, তখনও পর্যন্ত এই উপত্যকা ছিল জনশূন্য।[৮]

পর্যটন আকর্ষণ[সম্পাদনা]

বর্তমানে এই শহরের ধ্বংসাবশেষটি এক সুন্দর পর্যটন আকর্ষণ। বামিয়ান শহর থেকে তেপ বাবা শাহ'র পথে দুধারে নয়ন মনোহর গমআলুর খেতের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেলেই একটু দূরেই এই ধ্বংসাবশেষ। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালের শেষের দিকে যখন ফসল কেটে বড় বড় ষাঁড়ে টানা জোয়াল দিয়ে তা ঝাড়াই করা হয়, তখন এই পথের দৃশ্য সত্যিই দেখার মতো। পথটি ধ্বংসাবশেষের নিচের দিক বেড় দিয়ে একটা খোলা পার্কিং‌ প্লেসে পৌঁছেছে। তালিবান আমলে ও যুদ্ধের সময় এই অঞ্চলে প্রচুর ল্যান্ড মাইন বিছিয়ে রাখা হয়েছিল। যাইহোক, শহরটির ধ্বংসাবশেষের উঁচু জায়গাটি থেকে চারিপাশের উপত্যকার দৃশ্য খুবই সুন্দর। এখান থেকে বামিয়ানের পর্বতগাত্রে ধ্বংস করে ফেলা বুদ্ধমূর্তিগুলির ফাঁকা কুলুঙ্গিগুলিও খুব ভালোভাবে চোখে পড়ে। তাছাড়া দক্ষিণদিকে তাকালে এখান থেকে খালি চোখেই দূরে কাকরাক উপত্যকাটিও দেখতে পাওয়া যায়।[৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Romano, Amy. A Historical Atlas of Afghanistan. NY: Rosen, 2003. P.25. আইএসবিএন ০-৮২৩৯-৩৮৬৩-৮
  2. Harold, Frank. BAMIYAN AND BUDDHIST AFGHANISTAN. সংগৃহীত ২১ ডিসেম্বর, ২০১৪।
  3. Kohn, George C.. Dictionary of Wars. 1986. 3rd. ed. NY, 2007. P.55. আইএসবিএন ০-৮১৬০-৬৫৭৭-২
  4. Curiel, David. Bamiyan Valley. May 14, 2009. Sacred Land Film Project. সংগৃহীত ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪।
  5. "Shahr-e Gholghola". Bamyian. Afganistan. Lonely Planet. সংগৃহীত ১ জানুয়ারি, ২০১৫।
  6. Maeda, Kosaku. "The Mural Paintings of the Buddhas of Bamiyan: Description and Conservation Operations". Art and Archaeology of Afghanistan - Its Fall and Survival. Ed. Juliette van Krieken-Pieters. Leiden: Brill Academic Publishers, 2006. Handbook of Oriental Studies. Section 8 Uralic & Central Asian Studies, Vol. 14. P. 131
  7. Tarzi, Z.. BĀMĪĀN. "ii. History and Monuments". 15 December, 1988. Encyclopædia Iranica. সংগৃহীত ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৪।
  8. de Planhol, X.. BĀMĪĀN. "iii. Modern Town and District". 15 December, 1988. Encyclopædia Iranica. সংগৃহীত ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৪।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]