শরাইঘাট সেতু
শরাইঘাট সেতু শরাইঘাট দলং | |
---|---|
স্থানাঙ্ক | ২৬°১০′৩২″ উত্তর ৯১°৪০′২০″ পূর্ব / ২৬.১৭৫৪২° উত্তর ৯১.৬৭২২২° পূর্ব |
রক্ষণাবেক্ষক | উত্তর-পূব সীমান্ত রেলওয়ে[১] |
বৈশিষ্ট্য | |
মোট দৈর্ঘ্য | ১৪৯২ মিটার |
ইতিহাস | |
নির্মাণকারী | হিন্দুস্থান কন্সট্রাকশন কর্পরেশন লিমিটেড |
নির্মাণ শুরু | ১৯৫৯ সনের জানুয়ারি মাস |
নির্মাণ ব্যয় | ১০,৬৫,১৬,৮৯১ টাকা |
উদ্বোধন হয় | ১৯৬৩ সনের ৭ জুন |
চালু | ১৯৬২ সনের অক্টোবর মাস |
অবস্থান | |
শরাইঘাট সেতু (অসমীয়া: শরাইঘাট দলং) ভারতের অসম রাজ্যের গুয়াহাটি শহরে অবস্থিত। শরাইঘাট সেতু ব্রহ্মপুত্র নদীর উত্তর পার ও দক্ষিণ পারকে সংযুক্ত করেছে। ১৯৫৮ সনের জানুয়ারি মাসে এই সেতু নির্মাণের কার্য আরম্ভ করা হয়েছিল। শরাইঘাট সেতু অসমের প্রথম দোতলা (ডবল ডেকার) সেতু। এই সেতুর উপরিভাগের রাস্তা ৩৭নং রাষ্ট্রীয় ঘাইপথ ও নিচের অংশটি রেলপথ। ১৯৬৩ সনের ৭ জুন তারিখে তৎকালীন ভারতের প্রধান মন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এই সেতু যাতায়তের জন্য উৎঘাটন করেছিলেন। বর্তমান এই সেতুটি উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের দায়িত্বে আছে।
ইতিহাস[সম্পাদনা]
ব্রহ্মপুত্র নদী সমগ্র অসমকে উত্তর পার ও দক্ষিণ পার এই ২ ভাগে বিভক্ত করছে। ফলে অসমের উত্তর ও দক্ষিণ পারের অঞ্চলের মধ্যে পরস্পর যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। প্রাচীনকলে নৌকার ব্যবহারের ফলে উত্তর পার ও দক্ষিণ পারের সহিত যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান দিনে নৌকার ব্যবহার সুবিধাজনক না হওয়ায় জনসাধারন কেন্দ্রীয় সরকারকে অসমে উত্তর ও দক্ষিণ পার সংযোগী সেতু নির্মাণ করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। ভারত সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় জনসাধারন ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবাদ করে ও এই প্রতিবাদ আন্দোলনের রুপ নেয়। হেম বরুয়া, কমিউনিস্ট গৌরীশংকর ভট্টাচার্য, সোশিয়েলিষ্ট নেতা হরেশ্বর গোস্বামী এই আন্দোলনের প্রধান ব্যক্তি ছিলেন। অবশেষে ১৯৫৮ সনের জানুয়ারি মাসে শরাইঘাট সেতু নির্মাণের কার্য আরম্ভ করা হয়।
নির্মাণ সামগ্রী ও ব্যয়ের পরিমান[সম্পাদনা]
হিন্দুস্তান কনষ্ট্রাকশন লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে শরাইঘাট সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রায় ৪০ হাজার টন সিমেন্ট, ২০ হাজার টন ষ্টিল ও ৮০০০ শ্রমিকের সহযোগিতায় এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৬২ সনের সেপ্টেম্বর মাসে সেতু নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছিল। সেতুর বহন ক্ষমতা পরিক্ষা করার জন্য ১৯৬২ সনের ২৩ সেপ্টেম্বর মাসে একটি রেল এই পথে চালানো হয়েছিল। ১৯৬২ সনের অক্টোবর মাসের থেকে এই পথে যাত্রীবাহী ও মালবাহী রেল চালানো হয়। শরাইঘাট সেতু নির্মাণের মোট ব্যয় ছিল ১০,৬৫,১৬,৮৯১ টাকা। শরাইঘাট সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৫ কি.মি. (১৪৯২ মিটার)।
শুভ উদ্ধোধন[সম্পাদনা]
১৯৬৩ সনের ৭ জুন তারিখে তৎকালীন ভারতের প্রধান মন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এই সেতু যাতায়তের জন্য উৎঘাটন করেন। প্রথম অবস্থায় এই সেতুর নাম ব্রহ্মপুত্র দলং ছিল । কামাখ্যা রেল জংশনে অনুষ্ঠিত একটি সভায় পণ্ডিত জওহারলাল নেহেরু এই সেতুর নাম শরাইঘাট নামে নামকরণ করেন।
বর্তমান শরাইঘাট সেতুর অবস্থা[সম্পাদনা]
শরাইঘাট সেতুর রক্ষণাবেক্ষনের দ্বায়িত্ব উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের হাতে ন্যাস্ত করা হয়েছে। রেলওয়ে বিভাগ গুয়াহাটির আই,আই,টি প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ দলকে এই সেতুর পরীক্ষা-নীরক্ষা করার দ্বায়িত্ব দিয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে বর্তমান শরাইঘাট সেতু সঠিক অবস্থায় আছে। ইহার ১১টি নিরাপদ অবস্থায় আছে। বর্ধিত ট্রাফিকের প্রতি লখ্য রেখে ভারত সরকার এই সেতুর পাশে তিনটি লেনযুক্ত আরেকটি নতুন সেতু নির্মাণ করার প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। নতুন সেতু নির্মাণ করার কার্য আরম্ভ হয়েছে।
শরাইঘাট সেতু ধ্বংস করার পরিকল্পনা[সম্পাদনা]
১৯৭১ সনের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত বাংলাদেশের পক্ষ হয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। ভারতের বায়ুসেনা অসম রাজ্যের তেজপুরে স্থিত শালনী বিমান বন্দর থেকে যাত্রা করে বাংলাদেশ দখলকারী পাকিস্তানের যুদ্ধ করা বিমান ধ্বংস করেছিল। ফলে পাকিস্তানি সৈন্য প্রতিশোধ মনোভাবনায় শরাইঘাট সেতু ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছিলেন কারণ ভারতীয় সেনা ও শালনী বিমান বন্দর সংযোগকারী এইটিই একমাত্র পথ ছিল। কিন্তু গোপন সুত্রে পাকিস্তানের সেতু ধ্বংস করার পরিকল্পনা ভারতে জানতে পেরেছিল। পাকিস্তানের প্রধান লখ্য ছিল শরাইঘাট সেতু ও দ্বিতীয় লখ্য ছিল গুয়াহাটি ধ্বংস কারণ গুয়াহাটি অসম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান কেন্দ্র। পাকিস্তানের পরিকল্পনার কথা জানতে পেয়ে ভারতীয় সেনা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। রাডারে পাকিস্তান সেনা আগমনের আভাস পেয়ে গুয়াহাটির আমিনগাও অঞ্চল “ লেজার বীম” ব্যবহার করে আলোকিত করে রেখেছিল। ভারতীয় সেনা “ এন্টি এয়ার ক্রাফ্ট গান” দ্বারা পাকিস্তানি বিমানকে আক্রমণ করেছিল। ফলে অপ্রস্তুত পাকিস্তানি বিমান ক্ষতি না করেই পালিয়ে যায়।
অসমের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় শরাইঘাট সেতুর ভূমিকা[সম্পাদনা]
৩১নং রাষ্ট্রীয় ঘাইপথ ও ৩৭ নং রাষ্ট্রীয় ঘাইপথকে সংযোগ করে শরাইঘাট সেতু অসমের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। এই সেতু নির্মাণের পর অসমের রাজধানী গুয়াহাটির সহিত ব্রহ্মপুত্রের উত্তর পারে স্থিত অঞ্চলের সহিত বাণিজ্য স্থাপনে যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে। ১৯৫৮ সনের আগ পর্যন্ত অসমের ব্রহ্মনদীর নদীর উত্তর ও দক্ষীন পারে যাতায়ত ও পণ্য বহনের জন্য নৌকার ব্যবহার হ’ত কিন্তু শরাইঘাট সেতু নির্মাণের পর থেকে আভ্যন্তরীন জল পরিবহন ব্যবস্থা হ্রাস পেয়েছে।
দ্বিতীয় সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা[সম্পাদনা]
বর্ধিত ট্রাফিকের প্রতি লখ্য রেখে ভারত সরকার এই সেতুর পাশে তিনটি লেনযুক্ত আরেকটি নতুন সেতু নির্মাণ করার প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। ২০০৭ সনের ৮ এপ্রিলে নির্মাণের কার্য শুভারম্ভ হয়। আমিনগাওয়ের রাজীব গান্ধী ইনডোর ষ্টেডিয়ামে প্রধান মন্ত্রী ড: মনমোহন সিং ইহার আধারশিলা স্থাপন করেন।
অসমের উত্তর ও দক্ষীনপার সংযোগকারী সেতু[সম্পাদনা]
শরাইঘাট সেতু নির্মাণের পর ভারত সরকার অসমের অন্যান্য স্থানে উত্তর ও দক্ষীনপার সংযোগকারী সেতু নির্মাণ করেছেন। অসমের সেতুগুলোর নাম:
- শরাইঘাট সেতু
- কলীয়াভোমরা সেতু
- নরনারায়ণ সেতু
- বগীবিল সেতু