মেক্সিকোর মাদক যুদ্ধ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পটভূমি[সম্পাদনা]

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে মেক্সিকো অনেক আগে থেকেই লাতিন আমেরিকা আর যুক্তরাষ্ট্রের ভিতর মাদক চোরাচালানের রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিলো। মেক্সিকান বুটলেগাররা যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাংস্টারদের অ্যালকোহল সরবারহ করত যখন যুক্তরাষ্ট্রে এলকোহল বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা জারি ছিলো। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর ১৯৩৩ এর দিকে মাদক ব্যবসা শুরু হয়। ১৯৬০ এর শেষের দিকে এটা বিরাট আকার ধারণ করে।

১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর শুরুর দিকে কলম্বিয়ার পাবলো এস্কোবার ছিলেন কোকেইন এর প্রধান রপ্তানিকারক এবং তিনি পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন সংগঠিত অপরাধী চক্রের সাথে ব্যবসা করতেন। যখন দক্ষিণ ফ্লোরিডা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মাদকবিরোধি অভিযান বাড়তে লাগলো, তখন কলম্বিয়ান চক্রগুলো মেক্সিকো ভিত্তিক পাচারকারীদের সাথে জোট তৈরি করল যাতে তারা মেক্সিকোর ভিতর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচার করতে পারে।

এটা সহজেই সম্পন্ন হয়েছিল কারণ মেক্সিকো অনেকদিন যাবত হেরোইন এবং গাঁজার বড় উৎস ছিল। এবং মেক্সিকোর মাদক পাচারকারীরা ইতিমধ্যেই একটি অবকাঠামো তৈরি করে ফেলেছিল যেটা কলম্বিয়া ভিত্তিক পাচারকারীদের সাহায্য করতে প্রস্তুত ছিল। ১৯৮০ এর মধ্যভাগে মেক্সিকোর চক্রগুলো সুপ্রতিষ্ঠিত  এবং কলম্বিয়ার কোকেন পাচার করার জন্য নির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠে। প্রথমদিকে মেক্সিকান চক্রগুলোকে তাদের পরিবহন সুবিধার জন্য নগদ অর্থ প্রদান করা হত। কিন্তু ১৯৮০ এর শেষের দিকে মেক্সিকান এবং কলম্বিয়ান উভয় চক্র পরিবহনকৃত মাদকের একটি অংশ পারিশ্রমিক হিসেবে প্রদানের জন্য সম্মত হয়।

মেক্সিকোর পরিবহনকারীরা প্রতিটি কোকেন চালানের জন্য এর ৩৫% থেকে ৫০% লভ্যাংশ হিসেবে পেতেন। এ থেকে ধারণা করা যায় যে মেক্সিকোর পাচারকারী চক্রগুলো কোকেন পাচারে জড়িত হয়ে পড়ে এবং কোকেন পাচারের পাশাপাশি তারা দুর্দান্ত পাচারকারী চক্রে পরিণত হয়। বর্তমানে সিনালোয়া কার্টেল এবং গালফ কার্টেল কলম্বিয়া থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কোকেইন পাচারের কাজে নিয়োজিত আছে। 

নতুন দলের উত্থান এবং পুরনো দলের বিলুপ্তির মাধ্যমে মেক্সিকান কার্টেল গুলোর ভিতর ক্ষমতার হাতবদল চলতে থাকে। কার্টেল এর নেতাদের গ্রেফতার বা মৃত্যুর কারণে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয় এবং এর সুযোগে ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে রক্তপাত বৃদ্ধি পেতে থাকে। কখনও কখনও একটি বিশেষ দলের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আইন রক্ষাকারী বাহিনী ক্ষমতার শূন্যতা সৃষ্টি করত। তাই প্রায়ই মেক্সিকোর সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে অথবা মেক্সিকান সরকার বা মার্কিন ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কে গোপন তথ্য সরবারহের মাধ্যমে কার্টেলগুলো একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করত।

দারিদ্র্য[সম্পাদনা]

মেক্সিকোর মাদক যুদ্ধের পিছনে অন্যতম একটি কারণ দারিদ্র্য। নিম্নবিত্ত জনগণ অপরাধী চক্রগুলোকে সাহায্য করে বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করতে ইচ্ছুক ছিলো। সরকার ভালো বেতনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ব্যার্থ হয়েছিলো। ২০০৪ থেকে ২০০৮ এর ভিতর যারা মধ্যম আয়ের নিচে ছিল তাদের সংখ্যা ১৭% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২১% হলো এবং চরম বা মধ্যম দারিদ্রে বসবাসকারী জনসংখ্যা ৩৫% থেকে বেড়ে দাঁড়ালো ৪৬% (৫২ মিলিয়ন), ২০০৬ থেকে ২০১০ এর ভিতর।

OCED দেশগুলোর ভিতর অর্থনৈতিক বৈষম্মে মেক্সিকোর অবস্থান ছিলো দ্বিতীয়।

অকার্যকর শিক্ষা ব্যবস্থা[সম্পাদনা]

অশিক্ষা এবং শিক্ষার অভাব বহু আগে থেকেই মেক্সিকোয় উপস্থিত। ১৯৪০ সালের হিসাব অনুযায়ী ৬ বছরের বেশি বয়স এমন মেক্সিকানদের ভিতর ৫৮% অশিক্ষিত। এবং ১৯৬০ সালের হিসাব অনুযায়ী এই হার ছিল ৩৮% । ১৯৬০ সালের জাতীয় জরীপে দেখা যায় যে ৫ বছরের অধিক বয়স্ক মেক্সিকানদের ভিতর ৪৩.৭% এক বছরের শিক্ষা সমাপ্ত করেনি, ৫০.৭% ছয় বছর বা তার কম সময়ের শিক্ষা গ্রহণ করেছে আর মাত্র ৫.৬% তাদের শিক্ষা ছয় বছরের পর ও চালু রেখেছে।।

References[সম্পাদনা]