মৃন্ময়ী মন্দির

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(মৃন্ময়ী মন্দির (বিষ্ণুপুর) থেকে পুনর্নির্দেশিত)
মৃন্ময়ী মন্দির
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
জেলাবাঁকুড়া জেলা
ঈশ্বরমৃন্ময়ী রূপে দূর্গা
উৎসবদুর্গাপূজা
অবস্থান
অবস্থানবিষ্ণুপুর
রাজ্যপশ্চিমবঙ্গ
দেশভারত
স্থাপত্য
সৃষ্টিকারীমল্লরাজ শ্রীমন্ত জগৎমল্ল দেব
প্রতিষ্ঠার তারিখ৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে

মৃন্ময়ী মন্দির ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর শহরের একটি প্রাচীন মন্দির। এটি ১০ম শতাব্দীতে মল্লরাজ শ্রীমন্ত জগৎমল্ল দেব কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত।

স্থাপনা[সম্পাদনা]

মৃন্ময়ী দেবী

মল্লরাজ শ্রীমন্ত জগৎমল্ল দেব বন-বিষ্ণুপুরের ঘোর অরণ্যে মাদূর্গা দ্বারা স্বপ্নদৃষ্টা হন । স্বপ্নে দেবীমা এর আজ্ঞানুসার তাহার তৎকালীন রাজধানী প্রদ্যুম্নপুর থেকে বন-বিষ্ণুপুরে স্থানান্তরিত করবার পর রাজবাড়ি থেকে অদূরে সাল ৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে এই মৃন্ময়ী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন।[১] :১০৪ মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী শ্রীশ্রী৺মৃন্ময়ী দূর্গা মাতার মূল বিগ্রহ শ্রীমন্ত জগৎমল্ল দেব দ্বারা প্রাপ্ত মুখ-অবয়ব ও গঙ্গা মৃত্তিকা দ্বারা নির্মিত ।।[২]

প্রাচীন দুর্গাপূজা[সম্পাদনা]

মৃন্ময়ী মন্দিরে ৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত দুর্গাপূজা পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীনতম দুর্গাপূজা।প্রাচীন বলিনারায়ণী মতে আয়োজিত এই পূজার আচার প্রচলিত দুর্গাপূজার আচার অনুষ্ঠান থেকে কিছুটা ভিন্ন। এই পূজায় মূর্তি বিসর্জন হয় না। প্রতি বছর ঘট স্থাপন করে পটে আঁকা দুর্গার পূজা হয়।

বোধন[সম্পাদনা]

জীতাষ্টমী তিথির পরেরদিন ঘট স্থাপন করে রাজমহল থেকে রূপার পাত দিয়ে তৈরী মহিষমর্দিনী মূর্তিকে বা স্থানীয় বিশ্বাসে বড়ঠাকুরানিকে এনে নবপত্রিকাসহ কৃষ্ণবাঁধে স্নান করিয়ে বোধনের মাধ্যমে পূজার শুরু হয়। মানচতুর্থীর পরের দিনে লালরঙের কাপড়ে স্থানীয় বিশ্বাসে মেজঠাকুরানি বা দেবীঘটে গোপাল সায়র থেকে জল ভরে আনা হয়। মহাষষ্ঠীর দিনে রাজ অভিষেকস্থলে বিষ্ণুপুরের রাজা ও রাণীকে দেবীপট বা স্থানীয় বিশ্বাসে ছোটঠাকুরানিকে দর্শন করানো হয়। সেইদিন শ্যামকুন্ডের জলে দেবীপটকে স্নান করিয়ে বিল্ববরণ করা ও বোধন করা হয়। জিতাষ্টমী থেকে মহাষষ্ঠী পর্যন্ত খিচুড়িভোগ এবং মহাষষ্ঠী থেকে মহানবমী পর্যন্ত বাদশাভোগ ভাত ও নিরামিষ পদ ভোগ হিসেবে তৈরী করা হয়। [২]

মন্দিরের ফলক ১

সন্ধিপূজো[সম্পাদনা]

মল্লরাজাদের শাসনকালে স্থানীয় মহাদণ্ড বা মহাহোড় সম্প্রদায় পাথর দরজার নিকটে কামান দেগে সন্ধিপূজো ও পশুবলি শুরু হত। পূর্বে এই সময় নরবলির প্রথা থাকলেও মল্লরাজা বীরহাম্বীর বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষিত হলে নরবলি প্রথা তুলে দেওয়া হয়। সন্ধিপূজো চব্বিশ মিনিট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হয়।

মন্দিরের ফলক ২

মহামারীর পূজা[সম্পাদনা]

মহানবমীর শেষ রাতে মহামারীর পূজা নামে এক বিশেষ পূজা হয়ে থাকে। কথিত আছে, এককালে কলেরার মড়কে মল্লভূম রাজ্যের ও রাজপরিবারের বহু লোকের মৃত্যু হলে এই পূজার প্রচলন হয়। দুইজন পুরোহিত একমাত্র রাজপরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে দেবীঘটের দিকে পিছন ফিরে খচ্চর বাহিনীর পূজা করেন। পাঁচ পোয়া করে বাদশাভোগ চাল, মুগ ডাল, ঘি, কাঁচকলা ও সৌন্ধব লবণ দিয়ে রান্না করা এই পূজার বিশেষ ভোগ সুর্যোদয়ের পূর্বেই রাজপরিবারের সদস্যদের খেয়ে নিতে হয়।[২]

বিসর্জন[সম্পাদনা]

মহাদশমীর দিন পান্তা ভাত দিয়ে দেবীর ভোগ তৈরী করা হয়। প্রাচীন ঐতিহ্য অনুযায়ী স্থানীয় রাউতখন্ডের ন্যুলে সম্প্রদায়ের লোকেরা নীলকন্ঠ পাখি নিয়ে আসেন। দেবীমূর্তিকে বিসর্জন না দিয়ে দেবীঘটকে স্থানীয় রামসায়রে নবপত্রিকাসহ বিসর্জন দেওয়া হয়।[২]

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মল্লভূম বিষ্ণুপুর, মনোরঞ্জন চন্দ্র, দে'জ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০০৪
  2. সহস্রাব্দ প্রাচীন মল্লভূমের মৃন্ময়ী মায়ের পুজো, দেবপ্রসাদ পিয়াদা, সাপ্তাহিক বর্তমান, বর্ষ ২৬, সংখ্যা ২২, ৫ই অক্টোবর, ২০১৩