মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক
জন্ম১৮৬০
বাউইগাছি, শান্তিপুর, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান ভারত)
মৃত্যু৩০ নভেম্বর ১৯৩৩
পেশাকবি, সাংবাদিক

মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক (১৮৬০-১৯৩৩) অন্যতম প্রসিদ্ধ বাঙালি কবি। পেশাগত দিক থেকে তিনি একজন সাংবাদিকও ছিলেন। বাঙালি-মুসলমানদের জন্য সর্বপ্রথম পাঠ্যপুস্তক রচনাও তার অন্যতম কৃতিত্ব। মূল ফারসি থেকে শাহনামা কাব্যের প্রথমাংশের অনুবাদ তার অমর কীর্তি।

জন্ম ও পরিবার[সম্পাদনা]

মোজাম্মেল হক (১৮৬০) বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদিয়া জেলার অন্তর্গত শান্তিপুরের বাউইগাছি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।[১][২] তার পিতার নাম নাসিরউদ্দিন আহমেদ। স্যার আজিজুল হক ছিলেন তার জ্যেষ্ঠ পুত্র। অল্প বয়সে পিতাকে হারান। এরপর তার নানার কাছে শান্তিপুরে তিনি লালিতপালিত হন।

শিক্ষা ও কর্মজীবন[সম্পাদনা]

মোজাম্মেল হক বাল্যকাল থেকে তিনি একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি তামাচিকা বাড়ি ইংলিশ স্কুল ও এরপর শান্তিপুর মিউনিসিপাল উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করেন। কলকাতা সাপ্তাহিক সময়ে তিনি সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ৪০ বছর যাবত শান্তিপুর মিউনিসিপালটির কমিশনার ও তিন বছর ভাইস-চেয়ারম্যান ছিলেন। পাশাপাশি নদীয়ার জেলা বোর্ডের শিক্ষা কমিটির সদস্য হিসেবে ৩০ বছর ও অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ২০ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এখানে তিনি প্রখ্যাত কবি কাজি নজরুল ইসলামের সাক্ষাত পান এবং তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে তিনি শান্তিপুর জুনিয়র জুবিলি মাদ্রাসার শিক্ষক নিযুক্ত হন। তার পুত্র স্যার আজিজুল হক বাংলার শিক্ষামন্ত্রী হলে তিনি মাদ্রাসাটিকে শান্তিপুর মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে রূপান্তর করেন।

সাহিত্য কর্ম[সম্পাদনা]

বাল্যকাল থেকে মোজাম্মেল হকের মধ্যে কবি প্রতিভা দেখা যায়। তিনি একজন ভিন্নধর্মী কবি ও লেখক হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি গদ্য ও পদ্য দুই ধারাতেই অবদান রেখেছেন। মুসলিম রেনেসার ধারণা তার কবিতায় প্রভাব ফেলেছে। জীবনীভিত্তিক গদ্য ও উপন্যাস রচনায় তিনি পারদর্শী ছিলেন। ১৯০৯ সালে তিনি ফারসি ভাষা থেকে বাংলায় শাহনামা অনুবাদ করেন। ১৯১৭ সালে তিনি জনপ্রিয় উপন্যাস জোহরা রচনা করেন। বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকাতে তিনি সেক্রেটারি ছিলেন। এই পত্রিকায় কাজি নজরুল ইসলামের অনেক লেখা প্রকাশিত হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখার্জীকে তার বেশ লেখা প্রভাবিত করে এবং তিনি ১৯১৯ সালে তাকে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষার বাংলা ভাষার পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। ১৯১৯ থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে বহাল ছিলেন।

গুরুত্বপূর্ণ কর্ম[সম্পাদনা]

তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাব্য হল:

  • কুসুমাঞ্জলি (১৮৮১)
  • অপূর্ব দর্শন কথা (১৮৮৫)
  • প্রেমাহার (১৮৯৮)
  • জাতীয় ফোয়ারা (১৯১২)
  • তাপস কাহিনী (১৯১৪)
  • ইসলাম সঙ্গীত (১৯২৩)

তার কিছু জনপ্রিয় রচনা হল:

  • মহর্ষি মনসুর (১৮৯৬)
  • ফেরদৌসি চরিত (১৮৯৮)
  • হজরত মুহাম্মদ (১৯০৩)
  • শাহনামা (১৯০৯)
  • খাজা মইনউদ্দিন চিশতি (১৯১৮)
  • হাতেমতাই (১৯১৯)
  • টিপু সুলতান (১৯৩১)
  • শান্তিপুরের রাসলীলা

তিনি দুইটি উপন্যাস রচনা করেছেন। এগুলো হল জোহরা (১৯১৭) ও দরফ গাজি খান (১৯১৭)।

মোজাম্মেল হকের ‘ফেরসৌসী-চরিত’ গ্রন্থটির প্রকাশকাল ১৫ই আশ্বিন,১৩০৫ বঙ্গাব্দ, যা খুবই জনপ্রিয় হয়েছিলো; এর দ্বাদশ মুদ্রণ হয় বৈশাখ ১৩৫৫ সালে। জনপ্রিয়তার নমুনা দেয়া যেতে পারে তৎকালিন অনেক পত্রপত্রিকার প্রশংসাব্যঞ্জক সমালোচনার অনেকগুলো থেকে একটি :

“শেষে পাঠকবর্গকে একটি বিশেষ অনুরোধ করিতেছি এই যে, তাঁহারা এক একখানি ‘ফেরসৌসী-চরিত’ আনাইয়া পাঠ করুন। এখানিও ‘মহর্ষি মনসুরে’র ন্যায় উপাদেয়,- পাঠ করিয়া বিশেষ তৃপ্তি লাভ হইবে, একথা সুস্পষ্টই বলিত পারি।” (এডুকেশন গেজেট, কলিকাতা-১৩০৭)

তার বাংলা ভাষাজ্ঞান ও সাহিত্যবোধের কারণে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়এর তৎকালীন উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তাকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার বাংলা ভাষার পরীক্ষক নিযুক্ত করেন।(১৯১৯)

সম্পাদনা[সম্পাদনা]

মোজাম্মেল হক শান্তিপুর নামে মাসিকপত্র, মোসলেম ভারত (১৯২০), লহরি (১৮৯৯) পত্রিকা সম্পাদনা[১] এবং মুদগাল, শান্তিপুর দীপিকা, বিশ্বদূত, যুবক, নওরোজ ইত্যাদি মাসিক সাহিত্য পত্রিকার সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি প্রকাশিত বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনায়ো তিনি নিয়োজিত ছিলেন। মুসলিম সমাজের কুসংস্কার, ধর্মীয় গোড়ামি, পশ্চাৎপসারণতা ও ঔদাসিন্য এসবের বিরুদ্ধে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ তাকে কাব্য কন্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে। মোসলেম ভারত একটি অসাম্প্রদায়িক পত্রিকা ছিল। পত্রিকার প্রথম পাতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বার্তা ছাপা হয়। অনেক প্রখ্যাত লেখক এতে লিখেছেন।

মাসিক সাহিত্য পত্রিকা "মোসলেম ভারত। মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক ও তার পুত্র আফজালুল হক ছিলের এর সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদক।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৯৩৩ সালের ৩০ নভেম্বর শান্তিপুরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ৫৮৪, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. http://bn.banglapedia.org/index.php?title=হক,_মোহাম্মদ_মোজাম্মেল
  • Kalyani Nag, Santipur Prasanga: Vol-2 ( Santipur,1998 )
  • Kalikrishna Bhattacharya, Santipur Parichoy:-Vol 1 & 2 (Santipur Municipality, 1952)
  • Letter written by Rabindranath Tagore to Mohammed Mozammel Haque (Page No.6) [১]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]