মিয়ানমারের ভূগোল

স্থানাঙ্ক: ২২°০০′ উত্তর ৯৮°০০′ পূর্ব / ২২.০০০° উত্তর ৯৮.০০০° পূর্ব / 22.000; 98.000
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মিয়ানমারের ভূগোল
মহাদেশএশিয়া
অঞ্চলদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া
স্থানাঙ্ক২২°০০′ উত্তর ৯৮°০০′ পূর্ব / ২২.০০০° উত্তর ৯৮.০০০° পূর্ব / 22.000; 98.000
আয়তন৪০তম
 • মোট৬,৭৬,৫৭৮ কিমি (২,৬১,২২৮ মা)
সীমানাস্থল সীমানা:
৬,৫২২ কিমি (৪,০৫৩ মা)
বাংলাদেশ:
২৭১ কিমি (১৬৮ মা)
চীন:
২,১২৯ কিমি (১,৩২৩ মা)
ভারত:
১,৪৬৮ কিমি (৯১২ মা)
লাওস
২৩৮ কিমি (১৪৮ মা)
থাইল্যান্ড:
২,৪১৬ কিমি (১,৫০১ মা)
সর্বোচ্চ বিন্দুহকাকাব রাজি
সর্বনিম্ন বিন্দুআন্দামান সাগর
দীর্ঘতম নদীইরাবতী নদী
বৃহত্তম হ্রদইন্দাওগি হ্রদ
এক্সক্লুসিভ অর্থনৈতিক অঞ্চল৫,৩২,৭৭৫ কিমি (২,০৫,৭০৬ মা)
কোপেন জলবায়ু শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী মিয়ানমারের (বার্মা) মানচিত্র।

মিয়ানমার (বার্মা নামেও পরিচিত) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সবচেয়ে উত্তর-পশ্চিম দেশ। এটি ইন্দোচীন উপদ্বীপে অবস্থিত মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উত্তর-পশ্চিমতম দেশ।[১] ২৬১২২৮ বর্গ মাইল (৬৭৬,৫৭৮ বর্গ কিমি) এলাকা নিয়ে এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মূল ভূখণ্ডের বৃহত্তম। ঘুড়ি আকৃতির দেশটি মালয় উপদ্বীপের পশ্চিম উপকূল বরাবর ১২৭৫ মাইল (২০৫০ কিমি) পর্যন্ত ১০' উত্তর থেকে ২০' উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত প্রসারিত।[২] এটি হিমালয়ের দক্ষিণ-পূর্বে, ভারতীয় এবং ইউরেশীয় পাতগুলো বরাবর অবস্থিত। এর পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর এবং এর দক্ষিণে আন্দামান সাগর। দেশটি পশ্চিমে আরাকান পর্বতমালা এবং পূর্বে আধিপত্য বিস্তারকারী শান মালভূমি সহ বিভিন্ন পর্বতশ্রেণীর মধ্যে অবস্থিত। কেন্দ্রীয় উপত্যকা অঞ্চলের মাঝে ইরাবতী নদী আছে, এটি দেশের সবচেয়ে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নদী যার অববাহিকায় বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন যেখানে ৩৯.৫ মিলিয়ন মানুষ বাস করে।[৩] দেশটিতে ১৩৫টি সরকারীভাবে স্বীকৃত গোষ্ঠী সহ অনেক বৈচিত্র্যময় জাতিগত গোষ্ঠীর আবাসস্থল। এটি কৌশলগতভাবে ভারত মহাসাগরের জাহাজ চলাচলের রুটগুলোর নিকটে অবস্থিত। এর প্রতিবেশী দেশগুলো হলো চীন, ভারত, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড এবং লাওস

সীমানা[সম্পাদনা]

মোট স্থল সীমানার দৈর্ঘ্য: ৬,৫২২ কিলোমিটার (৪,০৫৩ বর্গ মাইল)[১]

মোট ভূমির ক্ষেত্রফল: ৬,৬৭,৫৭৮ বর্গ কিলোমিটার (২,৬১,২২৮ বর্গ মাইল)

সীমানা দেশসমূহ:

বাংলাদেশের সাথে ২৭১ কিলোমিটার (১৬৮ মাইল), ভারতের সাথে ১,৪৬৮ কিলোমিটার (৯১২ মাইল), চীনের সাথে ২,১২৯ কিলোমিটার (১,৩২৩ মাইল), লাওসের সাথে ২৩৮ কিলোমিটার (১৪৮ মাইল) এবং থাইল্যান্ডের সাথে ২,৭১৬ কিলোমিটার (১,৫০১ মাইল) সীমানা রয়েছে।

মোট উপকূলরেখার দৈর্ঘ্য: ২,২২৮ কিলোমিটার (১,৩৮৪ মাইল)

মোট জলাঞ্চলের ক্ষেত্রফল: ২৩,০৭০ বর্গ কিলোমিটার (৮,৯১০ বর্গ মাইল)

জলবায়ু[সম্পাদনা]

১০০০ মিটার (৩,২৮১ ফুট) নীচের নিম্নভূমিতে ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু বিদ্যমান। গ্রীষ্মের সময় মেঘলা, বৃষ্টিপাত, উষ্ণ, আর্দ্র (দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু, জুন থেকে সেপ্টেম্বর); শীতের সময় কম মেঘলা, স্বল্প বৃষ্টিপাত, হালকা তাপমাত্রা, কম আর্দ্রতা (উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু, ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল)।

উচ্চতা অনুসারে জলবায়ু পার্বত্য অঞ্চলে পরিবর্তিত হয়; ২,৫০০ মিটারে (৮,২২২ ফুট) উপক্রান্তীয় মৃদু জলবায়ু, ৩,০০০ মিটারে (৯,৮৮৩ ফুট) মৃদু জলবায়ু, ৩,৫০০ মিটারে (১১,৪৮৩ ফুট) শীতল আল্পাইন জলবায়ু এবং আলপাইন অঞ্চলের উপরে, ঠান্ডা, কনকনে তুন্দ্রা ও আর্কটিক জলবায়ু। উচ্চতর স্থানে ভারী তুষারপাত হয় বিশেষত উত্তরে।

পর্বতমালা[সম্পাদনা]

মিয়ানমার এর সীতাতং উপত্যকা, সিন্ডউইন উপত্যকা, জিবিউ তুংডান, মিন-উন টুংডান, হমন-কিন তুংডান এবং গাঙ্গা তৌংদনের ছোট পর্বতমালা পাশাপাশি তুলনামূলকভাবে নীচু পাহাড় বাগো ইয়োমা (পেগু রেঞ্জ) দ্বারা চিহ্নিত। বাগো ইয়োমা মধ্য মিয়ানমারে ইরাবতী এবং সিততাং নদীর মধ্যে একটি শৃঙ্খল। মধ্য উপত্যকা অঞ্চলটি উত্তরের খাড়া, উচ্চভূমি দ্বারা সীমাবদ্ধ, যেখানে হেনগডুয়ান সিস্টেমের দক্ষিণ প্রান্তে মিয়ানমার এবং চীনের সীমানা তৈরি হয়েছে।[৪] দেশের উত্তর প্রান্তে ৫,৮৮১ মিটার (১৯,২৯৫ ফুট) হকাকাবো রাজি অবস্থিত যা দেশের সর্বোচ্চ চূড়া। এই পর্বতটি হিমালয়ের পাদদেশ থেকে আসাম, নাগাল্যান্ড এবং মিজোরামের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর সমান্তরাল রেঞ্জগুলোর একটি ধারার অংশ।

পশ্চিমে আরাকান পর্বতমালা মণিপুর থেকে দক্ষিণ মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্য হয়ে প্রায় বঙ্গোপসাগরের তীরে কেপ নেগ্রাইস পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। আরাকান রেঞ্জের মধ্যে নাগা পাহাড়, চিন পাহাড় এবং পাটকাই রেঞ্জ রয়েছে যার মধ্যে লুশাই পাহাড় রয়েছে।[৫]

পূর্ব মিয়ানমারে শান পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়াটি হলো ২,৫৬৩ মিটার উঁচু লোই পাঙ্গনাও যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম চূড়ান্ত শিখর।[৬][৭] শান পাহাড় কারেন হিলস, ডভানা রেঞ্জ এবং টেনাসেরিম হিলসের সাথে থাইল্যান্ডের সাথে একটি প্রাকৃতিক সীমানা তৈরি করে। দক্ষিণ মিয়ানমার মূলত বিলিয়াকতংয়ের পশ্চিমা অংশ নিয়ে গঠিত যা তেনাসরিম রেঞ্জের সর্বোচ্চ অংশ। এটি দক্ষিণে প্রসারিত হয়েছে এবং মালয় উপদ্বীপের কেন্দ্রীয় পরিসর তৈরি করে।[৮]

প্রধান চূড়াসমূহ[সম্পাদনা]

নদী[সম্পাদনা]

বার্মার মূল নদী ইরাবতী মধ্য বার্মা অববাহিকা হয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে প্রশস্ত বদ্বীপে শেষ হয়। মেকং নদীটি তিব্বতি মালভূমি থেকে চীনের ইউনান প্রদেশ এবং উত্তর-পূর্ব বার্মা হয়ে লাওস পর্যন্ত প্রবাহিত হয়।

পূর্বে স্যালুইন এবং সিত্তং নদী শান পাহাড়ের পশ্চিম পাশ এবং দাওয়ানা রেঞ্জের উত্তর প্রান্তে বয়ে চলেছে। বার্মার সংকীর্ণ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে, ইয়ে, হেইঞ্জ, দাভেই (তাভয়), গ্রেট তেনাসেরিম (তানিন্থারি) এবং লেনিয়া নদী তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত এবং আন্দামান সাগরে প্রবাহিত হয়েছে। আরও দক্ষিণে ক্রাবুরী নদী থাইল্যান্ড এবং বার্মার দক্ষিণ সীমানা গঠন করে।[৯]

সামুদ্রিক দাবি[সম্পাদনা]

মিয়ানমারের ৫০ তম বৃহত্তম এক্সক্লুসিভ অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে যার ক্ষেত্রফল ৫৩২,৭৭৫ বর্গ কিমি (২০৫,৭০৬ বর্গ মাইল)। এর মধ্যে ১৬টিরও বেশি দ্বীপ এবং মার্গুই দ্বীপপুঞ্জ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সঙ্গতিপূর্ণ অঞ্চল: ২৪ এনএমআই (নটিক্যাল মাইল) (২৭.৬ মাইল; ৪৪.৪ কিমি)

কন্টিনেন্টাল শেল্ফ: ২০০ এনএমআই (২৩০.২ মাইল; ৩৭০.৪ কিমি)

এক্সক্লুসিভ অর্থনৈতিক অঞ্চল: ৫৩২,৭৭৫ বর্গ কিমি (২০৫,৭০৬ বর্গ মাইল), ২০০ এনএমআই (২৩০.২ মাইল; ৩৭০.৪ কিমি)

দ্বীপসমূহ[সম্পাদনা]

  • আপাও য়ে কিউন
  • কালভেন্তুরাস দীপপুঞ্জ
  • চেদুপা দ্বীপ
  • কোকো দীপপুঞ্জ
  • কাইঙ্গাথুয়ান দ্বীপ
  • কালেগাউক দ্বীপ
  • ককুনইয়ে কিউন
  • কিউঙ্গিই দ্বীপ
  • মস্কস দীপপুঞ্জ
  • মিঙ্গান দ্বীপ
  • নান্থা কিউন
  • প্রেপারিস
  • রাম্রি দ্বীপ
  • উঙ্গুয়ান
  • ওয়া কিউন
  • জালাত তাউং
  • মারগুই দীপপুঞ্জ
    • অরিওল দ্বীপ
    • বেনতিক কিউন
    • ক্রিস্টি দ্বীপ, দীপপুঞ্জের দক্ষিণতম দ্বীপ
    • কাদান কিউন, দীপপুঞ্জের সবচেয়ে বড় দ্বীপ
    • লানবি কিউন
    • লেতসক-আউ কিউন
    • মালী কিউন, দীপপুঞ্জের উত্তরতম দ্বীপ
    • সাগান্থিত কিউন
    • থান কিউন

ভূমির ব্যবহার ও প্রাকৃতিক সম্পদ[সম্পাদনা]

মিয়ানমারের প্রাকৃতিক সম্পদ হলো পেট্রোলিয়াম, কাঠ, টিন, অ্যান্টিমনি, দস্তা, তামা, টাংস্টেন, সীসা, কয়লা, মার্বেল, চুনাপাথর, মূল্যবান পাথর, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং জলবিদ্যুৎ

আবাদি জমি ১৬.৫৬%
স্থায়ী ফসল ২.২৫%
অন্যান্য জমি ৮১.২০% (২০১২)
সেচ সম্পন্ন ভূমি ২১,১০০ বর্গ কিমি (২০০৪)
মোট নবায়নযোগ্য পানিসম্পদ: ১,১৬৮ কিমি (২৮০ মা) (২০১১)
মোট মিঠা পানির উত্তোলন (গার্হস্থ্য/শিল্প/কৃষি) ৩৩.২৩ ঘন মিটার/প্রতি সেকেন্ড
মিঠাপানি উত্তোলন, মাথাপিছু ৭২৮.৬ ঘন মিটার/প্রতি সেকেন্ড (২০০৫)

প্রাকৃতিক দুর্যোগ[সম্পাদনা]

প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প এবং ঘূর্ণিঝড়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষাকালে বন্যা এবং ভূমিধসের ঘটনা প্রচলিত। পর্যায়কালীন খরাও ঘটে। মিয়ানমারে সবচেয়ে ভয়ানক ঘূর্ণিঝড়টি ছিল ২০০৮ সালের ঘূর্ণিঝড় নার্গিস। চলমান জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মহাসাগরগুলো উষ্ণ হয়ে উঠেছে এবং মিয়ানমারের জন্য ঘূর্ণিঝড় আরও তীব্র এবং ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে।[১০]

পরিবেশ[সম্পাদনা]

পরিবেশগত সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে শিল্প দূষণের ফলে বনভূমি, বায়ু, মাটি এবং পানি দূষণ। অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন এবং নিম্নমানের পানি বিশুদ্ধকরন রোগবিস্তারে অবদান রাখে।

আন্তর্জাতিক চুক্তি[সম্পাদনা]

গৃহীত: জীববৈচিত্র্য, মরুভূমি, বিপন্ন প্রজাতি, সমুদ্রের আইন, পারমাণবিক পরীক্ষার নিষেধাজ্ঞা, ওজোন স্তর সুরক্ষা, জাহাজ দূষণ, ট্রপিকাল টিম্বার ৮৩ ও ট্রপিকাল টিম্বার ৯৪ (চুক্তির নাম)।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "The World Factbook — Central Intelligence Agency"www.cia.gov (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১০-১১-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-০৩ 
  2. "Myanmar"britannica.com (ইংরেজি ভাষায়)। Britannica। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২২ 
  3. "Irrawaddy River Basin"WLE Great Mekong। WLE Greater Mekong। ১৬ মার্চ ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ মার্চ ২০২২ 
  4. "Myanmar in brief"। ৪ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  5. "Rakhine Mountains" Encyclopædia Britannica
  6. "Loi Pangnao (mountain) - Region: Shan State, Myanmar"। ২৩ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১১ 
  7. Peaklist - Burma and Eastern India
  8. An Introduction to Burma (Myanmar)
  9. Avijit Gupta, The Physical Geography of Southeast Asia, Oxford University Press, 2005. আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৯২৪৮০২-৫
  10. Stokke, Kristian; Vakulchuk, Roman and Indra Overland (2018) Myanmar: A Political Economy Analysis. Norwegian Institute of International Affairs (NUPI). Report commissioned by the Norwegian Ministry of Foreign Affairs.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]