মহাপ্রস্থানিকপর্ব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মহাপ্রস্থানের পথে দ্রৌপদীর মৃত্যু

মহাপ্রস্থানিকপর্ব (সংস্কৃত: महाप्रस्थानिक पर्व) মহাভারতের ১৮ টি পর্বের মধ্যে ১৭তম পর্ব । এতে ৩ টি অধ্যায় আছে ।[১][২] এটি মহাভারতের ক্ষুদ্রতম পর্ব। মহাপ্রস্থানিকপর্বে পাণ্ডবদের ভারত ভ্রমণ, হিমালয় অভিমুখে যাত্রা এবং মেরু পর্বৎ থেকে স্বর্গারোহণ এর কথা বর্ণিত হয়েছে। তাঁদের প্রস্থানের পথে এক কুকুর তাঁদের পিছু নেয়। যাত্রাপথে সবার আগে দ্রৌপদী প্রাণ হারান। মধ্যপথে বাকি চার পাণ্ডবও প্রাণ হারান। কেবল যুধিষ্ঠির একা মেরু পর্বতে আরোহণ করেন। বাকিদের স্বশরীরে স্বর্গে না যাওয়ার কারণও এখানে বলা হয়েছে।[১][৩]

গঠনশৈলী ও অধ্যায়সমূহ[সম্পাদনা]

মহাপ্রস্থানিকপর্বে মাত্র ৩ টি অধ্যায় আছে এবং কোন উপপর্ব নেই ।[২] এটি এই গ্রন্থের সবচেয়ে ছোট পর্ব ।[৪]

পটভূমিকা[সম্পাদনা]

মৌষলপর্বের শেষে ঋষি বেদব্যাস অর্জুন ও তার ভাইদের রাজ্য ত্যাগ করে প্রস্থান করতে বলেন কারণ তারা যে উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে এসেছিলেন তা পূর্ণ হয়েছে । অর্জুন যুধিষ্ঠিরকে ব্যাসের উপদেশ জানান এবং তার ভাইয়েরা এবং দ্রৌপদী মহাপ্রস্থানের জন্য রাজি হন ।[৫]

সারাংশ[সম্পাদনা]

পরীক্ষিৎকে রাজ্যে অভিষিক্ত করে এবং যুযুৎসুর উপর রাজ্য পালনের ভার দিয়ে যাদবদের একমাত্র বংশধর কৃষ্ণপৌত্র বজ্রকে ইন্দ্রপ্রস্থে অভিষিক্ত করে যুধিষ্ঠির হিমালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করলেন । যাত্রাপথে এক কুকুর তাঁদের পিছু নিল । তারা বহু দেশ ঘুরে লৌহিত্য সাগরের তীরে উপস্থিত হলেন ।[২] অর্জুন আসক্তিবশত গাণ্ডীব ধনু ও অক্ষয় তূণ যুগল সঙ্গে এনেছিলেন এতে অগ্নি মূর্তিমান হয়ে সেগুলো বরুণ দেবকে ফেরত দিতে বলেন । অর্জুন তাই ধনু ও তূণ লৌহিত্য সাগরের জলে নিক্ষেপ করলেন । পৃথিবী প্রদক্ষিণের ইচ্ছায় তারা প্রথমে দক্ষিণে গেলেন এরপর লবণসমুদ্রের উত্তর তীর দিয়ে পশ্চিম দিকে গিয়ে সাগর প্লাবিত দ্বারকা নগরী দেখে উত্তর দিকে চললেন ।[২]

পাণ্ডবগণ বালুকার্ণব ও মেরুপর্বত দর্শন করে যোগযুক্ত হয়ে দ্রুত চলতে লাগলেন । যেতে যেতে সহসা দ্রৌপদী যোগভ্রষ্টা হয়ে ভূপতিত হন । ভীম তার মৃত্যুর কারণ জিজ্ঞাসা করলে যুধিষ্ঠির বলেন অর্জুনের প্রতি এঁর বিশেষ পক্ষপাত ছিল । কিছুক্ষণ পর সহদেব পড়ে গেলে ভীম তার মৃত্যুর কারণ জিজ্ঞাসা করেন; উত্তরে যুধিষ্ঠির বলেন সহদেব ভাবতেন তার চেয়ে বিজ্ঞ আর কেউ নেই । এরপর নকুল পড়ে গেলে ভীমের প্রশ্নের জবাবে যুধিষ্ঠির বলেন নকুল মনে করতেন তার তুল্য রূপবান আর কেউ নেই । কিছুদুর গিয়ে শোকার্ত অর্জুনও পড়ে গেলেন । অর্জুনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে যুধিষ্ঠির বলেন অর্জুন একদিনেই সকল শত্রু নাশ করার গর্ব করতেন যা তিনি পারেন নি; তাছাড়া তিনি অন্য ধনুর্বেদদের অবজ্ঞা করতেন ।[১] সবার শেষে ভীমও পড়ে গেলেন তিনি তার আসন্ন মৃত্যুর কারণ জিজ্ঞাসা করলে যুধিষ্ঠির বলেন ভীম অত্যন্ত ভোজন করতেন এবং অন্যের বল না জেনেই নিজ বলের গর্ব করতেন ।[৬]

এরপর ইন্দ্র রথে চেপে যুধিষ্ঠিরের কাছে এসে তাঁকে রথে উঠতে বলেন কিন্তু তিনি তার আত্মীয়দের ফেলে যেতে রাজি হন না ।[১] ইন্দ্র বলেন তারা দেহত্যাগ করে আগেই স্বর্গে গেছেন । এতে যুধিষ্ঠির তার সাথে আসা কুকুরকেও সঙ্গে নিতে প্রস্তাব করেন। কিন্তু ইন্দ্র বলেন যাঁর সাথে কুকুর থাকে তিনি স্বর্গে যেতে পারেন না। কিন্তু যুধিষ্ঠির বলেন শরণাগতকে ভয় দেখানো, স্ত্রীবধ, ব্রহ্মস্বহরণ ও মিত্রবধ এই চার কার্যে যে পাপ হয় ভক্তকে ত্যাগ করলেও সেই পাপ হয় তাই তিনি ভক্তকে ত্যাগ করবেন না। তখন কুকুররূপী ভগবান ধর্ম নিজ রূপ ধরে বলেন স্বর্গে তার তুল্য কেউ নেই। তিনি স্বশরীরে স্বর্গারোহণ করে অক্ষয়লোক লাভ করবেন। [২][৪]

উৎস[সম্পাদনা]

  1. Mahaprasthanika Parva The Mahabharata, Translated by Manmatha Nath Dutt (1905)
  2. Mahaprasthanika Parva The Mahabharata, Translated by Kisari Mohan Ganguli, Published by P.C. Roy (1893)
  3. John Murdoch (1898), The Mahabharata - An English Abridgment, Christian Literature Society for India, London, pages 132-137
  4. Bibek Debroy, The Mahabharata : Volume 3, আইএসবিএন ৯৭৮-০১৪৩১০০১৫৭, Penguin Books, page xxiii - xxiv of Introduction
  5. Mahaprasthanika Parva The Mahabharata, Translated by Kisari Mohan Ganguli, Published by P.C. Roy (1893)
  6. C Rajagopalachari (2008), Mahabharata, 52nd Editio, Bhavan's Book University. আইএসবিএন ৮১-৭২৭৬-৩৬৮-৯
  • রাজশেখর বসুর মহাভারত

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]