মদনমোহন তর্কালঙ্কার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মদনমোহন তর্কালঙ্কার
মদনমোহন তর্কালঙ্কার
মদনমোহন তর্কালঙ্কার
জন্ম(১৮১৭-০১-০৩)৩ জানুয়ারি ১৮১৭
বিল্বগ্রাম, বেথুয়াডহরী, নাকাশীপাড়া, নদীয়া জেলা, বাংলা প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ ভারত)[১][২]
মৃত্যু৯ মার্চ ১৮৫৮(1858-03-09) (বয়স ৪০–৪১)
স্মৃতিস্তম্ভআসান্নাগর মদন মোহন তর্কালঙ্কার কলেজ[৩], কৃষ্ণনাথ কলেজের সংস্কৃত বিভাগের স্নাতকোত্তর শাখার গ্রন্থাগার
আন্দোলনবাংলার নবজাগরণ
সন্তানভুবনমালা ও কুন্দমালা
পিতা-মাতারামধন চট্টোপাধ্যায় (পিতা)

মদনমোহন তর্কালঙ্কার (জন্ম: ১৮১৭ – মৃত্যু: ৯ই মার্চ, ১৮৫৮) ভারতীয় উপমহাদেশের ঊনবিংশ শতাব্দীয় অন্যতম পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব যিনি লেখ্য বাংলা ভাষার বিকাশে বিশেষ অবদান রেখে গেছেন। তিনি বাংলার নবজাগরণের অন্যতম অগ্রদূত হিসাবেও পরিগণিত। তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অধ্যাপক ছিলেন এবং বাল্যশিক্ষার জন্য একাধিক পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন।

জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়[সম্পাদনা]

তিনি ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে নদীয়া জেলায় বেথুয়াডহরী, নাকাশীপাড়ার বিল্বগ্রামে এক হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম রামধন চট্টোপাধ্যায়৷ তার দুই সন্তান ছিল যাদের নাম ভুবনমালা ও কুন্দমালা ছিল। [৪]

শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

তিনি সংস্কৃত কলেজের শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন, সেখানে তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সহপাঠী ছিলেন। তিনি পরবর্তীতে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের শিক্ষা গ্রহণ করেন।

কর্ম জীবন[সম্পাদনা]

তিনি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। পরবর্তীতে ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে তিনি মুর্শিদাবাদ জেলার বিচারক নিযুক্ত হন। তিনি ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে মুর্শিদাবাদের এবং ১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দে কান্দির ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হয়েছিলেন।[৫]

সমাজ সংস্কারক[সম্পাদনা]

তিনি ছিলেন 'হিন্দু বিধবা বিবাহ' প্রথার অন্যতম উদ্যোক্তা। ১৮৫৭ সালে প্রথম বিধবা বিবাহ হয়। ওই বিয়ের পাত্র শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্ন এবং পাত্রী ছিলেন কালীমতি। তাঁদের দুজনের সন্ধান ও যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে মদনমোহন তর্কালঙ্কার ছিলেন অন্যতম।[৬]। স্ত্রী শিক্ষার প্রসারে তার অবদান অনস্বীকার্য। ১৮৪৯ এ বেথুন কর্তৃক হিন্দু মহিলা স্কুল প্রতিষ্ঠিত হলে নিজের দুই মেয়েকে সেখানে ভর্তি করেন। নিজে বিনা বেতনে এই স্কুলে বালিকাদের শিক্ষা দিতেন। ১৮৫০ সালে সর্বশুভকরী পত্রিকায় স্ত্রী শিক্ষার পক্ষে একটি যুগান্তকারী প্রবন্ধও লেখেন। [৭]

প্রণীত গ্রন্থাবলী[সম্পাদনা]

মদনমোহন তর্কালঙ্কার বাংলা ভাষায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য যথেষ্ট শ্রম ব্যয় করেন। তাঁর রচিত শিশুশিক্ষা গ্রন্থটি ঈশ্বরচন্দ্র রচিত "বর্ণপরিচয়" গ্রন্থটিরও পূর্বে প্রকাশিত হয়।[৮] তিনি 'শিশুশিক্ষা' পুস্তকটির 'প্রথম ভাগ' ১৮৪৯ সালে এবং 'দ্বিতীয় ভাগে' ১৮৫০ সালে প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে পুস্তকটির 'তৃতীয় ভাগ' এবং 'বোধোদয়' শিরোনামে 'চতুর্থ ভাগ' প্রকাশিত হয়। 'বাসব দত্তা' ও 'রসতরঙ্গিনী' নামে তাঁর দুটি গ্রন্থ ছাত্রাবস্থায় রচিত হয়।[৯]

তাঁর রচিত 'আমার পণ' কবিতাটি বাংলাদেশে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা পাঠ্যবইয়ের অন্যতম একটি পদ্য।[১০] তাঁর বিখ্যাত কিছু পংক্তির মধ্যে রয়েছে: ‘পাখী সব করে রব, রাতি পোহাইল’; ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারা দিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি’; ‘লেখাপড়া করে যে/ গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে’[১১]

তিনি ১৪টি সংস্কৃত বই সম্পাদনা করেন।[৬] তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে:

  • রসতরঙ্গিণী (১৮৩৪)
  • বাসবদত্তা (১৮৩৬)
  • শিশু শিক্ষা - তিন খণ্ড (১৮৪৯ ও ১৮৫৩)

মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ৯ মার্চ কান্দিতে কলেরা রোগে ভুগে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।[৫]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. 196Th Birth Centenary Of Madan Mohon Tarkalankar Observed In Nakashipara - News from Nadia[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. কবিবর মদনমোহন তর্কালঙ্কারের জীবনচরিত ও তদগ্রন্থ সমালোচনা, The New Indian Press, কলিকাতা, ১৮৭০
  3. ":: Asannagar Madan Mohan Tarkalankar College ::"। ২৮ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৩ 
  4. কবিবর মদনমোহন তর্কালঙ্কারের জীবনচরিত ও তদগ্রন্থ সমালোচনা, The New Indian Press, কলিকাতা, ১৮৭০
  5. আনন্দবাজার পত্রিকা - মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. আনন্দবাজার পত্রিকা - মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. প্রথম খণ্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৩৯১। 
  8. বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাসাগর, ডক্টর অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, দেজ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০০৫, পৃ.৮৪-৫
  9. "যারা কবি হতে চায় তাদের গীতবিতান পড়তে বলি"। ২ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৩ 
  10. Majumdar, Swapan, Literature and Literary Life in Old Calcutta, in Calcutta, the Living City, Vol I, edited by Sukanta Chaudhuri, pp112-113, Oxford University Press, আইএসবিএন ০-১৯-৫৬৩৬৯৬-১.
  11. ":: Dainik Destiny :: লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে"। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৩ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]