ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক (ইংরেজি: Land Development Bank) এক বিশেষ ধরনের ব্যাংক[১] যা সদস্যগণের সঞ্চয় ও আমানতের দ্বারা সৃষ্ট তহবিল পুনরায় ঋণ ও সেবা প্রদানের মাধ্যমে সদস্যগণের মধ্যে বিনিয়োগ করে। এই ঋণ সহজশর্তে তাদের গৃহ নির্মাণ, ভূমি উন্নয়ন, কৃষি কর্মকাণ্ড ও অন্যান্য অর্থনৈতিক খাতে দেওয়া হয়। বর্তমান বিশ্বে একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংকের বিকল্প নেই। রাষ্ট্রকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাখতে এর ভূমিকা অপরিসীম। এছাড়া তৃণমূল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লেন-দেন, সম্পর্ক উন্নয়ন ইত্যাদির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে থাকে এ প্রতিষ্ঠানটি। ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক সদস্য কিংবা অন্য ব্যক্তি কর্তৃক প্রদেয় সঞ্চিত অর্থ জমা রাখে এবং ঐ অর্থ উৎপাদনমুখী খাতে নিয়োজিত করে। নির্দিষ্ট সময় বা মেয়াদান্তে সদস্যগণের জমাকৃত অর্থের উপর মুনাফা প্রদান করে। এতে করে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা আরো সুদৃঢ় হয়।[২]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক প্রাচীনতম আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এর রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্য। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়ন জন্য ভারত উপমহাদেশে সর্ব প্রথম পাঞ্জাবে ১৯২০ সালে ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক যাত্রা শুরু করে। এরপর ভারতের চেন্নাই এলাকায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এই ব্যাংক গড়ে উঠে। অতীত বিশ্বে এটি ভূমি ব্যাংক, জমি বন্ধকী ব্যাংক, সঞ্চয় ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ইত্যাদি নামে পরিচিত। আধুনিক বিশ্বে এর নাম ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক। শুরুটা অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সূচনা হলেও এর বর্তমান কার্যক্রম বাণিজ্যিক।

প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

পৃথিবীতে তিন প্রকৃতির ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক দেখা যায়- রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও ব্যক্তিগত। রাষ্ট্রায়ত্ত ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক রাষ্ট্র বা সরকার কর্তৃক পরিচালিত। এই ধরনের ব্যাংকের পরিশোধিত শেয়ার মূলধনের ৫০% এর অধিক সরকারের মালিকানায় থাকে, ক্ষেত্রমত, এর মোট ঋণের বা অগ্রিমের ৫০% এর অধিক সরকার প্রদান করে। সংশ্লিষ্ট আইন বা অধ্যাদেশের আওতায় স্বায়ত্তশাসিত ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক স্থাপিত ও পরিচালিত হয়। এতে অনধিক ৫০% শেয়ার বা ঋণ সরকারের থাকে বা থাকতে পারে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে স্বায়ত্তশাসিত ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক সমবায় পদ্ধতিতে চালনা হয়। তাই কোনো কোনো দেশে এটি সমবায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক নামেও সুখ্যাত। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ভূমি উন্নয়ন ব্যাংকে সরকারের তেমন কোন শেয়ার বা ঋণ থাকে না বলেই চলে। এর গঠন, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা জয়েন্ট স্টক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর আইন-বিধির দ্বারা নির্ধারিত। বাংলাদেশে স্বায়ত্তশাসিত ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক প্রগতি কো-অপারেটিভ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড রয়েছে, কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ও ব্যক্তিগত মালিকানাধীন কোনো ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক নেই।

তহবিল[সম্পাদনা]

ঋণ ও অগ্রিম প্রদান, নিজস্ব কারবার পরিচালনা, দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ ও অন্যান্য কার্য সম্পাদন জন্য ভূমি উন্নয়ন ব্যাকের অনেক মোটা অঙ্কের তহবিল গঠন করতে হয়। এই তহবিল সাধারণত নিম্নবর্ণিত উৎস থেকে আসে-

  1. শেয়ার মূলধন
  2. সদস্য বা জনসাধারণ থেকে বিভিন্ন আমানত ও সঞ্চয় গ্রহণ
  3. বিভিন্ন ঋণপত্র ইস্যু
  4. ঋণ গ্রহণ
  5. সরকারী, দেশি-বিদেশি আর্থিক অনুদান, সহযোগিতা
  6. অন্যান্য উৎস ও তহবিল

বিনিয়োগ[সম্পাদনা]

প্রত্যেক ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক উৎপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগ করতে পারে। উৎপাদনমুখী খাত বলতে সেটা হতে পারে কৃষি বা কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ, মৎস্য চাষ, গবাদি পশু-পাখি পালন, ভূমি উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা, গৃহায়ন, শিল্প, বাণিজ্য কিংবা অন্য কোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। এর বিনিয়োগ উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা ও আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি। এটি নানা রকম ঋণ, কারিগরি ও অন্যান্য সাহায্য প্রদান করে। তবে পরীক্ষিত ও পুরোনো সদস্যগণ একই সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদি উচ্চ ঋণ সুবিধা লাভ করেন। নতুন ও দক্ষশীল সদস্যগণ স্বল্প মেয়াদি ক্ষুদ্র ঋণ, সাধারণ ঋণ ও উন্নয়নমূলক নানা পরামর্শ পান। ফলে তারাও একসময় পরীক্ষিত সদস্য হিসেবে বৃহৎ বিনিয়োগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। এ প্রকারের ব্যাংক থেকে সুযোগ-সুবিধা অর্জনের বিপরীতে সদস্য বা গ্রাহকগণ নামকাওস্ত সার্ভিস চার্জ দিয়ে থাকেন। ঋণের মুনাফার হার কখনো অসহনীয় হয় না। এর বার্ষিক হার ১১% থেকে ১২% হতে পারে। এছাড়াও নিজের আর্থিক সঞ্জিবনি শক্তি বৃদ্ধি এবং সাধারণ মানুষের সেবায় এটি, নিজস্ব আইন অনুসারে, বহুবিধ কারবার পরিচালনা করতে পারে।

করমুক্ত[সম্পাদনা]

মোটা অঙ্কেকের কর না দিয়ে পৃথিবীতে বাংকিং কার্যক্রম চালনা যেন অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে স্বায়ত্তশাসিত ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক কর অব্যাহতি পেয়ে থাকে। কোনো কোনো দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ও ব্যক্তিগত ভূমি উন্নয়ন ব্যাংকও কর অব্যাহতি পায়। প্রতিটি ভূমি উন্নয়ন ব্যাংকের সকল কার্যক্রম মানব কল্যাণ ও রাষ্ট্রীয় প্রগতির সঙ্গে জড়িত। তাই বিভিন্ন রাষ্ট্র একে এ সুবিধা প্রদান করছে। এর ফলে জনসাধারণ আমানতে বেশি মুনাফা এবং কম মুনাফায় ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন।

গুরুত্ব[সম্পাদনা]

ব্যাংক হিসেবে সহজলভ্যতা, তাৎক্ষনিকতা ও সর্বত্রগামিতার নিরিখে ভূমি উন্নয়ন ব্যাংকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ব্যাংক দুনিয়ার অভূতপূর্ব বিকাশের পরও তাই এ ব্যাংকটির গুরুত্ব উন্নত, উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত কোনো দেশেই হ্রাস পায়নি। বিভিন্ন রাষ্ট্রের জাতীয় উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে ভূমি উন্নয়ন ব্যাংক। এ ব্যাংকটি অগ্রসর হচ্ছে যথাযথভাবে আইন-কানুন মেনে, সময়ের চাহিদা পূরণ করে, সভ্যদের সহজাত প্রবৃত্তি আর বৈশ্বিক চিন্তা-চেতনার সাথে তাল মিলিয়ে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. TNAU। "LAND DEVELOPMENT BANK"। TNAU Agritech Portal। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৪ 
  2. "সমবায় সমিতি আইন, ২০০১ | ৫৯৷ সদস্যের বন্ধকী ঋণ পরিশোধে [সমবায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংকের] ক্ষমতা"bdlaws.minlaw.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৪