ভাসিলি জেইতসিভ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভাসিলি গ্রিগোরাইভিচ জেইতসিভ
অক্টোবর, ১৯৪২ সালে স্তালিনগ্রাদে মোসিন-নাগান্ত রাইফেল নিয়ে জেইতসিভ
ডাকনামভাসিয়া
জন্ম(১৯১৫-০৩-২৩)২৩ মার্চ ১৯১৫
ইযেলেনিনস্কোয়ে, রুশ সাম্রাজ্য
(বর্তমান চেলিয়াবিনস্ক ওব্লাস্ট)
মৃত্যুডিসেম্বর ১৫, ১৯৯১(1991-12-15) (বয়স ৭৬)
কিয়েভ, ইউক্রেন সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
আনুগত্য সোভিয়েত ইউনিয়ন
কার্যকাল১৯৩৭-১৯৪৫
পদমর্যাদাক্যাপ্টেন
যুদ্ধ/সংগ্রামমহান দেশপ্রেমের যুদ্ধ
পুরস্কারহিরো অব দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন
অর্ডার অব লেনিন
অর্ডার অব দ্য রেড ব্যানার
অর্ডার অব দ্য প্যাট্রিয়টিক ওয়ার, ১ম শ্রেণী
মেডেল ফর দ্য ডিফেন্স অব স্তালিনগ্রাদ
জার্মানির বিরুদ্ধে বিজয়ের পদক

ক্যাপ্টেন ভাসিলি জেইতসিভ (রুশ: Василий Григорьевич Зайцев, আ-ধ্ব-ব[vʌˈsʲilʲɪj ɡrʲɪˈɡorʲjevʲɪtɕ ˈzajtsɨf]); (জন্ম: ২৩ মার্চ, ১৯১৫ - মৃত্যু: ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৯১) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের একজন স্নাইপার ছিলেন। তার পুরো নাম ভাসিলি গ্রিগোরাইভিচ জেইতসিভ। বিশ্বযুদ্ধে তার কৃতিত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই তিনি মানব ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১০ নভেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৪২ সালের মধ্যে স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। এ সময়ে তিনি নাৎসী জার্মানীর একীভূত সামরিক বাহিনী ওয়েহমাস এবং অক্ষশক্তির ২২৫জন সাধারণ সৈনিককে হত্যা করেছিলেন। তার এ সফলতায় শত্রুপক্ষের ১১জন গুপ্তঘাতকও অন্তর্ভুক্ত ছিল।[১] ১০ নভেম্বরের পূর্বেই তিনি ৩২ জন অক্ষশক্তি দলের সৈনিককে তার সাধারণ মানের মোসিন-নাগান্ত রাইফেল দিয়ে প্রারম্ভিক সফলতা দেখিয়েছেন।[১] অক্টোবর ১৯৪২ থেকে জানুয়ারি, ১৯৪৩-এর মধ্যকার সময়কালে ২৪২ জনকে হত্যা করেন।[২] কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি বলে ধারণা করা হয়।[৩] কেউ কেউ ধারণা করেন যে এ সংখ্যা পাঁচশয়েরও বেশি হতে পারে।[৪] এ সময় তার সামরিক পদবী ছিল জুনিয়র ল্যাফটেন্যান্ট

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

জেইতসিভ ইয়েলেনিনস্কোয়ে এলাকায় এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বেড়ে উঠেন ওরাল পর্বতমালার পাদদেশে। সেখানে তিনি তার ছোট ভাই এবং দাদার সাথে হরিণ এবং নেকড়ে শিকারে লক্ষ্যভেদ করে নৈপুণ্যতা দেখান। তার ডাক নাম রুশ শব্দ জায়াতস (заяц) থেকে এসেছে যার অর্থ দাঁড়ায় খরগোশ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ[সম্পাদনা]

১৯৩৭ সালে জেইতসিভ রেড আর্মিতে নিযুক্তি লাভ করেন। কিন্তু ছোট্ট কোঠায় আবদ্ধ থাকতে আগ্রহী বিধায় ভ্লাদিভস্তকের কাছাকাছি প্রশান্ত মহাসাগরে সোভিয়েত নৌবাহিনীতে কেরানি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সোভিয়েত ইউনিয়নে জার্মানির আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে অন্যান্য অনেক কমরেডের ন্যায় জেইতসিভও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সম্মুখ সমরে স্থানান্তরিত হন। এ সময়ে তিনি ইতোমধ্যেই সার্জেন্ট মেজর পদবীধারী হয়েছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

নাৎসি হিটলারের আক্রমণের মুখে স্তালিনগ্রাদ রক্ষায় অন্য সবার মত ভাসিলিকেও ছুটে যেতে হয়। কিন্তু সবাইকে রাইফেল দেয়া যায় নি। এত বেশি সংখ্যক কমরেড সে তুলনায় রাইফেল অপ্রতুল। কাউকে শুধু রাইফেল, কাউকে কাউকে শুধু গুলি নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। কমরেড ভাসিলিকেও রাইফেল ছাড়াই খালি হাতে শত্রুর দিকে ছুটে যেতে হয়। রাইফেলধারী কমরেড মারা পড়লে, সেই রাইফেল আরেকজন তুলে নিচ্ছে। এভাবেই রেড আর্মির বীর সৈনিকেরা নাৎসি শত্রুর দিকে এগিয়ে যায়। অসংখ্য হতাহত হয়। শহর জুড়ে লাশের স্তূপ! লাশের স্তূপে পড়ে থাকে কমরেড ভাসিলি। নাৎসি জার্মানরা যখন রিলাসক্সড মুডে ঠিক সেই সময়েই কমরেড ভাসিলি সহযোদ্ধার রাইফেল দিয়ে একে একে ঘায়েল করে পাঁচজন শত্রুকে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ভাসিলির এই সাহসিকতার খবর ছড়িয়ে পড়ে। তার সাহসিকতার উপর নির্ভর করে গঠন করা হয় স্নাইপার ব্রিগেড, ব্রিগেডের অন্যতম প্রধান করা হয় ভাসিলিকে। প্রচলিত আরবান যুদ্ধের বাইরে, রেড আর্মির এই স্নাইপারদের মোকাবিলায় জার্মান বাহিনী নাস্তানুবাদ হতে থাকে। ফলে জার্মান বাহিনীও অনুরূপ স্নাইপার বাহিনী গড়ে তুলে। ভাসিলিকে মারার বিশেষ মিশন দেয়া হয় একজনকে। শুরু হয় খোলা ময়দানের লাশের স্তূপে, ইট সুরকির ধ্বংস স্তূপে বা ভাঙ্গা ধ্বসে পড়া ইমারতের মধ্যে লুকিয়ে থেকে, টম এন্ড জেরি কার্টুনের মত কে কাকে মারতে পারে?[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৪২ সালে তিনি ভলগা নদী অতিক্রম করেন ও ১০৪৭তম রাইফেল রেজিমেন্টে যোগ দেন। রেজিমেন্টটি ছিল ৬২তম সেনাবাহিনীর ২৮৪তম রাইফেল ডিভিশনের অধীনে এবং এর নেতৃত্বে ছিলেন জেনারেল নিকোলাই বেতিয়ুক নামীয় একজন সেনা কর্মকর্তা। একদিন কমান্ডিং অফিসার তাকে জানালা দিয়ে ৮০০ মিটার দূরবর্তী এক শত্রু সেনাকে গুলি করার নির্দেশ দেন। জেইতসেভ নির্দেশ প্রতিপালনে সাধারণমানের মোসিন-নাগান্ত রাইফেল তাক করেন। একটিমাত্র গুলিতেই ঐ সৈনিক মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অল্প কিছুক্ষণ পর আরো দু'জন জার্মান সৈনিককে জানালা দিয়ে দেখা গেল। তারা তাদের সেনা কর্মকর্তার মাটিতে লুটিয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধান করতে লাগলেন। ভাসিলি আরো দু'টো গুলি খরচ করলেন। বলাবাহুল্য ঐ দুই গুলিতে তারা নিহত হলেন। এ কারণে তিনি বীরত্বে সাহসিকতাপূর্ণ পদক লাভের পাশাপাশি স্নাইপার রাইফেলও পুরস্কার হিসেবে লাভ করেন।[৫]

সফলভাবে বিশ্বযুদ্ধ সমাপনের পর জেইতসেভ কিয়েভে বসবাস করতে থাকে। ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত হবার পূর্বে এখানেই তিনি টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। পরবর্তীকালে টেক্সটাইল কারখানার পরিচালকরূপে নিযুক্ত হন। ৭৬ বছর বয়সে মৃত্যুর পূর্বে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এ শহরেই অবস্থান করেন তিনি। তার মৃত্যুর মাত্র ১০দিন পরেই সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে। কিয়েভে তাকে সমাহিত করা হয়; যদিও তার ইচ্ছে ছিল স্তালিনগ্রাদে সমাহিত হবার।

রাষ্ট্রীয় বীরের মর্যাদা দেয়া তাকে। ভাসিলির বীরত্বের প্রতীক স্বরূপ তার রাইফেলটি এখনও রাখা আছে স্টালিনগ্রাদের ঐতিহাসিক জাদুঘরে।

চলচ্চিত্রায়ণ[সম্পাদনা]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শত্রু সেনা নিধনে ভাসিলি জেইতসিভের অনন্য সাধারণ পারদর্শীতার প্রেক্ষাপটে নির্মিত হয় এনিমি অ্যাট দ্য গেটস নামের চলচ্চিত্রটি

সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]