ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সংবিধানের বাংলা অনুবাদের প্রস্তাবনা, ১৯৮৭

ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা হল ভারতের সংবিধানের মুখবন্ধ বা ভূমিকা। এই প্রস্তাবনা বা উদ্দেশিকা সংবিধানের মূলনীতি উপস্থাপন করে এবং এর কর্তৃত্বের উৎস নির্দেশ করে। এটি ২৬ নভেম্বর ১৯৪৯ সালে গণপরিষদ দ্বারা গৃহীত হয়েছিল এবং ২৬ জানুয়ারী ১৯৫০ তারিখে কার্যকর হয়েছিল, যা ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস হিসাবে পালিত হয়। ভারতীয় জরুরি অবস্থার সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দ্বারা এটি সংশোধন করা হয়েছিল ও প্রস্তাবনায় "সমাজতান্ত্রিক" এবং "ধর্মনিরপেক্ষ" শব্দ যোগ করা হয়েছিল।

প্রস্তাবনা[সম্পাদনা]

প্রস্তাবনায় বিবৃত হয়েছে:

আমরা ভারতের জনগণ ভারতকে একটি সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র রূপে গড়িয়া তুলিতে, এবং উহার সকল নাগরিক যাহাতে:

সামাজিক, আর্থনীতিক এবং রাজনীতিক ন্যায়বিচার;

চিন্তার, অভিব্যক্তির, বিশ্বাসের, ধর্মের ও উপাসনার স্বাধীনতা;

প্রতিষ্ঠা ও সুযোগের সমতা

নিশ্চিতভাবে লাভ করেন;

এবং তাঁহাদের সকলের মধ্যে

ব্যক্তি-মর্যাদা ও জাতীয় ঐক্য ও সংহতির আশ্বাসক ভ্রাতৃভাব বর্ধিত হয়;

তজ্জন্য সত্যনিষ্ঠার সহিত সংকল্প করিয়া আমাদের সংবিধান সভায় অদ্য, ২৬শে নভেম্বর, ১৯৪৯ তারিখে, এতদ্দ্বারা এই সংবিধান গ্রহণ করিতেছি, বিধিবদ্ধ করিতেছি এবং আমাদিগকে অর্পণ করিতেছি।

ঐতিহাসিক পটভূমি[সম্পাদনা]

প্রস্তাবনাটি উদ্দেশ্য প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যা ১৩ ডিসেম্বর ১৯৪৬-এ জওহরলাল নেহরুর দ্বারা গণপরিষদে প্রস্তাবিত করা হয়েছিল এবং ২২ জানুয়ারি ১৯৪৭-এ স্বীকার হয়েছিল ও ২৬ নভেম্বর ১৯৪৯-এ গণপরিষদ গৃহীত হয়েছিল, যা ২৬ জানুয়ারী ১৯৫০-এ কার্যকর হয়৷ বি আর আম্বেদকর প্রস্তাবনা সম্পর্কে বলেন:

প্রকৃতপক্ষে, এটি ছিল একটি জীবন পদ্ধতি যা স্বাধীনতা, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্বকে জীবনের নীতি হিসাবে স্বীকৃতি দেয় এবং একে অপরের থেকে আলাদা করা যায় না: স্বাধীনতাকে সাম্য থেকে আলাদা করা যায় না; স্বাধীনতা থেকে সাম্যকে আলাদা করা যায় না। স্বাধীনতা ও সাম্যকে ভ্রাতৃত্ব থেকে আলাদা করা যায় না। সমতা না থাকলে, স্বাধীনতা অনেকের উপরে কয়েকজনের আধিপত্য তৈরি করবে। স্বাধীনতা ছাড়া সমতা ব্যক্তি উদ্যোগকে হত্যা করবে। ভ্রাতৃত্ব ব্যতীত, স্বাধীনতা এবং সমতা জিনিসের স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হতে পারে না।

গণপরিষদ যখন প্রস্তাবনা নিয়ে বিতর্ক করছিল, তখন ভারতকে Union of Indian Socialistic Republics (ভারতীয় সমাজতন্ত্রাত্মক প্রজাতন্ত্রসমূহের সংঘ) হিসাবে নামকরণ করার জন্য একটি যুক্তি তৈরি করা হয়েছিল যেন ভারত ইউ.এস.এস.আর.-এর অনুকরণ করে। তবে অন্য সদস্যরা আশ্বস্ত হননি।

এমনকি প্রস্তাবনায় 'ঈশ্বর' এবং 'গান্ধী'র নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা তা নিয়েও তর্ক ছিল। ৬৮ জন সদস্য 'ঈশ্বর' এর বিরুদ্ধে ভোট দিলে প্রাক্তনটি বাতিল হয়ে যায়। এইচ. ভি. কমঠ মরিয়া হয়ে মন্তব্য করেন, 'মাননীয়, এটি আমাদের ইতিহাসে একটি কালো দিন। ঈশ্বর ভারতকে রক্ষা করুন।' যদিও পরবর্তী - গান্ধীর নাম অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ ব্রজেশ্বর প্রসাদ দ্বারা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। তিনি মনে করেছিলেন যে 'শটিত সংবিধান'- যা মার্কিন সর্বোচ্চ আদালতের মামলা এবং ভারত সরকারের আইনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল এবং এইভাবে 'গান্ধীয়' প্রকৃতির নয়, তাই তাঁর নাম বহন করা উচিৎ নয়। প্রসাদ বলেন,

"আমি চাই না এই সংবিধানে মহাত্মা গান্ধীর নাম থাকুক, কারণ এটা গান্ধীবাদী সংবিধান নয়... যদি আমাদের একটা গান্ধীবাদী সংবিধান থাকত, তাহলে আমিই প্রথম ব্যক্তি হতাম যে এই প্রস্তাবে সমর্থন জানতো। আমি চাই না মহাত্মা গান্ধীর নাম এই শটিত সংবিধানে টেনে আনা উচিৎ।"

প্রস্তাবনা পৃষ্ঠা, ভারতের মূল সংবিধানের অন্যান্য পৃষ্ঠাগুলির সহিত, জবলপুরের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ব্যৌহার রামমনোহর সিন্হা, যিনি তখন আচার্য নন্দলাল বসুর সাথে শান্তিনিকেতনে ছিলেন, দ্বারা নকশা এবং সজ্জিত করা হয়েছিল। নন্দলাল বসু কোনো পরিবর্তন ছাড়াই সিন্হার শিল্পকর্মকে সমর্থন করেছিলেন। যেমন, সিন্হার সংক্ষিপ্ত স্বাক্ষর রাম দেবনাগরীতে পৃষ্ঠার নীচের-ডানদিকে রয়েছে। চারুলিপি করেছেন প্রেমবিহারী নারায়ণ রায়জ়াদা