ব্যবহারকারী:Muhammad/বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল মাত্র দুটি কম্পাঙ্ক ব্যাপ্তি তথা ব্যান্ডের তরঙ্গকে ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত পৌঁছুতে দেয়- দৃশ্যমান আলো এবং রেডিও। দৃশ্যমান আলোর ব্যাপ্তি ৪০০ থেকে ৭০০ ন্যানোমিটার পর্যন্ত। অতিবেগুনি প্রান্তের তরঙ্গ ওজোন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন কর্তৃক শোষিত হয়, আবার অবলোহিত প্রান্তের তরঙ্গ জলীয় বাষ্প ও কার্বন ডাই অক্সাইড কর্তৃক শোষিত হয়। খুব কম অবলোহিত তরঙ্গ ভূপৃষ্ঠে পৌঁছুতে পারে এবং সেগুলো পর্যবেক্ষণের জন্যও বেশ শুষ্ক ও উঁচু জায়গায় যেতে হয়। এক্স-রশ্মি, গামা রশ্মি এবং অতিবেগুনি বায়ুমণ্ডল ভেদ করে একেবারেই আসতে পারে না।

রেডিওকে আবার কয়েকটি সাবব্যান্ডে ভাগ করা হয়:

  1. হাই ফ্রিকোয়েন্সি (HF) - ৩০ মেগাহার্জ বা ১০ মিটারের কম
  2. ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি (VHF) - ৩০ থেকে ৩০০ মেগাহার্জ বা ১-১০ মিটার
  3. আল্ট্রা হাই ফ্রিকোয়েন্সি (UHF) - ৩০০ থেকে ১০০০ মেগাহার্জ বা ০.৩-১ মিটার
  4. মাইক্রোওয়েভ - ১ থেকে ৩০ গিগাহার্জ বা ১-৩০ সেন্টিমিটার
  5. মিলিমিটার ও সাবমিলিমিটার - ফার ইনফ্রারেডের কাছাকাছি

মিলিমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যে বিকিরণের কম্পাঙ্ক জলীয় বাষ্প ও অক্সিজেন অণুর ঘূর্ণন ও কম্পন কম্পাঙ্কের খুব কাছাকাছি। এ কারণে বাতাসের আর্দ্রতার উপর নির্ভর করে একেক সময় একেক পরিমাণ মিলিমিটার তরঙ্গ বায়ুমণ্ডলে শোষিত হয়। সে হিসেবে মেঘও মিলিমিটার তরঙ্গ পর্যবেক্ষণে বাঁধার সৃষ্টি করতে পারে।

সেন্টিমিটার ও মিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণকে তেমন কোন সমস্যা পোহাতে হয় না। কিন্তু কয়েক মিটারের চেয়ে বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বিকিরণ আবার পৃথিবীর আয়নমণ্ডল থেকে প্রতিফলিত হয়, কিছু শোষিতও হয়। আয়নমণ্ডলের পদার্থ সূর্যের কারণে আয়নিত হয়। যত বেশি আয়নীকরণ তত বেশি প্রতিফলন ও শোষণ। একটি ক্রান্তি কম্পাঙ্ক আছে যার কম কম্পাঙ্কের সব বিকিরণ পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়। এই ক্রান্তি কম্পাঙ্ক নির্ভর করে সূর্যের কর্মচঞ্চলতা ও পর্যবেক্ষণ স্থানের উপর। অত্যানুকূল পরিস্থিতিতে সাধারণত ৩৫ মিটার পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা যায়।

তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের বিস্তার ও দশা থাকে। সাধারণ দুরবিন বা নিরূপক কেবল বিস্তারের বর্গ পরিমাপ করে এবং দশার সব তথ্য হারিয়ে ফেলে। কিন্তু রেডিও দুরবিন দিয়ে আপতিত তরঙ্গগুলোর আপেক্ষিক দশা সম্পর্কেও কিছু ধারণা গঠন করা যায়।

তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ[সম্পাদনা]

রেডিও দুরবিনের এন্টেনা প্রথমে আপতিত তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গকে তড়িৎ সংকেতে পরিণত করে। এই সংকেতগুলোকে পরবর্তীতে বিবর্ধন, বা অন্য সংকেতের সাথে ক্রস কোরিলেশন করা যায়।

বিস্তারিত বলার আগে প্রথমে তরঙ্গের কিছু সাধারণ ধর্ম জেনে নেয়া দরকার। শূন্য মাধ্যমে তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের গতি কিছু সমীকরণ দিয়ে নির্ধারিত হয়। তরঙ্গ পরষ্পর উল্লম্বভাবে থেকে গতিশীল তড়িৎ ও চুম্বক ক্ষেত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। তড়িৎ ক্ষেত্রের জন্য তরঙ্গ সমীকরণটি এমন,

চৌম্বক ক্ষেত্র (B) একই ধরণের একটি সমীকরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। তড়িৎ ও চৌম্বক ক্ষেত্রের ক্রস গুণনের ফল যেদিকমুখী তরঙ্গের গতির দিকও সেদিকে। অর্থাৎ তড়িৎ ক্ষেত্র x ও চৌম্বক ক্ষেত্র y দিকে হলে তরঙ্গ z দিকে যাবে।

কোন একটি উৎস থেকে তরঙ্গ আসলে গোলকীয় তথা স্ফেরিক্যাল তরঙ্গ হিসেবে নিঃসৃত হয়। সেক্ষেত্রে তরঙ্গ সমীকরণের গোলকীয় রূপটি নেয়া দরকার ছিল। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানে বিকিরণের উৎসগুলো এতো দূরে অবস্থিত যে আমাদের কাছে যখন তরঙ্গগুলো আসে তখন তাদের আর কোন গোলকীয় ধর্ম অবশিষ্ট থাকে না। এর একটা গাণিতিক রূপ আছে। বলা হয় কোন তরঙ্গ দূরক্ষেত্র শর্ত (far field condition) পূরণ করলেই তাকে সমতল তথা সমতল-সমান্তরাল (plane parallel) তরঙ্গ হিসেবে ধরে নেয়া যাবে। শর্তের প্রতিপাদন সমীকরণ 3B2 দ্রষ্টব্য। শর্তটি হচ্ছে, উৎস থেকে এন্টেনার দূরত্ব এন্টেনার ব্যাসের বর্গ ও পর্যবেক্ষণের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অনুপাতের চেয়ে অনেক বেশি হতে হবে,

ডানের চিত্রে একটি তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের গতি দেখানো হয়েছে। তড়িৎ ও চুম্বক ক্ষেত্র এখানে x-z সমতলে আন্দোলিত হচ্ছে এবং তরঙ্গ y দিকে যাচ্ছে। তবে সমীকরণের সৌন্দর্য্যের কথা বিবেচনা করে সমীকরণটি লিখছি তরঙ্গের গতি z দিকে ধরে,

কিন্তু আমরা জানি,

যা থেকে তড়িৎ ক্ষেত্রের একটি জটিল নোটেশন বের করা যায়,

এখানে তরঙ্গের সমবর্তনের দিক নির্দেশ করে। তরঙ্গের পুরো যাত্রাপথে যদি এই একক ভেক্টরের দিক একই থাকে তাহলে তরঙ্গটি হবে রৈখিকভাবে সমবর্তিত। সমবর্তন ব্যাখ্যা করার জন্য তড়িৎ ক্ষেত্রটিকে পরষ্পর উল্লম্ব দুটি অংশে ভাগ করলে সুবিধা হয়।

  • এই দুটি উপাংশের বিস্তার ও দশা যদি একই হয় তাহলে তরঙ্গটি রৈখিকভাবে সমবর্তিত
  • যদি দুটি উপাংশের বিস্তার এক হয় কিন্তু তাদের মধ্যে ৯০ ডিগ্রি দশা পার্থক্য থাকে তাহলে হয় বৃত্তাকার সমবর্তন
  • আর অন্য সকল ক্ষেত্রে উপবৃত্তাকার সমবর্তন পাওয়া যায়

কিছু মৌলিক সংজ্ঞা[সম্পাদনা]

একটি অতিক্ষুদ্র ক্ষেত্র (dA) যদি কোন উৎস থেকে ক্ষুদ্র পরিমাণ শক্তি (dW) সংগ্রহ করে তাহলে এই সংগৃহীত শক্তিকে এভাবে লেখা যায়,

যেখানে হচ্ছে পৃষ্ঠ উজ্জ্বলতা বা ইনটেনসিটি বা তীব্রতা যার একক হচ্ছে . এই পৃষ্ঠ উজ্জ্বলতা একই সাথে স্থান এবং কম্পাঙ্কের ফাংশন, একেক কম্পাঙ্কে এর মান যেমন আলাদা তেমনি আকাশের একেক স্থানেও আলাদা। কম্পাঙ্কের সাথে পৃষ্ঠ উজ্জ্বলতার পরিবর্তনকে বলা হয় উজ্জ্বলতা বর্ণালী। গৃহীত ক্ষুদ্র শক্তিকে সমাকলন করলে মোট শক্তি পাওয়া যায়,

গৃহীত শক্তিকে ব্যান্ডপ্রস্থ দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় শক্তি ঘনত্ব,

কম্পাঙ্কের সাথে এই শক্তি ঘনত্বের পরিবর্তনকে বলা হয় উৎসের বর্ণালী। বর্ণালী দেখে উৎসের বিকিরণের প্রক্রিয়া বুঝে ফেলা যায়।

রেডিও দুরবিন যে রাশিটি পরিমাপ করে তার নাম, স্পেকট্রাল ফ্লাক্স ঘনত্ব যাকে শুধু ফ্লাক্সও বলা হয়। উৎস থেকে পর্যবেক্ষকের দূরত্ব যদি d হয় তাহলে ফ্লাক্সকে লেখা যায় এভাবে,

পৃষ্ঠ উজ্জ্বলতাকে উৎস আকাশে যতটুকু ঘনকোণ দখল করে আছে তার সাপেক্ষে সমাকলন করলে এই ফ্লাক্স পাওয়া যায়, (উপরের সমীকরণগুলো থেকেই তা প্রমাণিত)

তো এই ফ্লাক্স ঘনত্বের মান খুব কম হওয়ায় ওয়াট দিয়ে পরিমাপ সুবিধাজনক নয়, আমরা ব্যবহার করি জানস্কি,

খুব কম এক্সট্রাগ্যালাক্টিক উৎসের ফ্লাক্সই ১ জানস্কি বা তার চেয়ে বেশি। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে রেডিও দুরবিনের সেনসিটিভিটি কত প্রখর। ১ জানস্কি সনাক্ত করা মানে পৃথিবীতে বসে চাঁদে স্থাপিত একটি ১০০ ওয়াটের বাল্বের ফ্লাক্স পরিমাপ।

পৃষ্ঠ উজ্জ্বলতার একটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তা উৎস থেকে পর্যবেক্ষকের দূরত্বের উপর নির্ভর করে না, কেবল উৎসের আকার ও নিঃসারঙ্কের উপর নির্ভর করে। এর প্রমাণ পাওয়া যাবে পৃষ্ঠ উজ্জ্বলতা নিবন্ধে। নিছক স্বজ্ঞা দিয়েও এটা বোঝা সম্ভব। রেডিও উৎস যদি ২ গুণ দূরে হয় তাহলে তা থেকে আমরা ৪ গুণ কম শক্তি পাব, কিন্তু একইসাথে সেই উৎসের ঘনকোণ-ও ৪ গুণ কমে যাবে। পৃষ্ঠ উজ্জ্বলতাকে ঘনকোণের সাপেক্ষে সমাকলন করলে ফ্লাক্স পাওয়া যায়। সুতরাং কম শক্তিকে কম ঘনকোণের সাপেক্ষে সমাকলন করলে মানের কোন পরিবর্তন হবে না।

রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানে উজ্জ্বলতাকে তাপমাত্রা হিসেবে প্রকাশ করা হয়। রেডিও তরঙ্গে এটা করাও খুব সোজা। প্রথমেই মনে করা দরকার কৃষ্ণবস্তু বিকিরণের সমীকরণ,

রেডিও তরঙ্গ রেলি-জিন্স সীমায় পড়ে অর্থাৎ এক্ষেত্রে,

এই সমীকরণ বলছে রেডিও ব্যান্ডে উজ্জ্বলতা এবং তাপগতীয় তাপমাত্রা পরষ্পরের সমান্তরাল। এটা এতো ভয়ানক সুবিধাজনক হিসেবে দেখা দিয়েছে যে রেডিও জ্যোতির্বিজ্ঞানে উজ্জ্বলতাকে সর্বদা তাপমাত্রা হিসেবে লেখা হয়,

ফ্রাউনহোফার অপবর্তন এবং ব্যতিচারমিতিতে এর প্রয়োগ[সম্পাদনা]

চিত্র:Linear aperture.png
চিত্র:Power patterns.png
চিত্র:Power pattern 3.png
চিত্র:Gradings.png

কোন প্রতিবন্ধকের ধার ঘেঁষে বা সরু চিরের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় জ্যামিতিক ছায়া অঞ্চলের মধ্যে তরঙ্গের বেঁকে যাওয়ার ঘটনাকে অপবর্তন বলে। এন্টেনার অ্যাপার্চারের আকার যদি তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সাথে তুলনীয় হয় তাহলে অপবর্তন লক্ষণীয় হয়। যেসব অপবর্তনের ক্ষেত্রে অ্যাপার্চার থেকে তরঙ্গের উৎস ও গ্রাহক দুটোই সসীম দূরত্বে অবস্থান করে তাকে ফ্রেনেল অপবর্তন বলে। আর অ্যাপার্চার থেকে উৎস ও গ্রাহক দুটোই অসীম (বা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ, দূরক্ষেত্র শর্ত দ্রষ্টব্য) দূরত্বে থাকলে তাকে বলে ফ্রাউনহোফার অপবর্তন।

একই উৎস থেকে নির্গত দুটি সুসঙ্গত তরঙ্গমুখ থেকে প্রাপ্ত তরঙ্গের উপরিপাতনের ফলে ব্যতিচার সৃষ্টি হয়। আর একই তরঙ্গমুখের বিভিন্ন অংশ থেকে নির্গত গৌণ তরঙ্গসমূহের উপরিপাতনের ফলে অপবর্তন হয়। বলা যায়, একটি নির্দিষ্ট এন্টেনায় যে পাওয়ার প্যাটার্ন পাওয়া যায় তার কারণ অপবর্তন, কিন্তু দুটি আলাদা এন্টেনার আউটপুটের কোরিলেশনের মাধ্যমে ব্যতিচার ঝালর তৈরি হয়- প্রথমটিকে অপবর্তন গ্রেটিং এবং দ্বিতীয়টিকে অপবর্তন ঝালর বলা হয়।

একটি আপতিত তরঙ্গের শক্তি এন্টেনার ফোকাল সমতলে কিভাবে বণ্টিত হয় তা ব্যাখ্যা করা হয় অপবর্তন প্যাটার্ন। একে রেডিয়েশন প্যাটার্নও বলা হয়। আলোক দুরবিনে ক্যালিব্রেশন তারা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অপবর্তন প্যাটার্ন নির্ণয় করা হয় যাকে সেক্ষেত্রে পয়েন্ট স্প্রেড ফাংশন বা পিএসএফ বলে। কিন্তু ফ্রাউনহোফার সীমায় বেশ রেডিও দুরবিনের জন্য বেশ সহজেই বিম নির্ধারণ করা যায় যদি আমরা জানি এন্টেনার অ্যাপার্চার কেমন এবং সেই অ্যাপার্চার কিভাবে আলোকিত হচ্ছে। আপতিত তরঙ্গের বিস্তার (F(x)) ও দশা () আছে। অ্যাপার্চারে আপতিত তড়িৎ ক্ষেত্রকে নিচের সমীকরণ দিয়ে প্রকাশ করা যায়,

তো তড়িৎ ক্ষেত্রের এই শক্তি এন্টেনা অ্যাপার্চারের একেক স্থানে এবং একেক সময়ে একেক রকম হবে। এই তড়িৎ ক্ষেত্র আবার এন্টেনায় কারেন্ট তৈরি করবে যার ঘনত্ব সে অনুযায়ী স্থান ও কালের সাথে সাথে পরিবর্তিত হবে। উপরন্তু হাইখেন্সের নীতি অনুসারে এন্টেনার সামগ্রিক রেসপন্সকে তার অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপাদানের রেসপন্সের সমষ্টি হিসেবে বিবেচনা করা যায়। এই নীতির কথা মাথায় রেখে প্রমাণ করা যায় যে, গ্রাহকের পর্দার যেকোন বিন্দুতে তড়িৎ ক্ষেত্র (অপবর্তন প্যাটার্ন) অ্যাপার্চারে তড়িৎ ক্ষেত্রের বণ্টনের (গ্রেডিং) ফুরিয়ে রূপান্তর। প্রতিপাদনের জন্য পাওয়ার প্যাটার্ন দেখুন। অপবর্তন প্যাটার্নের বর্গ থেকে পাওয়ার প্যাটার্ন বা বিম পাওয়া যায়। সমীকরণের মাধ্যমে বিকিরণ প্যাটার্নকে এভাবে লেখা যায়,

যেখানে এবং হচ্ছে অ্যাপার্চারের উপর উল্লম্ব রেখা এবং উৎসের দিকের মধ্যবর্তী কোণ। আর হচ্ছে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের এককে অ্যাপার্চারের দৈর্ঘ্য।

এই বিকিরণ প্যাটার্নকে বর্গ করলে শক্তি এবং সেথেকে পাওয়ার প্যাটার্ন পাওয়া যাবে। কিছু বিশেষ উদাহরণ দেখা যাক। ধরা যাক অ্যাপার্চার ইল্যুমিনেশন (g) আয়তাকার, অর্থাৎ -u/2 থেকে +u/2 এর মধ্যে তার মান ১ বাকি সবখানে শূন্য। তাহলে,

দেখা যাচ্ছে সুষম আয়তাকার ইল্যুমিনেশনের জন্য বিকিরণ প্যাটার্ন একটি সিংক ফাংশন ও তথাপি বিম সিংক ফাংশনের বর্গ। সিংক ফাংশনে একটি শক্তিশালী মুখ্য ম্যাক্সিমা এবং অনেকগুলো গৌণ ম্যাক্সিমা থাকে। ম্যাক্সিমার মাঝে থাকে মিনিমা তথা শূন্য। প্রথম শূন্য কোথায় পড়বে সেটাও বের করা সম্ভব-

দেখা যাচ্ছে অ্যাপার্চার (u) যত বড় হবে প্রথম শূন্য বা মিনিমা দুটি তত কাছাকাছি হবে অর্থাৎ বিম তত সরু হবে, রেজল্যুশন তত ভাল হবে।

এটা দেখানো সম্ভব যে, N সংখ্যক এন্টেনাবিশিষ্ট ইন্টারফেরোমিটারের ফিল্ড প্যাটার্ন এমন হবে,

যেখানে ইন্টারফেরোমিটারের প্রতিটি একক এন্টেনার বিকিরণ প্যাটার্ন। ২-এন্টেনা বিশিষ্ট ইন্টারফেরোমিটারের ক্ষেত্রে,

এক্ষেত্রে প্রথম শূন্য পাওয়ার শর্ত হচ্ছে,

দুই এন্টেনার ইন্টারফেরোমিটারের ফিল্ড প্যাটার্ন তৈরি হয় দুই এন্টেনার আউটপুটের ব্যতিচারের মাধ্যমে, কোন একক এন্টেনার অপবর্তনের মাধ্যমে নয়। এই প্যাটার্ন কেবল একটি কোসাইন ফাংশন, তবে তার আগে আছে যা একক এন্টেনার ফিল্ড প্যাটার্ন। কোসাইন ফাংশনের কারণে একটি ইন্টারফেরোমিটার অর্থাৎ একটি বেসলাইন কেবল একটি স্থানিক কম্পাঙ্কের তরঙ্গ সনাক্ত করে, বা কেবল একটি ফুরিয়ে উপাদান সনাক্ত করে। এই একক কম্পাঙ্কের কোসাইন ফাংশনটি একক এন্টেনার অপবর্তন প্যাটার্ন দিয়ে মডুলেটেড হয়ে যায়, যে কারণে ইন্টারফেরোমিটার আউটপুটের এনভেলপ একক এন্টেনার ফিল্ড প্যাটার্ন অনুসরণ করে।

একইভাবে N-এলিমেন্ট ব্যতিচারমাপকের পাশাপাশি দুই মিনিমার মধ্যবর্তী কোণ নির্ণয় করা যায় যার মান দাঁড়ায়,

সুতরাং বোঝা যাচ্ছে একটি বেসলাইনের জন্য সবচেয়ে ভাল কৌণিক রেজল্যুশন দেয় ২-এন্টেনার ইন্টারফেরোমিটার। তাহলে দুইয়ের বেশি এন্টেনার দরকারটা কী? দরকার আছে। এন্টেনা বাড়ালে কালেক্টিং এরিয়া বাড়ে, ইউভি স্পেস ভালভাবে স্যাম্পল করা যায়, মোটকথা এন্টেনার বণ্টনে গর্ত কম থাকে। এর ফলে গৌণ ম্যক্সিমার বিস্তার কম হয়। গৌণ ম্যক্সিমার বিস্তার সবচেয়ে কম আসলে একক এন্টেনাতে, ২-এন্টেনার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ম্যক্সিমাকে অনেক প্রভাবশালী হতে দেখা যায়। এরপর এন্টেনার সংখ্যা যত বাড়তে থাকে গৌণ ম্যক্সিমা তত ক্ষীণ হতে থাকে, তবে কখনোই একক এন্টেনার মত ভাল হতে পারে না। এই গৌণ ম্যক্সিমাগুলোকে সাইডলোব বলে এবং এরা খুব ক্ষতিকর, বিশেষ করে বিস্তৃত উৎসের জন্য। কারণ বিস্তৃত উৎসের কৌণিক বিস্তার মুখ্য বিমকে ছাড়িয়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে দুরবিনের ইমেজ হবে মুখ্য ও গৌণ লোবগুলোর সমষ্টি যা খুবই বিভ্রান্তিকর।

এই সাইডলোব সমস্যা সমাধানের একটি উপায় হচ্ছে টেপারিং। তড়িৎ গ্রেডিং এবং পাশাপাশি ফিল্ড প্যাটার্নের ছবিতে দেখা যাচ্ছে নরম গ্রেডিং এর রেজল্যুশন খারাপ কিন্তু সাইডলোব কম। অর্থাৎ এন্টেনার কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে টেপারিং করলে, রেজল্যুশন কমলেও সাইডলোবের প্রভাব কমে। আবার যতি সাইডলোব বাড়িয়ে হলেও রেজল্যুশন কমানো দরকার হয় তাহলে বিপ্রতীপ টেপারিং করাও সম্ভব।

ট্রান্সফার ফাংশন[সম্পাদনা]

অটোকোরিলেশন উপপাদ্য থেকে ট্রান্সফার ফাংশন প্রতিপাদন করা যায়। এন্টেনার আউটপুট এবং ইনপুটের গাণিতিক সম্পর্ককে ট্রান্সফার ফাংশন বলা হয়। রেডিও এন্টেনার পাওয়ার প্যাটার্ন হচ্ছে,

অর্থাৎ পাওয়ার প্যাটার্ন অ্যাপার্চার গ্রেডিং এর অটোকোরিলেশনের ফুরিয়ে রূপান্তর। আবার এন্টেনার ক্ষেত্রে পাওয়ার প্যাটার্নই হচ্ছে ইমপাল্স রেসপন্স। আমরা জানি, ইমপাল্স রেসপন্সের ফুরিয়ে রূপান্তর কেই ইন্টারফেরোমিটারের ট্রান্সফার ফাংশন বলা হয়। পাওয়ার প্যাটার্নের ফুরিয়ে রূপান্তর সে হিসেবে ট্রান্সফার ফাংশন। যেহেতু পাওয়ার প্যাটার্ন এবং গ্রেডিং এর অটোকোরিলেশন একটি ফুরিয়ে জোড় সেহেতু এন্টেনা গ্রেডিং এর অটোকোরিলেশনকেই ট্রান্সফার ফাংশন বলা যায়। সুবিধা হচ্ছে কোন এন্টেনার ট্রান্সফার ফাংশন জানা থাকলে আমরা সরাসরি তার পাওয়ার প্যাটার্ন বা অপবর্তন প্যাটার্ন নির্ণয় করে ফেলতে পারি।

যেমন, সুষম গ্রেডিং এর ক্ষেত্রে পাওয়ার প্যাটার্ন সিংক ফাংশনের বর্গ আর ট্রান্সফার ফাংশন একটি ত্রিভুজাকার ফাংশন।

ইন্টারফেরোমেট্রি[সম্পাদনা]

বিস্তারিত ব্যতিচারমিতি নিবন্ধে

স্থির ইন্টারফেরোমিটার একটি অপরিবর্তনীয় উৎসের জন্য দুটি সংখ্যা আউটপুট হিসেবে তৈরি করতে পারে: সাইন এবং কোসাইন আউটপুট। এগুলোকে একটি জটিল ভিজিবিলিটির বাস্তব ও জটিল অংশ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। জটিল ভিজিবিলিটিকে ইন্টারফেরোমেট্রিতে শুধু ভিজিবিলিটি হিসেবেও ডাকা হয়। এই ভিজিবিলিটি নিয়ে কাজ করার সুবিধা হচ্ছে ফন সিটের-জের্নিকে উপপাদ্য অনুসারে জটিল ভিজিবিলিটি হচ্ছে আকাশের সংশোধিত উজ্জ্বলতা বণ্টনের ফুরিয়ে রূপান্তর। সংশোধনটা ঘটে একক এন্টেনাগুলোর বিমের কারণে। সম্পর্কটা এভাবে লেখা যায়,

যেখানে হচ্ছে সংশোধিক উজ্জ্বলতা বণ্টন। এখানে u,v স্থানাঙ্ক যে তল গঠন করে তাকে uv তল বলা হয়। ইন্টারফেরোমিটারের বেসলাইন গুলোকে লাইন অফ সাইটের সাপেক্ষে উল্লম্বভাবে প্রজেক্ট করলে uv তল পাওয়া যায়। এই তলে বেসলাইনের দৈর্ঘ্যই রেজল্যুশন নির্ধারণ করে। w দিকটি হচ্ছে লাইন অফ সাইটের দিকে। এই দিকটি উপেক্ষা করে এবং বিম অন্তর্ভুক্ত করে সমীকরণটিকে এভাবেও লেখা যায়,

এখান থেকে সংশোধিত আকাশ উজ্জ্বলতা বণ্টনকে বিপরীত ফুরিয়ে রূপান্তরের মাধ্যমে লেখা যায়,

এখানে সমাকলন ঋণ অসীম থেকে ধন অসীম পর্যন্ত নেয়া হয়েছে যেটা প্রকৃত মান দেয়। কিন্তু বাস্তবে পুরোটার জন্য ভিজিবিলিটি পাওয়া যায় না। বরং ইউভি তলের কিছু নির্দিষ্ট বিন্দুতে ভিজিবিলিটি পরিমাপ করা সম্ভব হয় যা বেসলাইনের উপর নির্ভর করে। প্রতিটি একক বেসলাইনের জন্য একটি ভিজিবিলিটি পাওয়া যায়। সুতরাং ইউভি তলকে আমরা বেসলাইনের মাধ্যমে স্যাম্পল করি। স্যাম্পলকৃত মানগুলো নিয়ে তৈরি হয় স্যাম্পলিং ফাংশন (যাকে ইউবি কাভারেজও বলা যায়) যাকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়,

চিত্র:Interferometry imaging.jpg

পাশের ছবিতে পুরো প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। উল্লম্ব রেখার বাম পাশে উপরে আকাশের প্রকৃত ছবি দেখা যাচ্ছে যাকে ফুরিয়ে রূপান্তর করলে ফান সিটের-জের্নিকে উপপাদ্য অনুসারে প্রকৃত ভিজিবিলিটি মানচিত্র (রেখার ঠিক ডান পাশে) পাওয়ার কথা। কিন্তু প্রকৃতটা আমরা পাই না, কারণ স্যাম্পলিং ফাংশন দিয়ে তা গুণ হয়ে যায়। একেবারে ডানের উপরের চিত্রে তিনটি এন্টেনা দেখানো হয়েছে যার কারণে স্যাম্পলিং ফাংশনটি ডানের নিচের ছবিটির মত দেখাবে। প্রকৃত ইউভি ম্যাপের সাথে এই ফাংশন গুণ হয়ে স্যাম্পলকৃত ইউভি মানচিত্র পাওয়া যাবে যা রেখার ঠিক ডানে নিচে দেখানো হয়েছে। স্যাম্পলিং ফাংশনটি হচ্ছে, ডার্টি বিমের ফুরিয়ে রূপান্তর। অন্য ভাষায় বললে, স্যাম্পলিং ফাংশনকে ফুরিয়ে রূপান্তর করলে আমরা ডার্টি বিম পাই। সরল গণিত দিয়ে এটাকে লেখা যাক। ধরি,

  1. স্যাম্পলিং ফাংশন =
  2. সংশোধিত আকাশ =
  3. ডার্টি বিম =
  4. ডার্টি ইমেজ =
  5. ভিজিবিলিটি =
  6. ফুরিয়ে রূপান্তর =

তাহলে,

ডার্টি বিমের আকৃতি ইউভি কাভারেজের অপেক্ষক। যেমন, ইউভি তল যদি পুরোপুরি স্যাম্পল করা যায় তাহলে ইউভি কাভারেজ (বা স্যাম্পলিং ফাংশন) হবে আয়াতাকার সুষম। সেক্ষেত্রে ডার্টি বিম হবে সিংক ফাংশন। এই ফাংশনের মুখ্য ম্যাক্সিমা বা মেইনলোবের প্রস্থ হবে এর সমানুপাতিক যেখানে দীর্ঘতম বেসলাইন। এ ধরণের সুষম ইউভি কাভারেজের ক্ষেত্রে দীর্ঘতম বেসলাইন পর্যন্ত ইউভি তলের প্রতিটি বিন্দু পরিমাপ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে কখনোই সম্পূর্ণ স্যাম্পলিং সম্ভব নয়। বাস্তবে দীর্ঘতম বেসলাইনের মাঝে প্রচুর গর্ত থাকে। এসব গর্তের কারণে ডার্টি বিমে প্রচুর সাইডলোবের জন্ম হয় যারা বিমে নয়েজ যুক্ত করে।

সাধারণত, ইউভি কাভারেজ যথেষ্ট ভাল হলে ডার্টি বিমের মেইন লোবকে একটি উপবৃত্তাকার গাউসীয় ফাংশন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাই ডার্টি বিমের মেইনলোবকে উপবৃত্তাকার গাউসীয় ফাংশন দিয়ে ফিটিং করা হয় এবং এটাকেই দুরবিনের রেজল্যুশন পরিমাপের উপায় হিসেবে গণ্য করা হয়। ফিটিং করা এই উপবৃত্তাকার গাউসীয় ফাংশনকেই সিনথেসাইজড বিম বা সংশ্লেষিত বিম বলে। সুতরাং বলা যায়, ডার্টি বিমের একটি তাত্ত্বিক বা অনুমিত রূপের নাম সংশ্লেষিত বিম। ডার্টি বিম যত গাউসীয়ানের কাছাকাছি হবে তত ভাল। ইউভি কাভারেজে গর্ত যত কম হবে ফিটিং ডার্টি বিম তত বেশি গাউসিয়ানকে অনুসরণ করবে।

সিন্থেসিস ইমেজিং[সম্পাদনা]

চিত্র:Earth rotation synthesis.png

ইউভি কাভারেজে গর্ত কমানোর সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হচ্ছে অ্যাপার্চার সিন্থেসিস। একটি দুরবিন অ্যারে দিয়েই প্রতিনিয়ত অসংখ্য বেসলাইন তৈরিকে অ্যাপার্চার সিন্থেসিস বলে। অ্যাপার্চার সিন্থেসিস অ্যারেতে N-সংখ্যক এন্টেনাকে বিভিন্নভাবে যুক্ত করে N(N-1)/2 সংখ্যক বেসলাইন তৈরি করা হয়। যথেষ্ট পরিমাণ এন্টেনা থাকলে এবং উৎসটি যথেষ্ট যথেষ্ট বড় হলে খুব স্বল্প সময় পর্যবেক্ষণ করেই একটি ব্যবহারযোগ্য ডার্টি ইমেজ তৈরি করা সম্ভব। কারণ অল্প সময়েই ইউভি কাভারেজ এতো ভাল হবে যে ডার্টি বিম গাউসিয়ানের কাছাকাছি হয়ে যাবে। এভাবে সিন্থেসিস অ্যারে ব্যবহারকে বলে স্ন্যাপশট ইমেজিং।

কিন্তু বাস্তবে এন্টেনা খুব বেশি হতে পারে না যেহেতু তাতে খরচ বেড়ে যায়। কার্যকরী উপায় হচ্ছে পৃথিবীর ঘূর্ণন ব্যবহার করা। পৃথিবী যেহেতু ঘুরছে সেহেতু আকাশের উৎসটি একই বেসলাইনকে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হতে দেখে। উৎসের দৃষ্টিকোণ থেকে একটিমাত্র বেসলাইন একটি পুরো আর্ক তৈরি করে, সময়ের সাথে সাথে বেসলাইনের অবস্থান ও দৈর্ঘ্য দুটোই পরিবর্তিত হয়। এভাবে এন্টেনা না নড়িয়েই উৎসের একাধিক ফুরিয়ে উপাদান পর্যবেক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতিকে বলে আর্থ রোটেশন সিন্থেসিস বা ভূঘূর্ণন সংশ্লেষ। একে সুপার-সিন্থেসিস ও বলা হয়। পাশের ছবিতে দেখা যাচ্ছে ১২ ঘণ্টায় পৃথিবী ঘুরছে বলে একটিমাত্র বেসলাইন (দুটি পাশাপাশি বিন্দুর দৈর্ঘ্য) কিভাবে একটি পুরো আর্ক তৈরি করে। অবশ্যই এখানে একটি পূর্ব-পশ্চিম মুখী বেসলাইন ব্যবহার করা হয়েছে। এই আর্কটি পৃথিবীর ঠিক উত্তর মেরুর সাপেক্ষে দেখলে সম্পূর্ণ বৃত্তাকার হতো। কিন্তু উৎস যেহেতু ঠিক সুমেরুর উপর নেই সেহেতু সে বৃত্তের একটি প্রক্ষেপণ দেখে যা যথারীতি উপবৃত্তাকার। তবে যদি ঠিক নর্থ সেলেশ্চিয়াল পোল তথা সুমেরুর উপর কোন উৎস থাকে তাহলে ইউভি কাভারেজ হবে অনেকগুলো সমকেন্দ্রিক বৃত্ত। কিন্তু উত্তর খ-মেরু তে উৎস না থাকলে আমরা সমকেন্দ্রিক উপবৃত্ত ইউভি কাভারেজ হিসেবে পাব।

আমরা যা পর্যবেক্ষণ করি তা হল ডার্টি ইমেজের ফুরিয়ে রূপান্তর। ডার্টি ইমেজ হচ্ছে ডার্টি বিম ও সংশোধিত আকাশের কনভল্যুশন। যদি আমরা ডার্টি বিম ভালভাবে বুঝি তাহলে সেই তথ্য ব্যবহার করে ডার্টি ইমেজকে ডিকনভল্যুশন করা যায় এবং সেখান থেকে সংশোধিত উজ্জ্বলতা বণ্টন বের করে আনা যায়। তারপর প্রতিটি এন্টেনার বিম তথা প্রাইমারি বিম জানা থাকলে সেখান থেকে প্রকৃত উজ্জ্বলতা বণ্টনও বের করে ফেলা সম্ভব। সুতরাং স্যাম্পলকৃত ভিজিবিলিটি ক্যালিব্রেশন করার পর সেখান থেকে ডিকনভল্যুশনের মাধ্যমে পরিষ্কার ছবি তৈরি সম্ভব যাকে ইমেজিং বলে। সে নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে মনে রাখা দরকার:

  • একটি একক এন্টেনার বিমকে বলে প্রাইমারি বিম। প্রাইমারি বিমের আকার দিয়ে ইন্টারফেরোমিটারের দৃষ্টিপট নির্ধারিত হয়।
  • আর পুরো ইন্টারফেরোমিটারের বিমকে বলে সিন্থেসাইজড বিম। সিন্থেসাইজড বিমের আকার দিয়ে ইন্টারফেরোমিটারের রেজল্যুশন নির্ধারিত হয়।

ইমেজিং ও ডিকনভল্যুশন[সম্পাদনা]

চিত্র:Calibration Imaging Deconvolution.png

এর জন্য পাশের ছবির ধাপগুলো অনুসরণ করা চাই। প্রথম ধাপ হচ্ছে পর্যবেক্ষণকৃত ভিজিবিলিটিকে ক্যালিব্রেট করা। আকাশের প্রকৃত ছবির ফুরিয়ে রূপান্তর করলে প্রকৃত ভিজিবিলিটি পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা সেই প্রকৃত ভিজিবিলিটিগুলো পর্যবেক্ষণ করি না। ভিজিবিলিটিকে দুই ধরণের প্রক্রিয়া দূষিত করে: DDE (Direction Dependent Effects) এবং DIE (Direction Independent Effects)। এন্টেনা যন্ত্রের কারণে যে দূষণ সেগুলো সকল দিকে একই, সেহেতু তারা ডিআইই। আর ফোরগ্রাউন্ড, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল, আয়নমণ্ডল ইত্যাদি যেহেতু একেক দিকে একেক রকম সেহেতু তারা ডিডিই। এই ইফেক্টগুলো একেক এন্টেনায় একেক রকম দশা পার্থক্যের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমরা জটিল ভিজিবিলিটির বিস্তার ও দশা পরিমাপ করি, যার মাধ্যমে ভিজিবিলিটি ফ্রিঞ্জ গঠিত হয়। এই ভিজিবিলিটি ফ্রিঞ্জ ডিডিই ও ডিআইই দিয়ে দূষিত হয়ে যায়।

ভিজিবিলিটি ক্যালিব্রেশন[সম্পাদনা]

ভিজিবিলিটির দশা ক্যালিব্রেট করার জন্য দশা ক্যালিব্রেটর, আর বিস্তার ক্যালিব্রেট করার জন্য বিস্তার ক্যালিব্রেটর ব্যবহার করা হয়। সাধারণভাবে পরিমাপকৃত ভিজিবিলিটি হচ্ছে প্রকৃত ভিজিবিলিটি এবং সিস্টেম ভিজিবিলিটির গুণফল,

ক্যালিব্রেশনের কাজ হচ্ছে এমন সব উৎস পর্যবেক্ষণ করা যার প্রকৃত ভিজিবিলিটি () জানা আছে। তাহলে তার মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়। তবে এটা একবার নির্ণয় করাই যথেষ্ট নয়। বিস্তার ক্যালিব্রেশন এক রাতের পর্যবেক্ষণের জন্য একবার করাই যথেষ্ট। কিন্তু দশা ক্যালিব্রেশন বারবার করতে হয়। কারণ দশা সময়ের সাথে সাথে বেশি পরিবর্তিত হয়। আর দশা ও বিস্তার উভয়ের জন্যই ক্যালিব্রেশন উৎসটি পর্যবেক্ষণ উৎসের খুব কাছাকাছি হতে হবে, নয়তো ডিডিই ঠিকভাবে ক্যালিব্রেট করা যাবে না। আবার ক্যালিব্রেশন উৎস পর্যবেক্ষণকৃত উৎসের চেয়ে যথেষ্ট উজ্জ্বল হওয়াও চাই। ক্যালিব্রেশনের বিস্তারিত আলোচিত হবে পরিমাপ সমীকরণ নিবন্ধে।

ইমেজিং[সম্পাদনা]

চিত্র:Observed visibilities for 1 baseline 8 hrs.png

ক্যালিব্রেশনকৃত ভিজিবিলিটি গুলোকে ফুরিয়ে রূপান্তর করলে ডার্টি ইমেজ পাওয়া যায়। এই প্রক্রিয়ার নাম ইমেজিং। ডানের চিত্রে ৮ ঘণ্টা দুটি ক্রস-ডাইপোল এন্টেনা দিয়ে সুপার-সিন্থেসিস করে পাওয়া ৪ ধরণের ভিজিবিলিটি দেখানো হয়েছে। ক্রস ডাইপোলে দুটি অক্ষ থাকে X এবং Y, দুটি এন্টেনা থেকে পাওয়া ভিজিবিলিটির কোরিলেশন করলে ৪ ধরণের ফল পাওয়া যায়: XX, XY, YX, YY, যেগুলো একেক রঙ দিয়ে দেখানো হয়েছে। এখানে কোন XY (লাল) উপাদান দেখা যাচ্ছে না, সম্ভবত সেটি অন্য কোন উপাদানের একেবারে সমান বলে।

তো এই ভিজিবিলিটিগুলোর ফুরিয়ে রূপান্তর করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে, প্রতিটি ভিজিবিলিটি উপাদানের সাইন এবং কোসাইন পরিমাপ করা। তারপর উপরের সমীকরণগুলোর শেষটি ব্যবহার করে বিপরীত ফুরিয়ে রূপান্তর ঘটানো। কিন্তু এটি খুব একটা কার্যকরী নয়, কারণ তাতে অনেক সময় লাগে। যেমন বেসলাইন যদি ৮০ কিলোমিটার হয় তাহলে ১৫০ মেগাহার্জের তরঙ্গ পর্যবেক্ষণের জন্য আর্কসেকেন্ডে রেজল্যুশন হবে,

এই ৫.১৬ আর্কসেকেন্ড হতে হবে একটি পিক্সেলের আকার। ২ ডিগ্রি দৃষ্টিপটের জন্য এই রেজল্যুশনে মোট ১৩৯৬ টি পিক্সেল লাগবে। আমরা সুবিধার জন্য (১০২৪×১০২৪) আকারের ছবি তৈরি করতে পারি যা বেশ বড়। প্রতিটি পিক্সেলের জন্য সবগুলো ভিজিবিলিটির ইমেজিং করতে হয়। ভিএলএ দুরবিন দিয়ে ১ ঘণ্টায় প্রায় ১০ টি ভিজিবিলিটি পর্যবেক্ষ করা হয় এবং তাকে ১০২৪ দিয়ে গুণ করলে হয় প্রায় ১০১১ যা একটি বিশাল সংখ্যা। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় ফাস্ট ফুরিয়ে রূপান্তর বা এফএফটি। তবে এফএফটি করার জন্য ভিজিবিলিটিকে একটি নিয়মিত গ্রিডে সাজাতে হবে। এফএফটি-র দুটি অসুবিধা হচ্ছে:

  1. আমরা আকাশের ভিজিবিলিটিগুলো বেসলাইন অনুযায়ী বিভিন্ন অনিয়মিত দৈব বিন্দুতে স্যাম্পল করি। এই মানগুলো নিয়ে একটি নিয়মিত গ্রিডে সাজাতে গেলে ডার্টি বিম ও ইমেজ আরও দূষিত হবে। সেই দূষণও এফএফটি শেষ হলে পরে ঠিক করতে হবে।
  2. নিয়মিতভাবে গ্রিড করা ভিজিবিলিটিগুলোকে আবার একটি সসীম সীমার মধ্যে স্যাম্পল করা হয় যার জন্য অ্যালায়াজিং ত্রুটি দেখা দেয়।

ডিকনভল্যুশন[সম্পাদনা]

ক্যালিব্রেশনকৃত ভিজিবিলিটির বিপরীত ফুরিয়ে রূপান্তরের মাধ্যমে অর্থাৎ ইমেজিং এর মাধ্যমে ডার্টি ইমেজ তৈরি হয়। এই ডার্টি ইমেজ থেকে ডিকনভল্যুশনের মাধ্যমে সংশোধিত উজ্জ্বলতা বণ্টন নির্ণয় করা যায়। এই ডিকনভল্যুশনকে ক্লিনিং ও বলা হয়। এই ধাপে একইসাথে এফএফটির দূষণ এবং ডার্টি বিমের দূষণ বিনাশ করা হয়। ডার্টি বিম যত গাউসিয়ানের কাছাকাছি হবে বিনাশকরণ তত সোজা ও কার্যকরী হবে।

ধরা যাক আকাশের প্রকৃত ছবিতে কিছু বিন্দু উৎস আছে। ইমেজিং এর পর পাওয়া ডার্টি ইমেজে প্রতিটি উৎস ডার্টি বিমের সাথে গুণ হয়ে যাবে। সুতরাং প্রতিটি উৎসের জায়গায় ডার্টি বিম দেখা যাবে যার কেন্দ্র হবে উৎস এবং যার স্কেলিং হবে উৎসের উজ্জ্বলতার মান অনুযায়ী। তবে ডার্টি ইমেজে উৎসের ম্যাক্সিমা ও প্রকৃত ছবিতে তার ম্যাক্সিমা একই স্থানে নাও হতে পারে। কারণ, প্রতিটি উৎসের ম্যাক্সিমা তার প্রতিবেশী উৎসের ডার্টি ইমেজের সাইডলোব দিয়ে দূষিত হবে, যে কারণে তার ম্যাক্সিমা ও শক্তির মান পরিবর্তিত ও স্থানান্তরিত হতে পারে। ডার্টি ইমেজে সবচেয়ে শক্তিশালী উৎসটি সবচেয়ে কম দূষিত কিন্তু সবচেয়ে বেশি দূষণকারী।

প্রথমত, ডার্টি ম্যাপের সবচেয়ে শক্তিশালী উৎসের স্থানীয় ম্যাক্সিমাকে উৎসটির অবস্থান ও শক্তির পরিমাপক হিসেবে নেয়া যায়। এরপর এই স্থানীয় ম্যাক্সিমা থেকে উপযুক্ত শক্তির ডার্টি বিম বাদ দিলে অন্যান্য উৎসের উপর এর দূষণকারী প্রভাব কমে যাবে। সবচেয়ে শক্তিশালীটি এভাবে সংশোধন করার পর যে ডার্টি ম্যাপ পাওয়া যাবে, তাতে আবার সবচেয়ে শক্তিশালী উৎসটি নিতে হবে। কারণ প্রথম ধাপের উজ্জ্বলতম উৎস এখন আর সর্বোচ্চ দূষণকারী বা উজ্জ্বলতম উৎস নেই। এই দ্বিতীয় উজ্জ্বলতম উৎসের উপর একই প্রক্রিয়া প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে শক্তির ক্রমানুসারে সবগুলো উৎস থেকে ডার্টি বিম বাদ দেয়ার পর, কেবল কিছু ইনস্ট্রুমেন্টাল নয়েজ ছাড়া আর তেমন কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। এভাবে প্রতিটি উৎসের পরিষ্কার (ক্লিন) উপাদান পাওয়া যাবে। এই পরিষ্কার বিন্দু উৎস বিশিষ্ট ছবির সাথে ডার্টি ম্যাপের কনভল্যুশনের মাধ্যমে ডার্টি ছবি পাওয়া যায়, যা আমাদের ক্লিনিং এর আগে ছিল। যেহেতু ক্লিনিং করেছি সেহেতু এটাকেই আমরা ডিকনভল্যুশনের ফলাফল বলতে পারি। কিন্তু তা খুব উদ্ধত সিদ্ধান্ত হবে, কারণ আমাদের রেজল্যুশন সসীম, যা ডার্টি বিমের মেইন লোবের আকার দিয়ে নির্ধারিত হয়। সর্বশেষ ধাপে তাই, প্রতিটি বিন্দু উৎসকে একটি "পরিষ্কার বিম" (বা সিনথেসাইজড বিম) দিয়ে প্রতিস্থাপিত করতে হবে। এই সিনথেসাইজড বিমটি সাধারণত উপবৃত্তাকার গাউসিয়ান হয়ে থাকে। এর পরই কেবল আমরা বলতে পারি, আকাশের প্রকৃত উজ্জ্বলতা এবং সিনথেসাইজড বিমের কনভল্যুশনের মাধ্যমে চূড়ান্ত ছবি পাওয়া গেছে। ডিকনভল্যুশন নিবন্ধে ছবির মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটি তুলে ধরা হয়েছে।