বোস্তামীর কাছিম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বোস্তামীর কাছিম
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Chordata
শ্রেণী: Reptilia
বর্গ: Testudines
উপবর্গ: Cryptodira
পরিবার: Trionychidae
গণ: Nilssonia[১]
প্রজাতি: N. nigricans
দ্বিপদী নাম
Nilssonia nigricans[১]
(অ্যান্ডারসন, ১৯৭৫)[১]
প্রতিশব্দ[২]
  • Trionyx nigricans অ্যান্ডারসন, ১৯৭৫
  • Amyda nigricans মার্টিন্স, মুলার রাস্ট, ১৯৩৪
  • Aspideretes nigricans মেয়লান, ১৯৮৭
  • Trionix nigricans রিচার্ড, ১৯৯৯

বোস্তামীর কাছিম বা বোস্তামীর কচ্ছপ (বৈজ্ঞানিক নাম: Nilssonia nigricans) আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি অত্যন্ত বিরল এবং চরমভাবে বিপন্নপ্রায় প্রজাতির কচ্ছপ। বৈজ্ঞানিকভাবে এদের কালো নরম খোলের কচ্ছপ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়।

অবস্থান[সম্পাদনা]

বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার সংলগ্ন দীঘি

বর্তমানে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার সংলগ্ন দিঘিতে এই প্রজাতির দেখা মিলে।

এছাড়াও ভারতের আসাম প্রদেশের ৯টি স্থানে এই প্রজাতি পাওয়ার কথা শোনা যায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] স্থানগুলো হলো (১) কামাক্ষা, (২) নাগাঙ্কর, (৩) গোয়াহাটিতে ব্রহ্মপুত্র নদীর দক্ষিণ তীর, (৪) ডিব্রুগড়, (৫) তিনসুকিয়া, (৬) বিশ্বনাথ ঘাট, (৭) কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যান, (৮) নামেরী জাতীয় উদ্যান এবং (৯) নাজিরা।

অন্যত্র বিলুপ্তপ্রায় এই কচ্ছপ প্রজাতির দেখা মিলে না।[৩]

বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার প্রাঙ্গণে, মাজারের দেখাশোনার দ্বায়িত্বে থাকা তত্বাবধায়ক কমিটির লোকদের দ্বারাই এদের প্রতিপালন করা হয়। বর্তমানে মাজার প্রাঙ্গণ সংলগ্ন দীঘিতে দেড়শো থেকে সাড়ে তিনশো কচ্ছপের আবাস রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রজনন মৌসুমে মাজারের মূল পাহাড়ের পেছনে এদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে এদের ডিম পাড়ার ব্যবস্থা করা হয়।

২০০২ সালে পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সংস্থা, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (IUCN) কর্তৃক বোস্তামী কাছিম কে চরমভাবে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়।[৪] বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৫]

নদীতে বোস্তামী কাছিম[সম্পাদনা]

সম্প্রতি বন্য প্রাণী-বিষয়ক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর অ্যাডভান্স রিসার্চ ইন ন্যাচারাল রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের (ক্যারিনাম) নেতৃত্বে একদল দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানী দেশের চারটি এলাকায় এ কাছিমের সন্ধান পেয়েছেন। শ্রীমঙ্গল, চট্টগ্রাম, নেত্রকোণা ও মুহুরী নদীতে এ কাছিমের জাত খুঁজে নিশ্চিত করেছে বিশ্বের বন্য প্রাণী-বিষয়ক মৌলিক গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান জার্মানির ড্রেসডেনে অবস্থিত মিউজিয়াম অব জুওলজি। প্রাণিবিদ্যাবিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল ভার্টিভেট জুওলজিতে বাংলাদেশের নদী-জলাশয়ে বোস্তামী কাছিম পাওয়ার বিষয় নিয়ে একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।[৬]

১৯৩১ সালে প্রাণিবিজ্ঞানী ম্যালকম স্মিথ তার ফনা অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়া গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ভারতবর্ষে ‘নিলসোনিয়া নিগরিকেন টার্টেল’ বা বোস্তামী কাছিম একমাত্র বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারে পাওয়া যায়। স্থানীয় লোকজনের বিশ্বাস, হজরত সুলতান বায়েজিদ বোস্তামী ইরান থেকে চট্টগ্রামে আসার সময় এ কাছিমগুলো নিয়ে আসেন। প্রাণিবিজ্ঞানীদেরও ধারণা জন্মায়, বোস্তামী কাছিম বাংলাদেশ ও ভারতীয় উপমহাদেশ অঞ্চলের প্রাণী নয়। সাম্প্রতিক এ গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন, বোস্তামী কাছিম বাংলাদেশ অঞ্চলের নিজস্ব প্রাণী।[৬]

১৯৯৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) অন্যতম বিপন্নপ্রায় প্রাণীর তালিকায় বোস্তামী কাছিমের নাম উঠে আসে। বলা হয়ে থাকে, বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার ছাড়া বিশ্বের বেশির ভাগ অঞ্চলে এ প্রাণীর দেখা মেলে না। সর্বপ্রথম ২০০৭ সালে প্রাণিবিজ্ঞানী পিটার গ্রাসবাগ তার পিএইচডি গবেষণার মাধ্যমে দেখান, ভারতের আসামের বেশ কয়েকটি মন্দিরের পুকুরে বোস্তামী কাছিম রয়েছে। সেই থেকে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন, তা হলে আসাম ও বাংলাদেশের নদী-জলাশয়ে এ প্রাণীর বসবাস রয়েছে।[৬]

২০০৯ সালে, ক্যারিনামের নির্বাহী পরিচালক এস এম এ রশিদ এবং অস্ট্রীয় বিজ্ঞানী পিটার গ্রাসবাগ বাংলাদেশে মিঠা পানির কাছিমের ব্যবসা নিয়ে একটি গবেষণা করছিলেন। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল বাজারে বেশ ভিন্ন ধরনের কাছিম দেখতে পান। তাৎক্ষণিকভাবে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কাছিমটির শরীর থেকে কিছু কোষ সংগ্রহ করেন তারা। পরে ২০১০ সালে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের মানিকছড়িতে জেলেদের বড়শিতে ধরা পড়া একটা কাছিম দেখতে পান। বোস্তামী কাছিমের মতো মনে হওয়ায় সেটিরও কোষ ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য সংগ্রহ করা হয়। ২০১১-১২ সালে এ প্রজাতির কাছিম মুহুরী নদীনেত্রকোণার একটি জলাশয় থেকেও সংগ্রহ করে গবেষক দল। ইতিমধ্যে ড. গ্রাসবাগ জানান, জার্মানির ড্রেসডেনে অবস্থিত মিউজিয়াম অব জুওলজিতে কয়েক প্রজাতির কাছিম শনাক্ত করার জন্য গবেষণা চলছে। সেখানে সংগ্রহ করা কোষের নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে ডিএনএ পরীক্ষার পর জানা গেল দুটি টিস্যুর নমুনা, দুটিরই নিলসোনিয়া নিগ্রিক্যান্স বা বোস্তামী কাছিমের। আরও জানা গেল, এ প্রজাতির বাহ্যিক রঙের কয়েক প্রকার রয়েছে, যা বয়স বা স্থানের কারণে হতে পারে।[৬]

আইইউসিএনের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে মোট ২৬০ জাতের কাছিম রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ৩০ প্রজাতির, যার ছয়টি ছাড়া বাকি সবগুলোর নাম বিপন্নপ্রায় প্রাণীর তালিকায় উঠেছে। শত বছরের ওপরে আয়ু নিয়ে জন্ম নেওয়া বোস্তামী কাছিমের যে কটি জাত দেশের বিভিন্ন নদী-জলাশয়ে পাওয়া গেছে, তার দৈর্ঘ্য ৫০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার। তবে বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারের কাছিমগুলোর দৈর্ঘ্য ৯০ সেন্টিমিটার থেকে এক মিটার পর্যন্ত। খয়েরি ও কালচে রঙের এ প্রাণী মূলত নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় জীবন ধারণ করতে পারে।[৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "IUCN Status report"। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ 
  2. Fritz Uwe (২০০৭)। "Checklist of Chelonians of the World" (পিডিএফ)Vertebrate Zoology57 (2): 311। ISSN 18640-5755। ১৭ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০১২  অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
  3. "Turtles of the world: Aspideretes nigricans"। ১৭ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ 
  4. "আইইউসিএন কর্তৃক বিপন্নপ্রায় ঘোষিত প্রাণী তালিকায় বোস্তামীর কাছিম"। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ 
  5. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৪২।
  6. নদীতেও আছে বোস্তামী কাছিম ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৯-১০-২১ তারিখে, ইফতেখার মাহমুদ, দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ২৮-০৮-২০১২ খ্রিস্টাব্দ।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]