বুলবুল আহমেদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বুলবুল আহমেদ
জন্ম
তাবাররুক আহমেদ

(১৯৪১-০৯-০৪)৪ সেপ্টেম্বর ১৯৪১
আগামাসি লেন, পুরনো ঢাকা
মৃত্যু১৫ জুলাই ২০১০(2010-07-15) (বয়স ৭০)
পেশাঅভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, চলচ্চিত্র প্রোজজোক
কর্মজীবন১৯৬৪-২০১০
দাম্পত্য সঙ্গীডেইজি আহমেদ
সন্তান

বুলবুল আহমেদ (৪ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ - ১৫ জুলাই ২০১০) ছিলেন একজন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ও টিভি অভিনেতা। ১৯৬৮ সালে পূর্বাভাস নাটকের মধ্য দিয়ে তার অভিনয় জীবন শুরু হয়। তার বড় পর্দায় অভিষেক হয় ১৯৭৩ সালে ইয়ে করে বিয়ে চলচ্চিত্র দিয়ে। তিনি চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। সত্তর ও আশির দশকে আলমগীর কবিরের ধীরে বহে মেঘনা (১৯৭৩), সূর্য কন্যা (১৯৭৫), সীমানা পেরিয়ে (১৯৭৭), রূপালী সৈকতে (১৯৭৯), মোহনা (১৯৮২) ও মহানায়ক (১৯৮৪) ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করে সবার মনোযোগ কাড়েন বুলবুল আহমেদ। তবে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত দেবদাস চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

জন্ম ও পরিবার[সম্পাদনা]

বুলবুল আহমেদের জন্ম ১৯৩৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার আগামসি লেনে। তার আসল নাম তাবাররুক আহমেদ, তার পিতামাতা তাকে "বুলবুল" বলে ডাকতেন। তিনি তার পিতামাতার অষ্টম সন্তান।[১] তার পিতা খলিল আহমেদ ছিলেন পাকিস্তান আমলের অর্থ বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারি এবং অভিনেতা ও নাট্যকার। তাদের বাড়িতেই নাটকের মহড়া হত, এবং কিশোর বুলবুল প্রায়ই সেই মহড়া দেখতেন। এই মহড়ায় অংশগ্রহণ করতে আসা উল্লেখযোগ্য অভিনয়শিল্পী ছিলেন কাজী খালেক, মহম্মদ আনিস, আয়েশা আক্তার, রানী সরকার, ও নারায়ণ চক্রবর্তী।[১] পুরান ঢাকার ফুলবাড়িয়ার মাহবুব আলি ইনস্টিটিউশনে তার পিতার নির্দেশিত নাটকগুলো মঞ্চস্থ হত এবং তিনি সেগুলো দেখতে যেতেন। সেখান থেকেই তার অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মে।[১]

শিক্ষা ও প্রারম্ভিক কর্মজীবন[সম্পাদনা]

বুলবুল আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকার কলেজিয়েট স্কুল এবং নটর ডেম কলেজ। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তবে কিছুদিন সিলেট এমসি কলেজেও পড়াশোনা করেছেন। সিলেটে এমসি কলেজে থাকাকালে মঞ্চনাটক চিরকুমার সভায় নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে উপস্থিত সবার নজর কাড়তে সক্ষম হন। পড়াশোনা শেষ করার পর তৎকালীন ইউবিএল ব্যাংক টিএসসি শাখার ম্যানেজার হিসেবে ১০ বছর চাকরি করেন।[১]

অভিনয় জীবন[সম্পাদনা]

চাকরির পাশাপাশি বুলবুল আহমেদ টিভিতে অভিনয় করতে থাকেন। বুলবুল আহমেদ অভিনীত প্রথম টিভি নাটক আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘'বরফ গলা নদী’'। এটি ১৯৬৪ সালে প্রচারিত হয়। এরপর নিয়মিতভাবে টিভি নাটকে কাজ করতে থাকেন তিনি। ওই সময় টিভিতে বুলবুল আহমেদ অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক হচ্ছে মালঞ্চ, ইডিয়েট, মাল্যদান, বড়দিদি, আরেক ফাল্গুন, শেষ বিকেলের মেয়ে। এর মধ্যে ইডিয়েট নাটকে বুলবুল আহমেদের অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়। তিনি ছিলেন একাধারে মঞ্চ, বেতার, টিভি, চলচ্চিত্র অভিনেতা, আবৃত্তিকার এবং অনুষ্ঠান ঘোষক। তবে কলেজজীবন থেকেই তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

ব্যাংকে ১০ বছর চাকরি করার পর তিনি রূপালি জগতে পর্দায় পা রাখেন। ১৯৭২ সালে আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের অনুপ্রেরণায় সিনেমায় কাজ শুরু করেন বুলবুল আহমেদ। ১৯৭৩ আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমামের (ইউসুফ জহির) মুক্তি পাওয়া ছবি ইয়ে করে বিয়ের মাধ্যমে প্রথম বড় পর্দার দর্শকদের সামনে নায়ক হিসেবে আবির্ভাব ঘটে তার। বছরখানেক বিরতির পর আবার বড় পর্দায় আসেন আব্দুল্লাহ আল মামুনের অঙ্গীকার ছবির মাধ্যমে। এর পর একে একে কাজ করেন ধীরে বহে মেঘনা, রূপালী সৈকতে, সীমানা পেরিয়ে, সূর্য কন্যা, জন্ম থেকে জ্বলছি সহ বেশ কিছু দর্শকনন্দিত ছবিতে। ১৯৮৭ সালে চাষী নজরুল ইসলামের দেবদাস ছবির মাধ্যমে নিজেকে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে আসেন বুলবুল আহমেদ।

পরিচালনা ও প্রযোজনা[সম্পাদনা]

চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি কয়েকটি ছবিও পরিচালনা করেন তিনি। বুলবুল আহমেদ পরিচালিত উল্লেখযোগ্য ছবি হচ্ছে ওয়াদা, মহানায়ক, ভালো মানুষ, রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত, আকর্ষণ, গরম হাওয়া, কত যে আপন প্রভৃতি। এর মধ্যে শেষের চারটি ছবি প্রযোজনার পাশাপাশি পরিচালনাও করেন বুলবুল আহমেদ। ৪৪ বছরের মিডিয়া জীবনে বুলবুল আহমেদ প্রায় ৩০০ নাটক এবং দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন। বুলবুল আহমেদ অভিনীত সর্বশেষ চলচ্ছিত্র হচ্ছে দুই নয়নের আলো, আর সর্বশেষ টিভি নাটক হচ্ছে ২০০৯ সালে শুটিংকৃত বাবার বাড়ি। নাটকটিতে অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনার কাজও করেছেন তিনি।[২]

পারিবারিক জীবন[সম্পাদনা]

বুলবুল আহমেদের স্ত্রী ডেইজি আহমেদ। এই দম্পতির তিন সন্তান হলেন মেয়ে তাহসিন ফারজানা তিলোত্তমা, ঐন্দ্রিলা আহমেদ এবং ছেলে শুভ।

চলচ্চিত্রের তালিকা[সম্পাদনা]

বছর চলচ্চিত্র চরিত্র পরিচালক মন্তব্য
১৯৭৩ ইয়ে করে বিয়ে লেবু ইউসুফ জহির প্রথম চলচ্চিত্র
ধীরে বহে মেঘনা আলমগীর কবির
অঙ্গীকার নির্মাতা চিত্রকর্মীদল
১৯৭৬ সূর্য কন্যা লেনিন চৌধুরী আলমগীর কবির
১৯৭৭ সীমানা পেরিয়ে কালু আলমগীর কবির
মনের মানুষ মুস্তাফা মেহমুদ
জননী সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া
যাদুর বাঁশি ডাক্তার ইউসুফ আব্দুল লতিফ বাচ্চু
১৯৭৮ বধূ বিদায় সাগর কাজী জহির
অঙ্গার জাহেদ কামাল আহমেদ
১৯৭৯ যৌতুক নিজাম উল হক
ঘর সংসার এ যে মিন্টু
সোনার হরিণ সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া
রূপালী সৈকতে আলমগীর কবির
দি ফাদার সবুজ কাজী হায়াৎ
আরাধনা রাজু সিরাজ
১৯৮০ শেষ উত্তর ইমরান আজিজুর রহমান
গাংচিল রুহুল আমিন
১৯৮১ জন্ম থেকে জ্বলছি বেলাল আমজাদ হোসেন
সোনার তরী আজিজুর রহমান
কলমিলতা কলি শহীদুল হক খান
আল্লাহ মেহেরবান মোহসীন
ভালো মানুষ চাষী নজরুল ইসলাম
১৯৮২ দেবদাস দেবদাস মুখোপাধ্যায় চাষী নজরুল ইসলাম
১৯৮৩ মোহনা আলমগীর কবির
পুরস্কার সি বি জামান
সময় কথা বলে ই আর খান
ফেরারী বসন্ত মাসুদ চৌধুরী আখতারুজ্জামান
১৯৮৪ মহানায়ক রানা রহমান আলমগীর কবির
পেনশন রফিকুল বারী চৌধুরী
১৯৮৫ দহন মুস্তাক শেখ নিয়ামত আলী
মা ও ছেলে রাজীব চৌধুরী কামাল আহমেদ
১৯৮৬ শুভদা জমিদার সুরেন্দ্রনাথ চৌধুরী চাষী নজরুল ইসলাম
মায়ের দাবী আওকাত হোসেন
লাভ ইন আমেরিকা মোহসীন
১৯৮৭ রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত শ্রীকান্ত বুলবুল আহমেদ পরিচালক
সারেন্ডার সোহেল জহিরুল হক
দুই জীবন মোস্তফা আব্দুল্লাহ আল মামুন
১৯৮৯ নবাব সিরাজউদ্দৌলা মোহন লাল প্রদীপ দে
১৯৯১ পদ্মা মেঘনা যমুনা রতন চাষী নজরুল ইসলাম
১৯৯২ ত্রাস কাজী হায়াৎ
-- জীবন নিয়ে জুয়া শাহরিয়ার আলমগীর কুমকুম
-- ওয়াদা
-- ভাল মানুষ
-- আকর্ষণ
-- গরম হাওয়া
-- কত যে আপন
১৯৯৪ বিক্ষোভ প্রিন্সিপাল মহম্মদ হান্‌নান
১৯৯৬ এই ঘর এই সংসার শহীদুল্লাহ খান মালেক আফসারী
দিপু নাম্বার টু দিপুর বাবা মোরশেদুল ইসলাম
মৌমাছি এহতেশাম
১৯৯৭ প্রাণের চেয়ে প্রিয় মধু চৌধুরী মহম্মদ হান্‌নান
এখনো অনেক রাত নিতির বাবা খান আতাউর রহমান
২০০১ শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ আরমান চৌধুরী দেবাশীষ বিশ্বাস
নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি মাধুরীর বাবা জাকির হোসেন রাজু
২০০২ সুন্দরী বধূ বাবুর বাবা আমজাদ হোসেন
২০০৩ তুমি শুধু আমার জনাব চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু
২০০৫ দুই নয়নের আলো মোস্তাফিজুর রহমান মানিক
মায়ামৃগ শহীদুল আমিন

পুরস্কার[সম্পাদনা]

বুলবুল আহমেদ তার দীর্ঘ অভিনয় জীবনে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পুরস্কার লাভ করেন।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

বুলবুল আহমেদ ২০১০ সালের ১৫ ই জুলাই বুধবার ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ১৬ জুলাই তাকে আজিমপুর কবরস্থানে পিতা-মাতার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. আলী, মাসুম (১৬ জুলাই ২০১৯)। "ব্যাংকার থেকে নায়ক হয়ে যিনি জিতেছিলেন কোটি হৃদয়"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১৯ 
  2. "www.prothom-alo.com"। ২০২০-০২-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-১২ 
  3. Kajalie Shehreen Islam (জুলাই ২৩, ২০১০)। "The Man Behind the Hero"The Daily Star। Dhaka, Bangladesh। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১২  line feed character in |শিরোনাম= at position 8 (সাহায্য)