বিসমিল্লাহ্ খান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(বিসমিল্লাহ খাঁ থেকে পুনর্নির্দেশিত)
উস্তাদ
বিসমিল্লাহ্ খান
১৯৬৪ সালের এক জলসায় বিসমিল্লাহ্ খান
১৯৬৪ সালের এক জলসায় বিসমিল্লাহ্ খান
প্রাথমিক তথ্য
জন্মনামকামরুদ্দিন খান
জন্ম(১৯১৬-০৩-২১)২১ মার্চ ১৯১৬
উদ্ভবভারত
মৃত্যুআগস্ট ২১, ২০০৬(2006-08-21) (বয়স ৯০)
ধরনভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত
পেশাসঙ্গীতজ্ঞ
বাদ্যযন্ত্রসানাই

উস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব (জন্ম: মার্চ ২১, ১৯১৬ - মৃত্যু: আগস্ট ২১, ২০০৬) একজন ভারতীয় সানাই বাদক। ভারতের উচ্চাঙ্গ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। সানাইকে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত বাদনের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে এই অমর শিল্পী ভারতের উচ্চাঙ্গ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে ওস্তাদ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে তিনি তৃতীয় যাঁরা ভারতরত্ন পদক পেয়েছেন।[১] তিনি ছিলেন অল্পসংখ্যক গুণীদের মধ্যে একজন যিনি ভারতের চারটি সর্বোচ্চ বেসামরিক পদকে সম্মানিত হয়েছেন।

ছোটবেলা[সম্পাদনা]

বিহারের বক্সার জেলার ডুমরাও গ্রামে বিসমিল্লা খান জন্মগ্রহণ করেন। বাবা পয়গম্বর খান ও মা মিঠানের দ্বিতীয় সন্তান ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেবকে প্রথমে কামরুদ্দিন বলে ডাকা হত।[২] কিন্তু তাঁর পিতামহ জন্মের পর নবজাতককে দেখে বিসমিল্লাহ বলার পর হতে তাঁর নাম হয়ে যায় বিসমিল্লাহ খান।[৩] ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেবের পূর্বপুরুষেরা বিহারের ডুমরাও রাজ্যের রাজ সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খানের সঙ্গীত গুরু ছিলেন প্রয়াত আলী বকস্ বিলায়াতু। তিনি ছিলেন বারাণসীর বিশ্বনাথ মন্দিরের সানাই বাদক।

ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব ছিলেন একজন ধার্মিক সুন্নি মুসলমান

সঙ্গীত ও জীবন[সম্পাদনা]

সানাইকে ভারতের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত জগতের যন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবার একক কৃতিত্ব ভারতের উচ্চাঙ্গ ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেবের। ১৯৩৭ সালে কলকাতায় অল ইন্ডিয়া মিউজিক কনফারেন্সে সানাই বাজিয়ে একে ভারতীয় সঙ্গীতের মূল মঞ্চে নিয়ে আসেন। ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি দিল্লীর লাল কেল্লায় অনুষ্ঠিত ভারতের প্রথম প্রজাতন্ত্র দিবসে বিসমিল্লাহ খান সাহেব তার অন্তরের মাধুরী ঢেলে রাগ কাফি বাজিয়ে মুগ্ধ করেছিলেন সারা ভারতবর্ষকে।

তার যোগ্যতায় সানাই এবং ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব সমার্থবোধক হয়ে গেছে। ভারতীয় দূরদর্শনের ১৫ই অগাষ্টের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে তার সানাই বাদন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছিল। দিল্লীর লাল কেল্লায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর পরই ভারতীয় দূরদর্শন সানাই গুরুর অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করতো। পণ্ডিত নেহেরুর সময় হতেই এই ঐতিহ্য চলে আসছে।

আফগানিস্তান, ইউরোপ, ইরান, ইরাক, কানাডা, পশ্চিম আফ্রিকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, জাপান, হংকং সহ পৃথিবীর প্রায় সকল রাজধানী শহরেই ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব তার সঙ্গীত প্রভা ছড়িয়েছেন।

এতো সুনাম এবং অর্জন সত্ত্বেও অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করতেন খান সাহেব। সবসময়ই ছিলেন বারাণসীর পুরোনো পৃথিবীতে। সাইকেল রিকশাই ছিল তার চলাচলের মূল বাহন। অত্যন্ত অন্তর্মুখী বিনম্র এই সঙ্গীত গুরু বিশ্বাস করতেন যে সঙ্গীত শোনার বিষয়, দেখার বা দেখাবার নয়।

ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব স্বাধীনতা উত্তর ভারতের উচ্চাঙ্গ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে অমর হয়ে থাকবেন। ব্যক্তিস্বত্তা হিসেবে তিনি হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

মর্যাদা সম্মাননা[সম্পাদনা]

  • সম্মানসূচক ডক্টরেট, বানারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়
  • সম্মানসূচক ডক্টরেট, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

চলচ্চিত্রে ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেব[সম্পাদনা]

চলচ্চিত্রে ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেবের সংযোগ ছিল অতি সামান্য। সনাদি অপন্যা চলচ্চিত্রের ডা: রাজকুমার চরিত্রের জন্য সানাই বাজিয়েছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের জলসাঘর চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এবং গুঞ্জে উঠে সানাইয়ের অংশে সানাই বাজিয়েছিলেন। শক্তিমান চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান সাহেবের জীবন এবং কর্মের ওপর প্রামাণ্যচিত্র সঙ্গ মিল সে মুলাকাত তৈরি করেন। এতে ওস্তাদ সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।[৪] বিজয় ভাট পরিচালিত দক্ষিণী ছবি 'সানাদি আপ্পান্না'তে সানাইবাদক আপ্পান্নার জীবনের চলচ্চিত্রায়নের নেপথ্যে সানাই বাজিয়েছিলেন বিসমিল্লা খান।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

সানাইয়ের এই দিকপাল ২১ অগাষ্ট ২০০৬ তারিখে বারাণসীর হেরিটেজ হসপিটালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৯০ বছর। তিনি পাঁচ পুত্র, তিন কন্যা ও অসংখ্য পৌত্র-পুত্রী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে ভারত সরকার একদিনব্যাপী জাতীয় শোক পালন করে।

উল্লেখযোগ্য সৃষ্টিকর্ম[সম্পাদনা]

  • সনাদি অপন্যা চলচ্চিত্রের ডা: রাজকুমার চরিত্রের জন্য সানাই বাজানো
  • গুঞ্জে উঠে সানাই (১৯৫৯) সানাই বাজানো
  • মায়েস্ট্রো চয়েস (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪)
  • মেঘ মালহার, ভলিয়ুম ৪ (কিশোরী আমনকরের সাথে) (সেপ্টম্বর ১৯৯৪)
  • লাইভ এট কুইন এলিজাবেথ হল (সেপ্টেম্বর ২০০০)
  • লাইভ ইন লন্ডন, ভলিয়ুম ২ (সেপ্টেম্বর ২০০০)

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Indian music's soulful maestro"BBC News। ২১ আগস্ট ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-০১ 
  2. "Bismillah Khan"The Telegraph। ২২ আগস্ট ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১০ জানুয়ারি ২০১৩ 
  3. "Virtuoso musician who introduced the shehnai to a global audience"The Independent। ২২ আগস্ট ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১৩ 
  4. Bismillah Khan: The Shehnai Maestro by Neeraja Poddar, Rupa & Co., New Delhi, 2004.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]