বামাখ্যাপা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বামাখ্যাপা
বামাখ্যাপা
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম
বামাচরণ চট্টোপাধ্যায়

২২ ফেব্রুয়ারি ১৮৩৭
মৃত্যু১৮ জুলাই ১৯১১(1911-07-18) (বয়স ৭৪)
ধর্মহিন্দুধর্ম
জাতীয়তাভারতীয়
মন্দিরতারাপীঠ
দর্শন
ধর্মীয় জীবন
গুরুস্বামী কৈলাশপতি এবং বেদাগ্য মোক্ষদানন্দ
সম্মানতারাপীঠ ভৈরব

বামাক্ষ্যাপা বা বামাচরণ চট্টোপাধ্যায় (জন্ম ১২ ফাল্গুন ১২৪৪, মৃত্যু ২ শ্রাবণ ১৩১৮ )[১] ছিলেন একজন ভারতীয় হিন্দু সাধক ও তান্ত্রিক । তিনি বীরভূম জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ও তারাপীঠে বাস করতেন। তিনি দেবী তারার ভক্ত ছিলেন এবং দেবী তারাকে "বড় মা" বলে ডাকতেন। মন্দিরের কাছে শ্মশানঘাটে সাধনা করতেন।[২] তিনি শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সমসাময়িক ছিলেন।

সাধক বামাখ্যাপার স্মৃতিসৌধ

প্রথম জীবন[সম্পাদনা]

১২ ফাল্গুন ১২৪৪ বঙ্গাব্দে বীরভূমে আটলা গ্রামে বামাক্ষ্যাপার জন্ম। [৩][৪][৫] তার পিতা ছিলেন সর্বানন্দ চট্টোপাধ্যায়। বামক্ষ্যাপার প্রকৃত নাম বামচরণ চট্টোপাধ্যায়। শৈশব থেকেই দেবভক্তি প্রবল। তিনি দেবী তারার ভক্ত ছিলেন এবং মন্দিরের কাছে শ্মশানঘাটে সাধনা করতেন।[৬]

সাধনা ও খ্যাতি[সম্পাদনা]

বামাক্ষ্যাপা নামাঙ্কিত ঘাট, তারাপীঠ

বামাক্ষ্যাপা ছেলেবেলায় গৃহত্যাগ করে তিনি কৈলাশপতি বাবা নামে এক সন্ন্যাসীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। কৈলাশপতি বাবা তারাপীঠে থাকতেন। বামাক্ষ্যাপা তারাপীঠেই দ্বারকা নদের তীরে যোগ ও তন্ত্রসাধনা করেন। পরে তিনি নিকটবর্তী মল্লরাজাদের মন্দিরময় গ্রাম মালুটি (অধুনা ঝাড়খণ্ড রাজ্য)তে যান যোগ সাধনার জন্যে। সেখানে দ্বারকার তীরে মৌলাক্ষী দেবীর মন্দিরে সাধনাকালে প্রায় ১৮ মাস অবস্থান করেন।

বামাক্ষ্যাপার মন্দির, মালুটি গ্রাম, ঝাড়খণ্ড

ক্রমে তিনি তারাপীঠের প্রধান ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। ভক্তরা বিশ্বাস করত তার অলৌকিক ক্ষমতা আছে। তাই তারা রোগারোগ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনে তার কাছে আসত। বামাক্ষ্যাপা মন্দিরের নিয়মকানুন মানতেন না। এমনকি দেবতার থালা থেকেই নৈবেদ্য তুলে খেয়ে নিতেন। কথিত আছে, নাটোরের মহারানীকে স্বপ্নে দেবী তারার প্রত্যাদেশ পান যে, দেবীপুত্র বলে বামাক্ষ্যাপাকে যেন আগে খাওয়ানো হয়। এরপর থেকে মন্দিরে পূজার আগেই বামাক্ষ্যাপাকে নৈবেদ্য প্রদান এবং তাকে অবাধে মন্দিরে বিচরণ করতে দেওয়া হত।[৭] আরও কথিত আছে, দেবী তারা ভয়ংকর বেশে বামাক্ষ্যাপাকে দর্শন দিয়েছিলেন এবং পরে মাতৃবেশে কোলে তুলে নিয়েছিলেন।[২] তারাপীঠ শ্মশানে ও দুমকা জেলার মালুটি গ্রামের তার স্মৃতিমন্দির আছে।[৮]

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে[সম্পাদনা]

বামাখ্যাপার বিগ্রহ, তারাপীঠ মন্দির, বীরভূম।

সাধক বামাক্ষ্যাপাকে নিয়ে বহু গান, পল্লীগীতি রচিত হয়েছে। তার জীবনী বৃত্তান্ত নিয়ে বাংলা টেলিসিরিয়াল তৈরী হয়েছে যা বামাক্ষ্যাপা জীবনকে বিস্ততারিত দেখানো হয়েছে ।

মনীষীদের সাথে বামাক্ষ্যাপার সাক্ষাৎ[সম্পাদনা]

স্বামী বিবেকানন্দের সহিত সাক্ষাৎ[সম্পাদনা]

মাত্র ১৯ বয়সে ঠাকুর রামকৃষ্ণের সংস্পর্শে আসার পর নরেন্দ্রনাথ বামাক্ষ্যাপাকে দর্শন করার জন্য তার কলেজের সহপাঠী শরৎচন্দ্র চক্রবর্তীকে জানান। শরৎচন্দ্র তাকে বলেন, ‘তুমি তো ঠাকুরের দেখা পেয়েছো। আবার কেন সেই ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষকে দেখতে চাও?’ ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষদের চারটি অবস্থা বালকবৎ, জড়বৎ, উন্মাদবৎ এবং পিশাচবৎ। এই চারটি অবস্থাই ব্যামাক্ষ্যাপার মধ্যে দেখা যেত। কিন্তু ঠাকুর রামকৃষ্ণের মধ্যে পিশাচবৎ ভাবটি অনুপস্থিত ছিল। তাই বামাক্ষ্যাপাকে দেখার জন্য নরেন্দ্রনাথ আকুল হয়ে ওঠেন। শেষে শরৎচন্দ্রকে নিয়ে নরেন্দ্রনাথ চলে এলেন তারাপীঠে। সেখানে বামাক্ষ্যাপা ও নরেন্দ্রনাথ দেখা হয়। আর তার সম্পর্কে বামাক্ষ্যাপা তার বন্ধু শরৎচন্দ্রকে বললেন, এই যুবক একদিন ধর্মের মুখ উজ্জ্বল করবে।[৯]

মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে সাক্ষাৎ[সম্পাদনা]

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্ম হলেও তিনি বামাক্ষ্যাপাকে দেখার জন্য তারাপীঠে গিয়েছিলেন। সেখানে দুজনার কিছুক্ষণ কথা হয়। কথিত আছে, ফেরার সময় বামাক্ষ্যাপা মহর্ষিকে বললেন,

ফেরার পথে সেই মাঠ এবং ছাতিম গাছ দেখে তিনি চমৎকৃত হলেন। সেখানে বসে ধ্যানে মগ্নও হলেন। তিনি ঠিক করেন সেখানে তিনি আশ্রম স্থাপন করবেন। পরবর্তীতে ওখানেই শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠিত হয়।[৯]

আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সাথে সাক্ষাৎ[সম্পাদনা]

বাংলার বাঘ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে তার মা এবং স্ত্রীকে নিয়ে তারাপীঠে বামাক্ষ্যাপাকে দর্শন করার জন্য গিয়েছিলেন। আশুতোষ বামাক্ষ্যাপাকে ভক্তিভরে প্রণাম করতেই তিনি বলে উঠেছিলেন,

তিনি তো তখন হাইকোর্টের আইনজীবী। কিন্তু মনে জজ হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল তার। ১৯০৪ সালে তিনি হাইকোর্টের জজ হন।[৯]

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মুকুন্দদাসের সাথে সাক্ষাৎ[সম্পাদনা]

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও একবার চারণকবি মুকুন্দদাসের সঙ্গে তারাপীঠে গিয়ে বামাক্ষ্যাপার সঙ্গে দেখা করার জন্য সারাদিন অপেক্ষা করেছিলেন। সন্ধ্যায় বামাক্ষ্যাপার সঙ্গে তাদের দেখা হয়। মুকন্দদাসকে দেখে বামাক্ষ্যাপা বললেন,

উল্লেখ্য, চারণকবির কোমরে একটা রিভলভার গোঁজা ছিল। তারপর তিনি রবীন্দ্রনাথকে বললেন, ‘তোর খুব নামডাক হবে।’ দুজনকে তারামায়ের প্রসাদ খাইয়ে তিনি ছেড়েছিলেন।[৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Kinsely, p. 111
  2. Kinsely, p. 111
  3. https://bengali.news18.com/news/south-bengal/people-gathered-at-atla-village-for-birth-anniversary-of-bamakhyapa-280331.html
  4. https://www.anandabazar.com/west-bengal/purulia-birbhum-bankura/theft-in-five-temples-in-a-village-of-bamakhepa-in-rampurhat-1.896962
  5. https://www.sangbadpratidin.in/bengal/theft-in-five-temples-in-birbhum/
  6. বসু, অঞ্জলি; গুপ্ত, সুবোধ চন্দ্র সেন (২০১০)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান: প্রায় চার সহস্রাধিক জীবনী-সংবলিত আকর গ্রণ্থ. প্রথম খন্ড। Sāhitya Saṃsada। আইএসবিএন 9788179551356 
  7. Harding, Elizabeth U. (১৯৯৮)। Kali: the black goddess of Dakshineswar। Motilal Banarsidass Publ.। পৃষ্ঠা 275–279। আইএসবিএন 8120814509। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৬-২৬ 
  8. খায়রুল আনম। "বামাখ্যাপার আবির্ভাব তিথি"। খবর ইন্ডিয়া অনলাইন। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  9. বর্তমান পত্রিকা। "তারামায়ের ছেলে বামাক্ষ্যাপা"bartamanpatrika.com। ২০২০-০২-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০১-১৮ 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]