ফজলুল হক (বীর প্রতীক)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ফজলুল হক
মৃত্যুডিসেম্বর ১৯৯৯
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক
একই নামের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের জন্য দেখুন ফজলুল হক

ফজলুল হক (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ডিসেম্বর ১৯৯৯) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

ফজলুল হকের জন্ম সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের গঙ্গাজলের খাদিমান গ্রামে। তার বাবার নাম আজাদ আলী । তার স্ত্রীর নাম বেলা খাতুন। তাদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

ফজলুল হক চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন যশোর ইপিআর সেক্টরের অধীন চুয়াডাঙ্গা উইংয়ে (বর্তমানে ব্যাটালিয়ন)। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। পরে যুদ্ধ করেন ৮ নম্বর সেক্টরের অধীন বয়রা সাবসেক্টরে। ফজলুল হক ১৯৮৮ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের মে মাসের শেষদিক ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়নের কাশীপুরে সীমান্তচৌকি এলাকা তখন ছিলো মুক্ত। সীমান্তের ওপারে ভারতের মাটিতে মুক্তিযোদ্ধা শিবির। সেখানে আছেন ফজলুল হকসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা। তারা বেশির ভাগ ইপিআরের সদস্য। কয়েকটি দলে বিভক্ত। তাদের সবার নেতৃত্বে আবু ওসমান চৌধুরী । মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে এক দিন খবর এল, যশোর থেকে এক দল পাকিস্তানি সেনা কাশীপুরে আসছে। তাদের উদ্দেশ্য সীমান্তচৌকি দখল এবং সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করা। পাকিস্তানিদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হলে সীমান্ত এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের চলাচল একেবারে সীমিত হয়ে পড়বে। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের অধিনায়ক সিদ্ধান্ত নিলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চেষ্টা নস্যাৎ করতে হবে। তিনি নির্দেশ দিলেন আক্রমণের। মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে শুরু হলো প্রস্তুতি। সুবেদার মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন দলের ওপর দায়িত্ব পড়ল অগ্রসরমাণ পাকিস্তানি সেনাদের বাধা দেওয়ার। এ দলের সদস্য ছিলেন ফজলুল হক। তারা দ্রুত প্রস্তুত হয়ে রওনা হলেন কাশীপুরের উদ্দেশে। ফজলুল হক ও তার সহযোদ্ধারা কাশীপুরে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে হাজির হলো পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রগামী দল। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ করলেন। পাকিস্তানিরাও প্রচণ্ড পাল্টা আক্রমণ শুরু করল। পাকিস্তানি সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের ধারণার চেয়েও অনেক। এতে মুক্তিযোদ্ধারা বেশ বেকায়দায় পড়ে গেলেন। তবে বিচলিত হলেন না। ফজলুল হক ও আরও কয়েকজন মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকলেন। প্রচণ্ড যুদ্ধের একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে খবর গেল পাকিস্তানি সেনা অনেক। দ্রুত সেখান থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে হাজির হলো মুক্তিযোদ্ধাদের আরও দুটি দল। এ দুটি দলের নেতৃত্বে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদা এবং তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী। তারা তাদের দল নিয়ে সীমান্তচৌকির ডান দিক দিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালালেন। যুদ্ধ ভয়াবহ রূপ ধারণ করল। শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারাই জয়ী হলেন। বিপুল অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। শেষে হতাহত অনেককে ফেলে পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যায়। জীবিত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে।[২]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ১৯-০৫-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ২৪৯। আইএসবিএন 9789849025375 

পাদটীকা[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]