পুদিনা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পুদিনা
Mentha spicata
Foliage
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Plantae
বিভাগ: Magnoliophyta
শ্রেণী: Magnoliopsida
বর্গ: Lamiales
পরিবার: Lamiaceae
গণ: Mentha
প্রজাতি: M. spicata
দ্বিপদী নাম
Mentha spicata
L.[১]

পুদিনা (ইংরেজি: Spearmint, or spear mint), (বৈজ্ঞানিক নাম: Mentha spicata), এক প্রকারের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এটি Lamiaceae পরিবারের অন্তর্গত। খুব সহজেই মাটিতে বা টবে পুদিনার চাষ করা যায়।

উপকারিতা[সম্পাদনা]

সুগন্ধির জন্য পুদিনা পাতা অনেক বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু যৌন জীবনের জন্য এটি মোটেও ভালো নয়। এটি শরীরে যৌন উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী হরমোন টেসটোসটের মাত্রা কমিয়ে দেয় যা শরীরকে ঠাণ্ডা করে দেয় এবং যৌন আগ্রহ কমিয়ে দেয়। তাই শুধুমাত্র সুগন্ধির জন্য পুদিনা বাদ দিয়ে আদা খাওয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে। পুদিনা পাতার রস শরবতে মিশিয়ে পান করলে পেটের গোলযোগ সারে। মুত্রের পরিমাণ বাড়াতেও সাহায্য করে। পুদিনা জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। পুদিনা পাতার ঝোল উদারময় ,আমাশয় সারতে সাহায্য করে। খাদ্যে অরুচি পাকস্থলীর প্রদাহে পুদিনা পাতার রস উপকারী । শুকনো কাশিতেও পুদিনা ব্যবহৃত হয়। ফোলা ও ব্যথা কমানোর জন্য পুদিনা পাতা থেঁতো করে বা বেটে লাগালে ব্যাথার উপশম হয়। বাতের ব্যথা, মাথার যন্ত্রণা সারাতে পুদিনা পাতার নির্যাস ব্যবহার করা হয়। পুদিনা গাছের শিকড় আমাশয় সারাতে ব্যবহৃত হয়।

বিস্তৃতি[সম্পাদনা]

এরা ইউরোপএশিয়ার (মধ্য প্রাচ্য, হিমালয়চীন ইত্যাদি) স্থানীয় উদ্ভিদ। এটিকে আফ্রিকা, উত্তরদক্ষিণ আমেরিকা এবং বিভিন্ন প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপসমূহে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো হয়।[২][৩][৪][৫]

চাষ[সম্পাদনা]

পুদিনা বিভিন্ন ভাবে চাষ করা যায়। চাষ করাও খুব সহজ। খুব একটা যত্নেরও প্রয়োজন হয় না। পুদিনা গাছের ডাল ভেজা মাটিতে লাগালেই তা থেকে নতুন গাছ জন্নায়। খুব একটা উর্বর মাটির প্রয়োজন নেই। ঔষধিগুণ সম্পন্ন হওয়ার কারণে এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্যাপক। টব বা জমি উভয়স্থানেই এর চাষ করা হয়। বর্তমানে হাইড্রোপনিকসভাবে ঘরের ভিতরেও এর চাষ করা সম্ভব।

পুদিনা উদ্ভিদ খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। কোনো স্থানে লাগানো হলো তা আশেপাশে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পরে।

ব্যবহার[সম্পাদনা]

পুদিনা পাতা

এর পাতা সুগন্ধি হিসাবে রান্নায় ব্যবহার করা হয়। পুদিনা জীবাণুনাশক হিসাবে কাজ করে। কাশি,অরুচি ও পাকস্থলীর প্রদাহে পুদিনা উপকারী। পুদিনা পাতার চা বেশ জনপ্রিয় পানিয়। এছাড়া পুদিনা পাতা রুপচর্চায় ও ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন প্রসাধনি এবং খাবারে বাড়তি রিফ্রেশমেন্ট তৈরি করে পুদিনা পাতা।

উপকারিতা[সম্পাদনা]

পুদিনার পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ, সি আর বি – কমপ্লেক্স। যা ত্বকের যত্নে আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অত্যন্ত জরুরি উপাদান। এছাড়াও এই পাতায় মেলে লৌহ, পটাশিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ। এই খনিজ উপাদানগুলো রক্তে ‘হিমোগ্লোবিন’য়ের মাত্রা বাড়ায় এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা অটুট রাখে।

হজমে সহায়ক: ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’, ‘মেন্থল’ আর ‘ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট’য়ের প্রাচুর্য থাকে পুদিনা পাতায়। এই উপাদানগুলো হজমের জন্য প্রয়োজনীয় ‘এনজাইম’ তৈরি করে। পুদিনা পাতার ‘এসেন্সিয়াল অয়েল’য়ের আছে শক্তিশালী জীবাণুনাশক ক্ষমতা। পাশাপাশি তা পাকস্থলিকে শীতল করে, অম্লীয় খাবার সামাল দিতে সাহায্য করে। ফলে পেটের গোলমাল কমে।

হাঁপানি কমায়: নিয়মিত পুদিনা পাতা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে বুকে কফ জমতে পারেনা। এখানে মুখ্য ভূমিকা থাকে ‘মেন্থল’য়ের, যা ফুসফুসে আটকে যাওয়া ‘মিউকাস’ ছাড়ায়। এছাড়াও নাকের ফুলে ওঠা ‘মেমব্রেন’কে সারিয়ে তোলে ‘মেন্থল’। ফলে শ্বাস নেওয়ার কষ্ট দূর হয়। তবে অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়, নতুবা শ্বাসনালীতে অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।

মাথা ব্যথা সারায়: পুদিনা পাতায় থাকা ‘মেন্থল’ পেশিকে শিথিল করার মাধ্যমে ব্যথা কমায়। এই পাতার নির্যাস থেকে তৈরি অসংখ্য মলম মাথা ব্যথা সারাতে ব্যবহার হয়। মলম ব্যবহার করতে না চাইতে সরাসরি পুদিনা পাতার রস কপালে মাখলেও মাথা ব্যথা ক‌মে।

মানসিক স্বস্তি: সুগন্ধিভিত্তিক চিকিৎসায় পুদিনা পাতা প্রথম সারির উপাদান। এর কড়া সুগন্ধ মানসিক চাপ, হতাশা দূর করে শরীরকে চনমনে করে তোলে। রক্তে ‘কর্টিসল’ হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক‌রে জৈবিক মানসিক চাপ সামাল দেওয়ার ক্ষমতাকে সক্রিয় করার মাধ্যমে এই কাজটি হয়। আবার পুদিনা পাতার ‘এসেন্সিয়াল অয়েল’য়ে ঘ্রাণ তাৎক্ষণিক রক্তে ‘সেরোটনিন’ হরমোন নিঃসরণ করে। এই হরমোনও মানসিক অস্থিরতা ও হতাশা কমায়।

ত্বকের যত্নে: প্রদাহ ও ব্যাকটেরিয়ানাশক গুণ থাকার কারণে ত্বকের ব্রণের সমস্যা সারাতে পুদিনা পাতার জুড়ি নেই। এই পাতার উচ্চমাত্রায় ‘স্যালিসাইলিক অ্যাসিড’ থাকে যা ব্রণ দূর করে। ত্বক পরিষ্কার করতেও এটি বেশ কার্যকর। মৃত কোষ দূর করতে এবং কড়া পড়া অংশ স্বাভাবিক করতেও পুদিনা পাতা ভা‌লো কাজ দেয়।

দাঁত ও মাঢ়ির সুরক্ষায়: মুখের দুর্গন্ধ দূর করার কাজে পুদিনা পাতা আদর্শ উপাদান। এর নির্যাস সমৃদ্ধ ‘মাউথওয়াশ’ মুখের ভেতরের জীবাণু ধ্বংস করে, সুস্থ রাখে দাঁত ও মাঢ়ি।

স্মৃতিশক্তি বাড়ায়: মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় ক্ষমতা বাড়াতে পুদিনা পাতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা। নিয়মিত খেলে বাড়ে উপস্থিত বুদ্ধি, সতর্কতা, স্মৃতিশক্তি।

ওজন সামাল দিতে: পুদিনা পাতা থেকে তৈরি ‘এসেন্সিয়াল অয়েল’ হজম ক্ষমতাকে এবং বর্জ্য অপসারণ প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে সহায়তা করে। পক্ষান্তরে তা খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণে সহায়ক হয়। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়।

মৌসুমি রোগের চিকিৎসায়: ঠাণ্ডা, সর্দিজ্বর, নাক বন্ধ ইত্যাদি সমস্যার সমাধানে পুদিনা পাতা অত্যন্ত উপকারী এবং কার্যকর। প্রায় সকল ‘ভেপর রাব’, ‘ইনহেলার’য়েই থাকে এর নির্যাস। পাশাপাশি কাশি কমাতে এবং গলার অস্বস্তি সারাতেও পুদিনা পাতা কার্যকর।

তথ্য সূত্রঃ 2021-02-28

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Mentha L."Germplasm Resources Information Network। United States Department of Agriculture। ২০০৪-০৯-১০। ২০০৯-০৫-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-৩০ 
  2. "World Checklist of Selected Plant Families: Royal Botanic Gardens, Kew"kew.org 
  3. Flora of China Vol. 17 Page 238 留兰香 liu lan xiang Mentha spicata Linnaeus, Sp. Pl. 2: 576. 1753.
  4. Altervista Flora Italiana, Menta romana, Mentha spicata L. includes photos + distribution maps for Europe + North America
  5. Biota of North America Program, 2013 county distribution map