পরীক্ষিৎ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পরীক্ষিৎ
পূর্বসূরীযুধিষ্ঠির
উত্তরসূরীজনমেজয়
দাম্পত্য সঙ্গীমদ্রবতী
সন্তানজনমেজয়
পিতা-মাতা

পরীক্ষিৎ (সংস্কৃত: परीक्षित्) ছিলেন একজন কুরুবংশীয় সম্রাট। যিনি মধ্য বৈদিক যুগে রাজত্ব করেছিলেন। তিনি মহাবীর অভিমন্যুর পুত্র ও মহাবীর অর্জূনের পৌত্র। মহাভারতের মহাযুদ্ধের পর তিনিই ছিলেন পান্ডব তথা কুরু বংশের একমাত্র প্রদীপ। যুধিষ্ঠির মহাপ্রস্থানের আগে তাকে সিংহাসনে রাজ্যাভিষেক করান। তার পুত্র এবং উত্তরসূরি জনমেজয়ের পাশাপাশি তিনি কুরু রাজ্যের একীকরণ, বৈদিক স্তবক সংগ্রহের ব্যবস্থা এবং গোঁড়া শ্রুতের আচারের বিকাশের ক্ষেত্রে, কুরু রাজ্যকে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।

জন্ম[সম্পাদনা]

তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন ও যাদবকন্যা সুভদ্রার পৌত্র এবং অভিমন্যু ও মৎস্য রাজকন্যা উত্তরার পুত্র। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের অবসানের পর তার জন্ম হয়। কিশোরবয়সের অজ্ঞানতাবশত পঞ্চদশবর্ষী অভিমন্যু ও ত্রয়োদশী উত্তরা বিবাহের কালরাত্রেই শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। যুদ্ধের ত্রয়োদশ দিবসে বালক অভিমন্যু ছয় রথী দ্বারা অন্যায় যুদ্ধে নিহত হন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের শেষে অশ্বত্থামা পাণ্ডব নিধনের উদ্দেশ্যে ব্রহ্মশির অস্ত্র প্রয়োগ করেন। কৃষ্ণের নির্দেশে অর্জুনও প্রতিষেধক হিসাবে একই অস্ত্র প্রয়োগ করলে, উভয় অস্ত্রের কারণে পৃথিবী ধ্বংসের উপক্রম হয়। সে কারণে দেবর্ষি নারদ ও মহর্ষি কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন এই দুই অস্ত্রের মাঝখানে দাঁড়িয়ে উভয়ের অস্ত্র সংবরণ করতে বলেন। অর্জুন ব্রহ্মচর্য পালনের কারণে তাঁর অস্ত্র প্রতিহারে সমর্থ হলেও, অশ্বত্থামা সদা সৎপথে না থাকায় তিনি তাঁর অস্ত্র প্রত্যাহার করতে ব্যর্থ হন। ফলে উক্ত অস্ত্র উত্তরার গর্ভস্থ পরীক্ষিৎকে হত্যা করে। কিন্তু কৃষ্ণ তাকে পুনর্জীবিত করেন এবং ভরতবংশ পরীক্ষণ হওয়ার পর জন্ম বলে অভিমন্যুর পুত্রের নামকরণ করা হয় পরীক্ষিৎ। তিনি পাণ্ডবগণের প্রাণস্বরূপ ছিলেন।

রাজ্যাভিষেক[সম্পাদনা]

যুধিষ্ঠির কর্তৃক পরীক্ষিতের রাজপদে অধিষ্ঠান

ভারতযুদ্ধের ছত্রিশ বছর পরে যাদবগণ দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে ওঠে এবং ব্যক্তিগত বিবাদের ফলে যাদববংশ ধ্বংস হয়। যুধিষ্ঠির অর্জুনের নিকট এই সংবাদ প্রাপ্ত হয়ে দুঃখিত হন এবং প্রজাগণকে আহ্বান করে মহাপ্রস্থানের অভিপ্রায় জানান। তিনি কৃষ্ণের প্রপৌত্র বজ্রকে ইন্দ্রপ্রস্থে অভিষিক্ত করে অবশিষ্ট যাদবগণকে পালনের দায়িত্ব অর্পণ করেন। এরপর তিনি পরীক্ষিৎকে হস্তিনাপুরের সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করে কৃপাচার্যের ওপরে তার অস্ত্রশিক্ষা ও ধৃতরাষ্ট্রের বৈশ্যাগর্ভজাত পুত্র যুযুৎসুর ওপর রাজ্যপালনের ভার দেন। পরীক্ষিৎ কৃপাচার্যের অভিভাবকত্বে তিনটি অশ্বমেধ যজ্ঞ করেন।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

রাজা পরীক্ষিতের মৃগয়া
শুকদেবের পরীক্ষিতের নিকট কৃষ্ণকথা বর্ণন

একদিন মৃগয়া করতে গিয়ে পরীক্ষিৎ এক মৃগকে বাণবিদ্ধ করে তার অনুসরণ করেন এবং ক্ষুধিত ও পরিশ্রান্ত হয়ে গভীর বনে শমীক নামে এক মুনিকে মৃগ সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। মুনি মৌনব্রতধারী হওয়ায় কোনো উত্তর করেন না। ফলে পরীক্ষিৎ ক্রুদ্ধ হয়ে ধনু দিয়ে একটি মৃত সাপ তুলে মুনির স্কন্ধে পরিয়ে দেন এবং নিজের পুরিতে ফিরে যান। শমীক মুনির পুত্র শৃঙ্গী আচার্যের গৃহ থেকে ফেরার সময় কৃশ নামে এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন যে কীভাবে পরীক্ষিৎ তার পিতাকে অপমান করেছেন। তিনি অভিশাপ দেন যে তার নিরপরাধ পিতাকে অপমান করেছেন সপ্তরাত্রির মধ্যে তক্ষক নাগ তাকে দংশন করবে। শমীক মুনির শিষ্য গৌরমুখের কাছ থেকে ঋষিপুত্রের শাপ সম্পর্কে জানতে পেরে পরীক্ষিৎ অত্যন্ত দুঃখিত হন। তিনি মন্ত্রীদের সাথে মন্ত্রণা করে একটিমাত্র স্তম্ভের ওপর সুরক্ষিত প্রাসাদ নির্মাণ করেন এবং বিষচিকিৎসক ও মন্ত্রসিদ্ধ ব্রাহ্মণদের নিয়োগ করেন। রাজকার্য উপলক্ষে একমাত্র মন্ত্রীগণই তার কাছে যেতে পারতেন। সপ্তম দিনে কাশ্যপ নামক বিষচিকিৎসক রাজার কাছে যাওয়ার পথে তক্ষক নাগ ব্রাহ্মণের বেশে তার কাছে উপস্থিত হন এবং অর্থের পরিবর্তে তাকে ফিরে যেতে বলেন।

তক্ষকের পরীক্ষিৎ দংশন

কাশ্যপ যোগবলে রাজার আয়ু শেষ হয়েছে জেনে অভীষ্ট ধন নিয়ে ফিরে যান। এরপর তক্ষকের উপদেশে তার কয়েকজন অনুচর ব্রাহ্মণের বেশে পরীক্ষিতের কাছে এসে ফল, কুশ ও জল দিয়ে বিদায় নেয়। তিনি অমাত্যগণের সঙ্গে ফল খেতে গিয়ে দেখেন ফলের ভিতর ক্ষুদ্র কৃষ্ণনয়ন তাম্রবর্ণ কীট। রাজা বুঝতে পারেন তার মৃত্যুকাল আসন্ন। তাই তিনি কীটটিকে স্বেচ্ছায় গলার ভিতর রেখে হাসতে থাকেন। তখন তক্ষক নাগ নিজ রূপ ধারণ করে সগর্জনে তাকে দংশন করেন। মন্ত্রীগণ ভয়ে পলায়ন করেন, ফিরে এসে দেখেন রাজা বজ্রাহতের ন্যায় পড়ে আছেন।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Maharaja Parikshit"। ১৪ জুলাই ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মে ২০১৪ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]