নিমতলি অগ্নিকাণ্ড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নিমতলি অগ্নিকাণ্ড
তারিখ৩ জুন ২০১০
সময়১০:৩০ অপরাহ্ন বাংলাদেশ সময়
স্থাননিমতলী, ঢাকা, বাংলাদেশ
কারণবিদ্যুৎ
মৃত১১৭ জন (সরকারী হিসেবে)
আহতপ্রায় ২০০
অগ্নিকাণ্ডের পরদিন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কৌতূহলী জনতার ভীড়। ছবির মাঝখানের অংশে দূরে পুড়ে যাওয়া পাঁচতলা বাড়ির একাংশ ও বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার দুটি দেখা যাচ্ছে।

নিমতলি অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা জুন তারিখে। পুরান ঢাকার নবাব কাটরার নিমতলি নামীয় মহল্লায় একটি বড়সড় অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয় যা নিম্নতলি অগ্নিকাণ্ড (কখনও নিমতলি ট্র্যাজেডি) নামে অভিহিত।[১] এই অগ্নিকাণ্ডে নিশ্চিতভাবে ১১৭ জন মানুষ নিহত হন।[২] পরে ৬ই জুন এক শিশু[৩] এবং ৭ই জুন এক মহিলা[৪] মারা গেলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৯। বাংলাদেশ সরকার এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতের স্মরণে ৫ জুন, ২০১০ তারিখে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে।[৫]

কারণ[সম্পাদনা]

ভবনসংলগ্ন একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরিত হলে সেখান থেকে আশেপাশের ভবনগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।[৬] দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশের অগ্নিনির্বাপক সংস্থা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মত: আশেপাশের দোকানগুলোতে থাকা রাসায়নিক দ্রব্যাদি ও দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে আগুন আরো দ্রুত বিস্তৃত হয়। এছাড়া আক্রান্ত এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের সে এলাকায় যেতে ও কাজ করতে বাধার সম্মুখীন হতে হয়, যা দ্রুত অগ্নিনির্বাপন বাধাগ্রস্থ করে।[৭] এছাড়া পুরান ঢাকা এলাকার সংকীর্ণ রাস্তা দিয়ে তাদের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও অগ্নিনির্বাপক গাড়ি প্রবেশ করাতেও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।[১]

ক্ষয়ক্ষতি[সম্পাদনা]

অগ্নিকাণ্ডে নিমতলি এলাকার বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়,[৮] এবং আক্রান্তরা ভবনগুলোতে আটকা পড়েন।[৭] ঘটনার দিন রাত ১০:৩০ এর দিকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে এবং এটি তিন ঘণ্টারও বেশি সময় স্থায়ী হয়।[৯][১০] এই অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ১১৭ জন মানুষ নিহত হয়, এবং প্রায় শতাধিক মানুষ আহত হন।[২] ৬ই জুন বিকেল পাঁচটায় ঢাকার সিএমএইচ-এ ৫ বছরের শিশু সায়েমের মৃত্যু হলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৮।[৩] আক্রান্ত একটি ভবনে বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিলো এবং এজন্য সেখানে ছিল অনেক অতিথির সমাগম। ফলশ্রুতিতে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাও বেড়ে যায়।[৭] একটি ভবনে আগুন ধরে গেলেও মানুষ বের হতে পারেনি কারণ এর জানালা লোহার গ্রিল দ্বারা ঢাকা ছিলো।[১১]

আহতদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতরে মধ্যে অনেকেই ছিলেন অগ্নিদগ্ধ; এছাড়া অনেকে ধোঁয়াজনিত কারণে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।[৭][১২] হাসপাতালের ডাক্তারদের মতা অনুসারে অগ্নিদগ্ধতার কারণে নয়, বরং বেশিরভাগ মৃত্যুই ঘটেছে ধোঁয়াজনিত শ্বাসরুদ্ধতার কারণে।[৮]

৪ জুন, ২০১০ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধার তৎপরতা শেষ হয়।[১৩]

প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্নিকাণ্ডের যথাযথ কারণ উদঘাটনের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। তিনি সেই সাথে ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ও নিহতদের পরিবারবর্গের প্রতি তার গভীর সমবেদনা জানান।[১৪] বাংলাদশে সরকার ৫ জুন, ২০১০ সারাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে।[১৫] এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, যাঁরা দুর্ঘটনার দিন ইংল্যান্ড সফরে ছিলেন, তারা সেদিন ক্ষতিগ্রস্তদের স্মরণে শোকসূচক কালো আর্মব্যান্ড পরিধান করে খেলায় অংশ নেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Death counts swell to 117"BDNews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১০ 
  2. Farid Hossain (৪ জুন ২০১০)। "Bangladesh fire races through buildings, kills 117"এসোসিয়েটেড প্রেস (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ জুন ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১০ 
  3. "শরীরের যন্ত্রণার সঙ্গে ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা"প্রথম আলো। ৬ জুন ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুন ২০১০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. "দগ্ধ আরো একজনের মৃত্যু, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা নিয়ে বিতর্ক"কালের কণ্ঠ। ৮ জুন ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০১০ 
  5. "ঢাকার নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ড: ১১৭ জনের মৃত্যু, ৫জুন রাষ্ট্রীয় শোক"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুন ২০১০ 
  6. "At least 40 dead in Bangladesh fire"রয়টার্স (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ জুন ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১০ 
  7. "85 dead, 100 injured in Bangladesh blaze: police"AFP (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ জুন ২০১০। ৬ জুন ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১০ 
  8. "Bangladeshi housing-block fire kills dozens"বিবিসি নিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন। ৩ জুন ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১০ 
  9. Jones, Alice (৪ জুন ২০১০)। "Dhaka fire kills at least 77, injures 100"The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১০ 
  10. "87 dead, 100 injured in Bangladesh blaze: police"Yahoo! News (ইংরেজি ভাষায়)। ৩ জুন ২০১০। ৭ জুন ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১০ 
  11. Dummett, Mark (৪ জুন ২০১০)। "Dhaka: City of construction death traps"বিবিসি নিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১০ 
  12. "Midnight-fire kills at least 77 in Bangladesh capital"দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ জুন ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুন ২০১০ 
  13. Burke, Jason (৪ জুন ২০১০)। "Dhaka fire kills up to 150 in Bangladesh"দ্য গার্ডিয়ান (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১০ 
  14. Watts, Alex (৪ জুন ২০১০)। "At Least 100 Dead In Bangladesh Fire"স্কাই নিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১০ 
  15. "114 killed in Bangladesh fire"RTE News (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ জুন ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১০