নিজাম উদ্দিন আহমেদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নিজাম উদ্দিন আহমেদ
জন্ম১৪ আগস্ট, ১৯৪৭
মৃত্যু১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১
পেশাসাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারএকুশে পদক - ১৯৯৫

নিজাম উদ্দিন আহমেদ (জন্ম: ১৪ আগস্ট, ১৯৪৭ - মৃত্যু: ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে অকুতোভয় সাংবাদিক[১] ও শহীদ বুদ্ধিজীবী।[২] ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, রাজাকার ও আল-বদর বাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের অংশ হিসাবে তিনি অপহৃত ও পরে শহীদ হন।[৩]

সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক-এ ভূষিত হন।[৪]

জন্ম ও শিক্ষা ও কর্মজীবন[সম্পাদনা]

ভাষা সৈনিক, সাবেক রাষ্ট্রদূত, প্রথিতযশা লেখক, আইনবিদ, কুটনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের স্থপতিদের মধ্যে অন্যতম, প্রয়াত জনাব কামরুদ্দীন আহমদ এবং প্রয়াত জোবেদা খানমের কনিষ্ঠ পুত্র শহীদ নিজামউদ্দিন আজাদের জন্ম ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ বৃহস্পতি বারে-অত্যাচারী ব্রিটিশ বেনিয়ার হাত থেকে ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতার মাহেন্দ্রক্ষণে। সদ্যজাত শিশুটিকে পরম যত্নে ধারণ করে তাঁর পিতা প্রয়াত জনাব কামরুদ্দীন আহমদ (সুবাহ্) বিড়বিড় করে বললেন "আজাদ" অর্থ "স্বাধীন"। ব্রিটিশ বিরোধী অগ্নিযুগের বিপ্লবী " আজাদের" মতো করে সন্তানকে গড়ে তোলার শপথ নিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের তরুণ নেতা গণতান্ত্রিক যুবলীগের আহবায়ক সুবাহ্। আজাদ তাঁকে আশাহত করেননি। ১৯৭১ এর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সেই প্রখ্যাত বিপ্লবী আজাদের মতোই আমৃত্যু সশস্ত্র যুদ্ধ করে নিজের বুকের তাজা লাল রক্তে ঘন সবুজের মাঠকে রঞ্জিত করে দিয়ে গেছেন স্বাধীনতা। জাদের পূর্বপ্রজন্মের নিবাস ছিল বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার ষোলঘর গ্রামের মিঞা বাড়িতে। বাবার কুটনৈতিক চাকরির সুবাদে তাঁর শৈশব কাটে প্রবাসে। তিনি ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এবং এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপরে পিপিআই তে সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৬৯ সালে এর সম্পাদক হন।[১] সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক-এ ভূষিত হন।[৪]

নিজাম উদ্দিন আহমেদের শেষ চিঠি[সম্পাদনা]

"মন খারাপ করার কোন সময় নাই। দেশ মাতার ডাকে জীবন দেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। কোন রকম দূর্বলতা আসলে আমাদের চলবে না। আজ যে মাকে ওরা ধর্ষণ করছে সেই মাকে সম্পূর্ণ ভাবে মুক্ত না করা পর্যন্ত আমাদের একটাই চিন্তা, একটাই তপস্যা মা কে মুক্ত করবো, এর মধ্যে দুর্বলতার কোন স্থান নেই, মানুসিক অশান্তির কোনও সুযোগ নেই, পেছন ফিরে তাকাবার কোনও সময় নেই। তুই কোন চিন্তা করিসনা।সব ঠিক হয়ে যাবে।আবার বাংলায় ফিরবো আবার সুখী হয়ে থাকবো"~ (গেরিলা ক্যাম্প থেকে ১৭ জুলাই ১৯৭১ সনের অমর শহীদ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নিজাম উদ্দিন আজাদের শেষ চিঠি- লিখেছিলেন বন্ধু আরেকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাজী টুলুর কাছে। সে চিঠির প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে ফুলের মতো ফুটে আছে শহীদ নিজাম উদ্দিন আজাদের দেশপ্রেম।)

বুদ্ধিজীবী হত্যা বিষয়ে রায়[সম্পাদনা]

৩রা নভেম্বর, ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, চৌধুরী মুঈনুদ্দীন এবং আশরাফুজ্জামান খান কে ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নিজাম উদ্দিন আহমেদ সহ ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।[৩][৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Profiles of martyred intellectuals ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে, দি ডেইলি স্টার, তারিখঃ ১৪ ডিসেম্বর, ২০০৬, সংগৃহীতঃ ১০ নভেম্বর, ২০১৩
  2. বুদ্ধিজীবী হত্যার ৪২ বছর পরে ন্যায়বিচার ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে, অশোকেশ রায়, বাংলানিউজটুয়েন্টিফোর। কম, ঢাকা, ৩রা নভেম্বর, ২০১৩।
  3. হত্যার সাজা ফাঁসি বুদ্ধিজীবী হত্যার সাজা ফাঁসি, প্রথম আলো দৈনিক পত্রিকা, লেখকঃ কুন্তল রায় ও মোছাব্বের হোসেন, ৪ঠা নভেম্বর, ২০১৩।
  4. "একুশে পদকপ্রাপ্ত সুধীবৃন্দ ও প্রতিষ্ঠান" (পিডিএফ)সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পৃষ্ঠা ১১। ২২ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০১৯ 
  5. মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড, আকবর হোসেন, বিবিসি বাংলা, ঢাকা, ৩রা নভেম্বর, ২০১৩।